ইসলাম ডেস্ক
জীবনের পথচলায় মানুষ ভুল করে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলাম মানুষকে সেই ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেয়। সংশোধনের দরজা খোলা রাখে। একজন পাপীও তওবার মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তবে কিছু ভুল ও অন্যায় আছে, যা একবার কেউ করলে শুধু নিজের নয়, অন্যের জীবনকেও চিরতরে এলোমেলো করে দেয়। এমনই এক ভয়াবহ অন্যায় হলো অপবাদ দেওয়া।
অপবাদ—এটা যেন আগুনের মতো। বাইরে থেকে শান্ত দেখালেও ভেতরে তা জ্বলতে থাকে, পোড়াতে থাকে, ভেঙে দেয় মানুষ, পরিবার, সমাজ—সবকিছু। কারও নামে একটা মিথ্যা কথা, একটা মিথ্যা ইঙ্গিত অথবা একটুকু সন্দেহ ছড়িয়ে দিলে সে মানুষের মাঝে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পায় না। তার ইজ্জত-সম্মান, আত্মমর্যাদা—সবকিছু মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে।
কথার আঘাত চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এর ব্যথা অনেক গভীর, অনেক দীর্ঘস্থায়ী। কখনো কখনো এই ব্যথা এমন এক ক্ষত তৈরি করে, যা চিকিৎসায় নয়—বরং মৃত্যুতেই শেষ হয়। এমন অনেকেই আছে, যারা কেবল অপবাদের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এমন অনেক পরিবার আছে, যা একটিমাত্র গুজবের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অথচ হয়তো সেই অপবাদ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!
ইসলাম এই ভয়ানক সামাজিক ব্যাধিকে শুধু ঘৃণা করেই ক্ষান্ত হয়নি—বরং কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। সুরা নূরে যদি চোখ রাখি, দেখা যাবে অপবাদদাতাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার ঘোষণা এবং এই দুনিয়ায়ও শারীরিক শাস্তির বিধান। কারণ অপবাদ শুধু একজন ব্যক্তিকে আঘাত করে না—এটি একটি পরিবারকে কলঙ্কিত করে, একটি সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে, এমনকি একটি জাতির ভিত পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়।
আজকের সমাজে অপবাদ ও মিথ্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন সহজেই কারও নামে মিথ্যা রটিয়ে দেয়। অপরের চরিত্রে কালিমা লেপন করে। এই নিন্দনীয় কাজটা করতে গিয়ে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, গলির মোড় কিংবা নামী-বেনামী মঞ্চ—সর্বত্রই সত্য যাচাই না করে অপবাদ ছড়ানোর এই ব্যাধি আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ব্যক্তিজীবনে কেউ একটু গুছিয়ে চললেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। পরিবারে কেউ সত্য কথা বললে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাকে বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হয়। সামাজিকভাবে কেউ ন্যায়-নীতির পক্ষে দাঁড়ালে তার অতীত খুঁড়ে চরিত্র হননের চেষ্টা শুরু হয়। কেউ ধর্মীয়ভাবে অগ্রসর হলে তাকে ‘ভণ্ড’ বলা হয়। আবার কেউ নেতৃত্বে উঠতে চাইলে, সমাজে ন্যায়ের পথে কাজ করতে চাইলে তার নামে রটানো হয় অপবাদ, ছড়ানো হয় গুজব, বানানো হয় মনগড়া গল্প।
আর সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো—এই অপবাদ ছড়ানোর পেছনে থাকে হিংসা, প্রতিহিংসা, আত্মমর্যাদার লড়াই কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অথচ একজন মুসলিমের উচিত ছিল সত্য যাচাই করা, ভাইয়ের প্রতি সদয় থাকা, সম্মান রক্ষা করা। কিন্তু আমরা হয়ে পড়েছি উল্টো পথে চলমান এক সমাজ—যেখানে মিথ্যার বাজার গরম আর সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ। এই সমাজে সত্যিকারের মানুষের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে আর মিথ্যাবাদী ও অপবাদদাতারাই যেন হয়ে উঠছে ‘জনপ্রিয়’। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—সত্যের পক্ষে দাঁড়াও এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যদি তা তোমার নিজের স্বজনের বিরুদ্ধেও হয়।
আপবাদের ভয়াবহতা ও শাস্তি: অপবাদ দেওয়া মানে কাউকে এমন অপরাধে অভিযুক্ত করা, যা সে করে না। ইসলামে এটিকে ‘বুহতান’ বা ‘তোহমত’ বলে। এটি কেবল হারাম নয় বরং গুনাহে কবিরা, অর্থাৎ বড় পাপের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা সচ্চরিত্র, নিরীহ, ইমানদার নারীদের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)
এই আয়াতে শুধু নারীদের উদাহরণ আনা হয়েছে, কারণ সে যুগে নারী সমাজ ছিল বেশি আক্রান্ত। কিন্তু এর বিধান সর্বজনীন। হোক সে নারী বা পুরুষ—অন্যায় অপবাদ দেওয়ার পরিণাম ভয়ানক। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে মিথ্যা অপবাদ দেয়, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আগুনের ঢিবির ওপর দাঁড় করাবেন, যতক্ষণ না সে তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করে।’ (মুসনাদে আহমদ)
নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন সম্পর্কে এমন কিছু বলে, যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের মধ্যে এমন স্থানে রাখবেন, যেখান থেকে পুঁজ ও নাপাক তরল বের হয়—সেখানে তাকে বসবাস করাবেন।’ (আবু দাউদ, আহমদ)
এমনকি অপবাদ ও চরিত্র হননের অপরাধকে রাসুল (সা.) সর্বাপেক্ষা জঘন্য সুদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সুদের চেয়ে ভয়াবহ গুনাহ হলো, অন্যায়ের ভিত্তিতে কোনো মুসলমানের সম্মানহানি করা।’ (আবু দাউদ)
মেরাজের রাতে নবী (সা.) দেখেন—‘একদল লোক তামা দিয়ে তৈরি নখ দিয়ে নিজেদের মুখ ও বুক আঁচড়াচ্ছে!’ তিনি জিবরাইলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরা কারা?’ উত্তরে জিবরাইল বললেন, ‘এরা ওই সব লোক, যারা মানুষের গোশত খায় (গিবত করে), এবং সম্মানহানি করে।’
বিদায় হজের ভাষণে নবী (সা.) স্পষ্ট ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের জন্য হারাম, যেমন এই দিন, এই শহর ও এই মাস সম্মানিত।’ (সহিহ্ বুখারি, সহিহ্ মুসলিম)
ভাবা যায়? একটা মিথ্যা কথা, একটা ছড়িয়ে দেওয়া অপবাদ কারও ইজ্জত কেড়ে নিতে পারে, তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। আর সেই ‘কুখ্যাত অপবাদদাতা’ হেসে বেড়ায় সমাজে, গর্ব করে বলে ‘আমি কাউকে ছাড়ি না’’—হায়! কী ভয়ংকর কথা! কী ভয়াবহ পরিণতি তার জন্য অপেক্ষা করছে!
উন্মত্ত সমাজ ও দায়িত্বশীল না হওয়া: দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে গুজব ছড়ানো, অপবাদ দেওয়া, মিথ্যা ছড়ানো যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো যাচাই-বাছাই নেই, কোনো দ্বিধা নেই। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘মানুষের নিকট সঠিক ও ভুল—উভয় ধরনের কথাই পৌঁছায়। কিন্তু সে যদি যাচাই ছাড়া ভুল তথ্য ছড়ায়, তবে সে মিথ্যাবাদী হিসেবে বিবেচিত হবে।’ আর রাসুল (সা.) এটিকে কবিরা গুনাহ হিসেবে গণ্য করে বলেছেন, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না...’ (সহিহ্ বুখারি, মুসলিম)
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই’, আবার কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ হয়ে যেতে পারে। আর তথ্য যাচাই না করে এমন মন্তব্যকারীদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে গুনাহের পাহাড়।
ইসলামের নির্দেশনা কী: ইসলাম বলে, কারও বিরুদ্ধে কথা বলার আগে তা সত্য কি না—এ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। যদি প্রমাণ না থাকে, তাহলে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। কেউ অপবাদ দিলে তার কথা না ছড়িয়ে বলতে হবে এটা গুনাহ।
অপবাদ, গুজব ছড়ানো, মিথ্যা অভিযোগ—এসব কোনো হালকা বা তুচ্ছ গুনাহ নয়। বরং এগুলো সেই ভয়ংকর অপরাধ, যা মুনাফিকদের চরিত্রের পরিচয় বহন করে, ফাসিকদের স্বভাব প্রকাশ করে এবং আখিরাতে চরম ধ্বংস ও লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো মানুষকে ধ্বংস করে দেয় নিঃশব্দে ও চুপিসারে।
আজ সময় এসেছে আমাদের আত্মসমালোচনার। আমরা কি সত্যিই অপবাদ থেকে মুক্ত? আমরা কি যাচাই ছাড়া কথা বলি না? আমরা কি অন্যের সম্মান নষ্ট করে নিজের ইমানকে ধ্বংস করছি না? তাই আসুন, এই ভয়াবহ ব্যাধির বিরুদ্ধে নিজেকে ঢাল বানাই। পরিবারকে সতর্ক করি। সমাজকে জাগিয়ে তুলি। আল্লাহ যেন আমাদের জিহ্বাকে অপবাদ ও মিথ্যার পাপ থেকে হেফাজত করেন, এবং সত্য ও ইনসাফের পথে দৃঢ় রাখেন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক
জীবনের পথচলায় মানুষ ভুল করে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলাম মানুষকে সেই ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেয়। সংশোধনের দরজা খোলা রাখে। একজন পাপীও তওবার মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তবে কিছু ভুল ও অন্যায় আছে, যা একবার কেউ করলে শুধু নিজের নয়, অন্যের জীবনকেও চিরতরে এলোমেলো করে দেয়। এমনই এক ভয়াবহ অন্যায় হলো অপবাদ দেওয়া।
অপবাদ—এটা যেন আগুনের মতো। বাইরে থেকে শান্ত দেখালেও ভেতরে তা জ্বলতে থাকে, পোড়াতে থাকে, ভেঙে দেয় মানুষ, পরিবার, সমাজ—সবকিছু। কারও নামে একটা মিথ্যা কথা, একটা মিথ্যা ইঙ্গিত অথবা একটুকু সন্দেহ ছড়িয়ে দিলে সে মানুষের মাঝে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পায় না। তার ইজ্জত-সম্মান, আত্মমর্যাদা—সবকিছু মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে।
কথার আঘাত চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এর ব্যথা অনেক গভীর, অনেক দীর্ঘস্থায়ী। কখনো কখনো এই ব্যথা এমন এক ক্ষত তৈরি করে, যা চিকিৎসায় নয়—বরং মৃত্যুতেই শেষ হয়। এমন অনেকেই আছে, যারা কেবল অপবাদের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এমন অনেক পরিবার আছে, যা একটিমাত্র গুজবের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অথচ হয়তো সেই অপবাদ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!
ইসলাম এই ভয়ানক সামাজিক ব্যাধিকে শুধু ঘৃণা করেই ক্ষান্ত হয়নি—বরং কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। সুরা নূরে যদি চোখ রাখি, দেখা যাবে অপবাদদাতাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার ঘোষণা এবং এই দুনিয়ায়ও শারীরিক শাস্তির বিধান। কারণ অপবাদ শুধু একজন ব্যক্তিকে আঘাত করে না—এটি একটি পরিবারকে কলঙ্কিত করে, একটি সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে, এমনকি একটি জাতির ভিত পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়।
আজকের সমাজে অপবাদ ও মিথ্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন সহজেই কারও নামে মিথ্যা রটিয়ে দেয়। অপরের চরিত্রে কালিমা লেপন করে। এই নিন্দনীয় কাজটা করতে গিয়ে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, গলির মোড় কিংবা নামী-বেনামী মঞ্চ—সর্বত্রই সত্য যাচাই না করে অপবাদ ছড়ানোর এই ব্যাধি আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ব্যক্তিজীবনে কেউ একটু গুছিয়ে চললেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। পরিবারে কেউ সত্য কথা বললে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাকে বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হয়। সামাজিকভাবে কেউ ন্যায়-নীতির পক্ষে দাঁড়ালে তার অতীত খুঁড়ে চরিত্র হননের চেষ্টা শুরু হয়। কেউ ধর্মীয়ভাবে অগ্রসর হলে তাকে ‘ভণ্ড’ বলা হয়। আবার কেউ নেতৃত্বে উঠতে চাইলে, সমাজে ন্যায়ের পথে কাজ করতে চাইলে তার নামে রটানো হয় অপবাদ, ছড়ানো হয় গুজব, বানানো হয় মনগড়া গল্প।
আর সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো—এই অপবাদ ছড়ানোর পেছনে থাকে হিংসা, প্রতিহিংসা, আত্মমর্যাদার লড়াই কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অথচ একজন মুসলিমের উচিত ছিল সত্য যাচাই করা, ভাইয়ের প্রতি সদয় থাকা, সম্মান রক্ষা করা। কিন্তু আমরা হয়ে পড়েছি উল্টো পথে চলমান এক সমাজ—যেখানে মিথ্যার বাজার গরম আর সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ। এই সমাজে সত্যিকারের মানুষের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে আর মিথ্যাবাদী ও অপবাদদাতারাই যেন হয়ে উঠছে ‘জনপ্রিয়’। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—সত্যের পক্ষে দাঁড়াও এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যদি তা তোমার নিজের স্বজনের বিরুদ্ধেও হয়।
আপবাদের ভয়াবহতা ও শাস্তি: অপবাদ দেওয়া মানে কাউকে এমন অপরাধে অভিযুক্ত করা, যা সে করে না। ইসলামে এটিকে ‘বুহতান’ বা ‘তোহমত’ বলে। এটি কেবল হারাম নয় বরং গুনাহে কবিরা, অর্থাৎ বড় পাপের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা সচ্চরিত্র, নিরীহ, ইমানদার নারীদের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)
এই আয়াতে শুধু নারীদের উদাহরণ আনা হয়েছে, কারণ সে যুগে নারী সমাজ ছিল বেশি আক্রান্ত। কিন্তু এর বিধান সর্বজনীন। হোক সে নারী বা পুরুষ—অন্যায় অপবাদ দেওয়ার পরিণাম ভয়ানক। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে মিথ্যা অপবাদ দেয়, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আগুনের ঢিবির ওপর দাঁড় করাবেন, যতক্ষণ না সে তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করে।’ (মুসনাদে আহমদ)
নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন সম্পর্কে এমন কিছু বলে, যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের মধ্যে এমন স্থানে রাখবেন, যেখান থেকে পুঁজ ও নাপাক তরল বের হয়—সেখানে তাকে বসবাস করাবেন।’ (আবু দাউদ, আহমদ)
এমনকি অপবাদ ও চরিত্র হননের অপরাধকে রাসুল (সা.) সর্বাপেক্ষা জঘন্য সুদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সুদের চেয়ে ভয়াবহ গুনাহ হলো, অন্যায়ের ভিত্তিতে কোনো মুসলমানের সম্মানহানি করা।’ (আবু দাউদ)
মেরাজের রাতে নবী (সা.) দেখেন—‘একদল লোক তামা দিয়ে তৈরি নখ দিয়ে নিজেদের মুখ ও বুক আঁচড়াচ্ছে!’ তিনি জিবরাইলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরা কারা?’ উত্তরে জিবরাইল বললেন, ‘এরা ওই সব লোক, যারা মানুষের গোশত খায় (গিবত করে), এবং সম্মানহানি করে।’
বিদায় হজের ভাষণে নবী (সা.) স্পষ্ট ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের জন্য হারাম, যেমন এই দিন, এই শহর ও এই মাস সম্মানিত।’ (সহিহ্ বুখারি, সহিহ্ মুসলিম)
ভাবা যায়? একটা মিথ্যা কথা, একটা ছড়িয়ে দেওয়া অপবাদ কারও ইজ্জত কেড়ে নিতে পারে, তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। আর সেই ‘কুখ্যাত অপবাদদাতা’ হেসে বেড়ায় সমাজে, গর্ব করে বলে ‘আমি কাউকে ছাড়ি না’’—হায়! কী ভয়ংকর কথা! কী ভয়াবহ পরিণতি তার জন্য অপেক্ষা করছে!
উন্মত্ত সমাজ ও দায়িত্বশীল না হওয়া: দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে গুজব ছড়ানো, অপবাদ দেওয়া, মিথ্যা ছড়ানো যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো যাচাই-বাছাই নেই, কোনো দ্বিধা নেই। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘মানুষের নিকট সঠিক ও ভুল—উভয় ধরনের কথাই পৌঁছায়। কিন্তু সে যদি যাচাই ছাড়া ভুল তথ্য ছড়ায়, তবে সে মিথ্যাবাদী হিসেবে বিবেচিত হবে।’ আর রাসুল (সা.) এটিকে কবিরা গুনাহ হিসেবে গণ্য করে বলেছেন, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না...’ (সহিহ্ বুখারি, মুসলিম)
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই’, আবার কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ হয়ে যেতে পারে। আর তথ্য যাচাই না করে এমন মন্তব্যকারীদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে গুনাহের পাহাড়।
ইসলামের নির্দেশনা কী: ইসলাম বলে, কারও বিরুদ্ধে কথা বলার আগে তা সত্য কি না—এ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। যদি প্রমাণ না থাকে, তাহলে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। কেউ অপবাদ দিলে তার কথা না ছড়িয়ে বলতে হবে এটা গুনাহ।
অপবাদ, গুজব ছড়ানো, মিথ্যা অভিযোগ—এসব কোনো হালকা বা তুচ্ছ গুনাহ নয়। বরং এগুলো সেই ভয়ংকর অপরাধ, যা মুনাফিকদের চরিত্রের পরিচয় বহন করে, ফাসিকদের স্বভাব প্রকাশ করে এবং আখিরাতে চরম ধ্বংস ও লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো মানুষকে ধ্বংস করে দেয় নিঃশব্দে ও চুপিসারে।
আজ সময় এসেছে আমাদের আত্মসমালোচনার। আমরা কি সত্যিই অপবাদ থেকে মুক্ত? আমরা কি যাচাই ছাড়া কথা বলি না? আমরা কি অন্যের সম্মান নষ্ট করে নিজের ইমানকে ধ্বংস করছি না? তাই আসুন, এই ভয়াবহ ব্যাধির বিরুদ্ধে নিজেকে ঢাল বানাই। পরিবারকে সতর্ক করি। সমাজকে জাগিয়ে তুলি। আল্লাহ যেন আমাদের জিহ্বাকে অপবাদ ও মিথ্যার পাপ থেকে হেফাজত করেন, এবং সত্য ও ইনসাফের পথে দৃঢ় রাখেন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক
ইসলাম ডেস্ক
জীবনের পথচলায় মানুষ ভুল করে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলাম মানুষকে সেই ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেয়। সংশোধনের দরজা খোলা রাখে। একজন পাপীও তওবার মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তবে কিছু ভুল ও অন্যায় আছে, যা একবার কেউ করলে শুধু নিজের নয়, অন্যের জীবনকেও চিরতরে এলোমেলো করে দেয়। এমনই এক ভয়াবহ অন্যায় হলো অপবাদ দেওয়া।
অপবাদ—এটা যেন আগুনের মতো। বাইরে থেকে শান্ত দেখালেও ভেতরে তা জ্বলতে থাকে, পোড়াতে থাকে, ভেঙে দেয় মানুষ, পরিবার, সমাজ—সবকিছু। কারও নামে একটা মিথ্যা কথা, একটা মিথ্যা ইঙ্গিত অথবা একটুকু সন্দেহ ছড়িয়ে দিলে সে মানুষের মাঝে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পায় না। তার ইজ্জত-সম্মান, আত্মমর্যাদা—সবকিছু মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে।
কথার আঘাত চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এর ব্যথা অনেক গভীর, অনেক দীর্ঘস্থায়ী। কখনো কখনো এই ব্যথা এমন এক ক্ষত তৈরি করে, যা চিকিৎসায় নয়—বরং মৃত্যুতেই শেষ হয়। এমন অনেকেই আছে, যারা কেবল অপবাদের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এমন অনেক পরিবার আছে, যা একটিমাত্র গুজবের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অথচ হয়তো সেই অপবাদ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!
ইসলাম এই ভয়ানক সামাজিক ব্যাধিকে শুধু ঘৃণা করেই ক্ষান্ত হয়নি—বরং কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। সুরা নূরে যদি চোখ রাখি, দেখা যাবে অপবাদদাতাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার ঘোষণা এবং এই দুনিয়ায়ও শারীরিক শাস্তির বিধান। কারণ অপবাদ শুধু একজন ব্যক্তিকে আঘাত করে না—এটি একটি পরিবারকে কলঙ্কিত করে, একটি সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে, এমনকি একটি জাতির ভিত পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়।
আজকের সমাজে অপবাদ ও মিথ্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন সহজেই কারও নামে মিথ্যা রটিয়ে দেয়। অপরের চরিত্রে কালিমা লেপন করে। এই নিন্দনীয় কাজটা করতে গিয়ে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, গলির মোড় কিংবা নামী-বেনামী মঞ্চ—সর্বত্রই সত্য যাচাই না করে অপবাদ ছড়ানোর এই ব্যাধি আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ব্যক্তিজীবনে কেউ একটু গুছিয়ে চললেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। পরিবারে কেউ সত্য কথা বললে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাকে বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হয়। সামাজিকভাবে কেউ ন্যায়-নীতির পক্ষে দাঁড়ালে তার অতীত খুঁড়ে চরিত্র হননের চেষ্টা শুরু হয়। কেউ ধর্মীয়ভাবে অগ্রসর হলে তাকে ‘ভণ্ড’ বলা হয়। আবার কেউ নেতৃত্বে উঠতে চাইলে, সমাজে ন্যায়ের পথে কাজ করতে চাইলে তার নামে রটানো হয় অপবাদ, ছড়ানো হয় গুজব, বানানো হয় মনগড়া গল্প।
আর সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো—এই অপবাদ ছড়ানোর পেছনে থাকে হিংসা, প্রতিহিংসা, আত্মমর্যাদার লড়াই কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অথচ একজন মুসলিমের উচিত ছিল সত্য যাচাই করা, ভাইয়ের প্রতি সদয় থাকা, সম্মান রক্ষা করা। কিন্তু আমরা হয়ে পড়েছি উল্টো পথে চলমান এক সমাজ—যেখানে মিথ্যার বাজার গরম আর সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ। এই সমাজে সত্যিকারের মানুষের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে আর মিথ্যাবাদী ও অপবাদদাতারাই যেন হয়ে উঠছে ‘জনপ্রিয়’। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—সত্যের পক্ষে দাঁড়াও এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যদি তা তোমার নিজের স্বজনের বিরুদ্ধেও হয়।
আপবাদের ভয়াবহতা ও শাস্তি: অপবাদ দেওয়া মানে কাউকে এমন অপরাধে অভিযুক্ত করা, যা সে করে না। ইসলামে এটিকে ‘বুহতান’ বা ‘তোহমত’ বলে। এটি কেবল হারাম নয় বরং গুনাহে কবিরা, অর্থাৎ বড় পাপের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা সচ্চরিত্র, নিরীহ, ইমানদার নারীদের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)
এই আয়াতে শুধু নারীদের উদাহরণ আনা হয়েছে, কারণ সে যুগে নারী সমাজ ছিল বেশি আক্রান্ত। কিন্তু এর বিধান সর্বজনীন। হোক সে নারী বা পুরুষ—অন্যায় অপবাদ দেওয়ার পরিণাম ভয়ানক। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে মিথ্যা অপবাদ দেয়, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আগুনের ঢিবির ওপর দাঁড় করাবেন, যতক্ষণ না সে তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করে।’ (মুসনাদে আহমদ)
নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন সম্পর্কে এমন কিছু বলে, যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের মধ্যে এমন স্থানে রাখবেন, যেখান থেকে পুঁজ ও নাপাক তরল বের হয়—সেখানে তাকে বসবাস করাবেন।’ (আবু দাউদ, আহমদ)
এমনকি অপবাদ ও চরিত্র হননের অপরাধকে রাসুল (সা.) সর্বাপেক্ষা জঘন্য সুদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সুদের চেয়ে ভয়াবহ গুনাহ হলো, অন্যায়ের ভিত্তিতে কোনো মুসলমানের সম্মানহানি করা।’ (আবু দাউদ)
মেরাজের রাতে নবী (সা.) দেখেন—‘একদল লোক তামা দিয়ে তৈরি নখ দিয়ে নিজেদের মুখ ও বুক আঁচড়াচ্ছে!’ তিনি জিবরাইলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরা কারা?’ উত্তরে জিবরাইল বললেন, ‘এরা ওই সব লোক, যারা মানুষের গোশত খায় (গিবত করে), এবং সম্মানহানি করে।’
বিদায় হজের ভাষণে নবী (সা.) স্পষ্ট ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের জন্য হারাম, যেমন এই দিন, এই শহর ও এই মাস সম্মানিত।’ (সহিহ্ বুখারি, সহিহ্ মুসলিম)
ভাবা যায়? একটা মিথ্যা কথা, একটা ছড়িয়ে দেওয়া অপবাদ কারও ইজ্জত কেড়ে নিতে পারে, তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। আর সেই ‘কুখ্যাত অপবাদদাতা’ হেসে বেড়ায় সমাজে, গর্ব করে বলে ‘আমি কাউকে ছাড়ি না’’—হায়! কী ভয়ংকর কথা! কী ভয়াবহ পরিণতি তার জন্য অপেক্ষা করছে!
উন্মত্ত সমাজ ও দায়িত্বশীল না হওয়া: দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে গুজব ছড়ানো, অপবাদ দেওয়া, মিথ্যা ছড়ানো যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো যাচাই-বাছাই নেই, কোনো দ্বিধা নেই। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘মানুষের নিকট সঠিক ও ভুল—উভয় ধরনের কথাই পৌঁছায়। কিন্তু সে যদি যাচাই ছাড়া ভুল তথ্য ছড়ায়, তবে সে মিথ্যাবাদী হিসেবে বিবেচিত হবে।’ আর রাসুল (সা.) এটিকে কবিরা গুনাহ হিসেবে গণ্য করে বলেছেন, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না...’ (সহিহ্ বুখারি, মুসলিম)
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই’, আবার কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ হয়ে যেতে পারে। আর তথ্য যাচাই না করে এমন মন্তব্যকারীদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে গুনাহের পাহাড়।
ইসলামের নির্দেশনা কী: ইসলাম বলে, কারও বিরুদ্ধে কথা বলার আগে তা সত্য কি না—এ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। যদি প্রমাণ না থাকে, তাহলে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। কেউ অপবাদ দিলে তার কথা না ছড়িয়ে বলতে হবে এটা গুনাহ।
অপবাদ, গুজব ছড়ানো, মিথ্যা অভিযোগ—এসব কোনো হালকা বা তুচ্ছ গুনাহ নয়। বরং এগুলো সেই ভয়ংকর অপরাধ, যা মুনাফিকদের চরিত্রের পরিচয় বহন করে, ফাসিকদের স্বভাব প্রকাশ করে এবং আখিরাতে চরম ধ্বংস ও লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো মানুষকে ধ্বংস করে দেয় নিঃশব্দে ও চুপিসারে।
আজ সময় এসেছে আমাদের আত্মসমালোচনার। আমরা কি সত্যিই অপবাদ থেকে মুক্ত? আমরা কি যাচাই ছাড়া কথা বলি না? আমরা কি অন্যের সম্মান নষ্ট করে নিজের ইমানকে ধ্বংস করছি না? তাই আসুন, এই ভয়াবহ ব্যাধির বিরুদ্ধে নিজেকে ঢাল বানাই। পরিবারকে সতর্ক করি। সমাজকে জাগিয়ে তুলি। আল্লাহ যেন আমাদের জিহ্বাকে অপবাদ ও মিথ্যার পাপ থেকে হেফাজত করেন, এবং সত্য ও ইনসাফের পথে দৃঢ় রাখেন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক
জীবনের পথচলায় মানুষ ভুল করে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলাম মানুষকে সেই ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেয়। সংশোধনের দরজা খোলা রাখে। একজন পাপীও তওবার মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তবে কিছু ভুল ও অন্যায় আছে, যা একবার কেউ করলে শুধু নিজের নয়, অন্যের জীবনকেও চিরতরে এলোমেলো করে দেয়। এমনই এক ভয়াবহ অন্যায় হলো অপবাদ দেওয়া।
অপবাদ—এটা যেন আগুনের মতো। বাইরে থেকে শান্ত দেখালেও ভেতরে তা জ্বলতে থাকে, পোড়াতে থাকে, ভেঙে দেয় মানুষ, পরিবার, সমাজ—সবকিছু। কারও নামে একটা মিথ্যা কথা, একটা মিথ্যা ইঙ্গিত অথবা একটুকু সন্দেহ ছড়িয়ে দিলে সে মানুষের মাঝে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পায় না। তার ইজ্জত-সম্মান, আত্মমর্যাদা—সবকিছু মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে।
কথার আঘাত চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এর ব্যথা অনেক গভীর, অনেক দীর্ঘস্থায়ী। কখনো কখনো এই ব্যথা এমন এক ক্ষত তৈরি করে, যা চিকিৎসায় নয়—বরং মৃত্যুতেই শেষ হয়। এমন অনেকেই আছে, যারা কেবল অপবাদের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এমন অনেক পরিবার আছে, যা একটিমাত্র গুজবের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অথচ হয়তো সেই অপবাদ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!
ইসলাম এই ভয়ানক সামাজিক ব্যাধিকে শুধু ঘৃণা করেই ক্ষান্ত হয়নি—বরং কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। সুরা নূরে যদি চোখ রাখি, দেখা যাবে অপবাদদাতাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার ঘোষণা এবং এই দুনিয়ায়ও শারীরিক শাস্তির বিধান। কারণ অপবাদ শুধু একজন ব্যক্তিকে আঘাত করে না—এটি একটি পরিবারকে কলঙ্কিত করে, একটি সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে, এমনকি একটি জাতির ভিত পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়।
আজকের সমাজে অপবাদ ও মিথ্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন সহজেই কারও নামে মিথ্যা রটিয়ে দেয়। অপরের চরিত্রে কালিমা লেপন করে। এই নিন্দনীয় কাজটা করতে গিয়ে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, গলির মোড় কিংবা নামী-বেনামী মঞ্চ—সর্বত্রই সত্য যাচাই না করে অপবাদ ছড়ানোর এই ব্যাধি আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ব্যক্তিজীবনে কেউ একটু গুছিয়ে চললেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। পরিবারে কেউ সত্য কথা বললে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাকে বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হয়। সামাজিকভাবে কেউ ন্যায়-নীতির পক্ষে দাঁড়ালে তার অতীত খুঁড়ে চরিত্র হননের চেষ্টা শুরু হয়। কেউ ধর্মীয়ভাবে অগ্রসর হলে তাকে ‘ভণ্ড’ বলা হয়। আবার কেউ নেতৃত্বে উঠতে চাইলে, সমাজে ন্যায়ের পথে কাজ করতে চাইলে তার নামে রটানো হয় অপবাদ, ছড়ানো হয় গুজব, বানানো হয় মনগড়া গল্প।
আর সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো—এই অপবাদ ছড়ানোর পেছনে থাকে হিংসা, প্রতিহিংসা, আত্মমর্যাদার লড়াই কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অথচ একজন মুসলিমের উচিত ছিল সত্য যাচাই করা, ভাইয়ের প্রতি সদয় থাকা, সম্মান রক্ষা করা। কিন্তু আমরা হয়ে পড়েছি উল্টো পথে চলমান এক সমাজ—যেখানে মিথ্যার বাজার গরম আর সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ। এই সমাজে সত্যিকারের মানুষের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে আর মিথ্যাবাদী ও অপবাদদাতারাই যেন হয়ে উঠছে ‘জনপ্রিয়’। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—সত্যের পক্ষে দাঁড়াও এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যদি তা তোমার নিজের স্বজনের বিরুদ্ধেও হয়।
আপবাদের ভয়াবহতা ও শাস্তি: অপবাদ দেওয়া মানে কাউকে এমন অপরাধে অভিযুক্ত করা, যা সে করে না। ইসলামে এটিকে ‘বুহতান’ বা ‘তোহমত’ বলে। এটি কেবল হারাম নয় বরং গুনাহে কবিরা, অর্থাৎ বড় পাপের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা সচ্চরিত্র, নিরীহ, ইমানদার নারীদের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)
এই আয়াতে শুধু নারীদের উদাহরণ আনা হয়েছে, কারণ সে যুগে নারী সমাজ ছিল বেশি আক্রান্ত। কিন্তু এর বিধান সর্বজনীন। হোক সে নারী বা পুরুষ—অন্যায় অপবাদ দেওয়ার পরিণাম ভয়ানক। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে মিথ্যা অপবাদ দেয়, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আগুনের ঢিবির ওপর দাঁড় করাবেন, যতক্ষণ না সে তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করে।’ (মুসনাদে আহমদ)
নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন সম্পর্কে এমন কিছু বলে, যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের মধ্যে এমন স্থানে রাখবেন, যেখান থেকে পুঁজ ও নাপাক তরল বের হয়—সেখানে তাকে বসবাস করাবেন।’ (আবু দাউদ, আহমদ)
এমনকি অপবাদ ও চরিত্র হননের অপরাধকে রাসুল (সা.) সর্বাপেক্ষা জঘন্য সুদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সুদের চেয়ে ভয়াবহ গুনাহ হলো, অন্যায়ের ভিত্তিতে কোনো মুসলমানের সম্মানহানি করা।’ (আবু দাউদ)
মেরাজের রাতে নবী (সা.) দেখেন—‘একদল লোক তামা দিয়ে তৈরি নখ দিয়ে নিজেদের মুখ ও বুক আঁচড়াচ্ছে!’ তিনি জিবরাইলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরা কারা?’ উত্তরে জিবরাইল বললেন, ‘এরা ওই সব লোক, যারা মানুষের গোশত খায় (গিবত করে), এবং সম্মানহানি করে।’
বিদায় হজের ভাষণে নবী (সা.) স্পষ্ট ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের জন্য হারাম, যেমন এই দিন, এই শহর ও এই মাস সম্মানিত।’ (সহিহ্ বুখারি, সহিহ্ মুসলিম)
ভাবা যায়? একটা মিথ্যা কথা, একটা ছড়িয়ে দেওয়া অপবাদ কারও ইজ্জত কেড়ে নিতে পারে, তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। আর সেই ‘কুখ্যাত অপবাদদাতা’ হেসে বেড়ায় সমাজে, গর্ব করে বলে ‘আমি কাউকে ছাড়ি না’’—হায়! কী ভয়ংকর কথা! কী ভয়াবহ পরিণতি তার জন্য অপেক্ষা করছে!
উন্মত্ত সমাজ ও দায়িত্বশীল না হওয়া: দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে গুজব ছড়ানো, অপবাদ দেওয়া, মিথ্যা ছড়ানো যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো যাচাই-বাছাই নেই, কোনো দ্বিধা নেই। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘মানুষের নিকট সঠিক ও ভুল—উভয় ধরনের কথাই পৌঁছায়। কিন্তু সে যদি যাচাই ছাড়া ভুল তথ্য ছড়ায়, তবে সে মিথ্যাবাদী হিসেবে বিবেচিত হবে।’ আর রাসুল (সা.) এটিকে কবিরা গুনাহ হিসেবে গণ্য করে বলেছেন, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না...’ (সহিহ্ বুখারি, মুসলিম)
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই’, আবার কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ হয়ে যেতে পারে। আর তথ্য যাচাই না করে এমন মন্তব্যকারীদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে গুনাহের পাহাড়।
ইসলামের নির্দেশনা কী: ইসলাম বলে, কারও বিরুদ্ধে কথা বলার আগে তা সত্য কি না—এ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। যদি প্রমাণ না থাকে, তাহলে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। কেউ অপবাদ দিলে তার কথা না ছড়িয়ে বলতে হবে এটা গুনাহ।
অপবাদ, গুজব ছড়ানো, মিথ্যা অভিযোগ—এসব কোনো হালকা বা তুচ্ছ গুনাহ নয়। বরং এগুলো সেই ভয়ংকর অপরাধ, যা মুনাফিকদের চরিত্রের পরিচয় বহন করে, ফাসিকদের স্বভাব প্রকাশ করে এবং আখিরাতে চরম ধ্বংস ও লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো মানুষকে ধ্বংস করে দেয় নিঃশব্দে ও চুপিসারে।
আজ সময় এসেছে আমাদের আত্মসমালোচনার। আমরা কি সত্যিই অপবাদ থেকে মুক্ত? আমরা কি যাচাই ছাড়া কথা বলি না? আমরা কি অন্যের সম্মান নষ্ট করে নিজের ইমানকে ধ্বংস করছি না? তাই আসুন, এই ভয়াবহ ব্যাধির বিরুদ্ধে নিজেকে ঢাল বানাই। পরিবারকে সতর্ক করি। সমাজকে জাগিয়ে তুলি। আল্লাহ যেন আমাদের জিহ্বাকে অপবাদ ও মিথ্যার পাপ থেকে হেফাজত করেন, এবং সত্য ও ইনসাফের পথে দৃঢ় রাখেন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক
মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
৪ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১১ ঘণ্টা আগেএকটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি রাস্তায় চলাচল এবং এর ব্যবস্থাপনায়ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম নিরাপদ সড়ক ও জনপথ গড়ে তোলাকে যেমন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে দেখে, আবার এটিকে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেও চিহ্নিত করে।
১ দিন আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১ দিন আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ
মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইমানদার পুরুষদের কেবল ভরণপোষণের দায়িত্ব দেননি, বরং নারীদের সঙ্গে হৃদ্যতা, স্নেহ ও সম্মানের আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহারকে উত্তম চরিত্রের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি)
ইসলাম আগমনের পূর্বে নারীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। আরব সমাজে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কুপ্রথা ছিল। সেই অন্ধকার যুগে ইসলাম নারীদের দিয়েছে সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা। শিক্ষা, উত্তরাধিকার, বিয়ে ও মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীর যথাযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের কাচের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কাচ যেমন ভঙ্গুর, তেমনি নারীর মনও কোমল; ভালোবাসা ও যত্নেই তারা টিকে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তা ভেঙে যাবে; আর যদি ছেড়ে দাও, বাঁকাই থাকবে। তাই তাদের সদুপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি)
একজন পুরুষের উচিত নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় কোমল ভাষা ব্যবহার করা, পারিবারিক সিদ্ধান্তে তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়া। কারণ পরিবারে ভালোবাসা ও স্থিতি আসে পারস্পরিক সম্মান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে। স্ত্রীকে জীবনের সহযাত্রী হিসেবে দেখা এবং তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই ইমানদারের বৈশিষ্ট্য।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইমানদার পুরুষদের কেবল ভরণপোষণের দায়িত্ব দেননি, বরং নারীদের সঙ্গে হৃদ্যতা, স্নেহ ও সম্মানের আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহারকে উত্তম চরিত্রের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি)
ইসলাম আগমনের পূর্বে নারীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। আরব সমাজে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কুপ্রথা ছিল। সেই অন্ধকার যুগে ইসলাম নারীদের দিয়েছে সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা। শিক্ষা, উত্তরাধিকার, বিয়ে ও মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীর যথাযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের কাচের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কাচ যেমন ভঙ্গুর, তেমনি নারীর মনও কোমল; ভালোবাসা ও যত্নেই তারা টিকে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তা ভেঙে যাবে; আর যদি ছেড়ে দাও, বাঁকাই থাকবে। তাই তাদের সদুপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি)
একজন পুরুষের উচিত নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় কোমল ভাষা ব্যবহার করা, পারিবারিক সিদ্ধান্তে তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়া। কারণ পরিবারে ভালোবাসা ও স্থিতি আসে পারস্পরিক সম্মান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে। স্ত্রীকে জীবনের সহযাত্রী হিসেবে দেখা এবং তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই ইমানদারের বৈশিষ্ট্য।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ, বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই, ’ আর কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ...
৩১ জুলাই ২০২৫নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১১ ঘণ্টা আগেএকটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি রাস্তায় চলাচল এবং এর ব্যবস্থাপনায়ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম নিরাপদ সড়ক ও জনপথ গড়ে তোলাকে যেমন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে দেখে, আবার এটিকে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেও চিহ্নিত করে।
১ দিন আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক
জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৭ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ৩০ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
---|---|---|
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪২ মিনিট |
ফজর | ০৪: ৪৩ মিনিট | ০৫: ৫৮ মিনিট |
জোহর | ১১: ৪৪ মিনিট | ০৩: ৪৮ মিনিট |
আসর | ০৩: ৪৯ মিনিট | ০৫: ২৫ মিনিট |
মাগরিব | ০৫: ২৭ মিনিট | ০৬: ৪১ মিনিট |
এশা | ০৬: ৪২ মিনিট | ০৪: ৪২ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।
জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৭ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ৩০ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
---|---|---|
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪২ মিনিট |
ফজর | ০৪: ৪৩ মিনিট | ০৫: ৫৮ মিনিট |
জোহর | ১১: ৪৪ মিনিট | ০৩: ৪৮ মিনিট |
আসর | ০৩: ৪৯ মিনিট | ০৫: ২৫ মিনিট |
মাগরিব | ০৫: ২৭ মিনিট | ০৬: ৪১ মিনিট |
এশা | ০৬: ৪২ মিনিট | ০৪: ৪২ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ, বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই, ’ আর কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ...
৩১ জুলাই ২০২৫মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
৪ ঘণ্টা আগেএকটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি রাস্তায় চলাচল এবং এর ব্যবস্থাপনায়ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম নিরাপদ সড়ক ও জনপথ গড়ে তোলাকে যেমন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে দেখে, আবার এটিকে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেও চিহ্নিত করে।
১ দিন আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১ দিন আগেশাব্বির আহমদ
একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি রাস্তায় চলাচল এবং এর ব্যবস্থাপনায়ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম নিরাপদ সড়ক ও জনপথ গড়ে তোলাকে যেমন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে দেখে, আবার এটিকে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেও চিহ্নিত করে।
নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলাকে নবী (সা.) ইমানের শাখা বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইমানের ৭০টির বেশি শাখা আছে...। আর সবচেয়ে নিচের শাখাটি হলো সড়কে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি)।
এমনকি রাস্তা থেকে কাঁটা, ময়লা বা প্রতিবন্ধকতা সরানোকে ইসলামে সদকা বা দান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে; যা পরকালে একজন মুমিনের ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়ার অসিলা হতে পারে। এ ছাড়া সড়ক দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা এবং যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা ইসলামে সুস্পষ্ট জুলুম ও গুনাহের কাজ।
ইসলাম ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু যান চলাচল নিশ্চিত করাকে বিশেষ সওয়াব লাভের উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাই নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে ট্রাফিক পুলিশ, চালক ও সাধারণ নাগরিক—সবারই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
চালকদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে—বেপরোয়া গতি, অদক্ষতা বা অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটানো গুরুতর অপরাধ। আর ইচ্ছাকৃত বা স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডের পরিণাম যেমন জাহান্নাম, তেমনি অসতর্কতাবশত কাউকে হত্যা করলে সে জন্যও কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ইসলামে।
সাধারণ নাগরিকদের কর্তব্য হলো চলাচলের সময় রাস্তার প্রধান হকগুলো মেনে চলা। যেমন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, নিজে সালাম দেওয়া, কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেওয়া, অন্ধ, বৃদ্ধ, শিশু বা বিপদে পড়া ব্যক্তিকে সাহায্য করা।
আর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের উচিত সড়ক নিরাপদ রাখতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, অযথা কাউকে হয়রানি না করা, অসদুপায় গ্রহণের সুযোগ কাউকে না দেওয়া, নিজেও গ্রহণ না করা, আইনের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা।
একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি রাস্তায় চলাচল এবং এর ব্যবস্থাপনায়ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম নিরাপদ সড়ক ও জনপথ গড়ে তোলাকে যেমন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে দেখে, আবার এটিকে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেও চিহ্নিত করে।
নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলাকে নবী (সা.) ইমানের শাখা বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইমানের ৭০টির বেশি শাখা আছে...। আর সবচেয়ে নিচের শাখাটি হলো সড়কে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি)।
এমনকি রাস্তা থেকে কাঁটা, ময়লা বা প্রতিবন্ধকতা সরানোকে ইসলামে সদকা বা দান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে; যা পরকালে একজন মুমিনের ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়ার অসিলা হতে পারে। এ ছাড়া সড়ক দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা এবং যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা ইসলামে সুস্পষ্ট জুলুম ও গুনাহের কাজ।
ইসলাম ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু যান চলাচল নিশ্চিত করাকে বিশেষ সওয়াব লাভের উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাই নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে ট্রাফিক পুলিশ, চালক ও সাধারণ নাগরিক—সবারই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
চালকদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে—বেপরোয়া গতি, অদক্ষতা বা অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটানো গুরুতর অপরাধ। আর ইচ্ছাকৃত বা স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডের পরিণাম যেমন জাহান্নাম, তেমনি অসতর্কতাবশত কাউকে হত্যা করলে সে জন্যও কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ইসলামে।
সাধারণ নাগরিকদের কর্তব্য হলো চলাচলের সময় রাস্তার প্রধান হকগুলো মেনে চলা। যেমন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, নিজে সালাম দেওয়া, কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেওয়া, অন্ধ, বৃদ্ধ, শিশু বা বিপদে পড়া ব্যক্তিকে সাহায্য করা।
আর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের উচিত সড়ক নিরাপদ রাখতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, অযথা কাউকে হয়রানি না করা, অসদুপায় গ্রহণের সুযোগ কাউকে না দেওয়া, নিজেও গ্রহণ না করা, আইনের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা।
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ, বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই, ’ আর কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ...
৩১ জুলাই ২০২৫মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
৪ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১১ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক
জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৬ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
---|---|---|
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪২ মিনিট |
ফজর | ০৪: ৪৩ মিনিট | ০৫: ৫৮ মিনিট |
জোহর | ১১: ৪৪ মিনিট | ০৩: ৪৯ মিনিট |
আসর | ০৩: ৫০ মিনিট | ০৫: ২৫ মিনিট |
মাগরিব | ০৫: ২৭ মিনিট | ০৬: ৪১ মিনিট |
এশা | ০৬: ৪২ মিনিট | ০৪: ৪২ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।
জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৬ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
---|---|---|
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪২ মিনিট |
ফজর | ০৪: ৪৩ মিনিট | ০৫: ৫৮ মিনিট |
জোহর | ১১: ৪৪ মিনিট | ০৩: ৪৯ মিনিট |
আসর | ০৩: ৫০ মিনিট | ০৫: ২৫ মিনিট |
মাগরিব | ০৫: ২৭ মিনিট | ০৬: ৪১ মিনিট |
এশা | ০৬: ৪২ মিনিট | ০৪: ৪২ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।
অপবাদের সামাজিক দহন: আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) কারও ছবি, কোনো ক্লিপ, বা একতরফা তথ্য দেখে অনেকেই মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে! কেউ বলেই ফেলে, ‘ও তো নিশ্চয় এমনই, ’ আর কেউ বলে, ‘আমি জানি ও ঠিক কী ধরনের মানুষ!’ —এইসব কথায় একজন মানুষ, একটা পরিবার, একটা জীবন—সব শেষ...
৩১ জুলাই ২০২৫মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
৪ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১১ ঘণ্টা আগেএকটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি রাস্তায় চলাচল এবং এর ব্যবস্থাপনায়ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম নিরাপদ সড়ক ও জনপথ গড়ে তোলাকে যেমন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে দেখে, আবার এটিকে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেও চিহ্নিত করে।
১ দিন আগে