ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে চাইলে যা করবেন...

বছর তিনেক ধরে তানিমের (ছদ্মনাম) ক্যারিয়ার একই জায়গায় আটকে আছে। না পদোন্নতি, না বেতন বৃদ্ধি! প্রতিদিন বিষণ্নতায় কাটে তাঁর। আশপাশের বন্ধুরা নিজের ক্যারিয়ারকে তরতর করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর তিনি কিনা তিন বছর ধরে পড়ে আছেন একই জায়গায়! ‘সমস্যা কী আমার!’—প্রতিদিনই ভাবেন তানিম। 

তানিমের মতো অনেকেই আছেন, যাঁদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি যথাযথভাবে হয় না। অনেক সময় তাঁরা নিজেরা বুঝতেও পারেন না সমস্যা কোথায়। তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে ক্যারিয়ারবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য মুজে। আসুন সেগুলোয় একবার চোখ বোলানো যাক—

১. বছরে একবার অন্তত নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে দুই বছরে অন্তত একবার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা উচিত বলে মনে করেন ক্যারিয়ার পরামর্শক ক্রিস্টি মিমস। খ্যাতিমান এই মার্কিন ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যেখানে চাকরি করছেন, সেই জায়গাটা আপনার জন্য উপযুক্ত কি না, ভাবুন। সময়টা নেটওয়ার্কিংয়ের, তাই নিজের নেটওয়ার্কে যোগাযোগ বাড়ান। নতুন সুযোগ সামনে আসবেই। সুযোগ আসামাত্রই লুফে নেবেন না, আরেকবার ভাবুন। বেতনের তুলনামূলক পার্থক্য খুঁজে বের করুন। বেতনাদি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিন, তার আগে নয়। যদি নতুন চাকরিতে প্রবেশের ব্যাপারে আপনার ভেতরে ভয় ও অস্বস্তি কাজ করে, তাহলে বুঝবেন বর্তমান প্রতিষ্ঠানেই ভালো আছেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে মনে ভয় থাকা মানে বর্তমান কর্মস্থলে আপনার কমফোর্ট জোন বাড়ছে।’ 

২. বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিন এলির সহকারী সম্পাদক ক্যাথরিন স্ট্রাউট বলেছেন, কোনো মিটিংয়ে কথা বলতে বা কোনো সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেলে চলবে না। কোনো প্রকল্পের বিশদ বিবরণ জানাতে বা কোনো সংবেদনশীল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেও ভয় পাওয়া যাবে না। ক্যাথরিনের ভাষায়, ‘কোনো বিষয়ে যখন আপনার আইডিয়া শোনার কথা আসে বা সহকর্মীদের সঙ্গে সত্যিকারের যোগাযোগের কথা আসে, তখন মুখোমুখি বসে কথা বলুন। ব্যক্তিগত যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটিকে কখনোই অবমূল্যায়ন করবেন না।’ 

৩. দ্য মুজের সম্পাদক সারা ম্যাককর্ড নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, অফিস হলো সক্ষমতা ও প্রতিভা দেখানোর জায়গা। নিজের কাজটি ভালোভাবে করতে হবে। নিজের কাজে নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে হবে। মাঝে মাঝে এটি একজনকে কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। তবে সেটি আদতে একটি জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। 

৪. ক্যারিয়ারে ভালো করতে চাইলে সমালোচনাকে গ্রহণ করতে হবে—এমনটি বলেছেন পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠান ব্রুনো গ্রুপ সিগনেচার ইভেন্টের প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্রুনো। তিনি বলেছেন, ‘আপনার কাজের সমালোচনা বা প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করতে শিখুন। এটি আপনার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে। আপনি যা করতে চাইছেন, তা সঠিকভাবে করার জন্য সমালোচনাকে গুরুত্ব দিন। তাহলে সঠিকভাবে কাজটি করতে পারবেন। তবে সমালোচকের ভুল কাজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো গ্রহণ করুন এবং সামনের দিকে এগিয়ে যান।’ 

৫. দ্য মুজের প্রধান সম্পাদক আড্রিয়ান গ্রানজেলা লারসেন দারুণ একটি টিপস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা বহুবার এই কথা শুনবেন যে নিজের পছন্দনীয় কাজ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন, যে কাজটি হাতে পেয়েছেন সেটির জন্য নয়। কিন্তু আমি মনে করি, আপনি আপনার প্রতিদিনের কাজটি ভালোভাবে করে যান। আপনি মিটিং ও অফিস ইভেন্টে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করেন, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করছেন, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের কাজটুকু গুরুত্বের সঙ্গে করার চেষ্টা করতে হবে।’ 

৬. নেতৃত্ববিষয়ক পরামর্শক ক্রিস্টি হেজেস বলেন, অনেক সময় সমস্যার মধ্যেও সুযোগ লুকিয়ে থাকে। একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং কীভাবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করছেন, তার ওপর নির্ভর করে কখনো কখনো আপনার ক্যারিয়ার আমূল বদলে যেতে পারে। মানুষ সাধারণত সমস্যা এড়িয়ে চলতে চায়। সেখানে আপনি যদি এই পরিস্থিতির সমাধান করতে পারেন, তবে অবশ্যই আপনি অন্যদের চেয়ে ভিন্ন একটি নতুন পদক্ষেপ শুরু করলেন, যা আপনার উন্নত ক্যারিয়ারে সহায়ক হতে পারে। 

৭.  ইভেন্ট আয়োজক প্রতিষ্ঠান প্ল্যানারওয়্যারের পরামর্শক কিথ জনস্টন পরিশ্রম করার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তাঁর মতে, নিজের কিংবা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের সবার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এটিই একটি ভালো ক্যারিয়ারের নীতি ও কৌশল। পরিশ্রম করলে সেটি ভালো ফলাফল নিয়ে আসবেই।