Ajker Patrika

চিন্তার আলোয় জ্বলে উঠুক ইমানের প্রদীপ

সালমান আদীব
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানব দেহের চালক হলো মস্তিষ্ক। মহান আল্লাহ মানুষের মস্তিষ্কে এমন এক অলৌকিক ও বিস্ময়কর শক্তি দান করেছেন—যার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। হয়েছে শ্রেষ্ঠ জীব। পরিভাষায় সে অলৌকিক শক্তিকে বলে চিন্তা শক্তি। ধারণা, অনুমান, বোঝা, উপলব্ধি করা সবই চিন্তার বিভিন্ন পর্যায় বা ফলাফল।

আল্লাহ মানুষকে যেমন বাহ্যিক স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং সেই স্বাধীনতাকে কল্যাণকর কাজে ব্যবহার করবার নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি দিয়েছেন মানুষের অভ্যন্তরীণ বা চিন্তার স্বাধীনতা। যেন মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে। চিনতে পারে ন্যায়-অন্যায়। বুঝতে পারে ভালো খারাপের পার্থক্য। বেরিয়ে আসতে পারে অন্ধকার ছেড়ে আলোতে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বিভিন্নভাবে তাঁর বান্দাদের চিন্তা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। যেমন সুরা বাকারার ১৬৪ নম্বর আয়াতে বলছেন—

‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃজনে, রাত দিনের একটানা আবর্তনে, সেই সব নৌযানে যা মানুষের উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগরে বয়ে চলে, সেই পানিতে যা আল্লাহ আকাশ থেকে বর্ষণ করেছেন এবং তার মাধ্যমে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করেছেন ও তাতে সর্বপ্রকার জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং সেই মেঘমালাতে যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে আজ্ঞাবহ হয়ে সেবায় নিয়োজিত আছে, বহু নিদর্শন আছে সেই সব লোকের জন্য যারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।’

অপর স্থানে বলেছে–

‘তারা কি নিজদের অন্তরে ভেবে দেখে না—আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুই যথাযথভাবে ও এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছেন?’ (সুরা রুম: ৮)

আল্লাহ চিন্তা করতে উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি যারা চিন্তা করে না, বরং হয়তো নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে নয়তো অনুসরণ করে অন্য কোনো চিন্তাশূন্য বা অপচিন্তা পূর্ণ ব্যক্তির তাদের নিন্দা করেছেন, দিয়েছেন হুঁশিয়ারি। বলেছেন–

‘আমি অনেক জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। (কারণ) তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তা দ্বারা তারা অনুধাবন করে না, তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দ্বারা দেখে না এবং তাদের কান আছে, কিন্তু তা দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তার চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত। এরাই গাফেল।’ (সুরা আরাফ: ১৭৯)

আল্লাহ চিন্তা করতে উৎসাহ দিয়েছেন, চিন্তা না করবার কারণে দিয়েছেন ধমক, সঙ্গে চিন্তা-স্বাধীনতার অপব্যবহার করে অসৎ চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন–

‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না।’ (সুরা হুজুরাত: ১২)

মহান আল্লাহর এই নির্দেশ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই বাণী থেকে—‘তোমরা (অনর্থক মন্দ) ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা (মন্দ) ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬৭২৪)

ইসলাম মানুষকে যত ধরনের স্বাধীনতা দিয়েছে সব ধরনের স্বাধীনতাকেই কল্যাণকর কাজে চর্চা করবার নির্দেশ দিয়েছে। চিন্তা স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও একই কথা। কেননা আমরা যদি আমাদের বাহ্যিক আচরণের চালিকা শক্তি চিন্তাকে নেতিবাচক ক্ষেত্রে কাজে লাগাই, তাহলে আমাদের বাহ্যিক আচরণেও তার প্রভাব পড়া অপরিহার্য।

তাই মহান আল্লাহর দেওয়া চিন্তার স্বাধীনতা চর্চিত হোক সুস্থ চিন্তায়। আমাদের চিন্তা হোক কল্যাণ সাধন ও আলো খুঁজে পাওয়ার মাধ্যম। সুস্থ চিন্তার আলোয়ে কেটে যাক অপচিন্তা ও অপচিন্তার অপরিহার্য ফলাফল অপকর্মের অমানিশা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদ আখতারকে একহাত নিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ