মো. আবুবকর সিদ্দীক

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন; নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খুবই নগণ্য। সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টার ফেসবুকের একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের এরূপ উপলব্ধি ও প্রশংসাসূচক মন্তব্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের পুলকিত করার চেয়ে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিকেই সুতীব্র করে। অধিকন্তু, ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে আরও শাণিত ও কার্যকর করার প্রতি সংশ্লিষ্টদের অভিনিবেশ সুতীক্ষ্ণ হয়।
জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা ছিল সরকার তথা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হজের খরচ কমানোসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে-এরূপ জন আকাঙ্ক্ষা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আনুষ্ঠানিক গণমাধ্যম ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। অন্যদিকে, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের নতুন নতুন আইন-কানুন বা বিধিবিধানের কারণেও সরকারকে মাঝে মাঝে কিছু সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রথমেই বলা রাখা প্রয়োজন, হজ ব্যবস্থাপনা মূলত বাংলাদেশ ও সৌদি প্রান্তে সম্পন্ন হয়। এ প্রান্তের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে সৌদি প্রান্তের বিষয়টি সে দেশের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে থাকে। এ কারণে হজ ব্যবস্থাপনার একটি বিশাল অংশে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা রাখার তেমন সুযোগ নেই। বিশেষ করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণ একচ্ছত্র।
হজের খরচ যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি ছিল সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। সে লক্ষ্যে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তবে বাস্তবতা হলো হজের খরচের যে খাতসমূহ রয়েছে তার অধিকাংশের খরচই সৌদি সরকার নির্ধারিত। বিমানভাড়া ও হোটেল ভাড়া-এই দুটি খাত ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য কোনো খাতে খরচ কমানোর বিষয়ে দর-কষাকষির সুযোগ নেই। হোটেল ভাড়া প্রধানত হারাম শরিফ হতে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার দিনগুলোতে মিনা ও আরাফায় তাঁবুতে আবাসন, সেখানে অবস্থানকালে দেওয়া খাবারের মূল্য প্রভৃতি তাঁবুর জোন ও প্যাকেজভিত্তিক নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শুধু তাঁবুর জোন ও প্যাকেজ নির্বাচন করা ব্যতীত দর-কষাকষির কোনো সুযোগ কোনো দেশেরই নেই। সেবার মানভেদেই সেবামূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবিমা, জমজমের পানিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচও নির্ধারিত।
এ দেশ থেকে হজযাত্রায় বিমানভাড়া নিয়ে নানা রূপ আলোচনা-সমালোচনা আছে। বিমানভাড়া নির্ধারণের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণার পূর্বে বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কয়েক দফা মতবিনিময় বা সভা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তৎকালীন বিমান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, বিমান ভাড়া গতবারের তুলনায় ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমাতে সক্ষম হয় সরকার।
এ দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় সরকার বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করার ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব দর-কষাকষি করে এবং অত্যন্ত যৌক্তিক মূল্যে বাড়ি ভাড়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত কমিটি। এ বছর সৌদি রিয়ালের মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ টাকা বেড়েছে। কিছু সার্ভিস চার্জও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে।
হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নির্ধারণ করে থাকে। গত ২০২৪ হজ মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য এই ন্যূনতম কোটা ছিল ২৫০ জন। কিন্তু এ মৌসুমে সৌদি সরকার বাংলাদেশের হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ২০০০ জন নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজার নির্ধারণ করাতে সক্ষম হয় সরকার।
তবে লিড এজেন্সি গঠন নিয়ে সংকট ঘনীভূত হয়। জুলাই বিপ্লবের পরে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর কমিটি নিয়েও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন বিভাগ/সংস্থা এবং হজ এজেন্সিসমূহের সহযোগিতায় সরকার ৭০টি লিড এজেন্সি গঠন করতে সমর্থ হয়। এই লিড এজেন্সিসমূহের অধীনেই বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীরা এ বছর হজ পালন করেছেন।
১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ নেওয়া এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সৌদি সরকার। এটিও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, কঠোর মনিটরিং ও ফলো-আপ তৎপরতার কারণে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়। এরপর সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুসারে Nusuk Masar প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদিত হয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে এ বছর সরকারি-বেসরকারি উভয় মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসার বিষয়টিও সম্পন্ন হয়।
এ মৌসুমের হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন হলো ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হজের সফর সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে এই অ্যাপ তৈরি করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাকিং, নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্যসহ একগুচ্ছ প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন যুক্ত হয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ড। হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সরকারের অনুরোধে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এই কার্ড চালু করে। এই কার্ড নগদ টাকার পরিপূরক। এ কার্ডে বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যায়। POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধাও রয়েছে এই হজ প্রিপেইড কার্ডে।
সরকারের পরামর্শে হজযাত্রীদের জন্য ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করে। এর ফলে হাজিরা সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে।
হজ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দল গঠনে জনবলের সংখ্যা যতটা সম্ভব যৌক্তিক করার চেষ্টা করে সরকার। গত বছর এ সকল দলের মোট সদস্য ছিল ৩৬৬ জন, এ বছর সেই সংখ্যা কমিয়ে ২৯৩ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
হজযাত্রীদের সেবায় মক্কা ও মদিনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিযুক্ত করা হয় হজকর্মী। হজযাত্রীদের যেকোনো অভিযোগ/অনুযোগ খতিয়ে দেখে তাৎক্ষণিক সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়। মিনায় এ দেশীয় হাজিদের সেবায় সুনির্দিষ্ট দায়িত্বসহ গঠন করা হয় ১৮টি টিম।
এবার হজযাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ধর্ম উপদেষ্টা ও ধর্ম সচিবের দিকনির্দেশনা এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ সংক্রান্ত কমিটি প্রায় শতভাগ লাগেজ হজযাত্রীদের হাতে পৌঁছে দিতে পেরেছে।
হজ ফ্লাইটের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সংখ্যা বেশি থাকায় এবং হজ এজেন্সির বাড়িভাড়ার সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় হজযাত্রী পরিবহনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়। সেটিও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজযাত্রী পরিবহনকারী তিনটি এয়ারলাইনসের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল হজযাত্রীকে সৌদি আরব প্রেরণ করতে সক্ষম হয়।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া গেছে। উদ্ভূত সকল পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অকুণ্ঠ সহায়তা করেছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পেশাদারি ও দূরদর্শিতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ধর্ম সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দপ্তরে কাজ করেছেন। যখনই কোনো ইস্যু সামনে এসেছে তখনই সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এমনকি কোনো ইস্যু সামনে আসতে পারে-এরূপ সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এ দেশের গণমাধ্যমসমূহ সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে দেশবাসীকে অবহিত করেছে এবং নানা তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছে।
হজ ব্যবস্থাপনা একটি টিম ওয়ার্ক। সকলে মিলে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে পারলে যেকোনো ব্যবস্থাপনাই সুন্দর ও সাবলীল হবে—এটাই স্বাভাবিক। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা তারই প্রতিচ্ছবি।
এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সর্বৈব সুন্দর হয়েছে—এরূপে যারা বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন, তাদের মূল্যায়নে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। তবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে এবারও সামান্য কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণে। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হাজিদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছে। এবার যে ত্রুটিসমূহ গোচরে এসেছে তা ভবিষ্যতে যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় সচেষ্ট থাকবে। অনিন্দ্য ব্যবস্থাপনায় সাবলীল হজ নিশ্চিত করতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সদা তৎপর।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন; নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খুবই নগণ্য। সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টার ফেসবুকের একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের এরূপ উপলব্ধি ও প্রশংসাসূচক মন্তব্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের পুলকিত করার চেয়ে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিকেই সুতীব্র করে। অধিকন্তু, ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে আরও শাণিত ও কার্যকর করার প্রতি সংশ্লিষ্টদের অভিনিবেশ সুতীক্ষ্ণ হয়।
জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা ছিল সরকার তথা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হজের খরচ কমানোসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে-এরূপ জন আকাঙ্ক্ষা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আনুষ্ঠানিক গণমাধ্যম ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। অন্যদিকে, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের নতুন নতুন আইন-কানুন বা বিধিবিধানের কারণেও সরকারকে মাঝে মাঝে কিছু সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রথমেই বলা রাখা প্রয়োজন, হজ ব্যবস্থাপনা মূলত বাংলাদেশ ও সৌদি প্রান্তে সম্পন্ন হয়। এ প্রান্তের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে সৌদি প্রান্তের বিষয়টি সে দেশের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে থাকে। এ কারণে হজ ব্যবস্থাপনার একটি বিশাল অংশে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা রাখার তেমন সুযোগ নেই। বিশেষ করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণ একচ্ছত্র।
হজের খরচ যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি ছিল সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। সে লক্ষ্যে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তবে বাস্তবতা হলো হজের খরচের যে খাতসমূহ রয়েছে তার অধিকাংশের খরচই সৌদি সরকার নির্ধারিত। বিমানভাড়া ও হোটেল ভাড়া-এই দুটি খাত ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য কোনো খাতে খরচ কমানোর বিষয়ে দর-কষাকষির সুযোগ নেই। হোটেল ভাড়া প্রধানত হারাম শরিফ হতে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার দিনগুলোতে মিনা ও আরাফায় তাঁবুতে আবাসন, সেখানে অবস্থানকালে দেওয়া খাবারের মূল্য প্রভৃতি তাঁবুর জোন ও প্যাকেজভিত্তিক নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শুধু তাঁবুর জোন ও প্যাকেজ নির্বাচন করা ব্যতীত দর-কষাকষির কোনো সুযোগ কোনো দেশেরই নেই। সেবার মানভেদেই সেবামূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবিমা, জমজমের পানিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচও নির্ধারিত।
এ দেশ থেকে হজযাত্রায় বিমানভাড়া নিয়ে নানা রূপ আলোচনা-সমালোচনা আছে। বিমানভাড়া নির্ধারণের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণার পূর্বে বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কয়েক দফা মতবিনিময় বা সভা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তৎকালীন বিমান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, বিমান ভাড়া গতবারের তুলনায় ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমাতে সক্ষম হয় সরকার।
এ দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় সরকার বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করার ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব দর-কষাকষি করে এবং অত্যন্ত যৌক্তিক মূল্যে বাড়ি ভাড়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত কমিটি। এ বছর সৌদি রিয়ালের মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ টাকা বেড়েছে। কিছু সার্ভিস চার্জও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে।
হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নির্ধারণ করে থাকে। গত ২০২৪ হজ মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য এই ন্যূনতম কোটা ছিল ২৫০ জন। কিন্তু এ মৌসুমে সৌদি সরকার বাংলাদেশের হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ২০০০ জন নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজার নির্ধারণ করাতে সক্ষম হয় সরকার।
তবে লিড এজেন্সি গঠন নিয়ে সংকট ঘনীভূত হয়। জুলাই বিপ্লবের পরে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর কমিটি নিয়েও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন বিভাগ/সংস্থা এবং হজ এজেন্সিসমূহের সহযোগিতায় সরকার ৭০টি লিড এজেন্সি গঠন করতে সমর্থ হয়। এই লিড এজেন্সিসমূহের অধীনেই বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীরা এ বছর হজ পালন করেছেন।
১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ নেওয়া এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সৌদি সরকার। এটিও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, কঠোর মনিটরিং ও ফলো-আপ তৎপরতার কারণে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়। এরপর সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুসারে Nusuk Masar প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদিত হয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে এ বছর সরকারি-বেসরকারি উভয় মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসার বিষয়টিও সম্পন্ন হয়।
এ মৌসুমের হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন হলো ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হজের সফর সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে এই অ্যাপ তৈরি করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাকিং, নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্যসহ একগুচ্ছ প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন যুক্ত হয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ড। হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সরকারের অনুরোধে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এই কার্ড চালু করে। এই কার্ড নগদ টাকার পরিপূরক। এ কার্ডে বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যায়। POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধাও রয়েছে এই হজ প্রিপেইড কার্ডে।
সরকারের পরামর্শে হজযাত্রীদের জন্য ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করে। এর ফলে হাজিরা সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে।
হজ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দল গঠনে জনবলের সংখ্যা যতটা সম্ভব যৌক্তিক করার চেষ্টা করে সরকার। গত বছর এ সকল দলের মোট সদস্য ছিল ৩৬৬ জন, এ বছর সেই সংখ্যা কমিয়ে ২৯৩ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
হজযাত্রীদের সেবায় মক্কা ও মদিনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিযুক্ত করা হয় হজকর্মী। হজযাত্রীদের যেকোনো অভিযোগ/অনুযোগ খতিয়ে দেখে তাৎক্ষণিক সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়। মিনায় এ দেশীয় হাজিদের সেবায় সুনির্দিষ্ট দায়িত্বসহ গঠন করা হয় ১৮টি টিম।
এবার হজযাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ধর্ম উপদেষ্টা ও ধর্ম সচিবের দিকনির্দেশনা এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ সংক্রান্ত কমিটি প্রায় শতভাগ লাগেজ হজযাত্রীদের হাতে পৌঁছে দিতে পেরেছে।
হজ ফ্লাইটের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সংখ্যা বেশি থাকায় এবং হজ এজেন্সির বাড়িভাড়ার সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় হজযাত্রী পরিবহনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়। সেটিও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজযাত্রী পরিবহনকারী তিনটি এয়ারলাইনসের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল হজযাত্রীকে সৌদি আরব প্রেরণ করতে সক্ষম হয়।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া গেছে। উদ্ভূত সকল পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অকুণ্ঠ সহায়তা করেছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পেশাদারি ও দূরদর্শিতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ধর্ম সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দপ্তরে কাজ করেছেন। যখনই কোনো ইস্যু সামনে এসেছে তখনই সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এমনকি কোনো ইস্যু সামনে আসতে পারে-এরূপ সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এ দেশের গণমাধ্যমসমূহ সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে দেশবাসীকে অবহিত করেছে এবং নানা তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছে।
হজ ব্যবস্থাপনা একটি টিম ওয়ার্ক। সকলে মিলে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে পারলে যেকোনো ব্যবস্থাপনাই সুন্দর ও সাবলীল হবে—এটাই স্বাভাবিক। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা তারই প্রতিচ্ছবি।
এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সর্বৈব সুন্দর হয়েছে—এরূপে যারা বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন, তাদের মূল্যায়নে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। তবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে এবারও সামান্য কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণে। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হাজিদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছে। এবার যে ত্রুটিসমূহ গোচরে এসেছে তা ভবিষ্যতে যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় সচেষ্ট থাকবে। অনিন্দ্য ব্যবস্থাপনায় সাবলীল হজ নিশ্চিত করতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সদা তৎপর।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মো. আবুবকর সিদ্দীক

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন; নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খুবই নগণ্য। সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টার ফেসবুকের একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের এরূপ উপলব্ধি ও প্রশংসাসূচক মন্তব্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের পুলকিত করার চেয়ে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিকেই সুতীব্র করে। অধিকন্তু, ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে আরও শাণিত ও কার্যকর করার প্রতি সংশ্লিষ্টদের অভিনিবেশ সুতীক্ষ্ণ হয়।
জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা ছিল সরকার তথা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হজের খরচ কমানোসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে-এরূপ জন আকাঙ্ক্ষা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আনুষ্ঠানিক গণমাধ্যম ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। অন্যদিকে, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের নতুন নতুন আইন-কানুন বা বিধিবিধানের কারণেও সরকারকে মাঝে মাঝে কিছু সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রথমেই বলা রাখা প্রয়োজন, হজ ব্যবস্থাপনা মূলত বাংলাদেশ ও সৌদি প্রান্তে সম্পন্ন হয়। এ প্রান্তের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে সৌদি প্রান্তের বিষয়টি সে দেশের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে থাকে। এ কারণে হজ ব্যবস্থাপনার একটি বিশাল অংশে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা রাখার তেমন সুযোগ নেই। বিশেষ করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণ একচ্ছত্র।
হজের খরচ যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি ছিল সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। সে লক্ষ্যে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তবে বাস্তবতা হলো হজের খরচের যে খাতসমূহ রয়েছে তার অধিকাংশের খরচই সৌদি সরকার নির্ধারিত। বিমানভাড়া ও হোটেল ভাড়া-এই দুটি খাত ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য কোনো খাতে খরচ কমানোর বিষয়ে দর-কষাকষির সুযোগ নেই। হোটেল ভাড়া প্রধানত হারাম শরিফ হতে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার দিনগুলোতে মিনা ও আরাফায় তাঁবুতে আবাসন, সেখানে অবস্থানকালে দেওয়া খাবারের মূল্য প্রভৃতি তাঁবুর জোন ও প্যাকেজভিত্তিক নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শুধু তাঁবুর জোন ও প্যাকেজ নির্বাচন করা ব্যতীত দর-কষাকষির কোনো সুযোগ কোনো দেশেরই নেই। সেবার মানভেদেই সেবামূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবিমা, জমজমের পানিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচও নির্ধারিত।
এ দেশ থেকে হজযাত্রায় বিমানভাড়া নিয়ে নানা রূপ আলোচনা-সমালোচনা আছে। বিমানভাড়া নির্ধারণের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণার পূর্বে বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কয়েক দফা মতবিনিময় বা সভা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তৎকালীন বিমান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, বিমান ভাড়া গতবারের তুলনায় ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমাতে সক্ষম হয় সরকার।
এ দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় সরকার বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করার ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব দর-কষাকষি করে এবং অত্যন্ত যৌক্তিক মূল্যে বাড়ি ভাড়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত কমিটি। এ বছর সৌদি রিয়ালের মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ টাকা বেড়েছে। কিছু সার্ভিস চার্জও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে।
হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নির্ধারণ করে থাকে। গত ২০২৪ হজ মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য এই ন্যূনতম কোটা ছিল ২৫০ জন। কিন্তু এ মৌসুমে সৌদি সরকার বাংলাদেশের হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ২০০০ জন নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজার নির্ধারণ করাতে সক্ষম হয় সরকার।
তবে লিড এজেন্সি গঠন নিয়ে সংকট ঘনীভূত হয়। জুলাই বিপ্লবের পরে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর কমিটি নিয়েও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন বিভাগ/সংস্থা এবং হজ এজেন্সিসমূহের সহযোগিতায় সরকার ৭০টি লিড এজেন্সি গঠন করতে সমর্থ হয়। এই লিড এজেন্সিসমূহের অধীনেই বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীরা এ বছর হজ পালন করেছেন।
১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ নেওয়া এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সৌদি সরকার। এটিও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, কঠোর মনিটরিং ও ফলো-আপ তৎপরতার কারণে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়। এরপর সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুসারে Nusuk Masar প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদিত হয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে এ বছর সরকারি-বেসরকারি উভয় মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসার বিষয়টিও সম্পন্ন হয়।
এ মৌসুমের হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন হলো ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হজের সফর সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে এই অ্যাপ তৈরি করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাকিং, নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্যসহ একগুচ্ছ প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন যুক্ত হয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ড। হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সরকারের অনুরোধে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এই কার্ড চালু করে। এই কার্ড নগদ টাকার পরিপূরক। এ কার্ডে বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যায়। POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধাও রয়েছে এই হজ প্রিপেইড কার্ডে।
সরকারের পরামর্শে হজযাত্রীদের জন্য ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করে। এর ফলে হাজিরা সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে।
হজ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দল গঠনে জনবলের সংখ্যা যতটা সম্ভব যৌক্তিক করার চেষ্টা করে সরকার। গত বছর এ সকল দলের মোট সদস্য ছিল ৩৬৬ জন, এ বছর সেই সংখ্যা কমিয়ে ২৯৩ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
হজযাত্রীদের সেবায় মক্কা ও মদিনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিযুক্ত করা হয় হজকর্মী। হজযাত্রীদের যেকোনো অভিযোগ/অনুযোগ খতিয়ে দেখে তাৎক্ষণিক সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়। মিনায় এ দেশীয় হাজিদের সেবায় সুনির্দিষ্ট দায়িত্বসহ গঠন করা হয় ১৮টি টিম।
এবার হজযাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ধর্ম উপদেষ্টা ও ধর্ম সচিবের দিকনির্দেশনা এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ সংক্রান্ত কমিটি প্রায় শতভাগ লাগেজ হজযাত্রীদের হাতে পৌঁছে দিতে পেরেছে।
হজ ফ্লাইটের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সংখ্যা বেশি থাকায় এবং হজ এজেন্সির বাড়িভাড়ার সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় হজযাত্রী পরিবহনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়। সেটিও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজযাত্রী পরিবহনকারী তিনটি এয়ারলাইনসের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল হজযাত্রীকে সৌদি আরব প্রেরণ করতে সক্ষম হয়।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া গেছে। উদ্ভূত সকল পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অকুণ্ঠ সহায়তা করেছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পেশাদারি ও দূরদর্শিতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ধর্ম সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দপ্তরে কাজ করেছেন। যখনই কোনো ইস্যু সামনে এসেছে তখনই সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এমনকি কোনো ইস্যু সামনে আসতে পারে-এরূপ সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এ দেশের গণমাধ্যমসমূহ সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে দেশবাসীকে অবহিত করেছে এবং নানা তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছে।
হজ ব্যবস্থাপনা একটি টিম ওয়ার্ক। সকলে মিলে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে পারলে যেকোনো ব্যবস্থাপনাই সুন্দর ও সাবলীল হবে—এটাই স্বাভাবিক। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা তারই প্রতিচ্ছবি।
এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সর্বৈব সুন্দর হয়েছে—এরূপে যারা বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন, তাদের মূল্যায়নে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। তবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে এবারও সামান্য কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণে। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হাজিদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছে। এবার যে ত্রুটিসমূহ গোচরে এসেছে তা ভবিষ্যতে যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় সচেষ্ট থাকবে। অনিন্দ্য ব্যবস্থাপনায় সাবলীল হজ নিশ্চিত করতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সদা তৎপর।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন; নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খুবই নগণ্য। সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টার ফেসবুকের একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের এরূপ উপলব্ধি ও প্রশংসাসূচক মন্তব্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের পুলকিত করার চেয়ে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিকেই সুতীব্র করে। অধিকন্তু, ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে আরও শাণিত ও কার্যকর করার প্রতি সংশ্লিষ্টদের অভিনিবেশ সুতীক্ষ্ণ হয়।
জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা ছিল সরকার তথা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হজের খরচ কমানোসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে-এরূপ জন আকাঙ্ক্ষা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আনুষ্ঠানিক গণমাধ্যম ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। অন্যদিকে, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের নতুন নতুন আইন-কানুন বা বিধিবিধানের কারণেও সরকারকে মাঝে মাঝে কিছু সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রথমেই বলা রাখা প্রয়োজন, হজ ব্যবস্থাপনা মূলত বাংলাদেশ ও সৌদি প্রান্তে সম্পন্ন হয়। এ প্রান্তের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে সৌদি প্রান্তের বিষয়টি সে দেশের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে থাকে। এ কারণে হজ ব্যবস্থাপনার একটি বিশাল অংশে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা রাখার তেমন সুযোগ নেই। বিশেষ করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণ একচ্ছত্র।
হজের খরচ যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি ছিল সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। সে লক্ষ্যে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তবে বাস্তবতা হলো হজের খরচের যে খাতসমূহ রয়েছে তার অধিকাংশের খরচই সৌদি সরকার নির্ধারিত। বিমানভাড়া ও হোটেল ভাড়া-এই দুটি খাত ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য কোনো খাতে খরচ কমানোর বিষয়ে দর-কষাকষির সুযোগ নেই। হোটেল ভাড়া প্রধানত হারাম শরিফ হতে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার দিনগুলোতে মিনা ও আরাফায় তাঁবুতে আবাসন, সেখানে অবস্থানকালে দেওয়া খাবারের মূল্য প্রভৃতি তাঁবুর জোন ও প্যাকেজভিত্তিক নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শুধু তাঁবুর জোন ও প্যাকেজ নির্বাচন করা ব্যতীত দর-কষাকষির কোনো সুযোগ কোনো দেশেরই নেই। সেবার মানভেদেই সেবামূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবিমা, জমজমের পানিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচও নির্ধারিত।
এ দেশ থেকে হজযাত্রায় বিমানভাড়া নিয়ে নানা রূপ আলোচনা-সমালোচনা আছে। বিমানভাড়া নির্ধারণের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণার পূর্বে বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কয়েক দফা মতবিনিময় বা সভা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তৎকালীন বিমান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, বিমান ভাড়া গতবারের তুলনায় ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমাতে সক্ষম হয় সরকার।
এ দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় সরকার বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করার ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব দর-কষাকষি করে এবং অত্যন্ত যৌক্তিক মূল্যে বাড়ি ভাড়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত কমিটি। এ বছর সৌদি রিয়ালের মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ টাকা বেড়েছে। কিছু সার্ভিস চার্জও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে।
হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নির্ধারণ করে থাকে। গত ২০২৪ হজ মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য এই ন্যূনতম কোটা ছিল ২৫০ জন। কিন্তু এ মৌসুমে সৌদি সরকার বাংলাদেশের হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ২০০০ জন নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজার নির্ধারণ করাতে সক্ষম হয় সরকার।
তবে লিড এজেন্সি গঠন নিয়ে সংকট ঘনীভূত হয়। জুলাই বিপ্লবের পরে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর কমিটি নিয়েও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন বিভাগ/সংস্থা এবং হজ এজেন্সিসমূহের সহযোগিতায় সরকার ৭০টি লিড এজেন্সি গঠন করতে সমর্থ হয়। এই লিড এজেন্সিসমূহের অধীনেই বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীরা এ বছর হজ পালন করেছেন।
১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ নেওয়া এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সৌদি সরকার। এটিও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, কঠোর মনিটরিং ও ফলো-আপ তৎপরতার কারণে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়। এরপর সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুসারে Nusuk Masar প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদিত হয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে এ বছর সরকারি-বেসরকারি উভয় মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসার বিষয়টিও সম্পন্ন হয়।
এ মৌসুমের হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন হলো ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হজের সফর সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে এই অ্যাপ তৈরি করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাকিং, নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্যসহ একগুচ্ছ প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন যুক্ত হয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ড। হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সরকারের অনুরোধে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এই কার্ড চালু করে। এই কার্ড নগদ টাকার পরিপূরক। এ কার্ডে বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যায়। POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধাও রয়েছে এই হজ প্রিপেইড কার্ডে।
সরকারের পরামর্শে হজযাত্রীদের জন্য ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করে। এর ফলে হাজিরা সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে।
হজ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দল গঠনে জনবলের সংখ্যা যতটা সম্ভব যৌক্তিক করার চেষ্টা করে সরকার। গত বছর এ সকল দলের মোট সদস্য ছিল ৩৬৬ জন, এ বছর সেই সংখ্যা কমিয়ে ২৯৩ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
হজযাত্রীদের সেবায় মক্কা ও মদিনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিযুক্ত করা হয় হজকর্মী। হজযাত্রীদের যেকোনো অভিযোগ/অনুযোগ খতিয়ে দেখে তাৎক্ষণিক সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়। মিনায় এ দেশীয় হাজিদের সেবায় সুনির্দিষ্ট দায়িত্বসহ গঠন করা হয় ১৮টি টিম।
এবার হজযাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ধর্ম উপদেষ্টা ও ধর্ম সচিবের দিকনির্দেশনা এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ সংক্রান্ত কমিটি প্রায় শতভাগ লাগেজ হজযাত্রীদের হাতে পৌঁছে দিতে পেরেছে।
হজ ফ্লাইটের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সংখ্যা বেশি থাকায় এবং হজ এজেন্সির বাড়িভাড়ার সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় হজযাত্রী পরিবহনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়। সেটিও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজযাত্রী পরিবহনকারী তিনটি এয়ারলাইনসের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল হজযাত্রীকে সৌদি আরব প্রেরণ করতে সক্ষম হয়।
এ বছর হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া গেছে। উদ্ভূত সকল পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অকুণ্ঠ সহায়তা করেছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পেশাদারি ও দূরদর্শিতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ধর্ম সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দপ্তরে কাজ করেছেন। যখনই কোনো ইস্যু সামনে এসেছে তখনই সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এমনকি কোনো ইস্যু সামনে আসতে পারে-এরূপ সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এ দেশের গণমাধ্যমসমূহ সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে দেশবাসীকে অবহিত করেছে এবং নানা তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছে।
হজ ব্যবস্থাপনা একটি টিম ওয়ার্ক। সকলে মিলে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে পারলে যেকোনো ব্যবস্থাপনাই সুন্দর ও সাবলীল হবে—এটাই স্বাভাবিক। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা তারই প্রতিচ্ছবি।
এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সর্বৈব সুন্দর হয়েছে—এরূপে যারা বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন, তাদের মূল্যায়নে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। তবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে এবারও সামান্য কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণে। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হাজিদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছে। এবার যে ত্রুটিসমূহ গোচরে এসেছে তা ভবিষ্যতে যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় সচেষ্ট থাকবে। অনিন্দ্য ব্যবস্থাপনায় সাবলীল হজ নিশ্চিত করতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সদা তৎপর।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি না থাকলে দুনিয়াবি জীবন বিপর্যস্ত হয়, অনেক সময় দ্বীনদারিরও সর্বনাশ হয়ে যায়। এক পাপ আরও হাজারটা পাপ ডেকে আনে।
১০ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৭ ঘণ্টা আগে
মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়—জাগতিক হোক বা পরলৌকিক, পবিত্রতা এক অনন্য গুরুত্ব বহন করে। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ (১ / ৫৪)-তে চারটি সৌভাগ্যের স্বভাবের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস।
১ দিন আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে জুমা বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ইমানকে নবায়নের এক...
১ দিন আগেমাহমুদ হাসান ফাহিম

সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি না থাকলে দুনিয়াবি জীবন বিপর্যস্ত হয়, অনেক সময় দ্বীনদারিরও সর্বনাশ হয়ে যায়। এক পাপ আরও হাজারটা পাপ ডেকে আনে।
পৃথিবীতে ভালোভাবে জীবনযাপন করার জন্য, উন্নতির জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা থাকা অপরিহার্য। আর শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার পর তা বজায় রাখার জন্য আপস-নিষ্পত্তির মন-মানসিকতা থাকতে হবে। কেননা, বিচিত্র স্বভাবের মানুষ নিয়েই হয় সমাজ। সব মানুষ এক মেজাজের নয়। তুচ্ছ ও নগণ্য বিষয়েও অনেক সময় পরস্পরে মনোমালিন্য হয়, কথা-কাটাকাটি হয়। একসঙ্গে চলতে গেলে এমনটি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টি এভাবেই ছেড়ে দিলে একপর্যায়ে তা ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়। তাই এই বিচিত্র স্বভাবের মানুষদের নিয়ে সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে নিজেদের মধ্যে রাখতে হবে আপস-নিষ্পত্তির অনন্য গুণ।
ইসলামপূর্ব সময়ে কাবা পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। তখন প্রিয় নবী (সা.) চাদরে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে নিয়ে নিজ হাতে তা প্রতিস্থাপন করেন এবং এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের নিষ্পত্তি করেন।
আপস-নিষ্পত্তি দ্বারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের বিবাদ দূর হয় এবং শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে।’ (সুরা শুরা: ৪০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আপস-নিষ্পত্তিকে নামাজ, রোজা এবং জাকাত থেকেও উত্তম আমল বলেছেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৩৯)
স্বাভাবিক কথায় মীমাংসা করা সম্ভব না হলে, আগে বেড়ে কথা হেরফের করারও অনুমতি আছে। তা মিথ্যা হবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যারা এমন করে হাদিসে তাদের মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত না করে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। (সহিহ্ বুখারি: ২৫১৩)

সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি না থাকলে দুনিয়াবি জীবন বিপর্যস্ত হয়, অনেক সময় দ্বীনদারিরও সর্বনাশ হয়ে যায়। এক পাপ আরও হাজারটা পাপ ডেকে আনে।
পৃথিবীতে ভালোভাবে জীবনযাপন করার জন্য, উন্নতির জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা থাকা অপরিহার্য। আর শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার পর তা বজায় রাখার জন্য আপস-নিষ্পত্তির মন-মানসিকতা থাকতে হবে। কেননা, বিচিত্র স্বভাবের মানুষ নিয়েই হয় সমাজ। সব মানুষ এক মেজাজের নয়। তুচ্ছ ও নগণ্য বিষয়েও অনেক সময় পরস্পরে মনোমালিন্য হয়, কথা-কাটাকাটি হয়। একসঙ্গে চলতে গেলে এমনটি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টি এভাবেই ছেড়ে দিলে একপর্যায়ে তা ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়। তাই এই বিচিত্র স্বভাবের মানুষদের নিয়ে সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে নিজেদের মধ্যে রাখতে হবে আপস-নিষ্পত্তির অনন্য গুণ।
ইসলামপূর্ব সময়ে কাবা পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। তখন প্রিয় নবী (সা.) চাদরে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে নিয়ে নিজ হাতে তা প্রতিস্থাপন করেন এবং এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের নিষ্পত্তি করেন।
আপস-নিষ্পত্তি দ্বারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের বিবাদ দূর হয় এবং শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে।’ (সুরা শুরা: ৪০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আপস-নিষ্পত্তিকে নামাজ, রোজা এবং জাকাত থেকেও উত্তম আমল বলেছেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৩৯)
স্বাভাবিক কথায় মীমাংসা করা সম্ভব না হলে, আগে বেড়ে কথা হেরফের করারও অনুমতি আছে। তা মিথ্যা হবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যারা এমন করে হাদিসে তাদের মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত না করে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। (সহিহ্ বুখারি: ২৫১৩)

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত...
১০ জুন ২০২৫
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৭ ঘণ্টা আগে
মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়—জাগতিক হোক বা পরলৌকিক, পবিত্রতা এক অনন্য গুরুত্ব বহন করে। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ (১ / ৫৪)-তে চারটি সৌভাগ্যের স্বভাবের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস।
১ দিন আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে জুমা বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ইমানকে নবায়নের এক...
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৯ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ৪: ৪৩ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৪৪ মিনিট | ০৫: ৫৯ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৭ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৮ মিনিট | ০৫: ২৩ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২৫ মিনিট | ০৬: ৩৯ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৪০ মিনিট | ০৪: ৪৩ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৯ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ৪: ৪৩ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৪৪ মিনিট | ০৫: ৫৯ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৭ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৮ মিনিট | ০৫: ২৩ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২৫ মিনিট | ০৬: ৩৯ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৪০ মিনিট | ০৪: ৪৩ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত...
১০ জুন ২০২৫
সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি না থাকলে দুনিয়াবি জীবন বিপর্যস্ত হয়, অনেক সময় দ্বীনদারিরও সর্বনাশ হয়ে যায়। এক পাপ আরও হাজারটা পাপ ডেকে আনে।
১০ ঘণ্টা আগে
মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়—জাগতিক হোক বা পরলৌকিক, পবিত্রতা এক অনন্য গুরুত্ব বহন করে। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ (১ / ৫৪)-তে চারটি সৌভাগ্যের স্বভাবের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস।
১ দিন আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে জুমা বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ইমানকে নবায়নের এক...
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

আরবি শব্দ তহারাত-এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। আর শরয়ি দৃষ্টিতে তহারাত হলো বিশেষ পদ্ধতিতে অপবিত্রতা থেকে শুদ্ধ হওয়া।
মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়—জাগতিক হোক বা পরলৌকিক, পবিত্রতা এক অনন্য গুরুত্ব বহন করে। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ (১ / ৫৪)-তে চারটি সৌভাগ্যের স্বভাবের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস।
পবিত্রতা মানুষকে করে তোলে ফেরেশতার অনুরূপ। তার হৃদয় হয়ে ওঠে নির্মল। আত্মা হয় প্রেরণার আধার। অন্যদিকে, অপবিত্রতা মানুষকে ঠেলে দেয় শয়তানের কুমন্ত্রণার দরজায়।
যে ব্যক্তি সর্বদা পবিত্রতায় যত্নবান, তার অন্তরে জন্ম নেয় আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার যোগ্যতা। সে দেখে সততা ও আলোয় ভরা স্বপ্ন। তার চরিত্রে ফুটে ওঠে অভূতপূর্ব আত্মিক সৌন্দর্য।
পবিত্রতা শুধু শরীরের পরিচ্ছন্নতা নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধতার প্রতীক। এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পবিত্রতা রক্ষা করার একটি মহৎ উপায়। তাই পবিত্রতার মাধ্যমে নিজেকে শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ রাখা প্রতিটি মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব এবং সফল জীবনের মূল চাবিকাঠি।
লেখক: মুফতি আবু রায়হান আল মাহমুদ, প্রিন্সিপাল, গাঙ্গাটিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসা বাখরাবাদ, কুমিল্লা।

আরবি শব্দ তহারাত-এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। আর শরয়ি দৃষ্টিতে তহারাত হলো বিশেষ পদ্ধতিতে অপবিত্রতা থেকে শুদ্ধ হওয়া।
মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়—জাগতিক হোক বা পরলৌকিক, পবিত্রতা এক অনন্য গুরুত্ব বহন করে। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ (১ / ৫৪)-তে চারটি সৌভাগ্যের স্বভাবের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস।
পবিত্রতা মানুষকে করে তোলে ফেরেশতার অনুরূপ। তার হৃদয় হয়ে ওঠে নির্মল। আত্মা হয় প্রেরণার আধার। অন্যদিকে, অপবিত্রতা মানুষকে ঠেলে দেয় শয়তানের কুমন্ত্রণার দরজায়।
যে ব্যক্তি সর্বদা পবিত্রতায় যত্নবান, তার অন্তরে জন্ম নেয় আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার যোগ্যতা। সে দেখে সততা ও আলোয় ভরা স্বপ্ন। তার চরিত্রে ফুটে ওঠে অভূতপূর্ব আত্মিক সৌন্দর্য।
পবিত্রতা শুধু শরীরের পরিচ্ছন্নতা নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধতার প্রতীক। এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পবিত্রতা রক্ষা করার একটি মহৎ উপায়। তাই পবিত্রতার মাধ্যমে নিজেকে শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ রাখা প্রতিটি মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব এবং সফল জীবনের মূল চাবিকাঠি।
লেখক: মুফতি আবু রায়হান আল মাহমুদ, প্রিন্সিপাল, গাঙ্গাটিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসা বাখরাবাদ, কুমিল্লা।

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত...
১০ জুন ২০২৫
সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি না থাকলে দুনিয়াবি জীবন বিপর্যস্ত হয়, অনেক সময় দ্বীনদারিরও সর্বনাশ হয়ে যায়। এক পাপ আরও হাজারটা পাপ ডেকে আনে।
১০ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে জুমা বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ইমানকে নবায়নের এক...
১ দিন আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে জুমা বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ইমানকে নবায়নের এক মহামুহূর্ত তৈরি করে।
জমাদিউল আউয়াল মাস হিজরি বর্ষপঞ্জির মধ্যবর্তী এক শান্ত সময়। ইসলামি ইতিহাসে এই মাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে—বিশেষত নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের কিছু যুদ্ধ এবং ইসলামি সমাজের পুনর্গঠনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। এটি এমন এক মাস, যা আমাদের আল্লাহর পথে অবিচল থাকার, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তাঁর পথে দৃঢ় থাকে।’ (সুরা সাফ: ৪)
জুমা শ্রেষ্ঠতম দিন
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সূর্য উদিত হয়, এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার। এই দিনেই আদম সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কিয়ামতও এই দিনেই সংঘটিত হবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৪)
জুমার দিন মুসলমানদের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন। এদিনে গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও সালাত আদায় করা—এসব আমল অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমুআ: ৯)
এই জুমা ও পুরো মাসে কিছু আমল করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়ার আশা করা যায়:
১. আত্মশুদ্ধি ও তওবা: অতীতের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
২. সুরা কাহফ তিলাওয়াত: নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুক্রবারে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে এক শুক্রবার থেকে পরের শুক্রবার পর্যন্ত নুর দান করেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৩৯২)
৩. দরুদ শরিফ বেশি পরিমাণে পড়া: নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো—কারণ, তোমাদের দরুদ আমাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ (সুনান আবু দাউদ: ১৫৩১)
৪. দরিদ্র ও অভাবীদের সহায়তা: মাসের শুরুতে দান-সদকা করলে পুরো মাসে বরকত আসে।
৫. দোয়া কবুলের সময়: শুক্রবারে আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি বিশেষ দোয়া কবুলের সময়।
এই জুমা হোক জীবনের নতুন দিকনির্দেশনা
জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমা কেবল একটি তারিখ নয়; এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু নেক আমল চিরস্থায়ী। নতুন মাসের শুরু যেন নতুন প্রেরণা হয়ে আসে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে।’ (সুরা রাদ: ১১)। তাই আসুন, এই পবিত্র জুমায় নিজেদের পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করি—নামাজে মনোযোগ দিই, কোরআন পাঠে নিয়মিত হই, মনের গ্লানি দূর করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে জীবন উৎসর্গ করি।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে জুমা বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ইমানকে নবায়নের এক মহামুহূর্ত তৈরি করে।
জমাদিউল আউয়াল মাস হিজরি বর্ষপঞ্জির মধ্যবর্তী এক শান্ত সময়। ইসলামি ইতিহাসে এই মাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে—বিশেষত নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের কিছু যুদ্ধ এবং ইসলামি সমাজের পুনর্গঠনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। এটি এমন এক মাস, যা আমাদের আল্লাহর পথে অবিচল থাকার, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তাঁর পথে দৃঢ় থাকে।’ (সুরা সাফ: ৪)
জুমা শ্রেষ্ঠতম দিন
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সূর্য উদিত হয়, এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার। এই দিনেই আদম সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কিয়ামতও এই দিনেই সংঘটিত হবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৪)
জুমার দিন মুসলমানদের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন। এদিনে গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও সালাত আদায় করা—এসব আমল অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমুআ: ৯)
এই জুমা ও পুরো মাসে কিছু আমল করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়ার আশা করা যায়:
১. আত্মশুদ্ধি ও তওবা: অতীতের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
২. সুরা কাহফ তিলাওয়াত: নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুক্রবারে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে এক শুক্রবার থেকে পরের শুক্রবার পর্যন্ত নুর দান করেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৩৯২)
৩. দরুদ শরিফ বেশি পরিমাণে পড়া: নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো—কারণ, তোমাদের দরুদ আমাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ (সুনান আবু দাউদ: ১৫৩১)
৪. দরিদ্র ও অভাবীদের সহায়তা: মাসের শুরুতে দান-সদকা করলে পুরো মাসে বরকত আসে।
৫. দোয়া কবুলের সময়: শুক্রবারে আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি বিশেষ দোয়া কবুলের সময়।
এই জুমা হোক জীবনের নতুন দিকনির্দেশনা
জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমা কেবল একটি তারিখ নয়; এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু নেক আমল চিরস্থায়ী। নতুন মাসের শুরু যেন নতুন প্রেরণা হয়ে আসে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে।’ (সুরা রাদ: ১১)। তাই আসুন, এই পবিত্র জুমায় নিজেদের পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করি—নামাজে মনোযোগ দিই, কোরআন পাঠে নিয়মিত হই, মনের গ্লানি দূর করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে জীবন উৎসর্গ করি।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

২০২৫ সনের হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্রই শেষ হয়েছে। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আগত হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক মন্তব্য মিলেছে। কেউ কেউ পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে অনেকেই হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত...
১০ জুন ২০২৫
সামাজিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি না থাকলে দুনিয়াবি জীবন বিপর্যস্ত হয়, অনেক সময় দ্বীনদারিরও সর্বনাশ হয়ে যায়। এক পাপ আরও হাজারটা পাপ ডেকে আনে।
১০ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৭ ঘণ্টা আগে
মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়—জাগতিক হোক বা পরলৌকিক, পবিত্রতা এক অনন্য গুরুত্ব বহন করে। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ (১ / ৫৪)-তে চারটি সৌভাগ্যের স্বভাবের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস।
১ দিন আগে