
দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিন পর আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। হজ-ওমরাহর ব্যবস্থাপনা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইজাজুল হক।
ইজাজুল হক

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের জন্য সরকারি খরচে হজে গমন বন্ধ করা এবং হজের খরচ কমানোর বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে রিয়ালের দাম প্রায় ৩ টাকা করে বাড়ার পরও কীভাবে হজের খরচ কমালেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: হজের খরচের খাতগুলো হলো—বিমানভাড়া, হোটেল বা আবাসন ব্যয়, খাবার খরচ, মিনা-আরাফায় তাঁবুভাড়া ও সেখানে অবস্থানকালীন খাবার খরচ, স্বাস্থ্যবিমা, বৈদ্যুতিক চার্জ, জমজমের পানি, ভিসা ফি, হজ গাইড, প্রশিক্ষণ, হাজিকল্যাণ তহবিল ইত্যাদি। এখানে বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া ছাড়া অন্য খাতগুলোতে খরচ কমানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই আমরা বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া কমানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর বিমানভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমানো হয়েছে। মক্কায় হারাম শরিফ থেকে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে হোটেলভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। আমরা হারাম শরিফ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ নামে একটি প্যাকেজ এবং দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ফলে রিয়ালের দাম বাড়ার পরও হজের খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে ঘিরে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় মসজিদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও সার্বিক পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে মুসল্লিদের দাবি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমরা শিগগিরই ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আশা করি, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় মসজিদের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।
গুটিকয়েক মসজিদ ছাড়া দেশের প্রায় সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। তাঁদের জন্য সরকার কি কোনো ন্যূনতম পে-স্কেল গঠন করতে পারে, যা নিয়োগদাতারা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশে সাড়ে ৩ লাখের মতো মসজিদ আছে। এ মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে এবং কমিউনিটির মানুষের কন্ট্রিবিউশনেই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বা সম্মানীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে। এটিই এ দেশের রেওয়াজ বা ঐতিহ্য। তবে সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যাতে মোটামুটি সম্মানজনক বেতন-ভাতা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্ব স্ব মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করার বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। যেসব মসজিদের আর্থিক অবস্থা ভালো, সেসব মসজিদ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
আইকনিক মসজিদ ও অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটসহ সৌদি সরকার বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে আপনার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৮টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আরেকটি মোট ৯টি আইকনিক মসজিদ এবং ঢাকায় একটি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইতিপূর্বে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। মসজিদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তবে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সম্প্রতি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশ করে আসছে। তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকার কী ভাবছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন যে ৮ দফা দাবিতে সভা-সমাবেশ করছে, তাদের দাবিগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
ডোনাল ট্রাম্প সম্প্রতি এক টুইটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ডোনাল ট্রাম্পের এই অভিযোগ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সম্ভবত তিনি নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল হিসেবে এমন অভিযোগ করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটেছে—এটা সত্য; তবে এ সময়ে মুসলমানদের বাড়িঘরেও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। এটা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সংকট হিসেবে চিত্রিত করার সুযোগ নেই। সরকার এ দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে যেসব দুর্বৃত্ত এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন আপনি। এ জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের কিছু সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পেশাদারত্বের চরম অভাব রয়েছে। অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয়ে দলবাজি করতে অতি উৎসাহী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাতে প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু রদবদল করা হয়েছে। অনেকের দপ্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে জনবলেরও বেশ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতাও আছে, আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
আপনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় আলেমদের সংসদে পাঠানোর কথা বলেছেন। আলেমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কী কী করতে পারেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশের আলেমরা জনসম্পৃক্ত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি পবিত্র জুমার নামাজে এ দেশের অসংখ্য মুসলমানের সঙ্গে আলেমদের যোগসূত্র তৈরি হয়। সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে হলে আলেমদের ধর্মীয় সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলেমদের সম্পৃক্ত হতে হবে।
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। আমি ইতিমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বেফাক নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আশা করি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন কমাতে নাগরিকদের করণীয় কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে আমাদের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য অটুট রাখতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকবেন, অন্য নাগরিকের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হবে। ঠিক একইভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থেকেই অনেক সময় মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এসব মতানৈক্য থাকার পরও মুসলমানেরাও কাছাকাছি আসতে পারে। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।
অধ্যাপনা ও ধর্মপ্রচারের মঞ্চ থেকে হঠাৎ রাষ্ট্রপরিচালনার মঞ্চে এলেন। এই স্বল্প মেয়াদের সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার প্রত্যাশাও অসীম। সব ধর্মের বিষয়গুলো আপনাকে দেখতে হচ্ছে। কেমন চাপ অনুভব করছেন সব মিলিয়ে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার কর্মক্ষেত্র যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি কর্মের পরিধিও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা পর্বতসম। বর্তমান বাস্তবতায় কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। সবটা মিলিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাব, ইনশা আল্লাহ।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের জন্য সরকারি খরচে হজে গমন বন্ধ করা এবং হজের খরচ কমানোর বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে রিয়ালের দাম প্রায় ৩ টাকা করে বাড়ার পরও কীভাবে হজের খরচ কমালেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: হজের খরচের খাতগুলো হলো—বিমানভাড়া, হোটেল বা আবাসন ব্যয়, খাবার খরচ, মিনা-আরাফায় তাঁবুভাড়া ও সেখানে অবস্থানকালীন খাবার খরচ, স্বাস্থ্যবিমা, বৈদ্যুতিক চার্জ, জমজমের পানি, ভিসা ফি, হজ গাইড, প্রশিক্ষণ, হাজিকল্যাণ তহবিল ইত্যাদি। এখানে বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া ছাড়া অন্য খাতগুলোতে খরচ কমানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই আমরা বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া কমানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর বিমানভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমানো হয়েছে। মক্কায় হারাম শরিফ থেকে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে হোটেলভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। আমরা হারাম শরিফ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ নামে একটি প্যাকেজ এবং দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ফলে রিয়ালের দাম বাড়ার পরও হজের খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে ঘিরে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় মসজিদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও সার্বিক পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে মুসল্লিদের দাবি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমরা শিগগিরই ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আশা করি, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় মসজিদের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।
গুটিকয়েক মসজিদ ছাড়া দেশের প্রায় সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। তাঁদের জন্য সরকার কি কোনো ন্যূনতম পে-স্কেল গঠন করতে পারে, যা নিয়োগদাতারা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশে সাড়ে ৩ লাখের মতো মসজিদ আছে। এ মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে এবং কমিউনিটির মানুষের কন্ট্রিবিউশনেই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বা সম্মানীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে। এটিই এ দেশের রেওয়াজ বা ঐতিহ্য। তবে সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যাতে মোটামুটি সম্মানজনক বেতন-ভাতা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্ব স্ব মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করার বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। যেসব মসজিদের আর্থিক অবস্থা ভালো, সেসব মসজিদ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
আইকনিক মসজিদ ও অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটসহ সৌদি সরকার বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে আপনার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৮টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আরেকটি মোট ৯টি আইকনিক মসজিদ এবং ঢাকায় একটি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইতিপূর্বে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। মসজিদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তবে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সম্প্রতি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশ করে আসছে। তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকার কী ভাবছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন যে ৮ দফা দাবিতে সভা-সমাবেশ করছে, তাদের দাবিগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
ডোনাল ট্রাম্প সম্প্রতি এক টুইটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ডোনাল ট্রাম্পের এই অভিযোগ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সম্ভবত তিনি নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল হিসেবে এমন অভিযোগ করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটেছে—এটা সত্য; তবে এ সময়ে মুসলমানদের বাড়িঘরেও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। এটা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সংকট হিসেবে চিত্রিত করার সুযোগ নেই। সরকার এ দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে যেসব দুর্বৃত্ত এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন আপনি। এ জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের কিছু সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পেশাদারত্বের চরম অভাব রয়েছে। অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয়ে দলবাজি করতে অতি উৎসাহী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাতে প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু রদবদল করা হয়েছে। অনেকের দপ্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে জনবলেরও বেশ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতাও আছে, আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
আপনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় আলেমদের সংসদে পাঠানোর কথা বলেছেন। আলেমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কী কী করতে পারেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশের আলেমরা জনসম্পৃক্ত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি পবিত্র জুমার নামাজে এ দেশের অসংখ্য মুসলমানের সঙ্গে আলেমদের যোগসূত্র তৈরি হয়। সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে হলে আলেমদের ধর্মীয় সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলেমদের সম্পৃক্ত হতে হবে।
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। আমি ইতিমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বেফাক নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আশা করি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন কমাতে নাগরিকদের করণীয় কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে আমাদের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য অটুট রাখতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকবেন, অন্য নাগরিকের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হবে। ঠিক একইভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থেকেই অনেক সময় মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এসব মতানৈক্য থাকার পরও মুসলমানেরাও কাছাকাছি আসতে পারে। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।
অধ্যাপনা ও ধর্মপ্রচারের মঞ্চ থেকে হঠাৎ রাষ্ট্রপরিচালনার মঞ্চে এলেন। এই স্বল্প মেয়াদের সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার প্রত্যাশাও অসীম। সব ধর্মের বিষয়গুলো আপনাকে দেখতে হচ্ছে। কেমন চাপ অনুভব করছেন সব মিলিয়ে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার কর্মক্ষেত্র যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি কর্মের পরিধিও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা পর্বতসম। বর্তমান বাস্তবতায় কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। সবটা মিলিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাব, ইনশা আল্লাহ।


দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিন পর আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। হজ-ওমরাহর ব্যবস্থাপনা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইজাজুল হক।
ইজাজুল হক

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের জন্য সরকারি খরচে হজে গমন বন্ধ করা এবং হজের খরচ কমানোর বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে রিয়ালের দাম প্রায় ৩ টাকা করে বাড়ার পরও কীভাবে হজের খরচ কমালেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: হজের খরচের খাতগুলো হলো—বিমানভাড়া, হোটেল বা আবাসন ব্যয়, খাবার খরচ, মিনা-আরাফায় তাঁবুভাড়া ও সেখানে অবস্থানকালীন খাবার খরচ, স্বাস্থ্যবিমা, বৈদ্যুতিক চার্জ, জমজমের পানি, ভিসা ফি, হজ গাইড, প্রশিক্ষণ, হাজিকল্যাণ তহবিল ইত্যাদি। এখানে বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া ছাড়া অন্য খাতগুলোতে খরচ কমানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই আমরা বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া কমানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর বিমানভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমানো হয়েছে। মক্কায় হারাম শরিফ থেকে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে হোটেলভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। আমরা হারাম শরিফ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ নামে একটি প্যাকেজ এবং দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ফলে রিয়ালের দাম বাড়ার পরও হজের খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে ঘিরে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় মসজিদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও সার্বিক পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে মুসল্লিদের দাবি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমরা শিগগিরই ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আশা করি, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় মসজিদের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।
গুটিকয়েক মসজিদ ছাড়া দেশের প্রায় সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। তাঁদের জন্য সরকার কি কোনো ন্যূনতম পে-স্কেল গঠন করতে পারে, যা নিয়োগদাতারা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশে সাড়ে ৩ লাখের মতো মসজিদ আছে। এ মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে এবং কমিউনিটির মানুষের কন্ট্রিবিউশনেই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বা সম্মানীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে। এটিই এ দেশের রেওয়াজ বা ঐতিহ্য। তবে সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যাতে মোটামুটি সম্মানজনক বেতন-ভাতা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্ব স্ব মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করার বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। যেসব মসজিদের আর্থিক অবস্থা ভালো, সেসব মসজিদ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
আইকনিক মসজিদ ও অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটসহ সৌদি সরকার বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে আপনার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৮টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আরেকটি মোট ৯টি আইকনিক মসজিদ এবং ঢাকায় একটি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইতিপূর্বে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। মসজিদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তবে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সম্প্রতি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশ করে আসছে। তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকার কী ভাবছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন যে ৮ দফা দাবিতে সভা-সমাবেশ করছে, তাদের দাবিগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
ডোনাল ট্রাম্প সম্প্রতি এক টুইটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ডোনাল ট্রাম্পের এই অভিযোগ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সম্ভবত তিনি নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল হিসেবে এমন অভিযোগ করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটেছে—এটা সত্য; তবে এ সময়ে মুসলমানদের বাড়িঘরেও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। এটা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সংকট হিসেবে চিত্রিত করার সুযোগ নেই। সরকার এ দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে যেসব দুর্বৃত্ত এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন আপনি। এ জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের কিছু সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পেশাদারত্বের চরম অভাব রয়েছে। অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয়ে দলবাজি করতে অতি উৎসাহী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাতে প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু রদবদল করা হয়েছে। অনেকের দপ্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে জনবলেরও বেশ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতাও আছে, আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
আপনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় আলেমদের সংসদে পাঠানোর কথা বলেছেন। আলেমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কী কী করতে পারেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশের আলেমরা জনসম্পৃক্ত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি পবিত্র জুমার নামাজে এ দেশের অসংখ্য মুসলমানের সঙ্গে আলেমদের যোগসূত্র তৈরি হয়। সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে হলে আলেমদের ধর্মীয় সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলেমদের সম্পৃক্ত হতে হবে।
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। আমি ইতিমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বেফাক নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আশা করি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন কমাতে নাগরিকদের করণীয় কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে আমাদের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য অটুট রাখতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকবেন, অন্য নাগরিকের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হবে। ঠিক একইভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থেকেই অনেক সময় মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এসব মতানৈক্য থাকার পরও মুসলমানেরাও কাছাকাছি আসতে পারে। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।
অধ্যাপনা ও ধর্মপ্রচারের মঞ্চ থেকে হঠাৎ রাষ্ট্রপরিচালনার মঞ্চে এলেন। এই স্বল্প মেয়াদের সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার প্রত্যাশাও অসীম। সব ধর্মের বিষয়গুলো আপনাকে দেখতে হচ্ছে। কেমন চাপ অনুভব করছেন সব মিলিয়ে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার কর্মক্ষেত্র যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি কর্মের পরিধিও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা পর্বতসম। বর্তমান বাস্তবতায় কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। সবটা মিলিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাব, ইনশা আল্লাহ।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের জন্য সরকারি খরচে হজে গমন বন্ধ করা এবং হজের খরচ কমানোর বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে রিয়ালের দাম প্রায় ৩ টাকা করে বাড়ার পরও কীভাবে হজের খরচ কমালেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: হজের খরচের খাতগুলো হলো—বিমানভাড়া, হোটেল বা আবাসন ব্যয়, খাবার খরচ, মিনা-আরাফায় তাঁবুভাড়া ও সেখানে অবস্থানকালীন খাবার খরচ, স্বাস্থ্যবিমা, বৈদ্যুতিক চার্জ, জমজমের পানি, ভিসা ফি, হজ গাইড, প্রশিক্ষণ, হাজিকল্যাণ তহবিল ইত্যাদি। এখানে বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া ছাড়া অন্য খাতগুলোতে খরচ কমানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই আমরা বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া কমানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর বিমানভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমানো হয়েছে। মক্কায় হারাম শরিফ থেকে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে হোটেলভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। আমরা হারাম শরিফ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ নামে একটি প্যাকেজ এবং দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ফলে রিয়ালের দাম বাড়ার পরও হজের খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে ঘিরে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় মসজিদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও সার্বিক পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে মুসল্লিদের দাবি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমরা শিগগিরই ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আশা করি, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় মসজিদের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।
গুটিকয়েক মসজিদ ছাড়া দেশের প্রায় সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। তাঁদের জন্য সরকার কি কোনো ন্যূনতম পে-স্কেল গঠন করতে পারে, যা নিয়োগদাতারা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশে সাড়ে ৩ লাখের মতো মসজিদ আছে। এ মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে এবং কমিউনিটির মানুষের কন্ট্রিবিউশনেই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বা সম্মানীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে। এটিই এ দেশের রেওয়াজ বা ঐতিহ্য। তবে সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যাতে মোটামুটি সম্মানজনক বেতন-ভাতা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্ব স্ব মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করার বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। যেসব মসজিদের আর্থিক অবস্থা ভালো, সেসব মসজিদ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
আইকনিক মসজিদ ও অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটসহ সৌদি সরকার বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে আপনার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৮টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আরেকটি মোট ৯টি আইকনিক মসজিদ এবং ঢাকায় একটি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইতিপূর্বে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। মসজিদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তবে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সম্প্রতি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশ করে আসছে। তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকার কী ভাবছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন যে ৮ দফা দাবিতে সভা-সমাবেশ করছে, তাদের দাবিগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
ডোনাল ট্রাম্প সম্প্রতি এক টুইটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ডোনাল ট্রাম্পের এই অভিযোগ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সম্ভবত তিনি নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল হিসেবে এমন অভিযোগ করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটেছে—এটা সত্য; তবে এ সময়ে মুসলমানদের বাড়িঘরেও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। এটা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সংকট হিসেবে চিত্রিত করার সুযোগ নেই। সরকার এ দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে যেসব দুর্বৃত্ত এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন আপনি। এ জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের কিছু সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পেশাদারত্বের চরম অভাব রয়েছে। অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয়ে দলবাজি করতে অতি উৎসাহী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাতে প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু রদবদল করা হয়েছে। অনেকের দপ্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে জনবলেরও বেশ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতাও আছে, আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
আপনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় আলেমদের সংসদে পাঠানোর কথা বলেছেন। আলেমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কী কী করতে পারেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশের আলেমরা জনসম্পৃক্ত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি পবিত্র জুমার নামাজে এ দেশের অসংখ্য মুসলমানের সঙ্গে আলেমদের যোগসূত্র তৈরি হয়। সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে হলে আলেমদের ধর্মীয় সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলেমদের সম্পৃক্ত হতে হবে।
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। আমি ইতিমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বেফাক নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আশা করি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন কমাতে নাগরিকদের করণীয় কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে আমাদের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য অটুট রাখতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকবেন, অন্য নাগরিকের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হবে। ঠিক একইভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থেকেই অনেক সময় মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এসব মতানৈক্য থাকার পরও মুসলমানেরাও কাছাকাছি আসতে পারে। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।
অধ্যাপনা ও ধর্মপ্রচারের মঞ্চ থেকে হঠাৎ রাষ্ট্রপরিচালনার মঞ্চে এলেন। এই স্বল্প মেয়াদের সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার প্রত্যাশাও অসীম। সব ধর্মের বিষয়গুলো আপনাকে দেখতে হচ্ছে। কেমন চাপ অনুভব করছেন সব মিলিয়ে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার কর্মক্ষেত্র যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি কর্মের পরিধিও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা পর্বতসম। বর্তমান বাস্তবতায় কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। সবটা মিলিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাব, ইনশা আল্লাহ।


নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৮ মিনিট আগে
আমি বিয়ে করেছি প্রায় ২৫ বছর হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এখনো কোনো সন্তান দেননি। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, আমার স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি এতিম সন্তান দত্তক নেব। ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার সঠিক বিধান জানালে উপকৃত হব।
১৬ ঘণ্টা আগে
সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিজেদের অধিকার রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি এক মৌলিক ভিত্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে ঐক্যের মূল সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, অর্থাৎ এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস।
১৭ ঘণ্টা আগে
জমাদিউল আউয়ালের দ্বিতীয় জুমা আমাদের শেখায়—জীবনের প্রতিটি জুমা হতে পারে একটি নতুন শুরু, যদি আমরা অন্তর দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করি। তাই এই জুমা হোক আত্মার জাগরণের সূচনা। পাপমুক্ত জীবনের শপথ, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা।
১৭ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ | 
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০:০০ | ০৪: ৪৬ মিনিট | 
| ফজর | ০৪: ৪৭ মিনিট | ০৬: ০৩ মিনিট | 
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪২ মিনিট | 
| আসর | ০৩: ৪৩ মিনিট | ০৫: ১৮ মিনিট | 
| মাগরিব | ০৫: ২০ মিনিট | ০৬: ৩৬ মিনিট | 
| এশা | ০৬: ৩৬ মিনিট | ০৪: ৪৬ মিনিট | 
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ | 
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০:০০ | ০৪: ৪৬ মিনিট | 
| ফজর | ০৪: ৪৭ মিনিট | ০৬: ০৩ মিনিট | 
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪২ মিনিট | 
| আসর | ০৩: ৪৩ মিনিট | ০৫: ১৮ মিনিট | 
| মাগরিব | ০৫: ২০ মিনিট | ০৬: ৩৬ মিনিট | 
| এশা | ০৬: ৩৬ মিনিট | ০৪: ৪৬ মিনিট | 
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।


দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিন পর আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। হজ-ওমরাহর ব্যবস্থাপনা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে
০৮ নভেম্বর ২০২৪
আমি বিয়ে করেছি প্রায় ২৫ বছর হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এখনো কোনো সন্তান দেননি। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, আমার স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি এতিম সন্তান দত্তক নেব। ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার সঠিক বিধান জানালে উপকৃত হব।
১৬ ঘণ্টা আগে
সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিজেদের অধিকার রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি এক মৌলিক ভিত্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে ঐক্যের মূল সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, অর্থাৎ এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস।
১৭ ঘণ্টা আগে
জমাদিউল আউয়ালের দ্বিতীয় জুমা আমাদের শেখায়—জীবনের প্রতিটি জুমা হতে পারে একটি নতুন শুরু, যদি আমরা অন্তর দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করি। তাই এই জুমা হোক আত্মার জাগরণের সূচনা। পাপমুক্ত জীবনের শপথ, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা।
১৭ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

আমি বিয়ে করেছি প্রায় ২৫ বছর হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এখনো কোনো সন্তান দেননি। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, আমার স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি এতিম সন্তান দত্তক নেব। ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার সঠিক বিধান জানালে উপকৃত হব।
আলমগীর দেওয়ান, সিলেট
আপনার ২৫ বছরের দাম্পত্যজীবনে সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা এবং সন্তানহীনতার শূন্যতা পূরণে একটি শিশুকে লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত মানবিক ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ইসলাম আপনার এই মহৎ সিদ্ধান্তকে শুধু অনুমোদনই করে না, বরং এতিম, গৃহহীন বা অসহায় শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে অত্যন্ত সওয়াবের কাজ হিসেবে উৎসাহিত করে। তবে শরিয়তের কিছু মৌলিক নীতিমালা মেনে এটি করতে হবে, যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
দত্তক নিলে মানতে হবে যেসব বিধান
ইসলামে অন্য কারও সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ, মমতা, অন্ন, বস্ত্র ও শিক্ষা দিয়ে লালন-পালন করাকে কাফালাহ বা অভিভাবকত্ব গ্রহণ বলা হয়। এটি বৈধ, বলা যায় এটি একটি মহৎ ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এতিম বা অসহায় শিশুর দায়িত্ব নেওয়াকে বিপুল সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। (সহিহ বুখারি: ৬০০৫)
তবে সাধারণ অর্থে প্রচলিত দত্তক প্রথা ইসলাম সমর্থন করে না, যেখানে সন্তানের আসল পিতামাতার পরিচয় মুছে ফেলা হয় এবং তাকে জৈবিক সন্তানের মতো সকল আইনি অধিকার (উত্তরাধিকার ও পর্দা) দেওয়া হয়। বরং ইসলাম অনুমোদন করে কাফালাহ, যার মূল শর্ত হলো শিশুর আসল পিতৃপরিচয় বহাল রাখা।
ইসলামে কোনো স্বাধীন মানুষের প্রকৃত পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম ও কবিরা গুনাহ। দত্তক নেওয়ার কারণে শিশুর আসল মা-বাবা ও বংশের সম্পর্ক কোনোভাবেই বিলুপ্ত হবে না। তাই শিশুর জন্মসনদ, শিক্ষাসনদ, ভোটার আইডি বা অন্য যেকোনো দাপ্তরিক দলিলে তার আসল পিতার নাম উল্লেখ করা আবশ্যক।
দত্তক নেওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো পর্দার বিষয়টি। লালন-পালনকারীর সঙ্গে পালিত সন্তানের রক্তের সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। ফলে পালক নেওয়া শিশুটি ছেলে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে পালক মায়ের সঙ্গে এবং মেয়ে হলে পালক বাবার সঙ্গে শরিয়তের পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। পর্দার এই কঠোরতা এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো—শিশুটিকে দুগ্ধপোষ্য অবস্থায় (জন্মের পর প্রথম দুই বছরের মধ্যে) পালক নেওয়া মায়ের কোনো বোন বা মেয়ে দ্বারা এমনভাবে দুধ পান করানো, যাতে সে দুগ্ধ-সম্পর্কীয় মাহরাম হয়ে যায়। দুগ্ধ-সম্পর্ক তৈরি হলে তাদের মধ্যে পর্দা আর আবশ্যক থাকবে না। (সহিহ বুখারি: ২৬৪৫)
পালক সন্তান লালন-পালনকারীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী (ওয়ারিশ) হিসেবে তাঁর সম্পত্তি থেকে কোনো অংশ পাবে না। কারণ রক্তের সম্পর্ক না থাকায় সে মিরাসের হকদার হয় না। তবে, লালন-পালনকারী তাঁর জীবদ্দশায় স্নেহবশত পালক সন্তানকে সম্পত্তি দান বা হেবা করতে পারবেন। অথবা, তিনি তাঁর মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে পালক সন্তানের জন্য অসিয়ত (উইল) করে যেতে পারবেন।
পোষ্য সন্তানের তার লালন-পালনকারীকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতাবশত মা-বাবা বলে ডাকা জায়েজ। একইভাবে তাঁরাও সন্তানকে স্নেহ করে ছেলেমেয়ে ডাকতে পারবেন।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

আমি বিয়ে করেছি প্রায় ২৫ বছর হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এখনো কোনো সন্তান দেননি। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, আমার স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি এতিম সন্তান দত্তক নেব। ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার সঠিক বিধান জানালে উপকৃত হব।
আলমগীর দেওয়ান, সিলেট
আপনার ২৫ বছরের দাম্পত্যজীবনে সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা এবং সন্তানহীনতার শূন্যতা পূরণে একটি শিশুকে লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত মানবিক ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ইসলাম আপনার এই মহৎ সিদ্ধান্তকে শুধু অনুমোদনই করে না, বরং এতিম, গৃহহীন বা অসহায় শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে অত্যন্ত সওয়াবের কাজ হিসেবে উৎসাহিত করে। তবে শরিয়তের কিছু মৌলিক নীতিমালা মেনে এটি করতে হবে, যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
দত্তক নিলে মানতে হবে যেসব বিধান
ইসলামে অন্য কারও সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ, মমতা, অন্ন, বস্ত্র ও শিক্ষা দিয়ে লালন-পালন করাকে কাফালাহ বা অভিভাবকত্ব গ্রহণ বলা হয়। এটি বৈধ, বলা যায় এটি একটি মহৎ ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এতিম বা অসহায় শিশুর দায়িত্ব নেওয়াকে বিপুল সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। (সহিহ বুখারি: ৬০০৫)
তবে সাধারণ অর্থে প্রচলিত দত্তক প্রথা ইসলাম সমর্থন করে না, যেখানে সন্তানের আসল পিতামাতার পরিচয় মুছে ফেলা হয় এবং তাকে জৈবিক সন্তানের মতো সকল আইনি অধিকার (উত্তরাধিকার ও পর্দা) দেওয়া হয়। বরং ইসলাম অনুমোদন করে কাফালাহ, যার মূল শর্ত হলো শিশুর আসল পিতৃপরিচয় বহাল রাখা।
ইসলামে কোনো স্বাধীন মানুষের প্রকৃত পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম ও কবিরা গুনাহ। দত্তক নেওয়ার কারণে শিশুর আসল মা-বাবা ও বংশের সম্পর্ক কোনোভাবেই বিলুপ্ত হবে না। তাই শিশুর জন্মসনদ, শিক্ষাসনদ, ভোটার আইডি বা অন্য যেকোনো দাপ্তরিক দলিলে তার আসল পিতার নাম উল্লেখ করা আবশ্যক।
দত্তক নেওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো পর্দার বিষয়টি। লালন-পালনকারীর সঙ্গে পালিত সন্তানের রক্তের সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। ফলে পালক নেওয়া শিশুটি ছেলে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে পালক মায়ের সঙ্গে এবং মেয়ে হলে পালক বাবার সঙ্গে শরিয়তের পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। পর্দার এই কঠোরতা এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো—শিশুটিকে দুগ্ধপোষ্য অবস্থায় (জন্মের পর প্রথম দুই বছরের মধ্যে) পালক নেওয়া মায়ের কোনো বোন বা মেয়ে দ্বারা এমনভাবে দুধ পান করানো, যাতে সে দুগ্ধ-সম্পর্কীয় মাহরাম হয়ে যায়। দুগ্ধ-সম্পর্ক তৈরি হলে তাদের মধ্যে পর্দা আর আবশ্যক থাকবে না। (সহিহ বুখারি: ২৬৪৫)
পালক সন্তান লালন-পালনকারীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী (ওয়ারিশ) হিসেবে তাঁর সম্পত্তি থেকে কোনো অংশ পাবে না। কারণ রক্তের সম্পর্ক না থাকায় সে মিরাসের হকদার হয় না। তবে, লালন-পালনকারী তাঁর জীবদ্দশায় স্নেহবশত পালক সন্তানকে সম্পত্তি দান বা হেবা করতে পারবেন। অথবা, তিনি তাঁর মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে পালক সন্তানের জন্য অসিয়ত (উইল) করে যেতে পারবেন।
পোষ্য সন্তানের তার লালন-পালনকারীকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতাবশত মা-বাবা বলে ডাকা জায়েজ। একইভাবে তাঁরাও সন্তানকে স্নেহ করে ছেলেমেয়ে ডাকতে পারবেন।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক


দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিন পর আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। হজ-ওমরাহর ব্যবস্থাপনা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে
০৮ নভেম্বর ২০২৪
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৮ মিনিট আগে
সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিজেদের অধিকার রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি এক মৌলিক ভিত্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে ঐক্যের মূল সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, অর্থাৎ এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস।
১৭ ঘণ্টা আগে
জমাদিউল আউয়ালের দ্বিতীয় জুমা আমাদের শেখায়—জীবনের প্রতিটি জুমা হতে পারে একটি নতুন শুরু, যদি আমরা অন্তর দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করি। তাই এই জুমা হোক আত্মার জাগরণের সূচনা। পাপমুক্ত জীবনের শপথ, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা।
১৭ ঘণ্টা আগেকাউসার লাবীব

সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিজেদের অধিকার রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি এক মৌলিক ভিত্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে ঐক্যের মূল সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, অর্থাৎ এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস। মুসলিম ঐক্যের ভিত্তি তিনটি মৌলিক উপাদানের ওপর প্রতিষ্ঠিত: এক. আল্লাহ, দুই. রাসুলুল্লাহ ও তিন. কিতাবুল্লাহ। যার অর্থ—এক আল্লাহর প্রতি অবিচল ইমান, তাঁর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সম্পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর কিতাব পবিত্র কোরআনের পরিপূর্ণ অনুসরণ। এই ভিত্তিই মুসলমানদের জাতি, বর্ণ ও ভাষার ঊর্ধ্বে এক অভিন্ন জাতিসত্তায় পরিণত করে।
মহানবী (সা.) মুমিনের পরিচয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন, ‘যারা আমাদের নামাজ মানে, আমাদের কিবলা মানে এবং আমাদের জবাই করা হালাল পশুকে হালাল মনে করে; তারা মুসলিম। তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জিম্মাদারি খিয়ানত কোরো না।’ (সহিহ বুখারি: ৩৮৪-৩৮৫)।
ঐক্যবদ্ধ থাকার সুফল
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে মুমিনদের ঐক্য ও সংহতির বিষয়ে বারবার জোর দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো। যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরগুলোয় প্রীতি দিয়েছেন, ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃরূপ লাভ করেছ।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)। এখানে আল্লাহর রজ্জু বলতে ইসলাম ও কোরআনের বিধানকে বোঝানো হয়েছে, যা একাধারে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক এবং মুসলমানদের পরস্পরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার মাধ্যম।
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর কলহ কোরো না (ঐক্যবদ্ধ থাকো)। অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল: ৪৬)। এই আয়াত পরিষ্কারভাবে বোঝায় যে অনৈক্য কেবল গুনাহের কাজ নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর শক্তি, প্রতিপত্তি ও সুনাম নষ্টের প্রধান কারণ।
ইসলামে মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুমিনেরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা হুজরাত: ১০)। এই সম্পর্কের নিদর্শন হলো পারস্পরিক সহানুভূতি, করুণা ও দয়ার্দ্রতা।
মহানবী (সা.) এই সম্পর্কের গভীরতাকে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসী মুমিনগণ সম্প্রীতি, করুণা ও দয়ার্দ্রতায় যেন এক দেহ এক প্রাণ—যেমন শরীরের একটি অঙ্গে আঘাত পেলে সারা অঙ্গ ব্যথা অনুভব করে, যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটায় ও জ্বরে ঘর্মাক্ত হয়।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। অর্থাৎ, একজন মুসলিমের বিপদ বা দুঃখকে অপর মুসলিম তার নিজের কষ্ট হিসেবে অনুভব করবে—এটাই ইসলামের শিক্ষা। মহানবী (সা.)-এর ভাষায়, প্রকৃত মুমিন তো সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে।’ (সহিহ বুখারি)।
বিভেদ ও মতানৈক্য নিরসনের পথ
মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য বা দ্বন্দ্ব-বিবাদ থাকা স্বাভাবিক। তবে ইসলামে এই মতানৈক্য বহাল রেখে বিচ্ছিন্ন থাকার কোনো সুযোগ নেই। মতবিরোধের সৃষ্টি হলে এর সমাধানের জন্য কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসুলের দিকে প্রত্যর্পণ করো, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখো। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।’ (সুরা নিসা: ৫৯)। এ ছাড়া, বিবাদ দেখা দিলে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে, নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার কথা।
অনৈক্যের পরিণাম ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ অনৈক্য, বিভেদ-বিসংবাদ ও কলহে জর্জরিত। ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বিভাজন আজ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, সারা বিশ্বে মুসলমানেরা নিপীড়িত-নির্যাতিত এবং তাদের রক্ত ঝরছে। এই বিভেদ জিইয়ে রাখা শয়তানের কাজ, যা উম্মাহর মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
ইতিহাস সাক্ষী, ঐক্যই শক্তি। পশ্চিমা শক্তিগুলো যখন তাদের ঐতিহাসিক শত্রুতা ভুলে নিজেদের স্বার্থে একই প্ল্যাটফর্মে সমবেত হয়, তখন মুসলিম দেশগুলো নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ও বিভাজনে ডুবে থাকে। মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ না থাকার কারণেই বহির্বিশ্বে আজ মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে, নিজ ভূখণ্ডে দাসে পরিণত হচ্ছে এবং মজলুমদের কান্না থামছে না।
আখিরাতে মুক্তি ও দুনিয়ায় সফলতার জন্য পারস্পরিক ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য। সকল ভেদাভেদ, বিভেদ-বিভাজন ভুলে এক জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকা মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। বিভেদ নয়, বরং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে সহিষ্ণুতা ও কল্যাণকামিতার ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করতে পারলেই আমরা আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র হতে পারব এবং বহিঃশত্রুর সামনে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হতে পারব।

সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিজেদের অধিকার রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি এক মৌলিক ভিত্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে ঐক্যের মূল সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, অর্থাৎ এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস। মুসলিম ঐক্যের ভিত্তি তিনটি মৌলিক উপাদানের ওপর প্রতিষ্ঠিত: এক. আল্লাহ, দুই. রাসুলুল্লাহ ও তিন. কিতাবুল্লাহ। যার অর্থ—এক আল্লাহর প্রতি অবিচল ইমান, তাঁর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সম্পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর কিতাব পবিত্র কোরআনের পরিপূর্ণ অনুসরণ। এই ভিত্তিই মুসলমানদের জাতি, বর্ণ ও ভাষার ঊর্ধ্বে এক অভিন্ন জাতিসত্তায় পরিণত করে।
মহানবী (সা.) মুমিনের পরিচয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন, ‘যারা আমাদের নামাজ মানে, আমাদের কিবলা মানে এবং আমাদের জবাই করা হালাল পশুকে হালাল মনে করে; তারা মুসলিম। তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জিম্মাদারি খিয়ানত কোরো না।’ (সহিহ বুখারি: ৩৮৪-৩৮৫)।
ঐক্যবদ্ধ থাকার সুফল
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে মুমিনদের ঐক্য ও সংহতির বিষয়ে বারবার জোর দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো। যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরগুলোয় প্রীতি দিয়েছেন, ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃরূপ লাভ করেছ।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)। এখানে আল্লাহর রজ্জু বলতে ইসলাম ও কোরআনের বিধানকে বোঝানো হয়েছে, যা একাধারে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক এবং মুসলমানদের পরস্পরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার মাধ্যম।
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর কলহ কোরো না (ঐক্যবদ্ধ থাকো)। অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল: ৪৬)। এই আয়াত পরিষ্কারভাবে বোঝায় যে অনৈক্য কেবল গুনাহের কাজ নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর শক্তি, প্রতিপত্তি ও সুনাম নষ্টের প্রধান কারণ।
ইসলামে মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুমিনেরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা হুজরাত: ১০)। এই সম্পর্কের নিদর্শন হলো পারস্পরিক সহানুভূতি, করুণা ও দয়ার্দ্রতা।
মহানবী (সা.) এই সম্পর্কের গভীরতাকে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসী মুমিনগণ সম্প্রীতি, করুণা ও দয়ার্দ্রতায় যেন এক দেহ এক প্রাণ—যেমন শরীরের একটি অঙ্গে আঘাত পেলে সারা অঙ্গ ব্যথা অনুভব করে, যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটায় ও জ্বরে ঘর্মাক্ত হয়।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। অর্থাৎ, একজন মুসলিমের বিপদ বা দুঃখকে অপর মুসলিম তার নিজের কষ্ট হিসেবে অনুভব করবে—এটাই ইসলামের শিক্ষা। মহানবী (সা.)-এর ভাষায়, প্রকৃত মুমিন তো সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে।’ (সহিহ বুখারি)।
বিভেদ ও মতানৈক্য নিরসনের পথ
মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য বা দ্বন্দ্ব-বিবাদ থাকা স্বাভাবিক। তবে ইসলামে এই মতানৈক্য বহাল রেখে বিচ্ছিন্ন থাকার কোনো সুযোগ নেই। মতবিরোধের সৃষ্টি হলে এর সমাধানের জন্য কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসুলের দিকে প্রত্যর্পণ করো, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখো। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।’ (সুরা নিসা: ৫৯)। এ ছাড়া, বিবাদ দেখা দিলে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে, নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার কথা।
অনৈক্যের পরিণাম ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ অনৈক্য, বিভেদ-বিসংবাদ ও কলহে জর্জরিত। ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বিভাজন আজ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, সারা বিশ্বে মুসলমানেরা নিপীড়িত-নির্যাতিত এবং তাদের রক্ত ঝরছে। এই বিভেদ জিইয়ে রাখা শয়তানের কাজ, যা উম্মাহর মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
ইতিহাস সাক্ষী, ঐক্যই শক্তি। পশ্চিমা শক্তিগুলো যখন তাদের ঐতিহাসিক শত্রুতা ভুলে নিজেদের স্বার্থে একই প্ল্যাটফর্মে সমবেত হয়, তখন মুসলিম দেশগুলো নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ও বিভাজনে ডুবে থাকে। মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ না থাকার কারণেই বহির্বিশ্বে আজ মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে, নিজ ভূখণ্ডে দাসে পরিণত হচ্ছে এবং মজলুমদের কান্না থামছে না।
আখিরাতে মুক্তি ও দুনিয়ায় সফলতার জন্য পারস্পরিক ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য। সকল ভেদাভেদ, বিভেদ-বিভাজন ভুলে এক জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকা মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। বিভেদ নয়, বরং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে সহিষ্ণুতা ও কল্যাণকামিতার ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করতে পারলেই আমরা আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র হতে পারব এবং বহিঃশত্রুর সামনে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হতে পারব।


দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিন পর আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। হজ-ওমরাহর ব্যবস্থাপনা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে
০৮ নভেম্বর ২০২৪
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৮ মিনিট আগে
আমি বিয়ে করেছি প্রায় ২৫ বছর হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এখনো কোনো সন্তান দেননি। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, আমার স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি এতিম সন্তান দত্তক নেব। ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার সঠিক বিধান জানালে উপকৃত হব।
১৬ ঘণ্টা আগে
জমাদিউল আউয়ালের দ্বিতীয় জুমা আমাদের শেখায়—জীবনের প্রতিটি জুমা হতে পারে একটি নতুন শুরু, যদি আমরা অন্তর দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করি। তাই এই জুমা হোক আত্মার জাগরণের সূচনা। পাপমুক্ত জীবনের শপথ, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা।
১৭ ঘণ্টা আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

হিজরি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। এ মাসের নামেই রয়েছে গভীর এক ইঙ্গিত। জমাদাহ অর্থ শুষ্কতা, আর আউয়াল মানে প্রথম। যেমন প্রকৃতি শুষ্ক হয়ে বৃষ্টি পেলে সজীব হয়, তেমনি মানুষের হৃদয়ও অনেক সময় আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে গিয়ে শুকিয়ে যায়।
এ মাসের দ্বিতীয় জুমা সেই শুষ্ক হৃদয়কে নরম করার, আত্মাকে জাগ্রত করার সময়।
জুমা-রহমত ও বরকতের দিন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো।’ (সুরা জুমা: ৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা কবুল করেন।’ (সহিহ্ বুখারি: ৯৩৫)। অতএব, জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও দোয়া কবুলের বিশেষ সময়।
পরিশেষে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর দিকে আন্তরিক তওবা করো। (সুরা তাহরিম: ৮)
জমাদিউল আউয়ালের দ্বিতীয় জুমা আমাদের শেখায়—জীবনের প্রতিটি জুমা হতে পারে একটি নতুন শুরু, যদি আমরা অন্তর দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করি। তাই এই জুমা হোক আত্মার জাগরণের সূচনা। পাপমুক্ত জীবনের শপথ, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি

হিজরি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। এ মাসের নামেই রয়েছে গভীর এক ইঙ্গিত। জমাদাহ অর্থ শুষ্কতা, আর আউয়াল মানে প্রথম। যেমন প্রকৃতি শুষ্ক হয়ে বৃষ্টি পেলে সজীব হয়, তেমনি মানুষের হৃদয়ও অনেক সময় আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে গিয়ে শুকিয়ে যায়।
এ মাসের দ্বিতীয় জুমা সেই শুষ্ক হৃদয়কে নরম করার, আত্মাকে জাগ্রত করার সময়।
জুমা-রহমত ও বরকতের দিন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো।’ (সুরা জুমা: ৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা কবুল করেন।’ (সহিহ্ বুখারি: ৯৩৫)। অতএব, জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও দোয়া কবুলের বিশেষ সময়।
পরিশেষে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর দিকে আন্তরিক তওবা করো। (সুরা তাহরিম: ৮)
জমাদিউল আউয়ালের দ্বিতীয় জুমা আমাদের শেখায়—জীবনের প্রতিটি জুমা হতে পারে একটি নতুন শুরু, যদি আমরা অন্তর দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করি। তাই এই জুমা হোক আত্মার জাগরণের সূচনা। পাপমুক্ত জীবনের শপথ, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি


দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিন পর আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। হজ-ওমরাহর ব্যবস্থাপনা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে
০৮ নভেম্বর ২০২৪
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৮ মিনিট আগে
আমি বিয়ে করেছি প্রায় ২৫ বছর হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এখনো কোনো সন্তান দেননি। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, আমার স্ত্রীর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি এতিম সন্তান দত্তক নেব। ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার সঠিক বিধান জানালে উপকৃত হব।
১৬ ঘণ্টা আগে
সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিজেদের অধিকার রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি এক মৌলিক ভিত্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে ঐক্যের মূল সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, অর্থাৎ এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস।
১৭ ঘণ্টা আগে