Ajker Patrika

চাকরির দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চাইলে সিভি লিখবেন যেভাবে

ক্যারিয়ার ডেস্ক
চাকরির দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চাইলে সিভি লিখবেন যেভাবে

চাকরির বাজার প্রতিদিন প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। ভালো ফল, ডিগ্রি কিংবা অভিজ্ঞতা থাকলেও অনেকেই পিছিয়ে পড়েন একটি ভালো সিভির অভাবে। আপনি কে, কী জানেন, কী পারেন—সবকিছু নিয়োগদাতার কাছে তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম হলো একটি সঠিকভাবে গঠিত ও পেশাদার সিভি। সিভি তৈরির এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন ‘করপোরেট আস্ক’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পেশাদার সিভি লেখক নিয়াজ আহমেদ। চলুন, জেনে নিই কীভাবে একটি প্রভাবশালী সিভি তৈরি করা যায়।

সিভিতে যা যা থাকা আবশ্যক

অনেক ফ্রেশার চাকরিপ্রার্থীকেই একটি সাধারণ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ‘আপনার কি কোনো অভিজ্ঞতা আছে?’ যা অনেকের কাছে বিব্রতকর মনে হতে পারে। অথচ অভিজ্ঞতা মানেই শুধু ফুলটাইম চাকরি নয়। ইন্টার্নশিপ, খণ্ডকালীন কাজ, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম, ক্লাব বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা কিংবা সিএসআর প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করাও অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে।

নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সিভিতে কোনো রং, টেবিল, বক্স, শেপ বা অতিরিক্ত ডিজাইন ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি দেখতে হবে প্রফেশনাল। অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য না দিয়ে কাজ, দক্ষতা ও অর্জনের ওপর জোর দিতে হবে।’

যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁদের জন্য সিভিতে অর্জনভিত্তিক বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাঁরা কীভাবে আগের কর্মস্থলে অবদান রেখেছেন, কোন সমস্যার সমাধান করেছেন বা কতটা গ্রোথ অর্জিত হয়েছে—এ বিষয়গুলো সংক্ষিপ্ত ও পরিমিতভাবে তুলে ধরতে হবে। একটি ভালো সিভি সাধারণত দুই পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং সেটি সংক্ষিপ্ত, তথ্যবহুল ও প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত।

সিভি বাদ পড়ার সাধারণ কারণ

চমৎকার যোগ্যতা থাকলেও অনেকের সিভি প্রাথমিক বাছাইতেই বাদ পড়ে যায়। নিয়াজ আহমেদ জানালেন কিছু সাধারণ ভুলের কথা, যেগুলো এড়াতে হবে:

  • কভার লেটার না থাকা
  • মেইলের সাবজেক্ট লাইনে কিছু না লেখা
  • ফোল্ডারের নাম ভুলভাবে দেওয়া
  • একই সিভি দিয়ে সব জায়গায় আবেদন করা
  • সার্কুলার ভালোভাবে না পড়ে আবেদন করা
  • বানান ও ব্যাকরণগত ভুল থাকা
  • অ্যাচিভমেন্ট ও স্কিল উল্লেখ না করা
  • সিভি অযথা দীর্ঘ করা
  • পুরোনো, দোকান থেকে বানানো সিভি ব্যবহার করা
  • ডিজাইনে অতিরিক্ত নজর দিয়ে কনটেন্ট উপেক্ষা করা
  • সিভি ফরম্যাট না, কনটেন্টই আসল

বর্তমানে সিভির ‘লুক’ বা ডিজাইন যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর কনটেন্ট বা উপস্থাপন। আপনি কোথায় কাজ করেছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনি কী করেছেন। যেমন:

  • আগের প্রতিষ্ঠানে কী কী উন্নতি হয়েছে আপনার অবদানে
  • কোন সমস্যার সমাধান করেছেন
  • কতটুকু ব্যবসায়িক বা কার্যকর পরিবর্তন এসেছে

এ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরলে সিভি হবে আকর্ষণীয়। প্রয়োজনে কিছু শক্তিশালী ও প্রাসঙ্গিক শব্দ যেমন— ‘initiated’, ‘led’, ‘achieved’, ‘developed’, ‘solved’, ‘managed’ ব্যবহার করতে পারেন। তবে ফাঁকা বুলি বা অহেতুক গ্ল্যামারার্স শব্দ এড়িয়ে চলুন।

রেফারেন্স নিয়ে সতর্কতা

ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে দুজন রেফারেন্স থাকা যেতে পারে। একজন হতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আরেকজন সিনিয়র বা কর্মক্ষেত্রে যুক্ত কেউ। তবে যাঁকেই রেফারেন্স হিসেবে রাখতে চান, তাঁর অনুমতি অবশ্যই আগে নিতে হবে। রেফারেন্সে যেসব তথ্য থাকা জরুরি: নাম; পদবি; প্রতিষ্ঠানের নাম; ই-মেইল; ফোন নম্বর।

তবে দীর্ঘ সময় চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে রেফারেন্স না দিলেও চলে। কারণ তখন আপনার কাজই আপনার সবচেয়ে বড় রেফারেন্স।

সিভি লেখার সময় যেগুলো খেয়াল রাখবেন

কপি-পেস্ট নয়: অন্যের সিভি দেখে অনুপ্রেরণা নেওয়া যেতে পারে, তবে নিজের তথ্য ও ভাষায় লিখতে হবে।

ভুল তথ্য নয়: যেকোনো তথ্য যাচাইযোগ্য হতে হবে। ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য বিপদে ফেলতে পারে।

ভুল বানান বা গঠন: ইংরেজি হলে গ্রামার ও বানান ঠিক থাকতে হবে। প্রয়োজনে স্পেল চেকার ব্যবহার করুন।

পজিশন অনুযায়ী কাস্টমাইজ: প্রতিটি আবেদনপত্রে সিভির ‘অবজেকটিভ’, ‘স্কিলস’ ও কি-ওয়ার্ড সামান্য পরিবর্তন করতে হতে পারে।

প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা: যদি নিজে সিভি গুছিয়ে লিখতে না পারেন, পেশাদার সিভি লেখকের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

চাকরির বাজারে আপনি নিজে পৌঁছানোর আগেই পৌঁছায় আপনার সিভি। তাই সিভি যেন আপনার হয়ে কথা বলে, আপনাকে তুলে ধরে একজন আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ ও প্রফেশনাল কর্মী হিসেবে। কেবল তথ্য দিয়ে ঠাসা নয়; বরং প্রাসঙ্গিক, সাবলীল ও প্রভাবসঞ্চারী উপস্থাপনই হোক আপনার সিভির মূল শক্তি।

অনুলিখন: মুসাররাত আবির

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

বৈষম্যহীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে গেছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত