Ajker Patrika

কোরআনের আয়াত খোদাই করা ঐতিহাসিক মিনার

কাউসার লাবীব
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মিনারের সঙ্গে ইসলামি স্থাপত্যের এক নিবিড় সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। এর অবয়ব যেন মনে করিয়ে দেয় ইসলামি শাসন ও মুসলিম শাসকদের নানা কীর্তিগাথা। ইসলামের ইতিহাসে মূলত আজানের শব্দ দূরে পৌঁছানোর জন্য মিনারের ব্যবহার শুরু হয়। একসময় মিনারগুলো থেকে ভেসে আসত ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাউম’-এর মায়াবি ধ্বনি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর মিনারের চূড়ায় গিয়ে আজান দিতে হয় না। তাই মিনার তৈরির বিষয়টিও এখন আগ্রহ হারাচ্ছে।

ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যায়, আজানের প্রয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে মুসলিম শাসকেরা মিনার নির্মাণ করেছেন। কালের বিবর্তনে সেগুলোর মধ্য থেকে বেশ কিছু মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। সাক্ষী দিচ্ছে অতীতের নানা গল্পের। ইরানের ইসফাহানে অবস্থিত ‘আলী মিনার’ এমনই এক স্থাপনা।

মুসলিম শাসকদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর উত্থান-পতনের রাজসাক্ষী ‘ইসফাহান’। শহরটি রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বেশ কিছু সাম্রাজ্যের। বিশেষত সেলজুক সাম্রাজ্যের রাজধানীও ছিল এই নগরী। সেলজুক শাসনামলে দ্বাদশ শতকে সুনিপুণ শৈল্পিক কারুকার্যে নির্মিত হয় এই ঐতিহাসিক মিনার। এর নিখুঁত কারুকাজ ও চমৎকার স্থাপত্যশৈলী দৃষ্টি আকর্ষণ করে খুব সহজেই। এ ছাড়া মিনারটি ইসফাহানকে ইরানের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করেছে। সেলজুক সাম্রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপত্যকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই মিনারকে। এটি সেই সময়ের গৌরবময় ঐতিহ্যের এক জীবন্ত স্মারক।

আলী মিনারের মূল উচ্চতা ছিল প্রায় ৫৪ মিটার। তবে সময়ের পরিবর্তনে এর আকার ২ মিটার কমে গেছে। চূড়ায় ওঠার জন্য ভেতরে ১৬০টির বেশি সিঁড়ি রয়েছে। এর ভিত্তির ব্যাস ৬ মিটার থেকে শুরু হয়ে ওপরের দিকে ক্রমেই সরু হয়ে গেছে।

মিনারটির নির্মাণশৈলী তিন ভাগে বিভক্ত, যেগুলোর আকার ওপরের দিকে যেতে যেতে ক্রমেই ছোট হয়েছে। দ্বিতীয় অংশের শুরু এবং শেষে সুনিপুণ কারুকাজে দুটি ব্যালকনি রয়েছে—এগুলোর গাত্রজুড়ে রয়েছে নিখুঁত অলংকরণ। মিনারের প্রথম অংশে সুরা আলে ইমরানের আয়াত খোদাই করা আছে। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে অলংকৃত ইটের কারুকাজ। আর তৃতীয় অংশটি ঘিরে আছে পোড়ামাটির অলংকরণ। মিনারের চূড়া একটি গম্বুজাকৃতি নকশায় শেষ হয়েছে, যা এই স্থাপত্য নকশার মুকুট। গম্বুজের গোড়ায় কোরআনের আয়াত ও হিজরি ৯২৯ সালের একটি শিলালিপি খোদাই করা রয়েছে। গম্বুজের ওপরিভাগে রয়েছে রঙিন সিরামিকের প্রলেপ।

ইসফাহানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পর্যটন ও হস্তশিল্প মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ বাহার কারবালায়ি জানান, আলী মিনার সাফাভিদ ও কাজার যুগে একাধিকবার পুনঃসংস্কার করা হয়েছে। তবে প্রতিবারের সংস্কারের সময়ই মূল রূপটি অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে।

সেলজুক শাসনামলে মিনার নির্মাণের ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, সেই যুগে প্রতিটি মহল্লার প্রবেশপথে একটি করে মিনার নির্মিত হতো—এটি কোনো মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। পরবর্তীকালে এই মিনারগুলোকে কেন্দ্র করে মসজিদ গড়ে উঠতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মিনারগুলো মসজিদের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।

ঐতিহাসিক এই মিনার সেলজুক শাসক সুলতান সেনজারের (১১২৮-১১৫৭) শাসনামলে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর নির্মাণশৈলী, কারুকাজ—সেই সঙ্গে এটি নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের মাত্রা সেই কথাই বলে। মিনারটি সেলজুক আমলের ‘ময়দানে কুহনা’র কাছাকাছি ‘হারুনিয়ে’ সড়কে অবস্থিত। একসময় এর পাশে একটি ঐতিহাসিক মসজিদ ছিল, যেটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীকালে সাফাভিদ আমলে এই মিনারকে কেন্দ্র করে ‘আলী মসজিদ’ নির্মিত হয়, যা বর্তমানে ইসফাহানের অন্যতম সুন্দর মসজিদ হিসেবে বিবেচিত।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত