জারিয়াতুল হাফসা
ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও আবেগঘন বহুমাত্রিক গুরুত্ব নিয়ে জেরুজালেম শহরে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিমদের প্রাণের স্থাপনা মসজিদুল আকসা। মসজিদুল আকসার পুরো প্রাঙ্গণের আয়তন এক লাখ ৪৪ হাজার বর্গমিটার, যা প্রায় ৩৫ একর জায়গা দখল করে আছে।
এর মধ্যে রয়েছে আল-আকসা মসজিদ (সুবিশাল নামাজঘর), কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক)–স্বর্ণরঙা গম্বুজবিশিষ্ট ভবন এবং আরও ছোট ছোট ধর্মীয় কাঠামো।
নির্মাণের পটভূমি ও ইতিহাস
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি প্রথম নির্মাণ করেন হজরত আদম (আ.)। পরে তা পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও সুলায়মান (আ.)। এ ছাড়া সপ্তম শতাব্দীতে মুসলিম খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) জেরুজালেম বিজয়ের পর সেখানে একটি কাঠের মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান এবং তার পুত্র আল-ওয়ালিদ এর শাসনামলে (প্রায় ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে) বর্তমান আকৃতি ধারণ করে। মূল মসজিদ এবং কুব্বাতুস সাখরা উভয়ই তখন নির্মিত হয়।
মসজিদুল আকসা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
১. ধর্মীয় গুরুত্ব:
ক. আল আকসা ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ (মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর পর)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র মহান সত্তা তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত...’ (সুরা ইসরা: ১)
এই ভ্রমণকে ইসরা ও মেরাজ বলা হয়, যেখানে রাসুল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আকাশমণ্ডলে উঠেছিলেন।
খ. মুসলিমরা শুরুতে আল-আকসা মসজিদের দিকেই কিবলা হিসেবে নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ এটি মুসলিমদের প্রথম কিবলা।
গ. ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় মহানবী (সা.) জিবরাইল (আ.) এর সঙ্গে মক্কা (মসজিদে হারাম) থেকে মসজিদে আকসায় পৌঁছানোর পর সেখানে সকল নবীদের ইমাম হিসেবে নামাজ আদায় করেন।
এই ঘটনা বহু সহিহ্ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে—‘আমি সেখানে অনেক নবীকে দেখতে পেলাম। জিবরাইল (আ.) আমাকে সামনে দাঁড় করালেন এবং আমি তাদের ইমাম হিসেবে নামাজ আদায় করালাম।’ (সহিহ্ মুসলিম, জামে তিরমিজি, সুনানে নাসায়ি)
২. ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ক. আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত জেরুজালেম (বায়তুল মুকাদ্দাস) এ, যা ইসলামের অনেক নবীর সঙ্গেই সম্পর্কিত। হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত মুসা (আ.), হজরত দাউদ (আ.), হজরত সুলায়মান (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.)—সবাই এই অঞ্চলেই প্রেরিত হয়েছিলেন। হজরত সুলায়মান (আ.) এখানে আল্লাহর ইবাদতের জন্য একটি বিখ্যাত স্থান নির্মাণ করেছিলেন।
খ. আল-আকসার আশপাশে তথা জেরুজালেম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েকজন নবীর কবর রয়েছে বলে ইসলামি ঐতিহাসিক ও প্রাচীন সূত্র সমূহে উল্লেখ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা মতে, হজরত দাউদ (আ.), হজরত সুলায়মান (আ.), হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত ইসহাক (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.) এর কবর এখানে অবস্থিত।
৩. ইবাদত ও ফজিলতের দিক থেকে গুরুত্ব:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ—মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী, এবং মসজিদুল আকসা।’ (সহিহ্ বুখারি)
আল-আকসায় এক রাকাত নামাজের ফজিলত অন্যান্য জায়গার তুলনায় ২৫০ গুণ বেশি। এটি শুধু ধর্মীয় স্থান নয় বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর আবেগ, পরিচয় ও ঐক্যের প্রতীক। আল্লাহর নির্ধারিত পবিত্র এ ভূমি রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব। জাত-বর্ণ-গোত্র পরিচয় ভুলে যেদিন পুরো মুসলিম উম্মাহ ঐক্যের সুরে এ ভূমি রক্ষায় সচেষ্ট হবে সেদিন আমাদের নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ মুক্তি পাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও আবেগঘন বহুমাত্রিক গুরুত্ব নিয়ে জেরুজালেম শহরে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিমদের প্রাণের স্থাপনা মসজিদুল আকসা। মসজিদুল আকসার পুরো প্রাঙ্গণের আয়তন এক লাখ ৪৪ হাজার বর্গমিটার, যা প্রায় ৩৫ একর জায়গা দখল করে আছে।
এর মধ্যে রয়েছে আল-আকসা মসজিদ (সুবিশাল নামাজঘর), কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক)–স্বর্ণরঙা গম্বুজবিশিষ্ট ভবন এবং আরও ছোট ছোট ধর্মীয় কাঠামো।
নির্মাণের পটভূমি ও ইতিহাস
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি প্রথম নির্মাণ করেন হজরত আদম (আ.)। পরে তা পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও সুলায়মান (আ.)। এ ছাড়া সপ্তম শতাব্দীতে মুসলিম খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) জেরুজালেম বিজয়ের পর সেখানে একটি কাঠের মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান এবং তার পুত্র আল-ওয়ালিদ এর শাসনামলে (প্রায় ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে) বর্তমান আকৃতি ধারণ করে। মূল মসজিদ এবং কুব্বাতুস সাখরা উভয়ই তখন নির্মিত হয়।
মসজিদুল আকসা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
১. ধর্মীয় গুরুত্ব:
ক. আল আকসা ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ (মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর পর)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র মহান সত্তা তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত...’ (সুরা ইসরা: ১)
এই ভ্রমণকে ইসরা ও মেরাজ বলা হয়, যেখানে রাসুল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আকাশমণ্ডলে উঠেছিলেন।
খ. মুসলিমরা শুরুতে আল-আকসা মসজিদের দিকেই কিবলা হিসেবে নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ এটি মুসলিমদের প্রথম কিবলা।
গ. ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় মহানবী (সা.) জিবরাইল (আ.) এর সঙ্গে মক্কা (মসজিদে হারাম) থেকে মসজিদে আকসায় পৌঁছানোর পর সেখানে সকল নবীদের ইমাম হিসেবে নামাজ আদায় করেন।
এই ঘটনা বহু সহিহ্ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে—‘আমি সেখানে অনেক নবীকে দেখতে পেলাম। জিবরাইল (আ.) আমাকে সামনে দাঁড় করালেন এবং আমি তাদের ইমাম হিসেবে নামাজ আদায় করালাম।’ (সহিহ্ মুসলিম, জামে তিরমিজি, সুনানে নাসায়ি)
২. ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ক. আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত জেরুজালেম (বায়তুল মুকাদ্দাস) এ, যা ইসলামের অনেক নবীর সঙ্গেই সম্পর্কিত। হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত মুসা (আ.), হজরত দাউদ (আ.), হজরত সুলায়মান (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.)—সবাই এই অঞ্চলেই প্রেরিত হয়েছিলেন। হজরত সুলায়মান (আ.) এখানে আল্লাহর ইবাদতের জন্য একটি বিখ্যাত স্থান নির্মাণ করেছিলেন।
খ. আল-আকসার আশপাশে তথা জেরুজালেম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েকজন নবীর কবর রয়েছে বলে ইসলামি ঐতিহাসিক ও প্রাচীন সূত্র সমূহে উল্লেখ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা মতে, হজরত দাউদ (আ.), হজরত সুলায়মান (আ.), হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত ইসহাক (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.) এর কবর এখানে অবস্থিত।
৩. ইবাদত ও ফজিলতের দিক থেকে গুরুত্ব:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ—মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী, এবং মসজিদুল আকসা।’ (সহিহ্ বুখারি)
আল-আকসায় এক রাকাত নামাজের ফজিলত অন্যান্য জায়গার তুলনায় ২৫০ গুণ বেশি। এটি শুধু ধর্মীয় স্থান নয় বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর আবেগ, পরিচয় ও ঐক্যের প্রতীক। আল্লাহর নির্ধারিত পবিত্র এ ভূমি রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব। জাত-বর্ণ-গোত্র পরিচয় ভুলে যেদিন পুরো মুসলিম উম্মাহ ঐক্যের সুরে এ ভূমি রক্ষায় সচেষ্ট হবে সেদিন আমাদের নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ মুক্তি পাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বৃক্ষ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সবুজ পাতার মৃদুমন্দ দোল, ফল ফুলে ভরা গাছ শুধু প্রকৃতির অংশই নয়; বরং আল্লাহর দেওয়া এক অপার রহমত, অনন্য এক নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা মানবজাতির কল্যাণে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন, গাছ তার অন্যতম। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। অক্সিজেন সরবরাহ, খাদ্য উৎপাদন এবং ছায়া...
৩ ঘণ্টা আগেপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর দৈনন্দিন নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। এটি ইসলামের অবশ্য পালনীয় বিধানের একটি। পুরোপুরি ‘বেহুঁশ’ হওয়ার আগ পর্যন্ত মুসলমানের ওপর এই আবশ্যকতা বহাল থাকে। দাঁড়িয়ে না পারলে বসে, বসে না পারলে শুয়ে; ইশারা-ইঙ্গিতে তাকে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৩ ঘণ্টা আগেঅপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ, বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই, ’ আর কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ...
৫ ঘণ্টা আগেদাম্পত্যজীবন একটি পবিত্র সম্পর্ক, যা ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং পারস্পরিক সম্মানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো একে অপরের প্রশংসা করা, পরস্পরকে মর্যাদা দেওয়া। বিশেষ করে স্ত্রীর প্রশংসা করা, তার গুণাবলি প্রকাশ করা এবং ভালোবাসার কথা জানানো স্বামীর সচেতনতার পরিচয়...
৯ ঘণ্টা আগে