Ajker Patrika

সুরা ইয়াসিনে বর্ণিত ইন্তাকিয়া জনপদের বিস্ময়কর ঘটনা

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ১২
সুরা ইয়াসিন। ছবি: সংগৃহীত
সুরা ইয়াসিন। ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠী ও তাদের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন এই দৃষ্টান্ত দেখে আল্লাহর প্রতি ইমান আনে এবং সঠিক পথে ফিরে আসে। সুরা ইয়াসিনে তেমনই এক জনপদের কথা এসেছে, যার নাম ছিল ‘ইন্তাকিয়া।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর উদ্ধৃতিতে ইবনে কাসির (রহ.) এই জনপদের কথাই উল্লেখ করেছেন।

ইন্তাকিয়া জনপদ ও তিন রাসুলের আগমন

ইন্তাকিয়া জনপদের অধিবাসীদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তাআলা প্রথমে দুজন রাসুল প্রেরণ করেন, কিন্তু তারা সেই রাসুলদের মিথ্যাবাদী বলে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর আল্লাহ তাদের ওপর রহম করে তৃতীয় আরেকজনকে রাসুল হিসেবে পাঠান। এই জনপদের অধিবাসীরা তিনজন রাসুলকেই অস্বীকার করে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘আমি তাদের নিকট দুজন রাসুল প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর ওরা তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। তখন আমি তাদের শক্তিশালী করলাম তৃতীয় আরেকজনের মাধ্যমে।’ (সুরা ইয়াসিন: ১৪)। তাফসিরে ইবনে কাসির (রহ.)-এর বর্ণনামতে, সেই রাসুল তিনজনের নাম ছিল সাদেক, সদুক ও শালুম। অন্য এক বর্ণনায় তাদের নাম শামউন, ইউহান্না ও বুলিস বলা হয়েছে।

হাবিবের ইমান ও শাহাদাত

জনপদবাসী যখন তিন রাসুলকে অস্বীকার করে তাদের হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন এক সাধারণ মুমিন ব্যক্তি রাসুলদের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে দ্রুত সম্প্রদায়ের মধ্যে উপস্থিত হন। তিনি জনপদবাসীদের রাসুলদের অনুসরণ করার উপদেশ দেন এবং নিজেই ঘোষণা দেন, ‘আমি তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম, তোমরা শুনে রাখো।’ (সুরা ইয়াসিন: ২৫)

তাফসিরে ইবনে কাসিরে এই ইমানদার ব্যক্তির নাম ‘হাবিব’ বলা হয়েছে। তিনি পেশায় ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি এবং কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি সত্তরেরও বেশি বছর ধরে মূর্তিপূজা করে আসছিলেন। পাঠানো রাসুলগণ ঘটনাক্রমে তার সঙ্গেই প্রথম সাক্ষাতের পর তাকে এক আল্লাহর ওপর ইমান আনার দাওয়াত দেন। হাবিব তাদের কাছে তার রোগমুক্তির জন্য দোয়া করতে বললে, রাসুলগণ বলেন—‘তাদের রব সর্বশক্তিমান এবং তিনি তাকে সুস্থ করে দেবেন।’ হাবিব ইমান আনার পর সম্পূর্ণ নিরাময় লাভ করেন। এতে তার ইমান আরও দৃঢ় হয়।

যখন রাসুলদের বিরুদ্ধে শহরবাসীর বিক্ষোভের সংবাদ তিনি পেলেন, তখন তিনি ছুটে এলেন এবং সম্প্রদায়ের সামনে ইমান ঘোষণা করলেন। ফলে জনপদবাসী তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, তাকে লাথি মেরে মেরে শহীদ করে দেওয়া হয়। বেদম প্রহারের সময়ও তিনি—‘হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করুন’ বলে যাচ্ছিলেন। এভাবে হাবিব বীরত্বের সঙ্গে আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যান।

ধ্বংসাত্মক পরিণাম

ইন্তাকিয়া জনপদের অধিবাসীদের এই ধৃষ্টতার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর কঠিন শাস্তি প্রেরণ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের ওপর আকাশ থেকে কোনো বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী) অবতরণকারীও না। প্রকৃতপক্ষে এ ছিল এক ভয়ংকর শব্দ। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।’ (সুরা ইয়াসিন: ২৮-২৯)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলা হজরত জিবরাইল (আ.)-কে পাঠালেন। তিনি ইন্তাকিয়া শহরের দরজার দুই বাহু ধরে এমন কঠোর ও বিকট আওয়াজ করলেন, যার ফলে সবার দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে যায় এবং সবাই নিথর হয়ে পড়ে।

এই কাহিনি থেকে মুমিনদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে—আল্লাহর পথে দৃঢ় ইমান ও ধৈর্যের জন্য রয়েছে মহৎ পুরস্কার, আর আল্লাহর রাসুলদের প্রত্যাখ্যান ও মুমিনদের ওপর জুলুমের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।

লেখক: মুস্তাফিজ গাজী, আলেম প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে—অডিও ফাঁস

নেছারাবাদের সেই প্রধান শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক করল শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন চাননি সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত