আবদুল আযীয কাসেমি
প্রায় সব সিরাতবিদ স্বীকার করেছেন, তরুণেরাই সর্বাগ্রে নবী (সা.)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছেন। তাঁরাই জীবন বাজি রেখে নবীজির আদর্শ বুকে ধারণ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের সুমহান বার্তা। এখানে তেমনই কয়েকজন তরুণ সাহাবির কথা তুলে ধরা হলো—
আলী ইবনে আবু তালিব
নিঃসন্দেহে এই তালিকায় সবার ওপরে যাঁর নাম আসবে, তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও নবীজির চাচাতো ভাই হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। নবীজির আবির্ভাবের মাত্র ১০ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কিশোরদের মধ্যে প্রথম তিনিই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি নবীজির অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। যোগ্যতাবলে তিনি হয়ে ওঠেন সাহস ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক। নবীজি তাঁকে খুশি হয়ে উপাধি দিয়েছিলেন ‘আসাদুল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহর সিংহ’। প্রায় অভিযানে তাঁর হাতেই যুদ্ধ পরিচালনার ঝান্ডা তুলে দিতেন। খায়বার বিজয়ের সময় একটি অপরাজেয় দুর্গ কেউই জয় করতে পারছিল না। নবীজি বললেন, ‘আমি আগামীকাল এমন একজনের হাতে ঝান্ডা দেব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে এবং তাকেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুল পছন্দ করেন। তার হাতেই এই দুর্গের পতন ঘটবে।’ সেই ঝান্ডা নবীজি হজরত আলীর হাতেই অর্পণ করেছিলেন। বিচারকাজে তাঁর অসামান্য দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ নবীজির জীবদ্দশায় তিনি ইয়েমেনের বিচারপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। বিচারকাজে তাঁর দক্ষতা দেখে নবীজি বলেছিলেন, ‘আমার সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক আলী।’ হজরত ওমর (রা.)-এর নির্বাচিত ছয়জন শুরা সদস্যের একজন ছিলেন তিনি। অথচ বয়স তখনো চল্লিশ পেরোয়নি।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ছিলেন নবীজির আপন চাচা হজরত আব্বাসের সন্তান। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস নবীজির ইন্তেকালের সময় ছিলেন নিতান্তই কিশোর। তাকে ছোট সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি ছিলেন জ্ঞানের বুভুক্ষু অন্বেষী। স্বয়ং নবীজি তার জন্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রার্থনা করেছিলেন। কালের পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন কোরআনের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির বা ভাষ্যকার। হজরত ওমরের মতো প্রতাপশালী, প্রাজ্ঞ ও দিগ্বিজয়ী শাসকের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস। কোরআনের কোনো বিষয়ে হজরত ওমরের সন্দেহ হলে তিনি শরণাপন্ন হতেন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের।
উসামা ইবনে জায়েদ
নবীজির অত্যন্ত স্নেহভাজন সাহাবি হজরত জায়েদ ইবনে হারেসার পুত্র হলেন হজরত উসামা ইবনে জায়েদ। তিনি নবীজির লালন-পালনকারী ক্রীতদাসী হজরত উম্মে আইমানের সন্তান। নবীজি তাঁকে দুই নাতি হাসান-হোসাইনের মতো স্নেহ করতেন। শৌর্যবীর্য ও নেতৃত্বের গুণের কারণেই নবীজি ইন্তিকালের আগে বিশাল এক সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে তাঁকে মনোনীত করেছিলেন। হজরত আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলীর মতো সাহাবিরাও ছিলেন সেই বাহিনীর সাধারণ সদস্য হিসেবে। বাহিনী রওনা করার আগেই নবীজির ইন্তিকাল হয়ে যায়। এরপর আবু বকর (রা.) ওসামার নেতৃত্বেই বাহিনীটি রওনা করান। হজরত ওমর (রা.)ও তাঁকে খুবই সমীহ করতেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে আপন পুত্র আবদুল্লাহর ওপর তাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। (আল ইসাবাহ: ১ / ২০২)
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন ইতিহাসের বিস্ময়। নবীজির ইন্তিকালের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। ৯ বছর বয়স থেকে তিনি নবীজির সংসার করেছেন। নবীজির সঙ্গে থাকার সুবাদে তিনি জ্ঞানের সমুদ্র হয়ে ওঠেন। সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আইনবিদ যাঁরা, তাঁদের একজন তিনি। নবীজির ইন্তিকাল হয়েছিল তাঁর ঘরে। তাঁর মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট তাবেয়ি মাসরুক বলেন, ‘আমি বড় বড় সাহাবি দেখেছি, হজরত আয়েশার কাছ থেকে ফারায়েজ তথা ইসলামি উত্তরাধিকার আইন শিখেছেন।’ তাবেয়ি আতা বিন আবু রাবাহ বলেন, ‘হজরত আয়েশা ছিলেন শ্রেষ্ঠ ফকিহ, শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তম সিদ্ধান্তদাতা।’
লেখক: আবদুল আযীয কাসেমি, শিক্ষক ও হাদিস গবেষক
প্রায় সব সিরাতবিদ স্বীকার করেছেন, তরুণেরাই সর্বাগ্রে নবী (সা.)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছেন। তাঁরাই জীবন বাজি রেখে নবীজির আদর্শ বুকে ধারণ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের সুমহান বার্তা। এখানে তেমনই কয়েকজন তরুণ সাহাবির কথা তুলে ধরা হলো—
আলী ইবনে আবু তালিব
নিঃসন্দেহে এই তালিকায় সবার ওপরে যাঁর নাম আসবে, তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও নবীজির চাচাতো ভাই হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। নবীজির আবির্ভাবের মাত্র ১০ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কিশোরদের মধ্যে প্রথম তিনিই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি নবীজির অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। যোগ্যতাবলে তিনি হয়ে ওঠেন সাহস ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক। নবীজি তাঁকে খুশি হয়ে উপাধি দিয়েছিলেন ‘আসাদুল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহর সিংহ’। প্রায় অভিযানে তাঁর হাতেই যুদ্ধ পরিচালনার ঝান্ডা তুলে দিতেন। খায়বার বিজয়ের সময় একটি অপরাজেয় দুর্গ কেউই জয় করতে পারছিল না। নবীজি বললেন, ‘আমি আগামীকাল এমন একজনের হাতে ঝান্ডা দেব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে এবং তাকেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুল পছন্দ করেন। তার হাতেই এই দুর্গের পতন ঘটবে।’ সেই ঝান্ডা নবীজি হজরত আলীর হাতেই অর্পণ করেছিলেন। বিচারকাজে তাঁর অসামান্য দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ নবীজির জীবদ্দশায় তিনি ইয়েমেনের বিচারপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। বিচারকাজে তাঁর দক্ষতা দেখে নবীজি বলেছিলেন, ‘আমার সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক আলী।’ হজরত ওমর (রা.)-এর নির্বাচিত ছয়জন শুরা সদস্যের একজন ছিলেন তিনি। অথচ বয়স তখনো চল্লিশ পেরোয়নি।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ছিলেন নবীজির আপন চাচা হজরত আব্বাসের সন্তান। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস নবীজির ইন্তেকালের সময় ছিলেন নিতান্তই কিশোর। তাকে ছোট সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি ছিলেন জ্ঞানের বুভুক্ষু অন্বেষী। স্বয়ং নবীজি তার জন্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রার্থনা করেছিলেন। কালের পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন কোরআনের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির বা ভাষ্যকার। হজরত ওমরের মতো প্রতাপশালী, প্রাজ্ঞ ও দিগ্বিজয়ী শাসকের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস। কোরআনের কোনো বিষয়ে হজরত ওমরের সন্দেহ হলে তিনি শরণাপন্ন হতেন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের।
উসামা ইবনে জায়েদ
নবীজির অত্যন্ত স্নেহভাজন সাহাবি হজরত জায়েদ ইবনে হারেসার পুত্র হলেন হজরত উসামা ইবনে জায়েদ। তিনি নবীজির লালন-পালনকারী ক্রীতদাসী হজরত উম্মে আইমানের সন্তান। নবীজি তাঁকে দুই নাতি হাসান-হোসাইনের মতো স্নেহ করতেন। শৌর্যবীর্য ও নেতৃত্বের গুণের কারণেই নবীজি ইন্তিকালের আগে বিশাল এক সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে তাঁকে মনোনীত করেছিলেন। হজরত আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলীর মতো সাহাবিরাও ছিলেন সেই বাহিনীর সাধারণ সদস্য হিসেবে। বাহিনী রওনা করার আগেই নবীজির ইন্তিকাল হয়ে যায়। এরপর আবু বকর (রা.) ওসামার নেতৃত্বেই বাহিনীটি রওনা করান। হজরত ওমর (রা.)ও তাঁকে খুবই সমীহ করতেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে আপন পুত্র আবদুল্লাহর ওপর তাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। (আল ইসাবাহ: ১ / ২০২)
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন ইতিহাসের বিস্ময়। নবীজির ইন্তিকালের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। ৯ বছর বয়স থেকে তিনি নবীজির সংসার করেছেন। নবীজির সঙ্গে থাকার সুবাদে তিনি জ্ঞানের সমুদ্র হয়ে ওঠেন। সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আইনবিদ যাঁরা, তাঁদের একজন তিনি। নবীজির ইন্তিকাল হয়েছিল তাঁর ঘরে। তাঁর মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট তাবেয়ি মাসরুক বলেন, ‘আমি বড় বড় সাহাবি দেখেছি, হজরত আয়েশার কাছ থেকে ফারায়েজ তথা ইসলামি উত্তরাধিকার আইন শিখেছেন।’ তাবেয়ি আতা বিন আবু রাবাহ বলেন, ‘হজরত আয়েশা ছিলেন শ্রেষ্ঠ ফকিহ, শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তম সিদ্ধান্তদাতা।’
লেখক: আবদুল আযীয কাসেমি, শিক্ষক ও হাদিস গবেষক
সুখময় পরিবার জীবনের অমূল্য সম্পদ। সুখী সংসারকে বলা হয় দুনিয়ার জান্নাত। পরিবার আমাদের আশ্রয়, ভালোবাসা ও সাহসের উৎস। পরিবারে একে অপরের পাশে থাকলে সব বাধা সহজে অতিক্রম করা যায়। ছোঁয়া যায় ভালোবাসার আকাশ। মাখা যায় সুখের আবেশ। এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) হতে পারেন উত্তম আদর্শ। কীভাবে তিনি পারিবারিক ও...
১ দিন আগেজুমার দিন মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। ইসলামে জুমার দিন সপ্তাহের সেরা হিসেবে বিবেচিত। নবী করিম (সা.) বলেন, পৃথিবীতে যত দিন সূর্য উদিত হবে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো জুমার দিন। (সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৪)। অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, দিবসসমূহের মধ্যে...
১ দিন আগেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ঘিবলি স্টাইল কার্টুন তৈরির বিষয়টি ইসলাম কীভাবে দেখে?
১ দিন আগেতসবি জিকির-আজকারের গুরুত্বপূর্ণ এক উপকরণ। আল্লাহর স্মরণে মুমিনদের সাহায্য করে এই জপমালা। হাতে তসবি, মুখে জিকির—মুমিনের হৃদয়ে ওঠে আল্লাহর প্রেম। যুগ যুগ ধরেই জিকির-আজকারে মুসলমানরা তসবি ব্যবহার করে আসছে। যেমন তুরস্কের কেসেরি প্রদেশের ‘সুওয়াসি সিতি হাতুন’ মসজিদে ৭০০ বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন..
১ দিন আগে