মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
হজরত ওমর (রা.) ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। দীর্ঘ ১০ বছর (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। রাষ্ট্রের সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর প্রধান রাষ্ট্রনীতি। শাসনকাজ পরিচালনার সুবিধার্থে তিনি রাষ্ট্রকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন। এরপর প্রতিটি প্রদেশে ওয়ালি (গভর্নর), কাতিব (সচিব), সেনানায়ক, সাহিবুল খারাজ (কালেক্টর), পুলিশ অফিসার, ট্রেজারি অফিসার ও বিচারক নিযুক্ত করেন। পাশাপাশি এসব কর্মকর্তা যাতে কোনোভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারেন, সে জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তা নিয়েই সংক্ষিপ্ত আলাপ করা হয়েছে এই প্রবন্ধে।
ক্ষমতার পরিধি নির্ধারণ
হজরত ওমর (রা.) কর্মকর্তাদের নিয়োগদানের সময় বিলাসবহুল জীবনযাপনে নিষেধ করতেন এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো কাজে জড়িত না হওয়ার শর্তারোপ করতেন। তিনি নিজেও তা মেনে চলতেন। রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করে দিতেন। বলতেন, ‘আমি আপনাদের জনগণের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য নিয়োগ দিচ্ছি না। আপনাদের শুধু এ জন্যই নিয়োগ দিচ্ছি যে আপনারা তাদের নিয়ে নামাজ প্রতিষ্ঠা করবেন, তাদের মধ্যে ইনসাফপূর্ণ বিচার-ফয়সালা করবেন এবং রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ যথাযথভাবে বণ্টন করবেন। সুতরাং কাউকে অহেতুক প্রহার করবেন না এবং তাদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কোনোরূপ অবহেলা করবেন না।
কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব
নিয়োগদানের সময় কর্মকর্তাদের কার কী পরিমাণ সম্পদ আছে, তা জেনে নিতেন হজরত ওমর (রা.)। এরপর তাদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করতেন। কারও সম্পদে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে জবাবদিহির মুখোমুখি করতেন। গ্রহণযোগ্য কারণ দেখাতে না পারলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।
সর্বসাধারণের অভিযোগের সুযোগ
কোনো প্রাদেশিক গভর্নর বা অন্য কোনো কর্মকর্তা যদি সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে অন্যায় করেন, তার জন্য কেন্দ্রীয় দপ্তরে মামলা করার অধিকার ছিল। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি কার্যকর করতেন হজরত ওমর (রা.)। একবার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এল, তিনি একজন নাগরিককে অন্যায়ভাবে ১০০ বেত্রাঘাত করেছেন। কর্মকর্তা গ্রহণযোগ্য কারণ দর্শাতে না পারায় ওই লোককে কর্মকর্তার শরীরে ১০০ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন। পরে আমর ইবনুল আস (রা.)-এর পরামর্শে এবং বাদীর সম্মতির ভিত্তিতে বেত্রাঘাতের পরিবর্তে ২০০ দিনার আর্থিক ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়।
রাজস্ব সম্পর্কে যাচাই-বাছাই
জনগণের কাছ থেকে যেসব রাজস্ব উত্তোলন করা হতো, তাতে অন্যায় উপায়ে গৃহীত কোনো সম্পদ আছে কি না, কঠিনভাবে যাচাই করতেন। প্রয়োজনে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে তলব করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। বাহরাইন ও হাজর অঞ্চলের গভর্নর আবু হুরায়রা (রা.) অর্ধ মিলিয়ন দিনার রাজস্ব পাঠালে ওমর (রা.) বললেন, ‘ইতিপূর্বে এত বেশি রাজস্ব তো কোনো অঞ্চল থেকে আসেনি। এখানে এতিম ও বিধবাদের সম্পদ কিংবা কোনো মজলুমের বদদোয়া নেই তো?’ আবু হুরায়রা (রা.) আশ্বস্ত করলে তিনি তা গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব থেকে অপসারণ
কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে, পাপাচারে জড়ালে কিংবা অযোগ্য প্রমাণিত হলে তাঁকে বরখাস্ত করতে দ্বিধা করতেন না ওমর (রা.)। এমনকি জনগণের অপছন্দের কারণেও অনেককে বরখাস্ত করেছেন। বাহরাইনের কালেক্টর কুদামা ইবনে মাজউনকে মদ্যপানের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বরখাস্ত করেন। মিসরের প্রশাসক আয়াজ ইবনে গানামকে বিলাসবহুল পোশাক পরিধানের অপরাধে বরখাস্ত করেন। আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.)কে রাজনীতি কম বোঝা এবং কুফা নগরী সম্পর্কে ভৌগোলিক জ্ঞান না থাকার কারণে বরখাস্ত করেন। এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে জনগণের দাবির ভিত্তিতে কোনো কোনো কর্মকর্তাকে বিনা অপরাধে বরখাস্ত করেছেন। বসরা থেকে মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) এবং কুফা থেকে সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.)কে এ কারণেই বরখাস্ত করেছিলেন।
তবে হজরত ওমর (রা.) শুধু যে কর্মকর্তাদের চাপে রাখতেন তা নয়, বরং তাঁদের জন্য বিধি অনুসারে যথোপযুক্ত রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেন এবং জনসাধারণকে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। জনতার উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলতেন, ‘কিছু মানুষ, অর্থাৎ রাষ্ট্রের কর্মকর্তাগণ জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করেছেন। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দিনরাত রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। সুতরাং তাঁদের শ্রদ্ধা করুন।’
সূত্র: ড. মুওয়াফফাক সালিম নুরি রচিত কিরাআতুন ফি খিলাফতি ওমর, ১১১/১।
হজরত ওমর (রা.) ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। দীর্ঘ ১০ বছর (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। রাষ্ট্রের সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর প্রধান রাষ্ট্রনীতি। শাসনকাজ পরিচালনার সুবিধার্থে তিনি রাষ্ট্রকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন। এরপর প্রতিটি প্রদেশে ওয়ালি (গভর্নর), কাতিব (সচিব), সেনানায়ক, সাহিবুল খারাজ (কালেক্টর), পুলিশ অফিসার, ট্রেজারি অফিসার ও বিচারক নিযুক্ত করেন। পাশাপাশি এসব কর্মকর্তা যাতে কোনোভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারেন, সে জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তা নিয়েই সংক্ষিপ্ত আলাপ করা হয়েছে এই প্রবন্ধে।
ক্ষমতার পরিধি নির্ধারণ
হজরত ওমর (রা.) কর্মকর্তাদের নিয়োগদানের সময় বিলাসবহুল জীবনযাপনে নিষেধ করতেন এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো কাজে জড়িত না হওয়ার শর্তারোপ করতেন। তিনি নিজেও তা মেনে চলতেন। রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করে দিতেন। বলতেন, ‘আমি আপনাদের জনগণের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য নিয়োগ দিচ্ছি না। আপনাদের শুধু এ জন্যই নিয়োগ দিচ্ছি যে আপনারা তাদের নিয়ে নামাজ প্রতিষ্ঠা করবেন, তাদের মধ্যে ইনসাফপূর্ণ বিচার-ফয়সালা করবেন এবং রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ যথাযথভাবে বণ্টন করবেন। সুতরাং কাউকে অহেতুক প্রহার করবেন না এবং তাদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কোনোরূপ অবহেলা করবেন না।
কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব
নিয়োগদানের সময় কর্মকর্তাদের কার কী পরিমাণ সম্পদ আছে, তা জেনে নিতেন হজরত ওমর (রা.)। এরপর তাদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করতেন। কারও সম্পদে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে জবাবদিহির মুখোমুখি করতেন। গ্রহণযোগ্য কারণ দেখাতে না পারলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।
সর্বসাধারণের অভিযোগের সুযোগ
কোনো প্রাদেশিক গভর্নর বা অন্য কোনো কর্মকর্তা যদি সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে অন্যায় করেন, তার জন্য কেন্দ্রীয় দপ্তরে মামলা করার অধিকার ছিল। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি কার্যকর করতেন হজরত ওমর (রা.)। একবার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এল, তিনি একজন নাগরিককে অন্যায়ভাবে ১০০ বেত্রাঘাত করেছেন। কর্মকর্তা গ্রহণযোগ্য কারণ দর্শাতে না পারায় ওই লোককে কর্মকর্তার শরীরে ১০০ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন। পরে আমর ইবনুল আস (রা.)-এর পরামর্শে এবং বাদীর সম্মতির ভিত্তিতে বেত্রাঘাতের পরিবর্তে ২০০ দিনার আর্থিক ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়।
রাজস্ব সম্পর্কে যাচাই-বাছাই
জনগণের কাছ থেকে যেসব রাজস্ব উত্তোলন করা হতো, তাতে অন্যায় উপায়ে গৃহীত কোনো সম্পদ আছে কি না, কঠিনভাবে যাচাই করতেন। প্রয়োজনে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে তলব করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। বাহরাইন ও হাজর অঞ্চলের গভর্নর আবু হুরায়রা (রা.) অর্ধ মিলিয়ন দিনার রাজস্ব পাঠালে ওমর (রা.) বললেন, ‘ইতিপূর্বে এত বেশি রাজস্ব তো কোনো অঞ্চল থেকে আসেনি। এখানে এতিম ও বিধবাদের সম্পদ কিংবা কোনো মজলুমের বদদোয়া নেই তো?’ আবু হুরায়রা (রা.) আশ্বস্ত করলে তিনি তা গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব থেকে অপসারণ
কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে, পাপাচারে জড়ালে কিংবা অযোগ্য প্রমাণিত হলে তাঁকে বরখাস্ত করতে দ্বিধা করতেন না ওমর (রা.)। এমনকি জনগণের অপছন্দের কারণেও অনেককে বরখাস্ত করেছেন। বাহরাইনের কালেক্টর কুদামা ইবনে মাজউনকে মদ্যপানের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বরখাস্ত করেন। মিসরের প্রশাসক আয়াজ ইবনে গানামকে বিলাসবহুল পোশাক পরিধানের অপরাধে বরখাস্ত করেন। আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.)কে রাজনীতি কম বোঝা এবং কুফা নগরী সম্পর্কে ভৌগোলিক জ্ঞান না থাকার কারণে বরখাস্ত করেন। এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে জনগণের দাবির ভিত্তিতে কোনো কোনো কর্মকর্তাকে বিনা অপরাধে বরখাস্ত করেছেন। বসরা থেকে মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) এবং কুফা থেকে সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.)কে এ কারণেই বরখাস্ত করেছিলেন।
তবে হজরত ওমর (রা.) শুধু যে কর্মকর্তাদের চাপে রাখতেন তা নয়, বরং তাঁদের জন্য বিধি অনুসারে যথোপযুক্ত রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেন এবং জনসাধারণকে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। জনতার উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলতেন, ‘কিছু মানুষ, অর্থাৎ রাষ্ট্রের কর্মকর্তাগণ জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করেছেন। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দিনরাত রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। সুতরাং তাঁদের শ্রদ্ধা করুন।’
সূত্র: ড. মুওয়াফফাক সালিম নুরি রচিত কিরাআতুন ফি খিলাফতি ওমর, ১১১/১।
বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য একটি আদর্শ পরিবার গঠন। যে পরিবারের সদস্যরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর আদেশগুলো পালন করবে, নিষেধসমূহ থেকে বেঁচে থাকবে।
৮ ঘণ্টা আগেহজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান । হজ - ওমরাহকে কেন্দ্র করে পুরো বিশ্বের সামর্থ্যবান মুসলমানেরা ছুটে যান মক্কায় । কেননা এই দুই ইবাদতের জন্য সফর করে মক্কায় যাওয়া আবশ্যক । তবে পবিত্র এই সফরে বাধাগ্রস্ত হলে এবং হজে যেতে না পারলে ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে । ইহরাম বাঁধার পর হজ বা ওমরাহ সফরে যেতে
১ দিন আগেকোনো ধনি ব্যক্তি যদি হজ ফরজ হওয়ার পর শারীরিকভাবে সমর্থ থাকতে হজ করেননি, এখন স্থায়ীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং কোনোভাবেই নিজে গিয়ে হজ আদায় করতে না পারছেন না—তাহলে শরিয়ত তাঁকে বিকল্প ব্যবস্থা দিয়েছে। এ বিকল্প ব্যবস্থার নাম ‘বদলি হজ।’
২ দিন আগেবছরজুড়ে ঋতুর পালাবদল ও সময়ের বৈচিত্র্য নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর অনন্য দান। একেক মৌসুমে একেক রকম আলো-বাতাস আমরা পাই। শীত ও গ্রীষ্ম বছরের প্রধানতম দুটি ঋতু।
২ দিন আগে