Ajker Patrika

বিজেএস প্রিলি: শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

Thumbnail image

সহকারী জজ হওয়ার জন্য প্রথমে বিজেএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। আগামী ৪ মে ১৭তম বিজেএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। শেষ মুহূর্তে একজন পরীক্ষার্থী কীভাবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করবেন নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ১৬তম বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রুহুল আমিন রুবেল। 

সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ
সিলেবাসের সবগুলো অধ্যায় ভালোভাবে পড়ুন। বিগত পরীক্ষায় বারবার পুনরাবৃত্তি হওয়া প্রশ্নগুলো বেশি বেশি রিভিশন দিন। প্রতিটি বিষয়ের মান বণ্টন অনুযায়ী গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। 

নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতা নির্ণয়
দুটি বিষয়ের ওপর বিজেএস পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাধারণ বিষয়াবলির জন্য ৪০ ও আইনের বিষয়াবলিতে ৬০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। পাস করার জন্য উভয় বিষয় মিলিয়ে ৫০ নম্বর পেতে হয়। দুটি বিষয়ের মধ্যে বিশেষ দক্ষতা থাকা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে, যেন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর তোলা যায়। পাশাপাশি কোনো বিষয়ে খুব বেশি দুর্বলতা থাকলে, সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। তবে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা না গেলেও ঘাবড়ানো যাবে না। কারণ প্রিলিতে সব মিলিয়ে পাস নম্বর পেলেই চলবে। 

মান বণ্টন দেখে পড়া
সংবিধান, পারিবারিক আইন, বিশেষ আইনের মতো কিছু বিষয়ে প্রিলিতে কম পড়েও বেশি নম্বর তোলা সম্ভব। এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে, যেন সর্বোচ্চ নম্বর তোলা যায়। 

সমসাময়িক বিষয়ের গুরুত্ব
দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তথ্যগুলো নোট করে রাখা যেতে পারে, যেন পরীক্ষার আগে এক নজরে দেখা যায়। 

সাধারণ বিষয়াবলিতে ভালো করবেন যেভাবে
বিগত বিসিএস, বিজেএসসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তরসহ প্রতিটি বিষয়ের বেসিক জানতে হবে। প্রশ্নের প্যাটার্ন ও স্টাইল খেয়াল রেখে পড়লে সাধারণ বিষয়াবলিতে ভালো করা সম্ভব। বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে বানান, বিভিন্ন ভাষার শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ, উপসর্গ, প্রকৃতি, প্রত্যয়, সমাস, সন্ধি, কারক ও বিভক্তি, ধ্বনি পরিবর্তন, বাগধারা ভালোভাবে পড়তে হবে। সাহিত্য অংশের জন্য গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে আধুনিক যুগ। 

 আইনের বিষয়ে ভালো করার উপায় 
আইনের বিষয়ে দক্ষ প্রার্থীদের ভয় নেই। পুরোনো পড়া বারবার রিভাইজ দিলেই চলবে। আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা, উপধারা, ব্যাখ্যা, সংখ্যা, শাস্তি, তদন্ত, জামিন ও আপিল এবং বিশেষ বিধান আত্মস্থ করতে পারলে আইন বিষয়ে ভালো করা যায়। পাশাপাশি আইনের সেকশন হেডিং পড়াও খুব জরুরি। 

  • দেওয়ানি আইন: সিপিসির গুরুত্বপূর্ণ সেকশন, অর্ডার ও নিয়ম, এসআর অ্যাক্টের ইলাস্ট্রেশনগুলো, মোকদ্দমা ও মোকদ্দমা স্থানান্তরের বিধানসহ বিভিন্ন জুরিসডিকশন, আপিল, রিভিশন, রিভিউ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তামাদি ভালোভাবে জানতে হবে। সিপিসি, এমএফএলও, পারিবারিক আদালত আইন, শ্রম আইন, অর্থঋণ আদালত আইন ও গ্রাম আদালত আইনে এডিআর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।
  • ফৌজদারি আইন: বিভিন্ন আদালতের গঠন, জুরিসডিকশন, কগনিজেন্স পাওয়ার, ট্রায়াল ও পানিশমেন্ট দেওয়ার পাওয়ারসহ রিমান্ড, বেল বিষয়ে ভালোভাবে জানতে হবে। মামলা স্থানান্তর, আপিল, রিভিশনসহ বিশেষ বিধানের বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত ধারা, ইলাস্ট্রেশন, এক্সসেপশন, শাস্তির পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন। সংজ্ঞা, সম্পত্তি ও মানবদেহ বিষয়ে অপরাধসহ জাল-জালিয়াতি-সংক্রান্ত ধারাগুলো ভালোভাবে আয়ত্তে রাখুন। সাক্ষ্য আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান বিশেষ করে রেলিভেন্ট, ইরেলিভেন্ট, পাবলিক ও প্রাইভেট ডকুমেন্টস, মে প্রিজিউম, শ্যাল প্রিজিউম, কনক্লুসিভ প্রুফসহ বিভিন্ন স্টেটমেন্ট, প্রমাণের পদ্ধতি, জবানবন্দি, জেরা, করোবরেশনসহ সবশেষ সংশোধনী ভালোভাবে পড়তে হবে।
  • পারিবারিক আইন: মুসলিম আইনে বিয়ে, দেনমোহর, ডিভোর্স, হেবা, উইল, গার্ডিয়ানশিপ, কোরানিক শেয়ারারদের বিধান, রাদ, আউলসহ বিশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। পাশাপাশি হিন্দু আইনের ক্ষেত্রে বিবাহের প্রকারভেদ, দত্তক, দায় ভাগা ও মিতাক্ষরা উত্তরাধিকার আইন, স্ত্রীধন, দান, উইলসহ এমএফএলও, বিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রি, পারিবারিক আইন-আদালত বিষয়ে পড়তে হবে।
  • সাংবিধানিক আইন: সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি পাঠ ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রতিটি আর্টিকেল আলাদা করে পড়ুন। উচ্চ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সাংবিধানিক মামলা, উপমহাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের রায়সহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ডকট্রিন, জিসি অ্যাক্টের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ভালোভাবে পড়তে হবে।
  • সম্পত্তি-সংক্রান্ত আইন: চুক্তির সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উপাদান, বৈধতা, চুক্তি ভঙ্গের ফলাফল ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি ইনডেমনিটি, গ্যারান্টি, বেলমেন্ট, প্লেজ, এজেন্সি সম্পর্কেও জানতে হবে। সম্পত্তির সংজ্ঞা, কী স্থানান্তর করা যায় না, কে স্থানান্তর করতে পারে, রুল এগেইনস্ট পারপিচুইটি, ইলেকশন, লিস পেনডেন্স, পার্ট পারফরম্যান্স, মর্টগেজ, লিজ, এক্সচেঞ্জ, গিফট বিষয়ে জানতে হবে। বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন, রেজিস্ট্রেশনের সময়, স্থান, রেজিস্ট্রেশন করা বা না করার ফলাফল, প্রত্যাখ্যান ও প্রতিকার এবং শাস্তি সম্পর্কে পড়তে হবে। স্যাট ও ন্যাট অ্যাক্টের সংজ্ঞাগুলো আয়ত্তে রাখা ভালো। খতিয়ান তৈরি ও সংরক্ষণ পদ্ধতি, সাবলেটিং নিষিদ্ধ, প্রিএম্পশন, সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্তি, এলুভিয়ন, ডিলুভিয়ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জমি হস্তান্তর পদ্ধতি, সর্বোচ্চ জমির মালিকানা, ভূমি জরিপ, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, আপিল ট্রাইব্যুনাল, তামাদি, আপিল, রিভিউ, রিভিশন, খাজনা প্রদান খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। এ ছাড়া অকৃষিজমি ব্যবহারের উদ্দেশ্য, টিনেন্ট, আন্ডার টিনেন্টবিষয়ক প্রভিশন, প্রিএম্পশন ও ইম্প্রুভমেন্ট বিষয়েও ধারণা রাখতে হবে। 

অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত