ইসলাম ডেস্ক
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন।
তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয় হয়ে থাকবে। তাঁরা কেবল ইসলামের রাজনৈতিক নেতৃত্বই দেননি, বরং নববী আদর্শের খাঁটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে মানবজাতির সামনে এক অনন্য জীবনদর্শন রেখে গেছেন।
এই চার খলিফার মধ্যে বিশেষভাবে দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন ফারুকে আজম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও কীর্তি এক অসাধারণ উচ্চতা স্পর্শ করেছে। তাঁর মতো মর্যাদা সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (রা.)-এর পর আর কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, ন্যায়বিচারের প্রতি অনমনীয় অঙ্গীকার এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার মহিমা চিরকাল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
নবীজি (সা.)-এর প্রশংসাপূর্ণ বাণী ও আল-ফারুক উপাধি
হজরত উমর (রা.) সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাঁর বহুমুখী গুণাবলির সাক্ষ্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। এই গুণাবলির কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, যা আল্লাহ কবুলও করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই ইসলামের প্রসার ও বিজয় আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
নবুওয়াতের দরবার থেকে তিনি ‘আল-ফারুক’ উপাধি লাভ করেন, যা উম্মতের আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। এর অর্থ—‘সত্য-মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণকারী’। এই উপাধি হজরত উমর (রা.)-এর সত্যপ্রেম ও সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার গুণ প্রকাশ করে। সত্যের ব্যাপারে তিনি কারও মর্যাদা বা প্রভাবের পরোয়া করতেন না। এমনকি নিজের প্রাণ বা সম্পদের ক্ষতিরও ভয় করতেন না। কোনো বিষয় পুরোপুরি অনুধাবন না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বারবার প্রশ্ন করতেন।
তাঁর মহামানবীয় সত্তা ছিল সরলতার প্রতীক। আর তাঁর জীবন ছিল সত্য ও নিষ্কলুষতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন রাসুলের (সা.) সত্যিকারের প্রেমিক, ইসলাম ও মুসলমানদের একনিষ্ঠ সেবক। মুনাফিক ও আল্লাহর শত্রুরা ছিল তাঁর জাতশত্রু। যারা সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো, তাদের জন্য তিনি ছিলেন খোলা তলোয়ার। সুপরিকল্পনা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সাহস ও উদারতা, মর্যাদা, ন্যায়বিচার, আল্লাহর ভয়, পরকালীন জীবনের ভাবনা এবং মুসলমানদের অধিকার রক্ষার পূর্ণ দায়িত্বশীলতার গুণে তিনি ভূষিত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সর্বাঙ্গীণ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলেছেন—‘যদি আমার পরেও নবুওয়াতের ধারা চলমান থাকত, তাহলে আমার পর উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নবী হতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮৬)। যদি হজরত উমর (রা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আর কোনো হাদিস না-ও থাকত, তাহলে এই একটি হাদিসই তাঁর মর্যাদা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ছিল। অথচ হাদিস ভান্ডারে তাঁর মর্যাদা সংক্রান্ত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিসের আলোকে হজরত উমর (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নবী ও রাসুলগণ মানবতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন থাকেন। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রতিজন নবীর মধ্যে তাঁর মর্যাদার উপযুক্ত সব গুণাবলি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে। তিনি বংশ-মর্যাদার দিক থেকে সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তিগত গুণাবলির ক্ষেত্রেও সবার ওপরে থাকেন। এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবীদের মধ্যে যে গুণাবলি থাকে, আল্লাহ তাআলা হজরত উমর (রা.)-কেও সেই সব গুণাবলি দ্বারা বিভূষিত করেছিলেন।
জীবন এবং আদর্শ
ফারুকে আজম (রা.)-এর জীবনকে তিনটি সময়ে ভাগ করা যায়:
এই তিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়েই তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন সব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল, যার কারণে তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় অগ্রগণ্য ছিলেন। কুফরের যুগে, তার শৈশব আরবদের রীতিনীতির মতো উট চরানোর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি সেই সময়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পড়াশোনা ও উৎকৃষ্ট বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জনে মনোযোগ দেন।
এর পাশাপাশি কুস্তি, শারীরিক শক্তি, ঘোড়সওয়ারি, যুদ্ধবিদ্যা ও সামরিক কৌশল, প্রভাবশালী বক্তব্য, বাগ্মিতা, সঠিক ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা, সাহসিকতা ও নির্ভীকতা এবং মানুষ চেনার অসাধারণ ক্ষমতার মতো বহু গুণাবলি তাঁর মাঝে প্রকাশিত হয়।
এসব গুণের কারণে কুরাইশ গোত্র তাঁকে সম্মানিত নেতাদের মধ্যে গণ্য করে এবং কূটনৈতিক দায়িত্বের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়। বিভিন্ন গোত্র এমনকি কিছু রাষ্ট্রের সঙ্গেও তিনি কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর দ্বিতীয় উজ্জ্বল সময়কাল ছিল ইসলামের যুগ। ইসলামের আলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যের বরকতে তাঁর গুণাবলি ও চরিত্র আরও উজ্জ্বল ও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর এমন অবস্থা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন—‘আল্লাহ তাআলা উমরের অন্তর ও জিহ্বায় সত্য প্রবাহিত করে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ, তাঁর অন্তরে যা উদয় হবে তা-ই সত্য হবে এবং তাঁর জিহ্বা থেকে যা উচ্চারিত হবে তা সত্য বৈ কিছু হতে পারে না।
বহুবার এমন ঘটেছে যে, হজরত উমর (রা.)-এর মতের সঙ্গে মিল রেখে রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। যেমন—বদরের যুদ্ধে বন্দীদের বিষয়ে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের পর্দার বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে।
তাঁর মতামত এতটাই সঠিক ও সুচিন্তিত হতো যে, তিনি নিজেই বলেছেন—‘আমি যখনই কারও বিষয়ে কোনো মতামত দিয়েছি, সেটি যথাযথ ও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরামর্শের ওপর এতটাই আস্থা রাখতেন যে তিনি বলেছেন—‘দুনিয়াতে প্রত্যেক নবীর দুজন করে উজির থাকে। আর আমার উজির হলেন আবু বকর ও উমর।’ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা হালকা পরামর্শযোগ্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া চূড়ান্ত করতেন না।
খিলাফতের স্বর্ণযুগ
তাঁর জীবনের তৃতীয় সময়কাল, যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও গৌরবময় ছিল, তা হলো তাঁর খিলাফত ও শাসনকাল। এ সময়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রকাশ পায়। একজন সফল ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের জন্য যেসব গুণ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা তাঁর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
অথচ তাঁর পরিবারে এর আগে কখনো কেউ রাজা হয়নি, যাতে শাসন কুশলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা তৈরি হতে পারে। শৈশবে যখন তিনি উট চরাতেন, তখন শাসনকাজ শেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া আরবের হিজাজ অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে কোনো রাজ্য-রাজার ব্যবস্থাও বিদ্যমান ছিল না।
তাঁর জীবনে শাসন কুশলতা শেখার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি এমন সব শাসননীতির ভিত্তি স্থাপন করেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। তিনি এমন শাসনপদ্ধতি গ্রহণ করেন যা একটি সফল সরকারের জন্য অপরিহার্য; রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সুপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা, শাসন মর্যাদার গাম্ভীর্য, অশান্তি দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান, আত্মীয়প্রীতি থেকে বিরত থাকা এবং পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্য অত্যন্ত সাদামাটা, বরং দরিদ্রসুলভ ও সংযমী জীবনযাপন—এসবই ছিল তাঁর গুণাবলি।
ন্যায়বিচারে তিনি এমন উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেন যে, ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে পরিচিত নওশেরওয়াহ-এর যুগেও ইতিহাসে কিছু অবিচারের ঘটনা পাওয়া যায়; কিন্তু ফারুকি যুগের ইতিহাস এমন একটি ঘটনাও পেশ করতে পারেনি যাতে অবিচারের সামান্য ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি নিজের, আত্মীয়স্বজনের এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কোনো প্রকার ছাড় দিতেন না। ন্যায়ের ক্ষেত্রে তাঁর কাছে সবাই সমান ছিল।
একবার এক সাহাবির সঙ্গে তাঁর বিরোধ মীমাংসার জন্য মামলা আদালতে ওঠে। তিনি মদিনার কাজির আদালতে হাজির হন। কাজি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর জন্য আসন খালি করে দেন, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলেন—‘তুমি তো এই মামলায় প্রথমেই অবিচার করে ফেলেছ।’ তারপর তিনি নিজেই উঠে গিয়ে অপর পক্ষের পাশে বসেন।
তাঁর শাসনামলে তাঁর জীবনযাপন এতটাই সহজ ছিল যে, তিনি যে খলিফা এটা বোঝার বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ছিল না। তিনি সাধারণ খাবার খেতেন। প্রায়শই যবের রুটি জায়তুন তেল দিয়ে খেতেন। খসখসে মোটা তালি দেওয়া কাপড় পড়তেন। একবার তাঁর জামায় বারোটি তালি পাওয়া গিয়েছিল।
রাতের বেলায় তিনি নিঃশব্দে শহরে ঘুরে বেড়াতেন, মানুষের অভিযোগ খোলা মনে শুনতেন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করতেন। মুসলমানদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং অমুসলিমদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করতেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন।
তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয় হয়ে থাকবে। তাঁরা কেবল ইসলামের রাজনৈতিক নেতৃত্বই দেননি, বরং নববী আদর্শের খাঁটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে মানবজাতির সামনে এক অনন্য জীবনদর্শন রেখে গেছেন।
এই চার খলিফার মধ্যে বিশেষভাবে দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন ফারুকে আজম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও কীর্তি এক অসাধারণ উচ্চতা স্পর্শ করেছে। তাঁর মতো মর্যাদা সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (রা.)-এর পর আর কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, ন্যায়বিচারের প্রতি অনমনীয় অঙ্গীকার এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার মহিমা চিরকাল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
নবীজি (সা.)-এর প্রশংসাপূর্ণ বাণী ও আল-ফারুক উপাধি
হজরত উমর (রা.) সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাঁর বহুমুখী গুণাবলির সাক্ষ্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। এই গুণাবলির কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, যা আল্লাহ কবুলও করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই ইসলামের প্রসার ও বিজয় আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
নবুওয়াতের দরবার থেকে তিনি ‘আল-ফারুক’ উপাধি লাভ করেন, যা উম্মতের আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। এর অর্থ—‘সত্য-মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণকারী’। এই উপাধি হজরত উমর (রা.)-এর সত্যপ্রেম ও সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার গুণ প্রকাশ করে। সত্যের ব্যাপারে তিনি কারও মর্যাদা বা প্রভাবের পরোয়া করতেন না। এমনকি নিজের প্রাণ বা সম্পদের ক্ষতিরও ভয় করতেন না। কোনো বিষয় পুরোপুরি অনুধাবন না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বারবার প্রশ্ন করতেন।
তাঁর মহামানবীয় সত্তা ছিল সরলতার প্রতীক। আর তাঁর জীবন ছিল সত্য ও নিষ্কলুষতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন রাসুলের (সা.) সত্যিকারের প্রেমিক, ইসলাম ও মুসলমানদের একনিষ্ঠ সেবক। মুনাফিক ও আল্লাহর শত্রুরা ছিল তাঁর জাতশত্রু। যারা সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো, তাদের জন্য তিনি ছিলেন খোলা তলোয়ার। সুপরিকল্পনা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সাহস ও উদারতা, মর্যাদা, ন্যায়বিচার, আল্লাহর ভয়, পরকালীন জীবনের ভাবনা এবং মুসলমানদের অধিকার রক্ষার পূর্ণ দায়িত্বশীলতার গুণে তিনি ভূষিত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সর্বাঙ্গীণ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলেছেন—‘যদি আমার পরেও নবুওয়াতের ধারা চলমান থাকত, তাহলে আমার পর উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নবী হতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮৬)। যদি হজরত উমর (রা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আর কোনো হাদিস না-ও থাকত, তাহলে এই একটি হাদিসই তাঁর মর্যাদা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ছিল। অথচ হাদিস ভান্ডারে তাঁর মর্যাদা সংক্রান্ত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিসের আলোকে হজরত উমর (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নবী ও রাসুলগণ মানবতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন থাকেন। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রতিজন নবীর মধ্যে তাঁর মর্যাদার উপযুক্ত সব গুণাবলি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে। তিনি বংশ-মর্যাদার দিক থেকে সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তিগত গুণাবলির ক্ষেত্রেও সবার ওপরে থাকেন। এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবীদের মধ্যে যে গুণাবলি থাকে, আল্লাহ তাআলা হজরত উমর (রা.)-কেও সেই সব গুণাবলি দ্বারা বিভূষিত করেছিলেন।
জীবন এবং আদর্শ
ফারুকে আজম (রা.)-এর জীবনকে তিনটি সময়ে ভাগ করা যায়:
এই তিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়েই তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন সব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল, যার কারণে তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় অগ্রগণ্য ছিলেন। কুফরের যুগে, তার শৈশব আরবদের রীতিনীতির মতো উট চরানোর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি সেই সময়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পড়াশোনা ও উৎকৃষ্ট বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জনে মনোযোগ দেন।
এর পাশাপাশি কুস্তি, শারীরিক শক্তি, ঘোড়সওয়ারি, যুদ্ধবিদ্যা ও সামরিক কৌশল, প্রভাবশালী বক্তব্য, বাগ্মিতা, সঠিক ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা, সাহসিকতা ও নির্ভীকতা এবং মানুষ চেনার অসাধারণ ক্ষমতার মতো বহু গুণাবলি তাঁর মাঝে প্রকাশিত হয়।
এসব গুণের কারণে কুরাইশ গোত্র তাঁকে সম্মানিত নেতাদের মধ্যে গণ্য করে এবং কূটনৈতিক দায়িত্বের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়। বিভিন্ন গোত্র এমনকি কিছু রাষ্ট্রের সঙ্গেও তিনি কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর দ্বিতীয় উজ্জ্বল সময়কাল ছিল ইসলামের যুগ। ইসলামের আলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যের বরকতে তাঁর গুণাবলি ও চরিত্র আরও উজ্জ্বল ও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর এমন অবস্থা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন—‘আল্লাহ তাআলা উমরের অন্তর ও জিহ্বায় সত্য প্রবাহিত করে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ, তাঁর অন্তরে যা উদয় হবে তা-ই সত্য হবে এবং তাঁর জিহ্বা থেকে যা উচ্চারিত হবে তা সত্য বৈ কিছু হতে পারে না।
বহুবার এমন ঘটেছে যে, হজরত উমর (রা.)-এর মতের সঙ্গে মিল রেখে রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। যেমন—বদরের যুদ্ধে বন্দীদের বিষয়ে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের পর্দার বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে।
তাঁর মতামত এতটাই সঠিক ও সুচিন্তিত হতো যে, তিনি নিজেই বলেছেন—‘আমি যখনই কারও বিষয়ে কোনো মতামত দিয়েছি, সেটি যথাযথ ও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরামর্শের ওপর এতটাই আস্থা রাখতেন যে তিনি বলেছেন—‘দুনিয়াতে প্রত্যেক নবীর দুজন করে উজির থাকে। আর আমার উজির হলেন আবু বকর ও উমর।’ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা হালকা পরামর্শযোগ্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া চূড়ান্ত করতেন না।
খিলাফতের স্বর্ণযুগ
তাঁর জীবনের তৃতীয় সময়কাল, যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও গৌরবময় ছিল, তা হলো তাঁর খিলাফত ও শাসনকাল। এ সময়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রকাশ পায়। একজন সফল ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের জন্য যেসব গুণ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা তাঁর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
অথচ তাঁর পরিবারে এর আগে কখনো কেউ রাজা হয়নি, যাতে শাসন কুশলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা তৈরি হতে পারে। শৈশবে যখন তিনি উট চরাতেন, তখন শাসনকাজ শেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া আরবের হিজাজ অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে কোনো রাজ্য-রাজার ব্যবস্থাও বিদ্যমান ছিল না।
তাঁর জীবনে শাসন কুশলতা শেখার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি এমন সব শাসননীতির ভিত্তি স্থাপন করেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। তিনি এমন শাসনপদ্ধতি গ্রহণ করেন যা একটি সফল সরকারের জন্য অপরিহার্য; রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সুপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা, শাসন মর্যাদার গাম্ভীর্য, অশান্তি দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান, আত্মীয়প্রীতি থেকে বিরত থাকা এবং পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্য অত্যন্ত সাদামাটা, বরং দরিদ্রসুলভ ও সংযমী জীবনযাপন—এসবই ছিল তাঁর গুণাবলি।
ন্যায়বিচারে তিনি এমন উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেন যে, ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে পরিচিত নওশেরওয়াহ-এর যুগেও ইতিহাসে কিছু অবিচারের ঘটনা পাওয়া যায়; কিন্তু ফারুকি যুগের ইতিহাস এমন একটি ঘটনাও পেশ করতে পারেনি যাতে অবিচারের সামান্য ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি নিজের, আত্মীয়স্বজনের এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কোনো প্রকার ছাড় দিতেন না। ন্যায়ের ক্ষেত্রে তাঁর কাছে সবাই সমান ছিল।
একবার এক সাহাবির সঙ্গে তাঁর বিরোধ মীমাংসার জন্য মামলা আদালতে ওঠে। তিনি মদিনার কাজির আদালতে হাজির হন। কাজি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর জন্য আসন খালি করে দেন, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলেন—‘তুমি তো এই মামলায় প্রথমেই অবিচার করে ফেলেছ।’ তারপর তিনি নিজেই উঠে গিয়ে অপর পক্ষের পাশে বসেন।
তাঁর শাসনামলে তাঁর জীবনযাপন এতটাই সহজ ছিল যে, তিনি যে খলিফা এটা বোঝার বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ছিল না। তিনি সাধারণ খাবার খেতেন। প্রায়শই যবের রুটি জায়তুন তেল দিয়ে খেতেন। খসখসে মোটা তালি দেওয়া কাপড় পড়তেন। একবার তাঁর জামায় বারোটি তালি পাওয়া গিয়েছিল।
রাতের বেলায় তিনি নিঃশব্দে শহরে ঘুরে বেড়াতেন, মানুষের অভিযোগ খোলা মনে শুনতেন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করতেন। মুসলমানদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং অমুসলিমদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করতেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
ইসলাম ডেস্ক
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন।
তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয় হয়ে থাকবে। তাঁরা কেবল ইসলামের রাজনৈতিক নেতৃত্বই দেননি, বরং নববী আদর্শের খাঁটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে মানবজাতির সামনে এক অনন্য জীবনদর্শন রেখে গেছেন।
এই চার খলিফার মধ্যে বিশেষভাবে দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন ফারুকে আজম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও কীর্তি এক অসাধারণ উচ্চতা স্পর্শ করেছে। তাঁর মতো মর্যাদা সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (রা.)-এর পর আর কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, ন্যায়বিচারের প্রতি অনমনীয় অঙ্গীকার এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার মহিমা চিরকাল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
নবীজি (সা.)-এর প্রশংসাপূর্ণ বাণী ও আল-ফারুক উপাধি
হজরত উমর (রা.) সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাঁর বহুমুখী গুণাবলির সাক্ষ্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। এই গুণাবলির কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, যা আল্লাহ কবুলও করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই ইসলামের প্রসার ও বিজয় আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
নবুওয়াতের দরবার থেকে তিনি ‘আল-ফারুক’ উপাধি লাভ করেন, যা উম্মতের আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। এর অর্থ—‘সত্য-মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণকারী’। এই উপাধি হজরত উমর (রা.)-এর সত্যপ্রেম ও সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার গুণ প্রকাশ করে। সত্যের ব্যাপারে তিনি কারও মর্যাদা বা প্রভাবের পরোয়া করতেন না। এমনকি নিজের প্রাণ বা সম্পদের ক্ষতিরও ভয় করতেন না। কোনো বিষয় পুরোপুরি অনুধাবন না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বারবার প্রশ্ন করতেন।
তাঁর মহামানবীয় সত্তা ছিল সরলতার প্রতীক। আর তাঁর জীবন ছিল সত্য ও নিষ্কলুষতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন রাসুলের (সা.) সত্যিকারের প্রেমিক, ইসলাম ও মুসলমানদের একনিষ্ঠ সেবক। মুনাফিক ও আল্লাহর শত্রুরা ছিল তাঁর জাতশত্রু। যারা সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো, তাদের জন্য তিনি ছিলেন খোলা তলোয়ার। সুপরিকল্পনা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সাহস ও উদারতা, মর্যাদা, ন্যায়বিচার, আল্লাহর ভয়, পরকালীন জীবনের ভাবনা এবং মুসলমানদের অধিকার রক্ষার পূর্ণ দায়িত্বশীলতার গুণে তিনি ভূষিত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সর্বাঙ্গীণ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলেছেন—‘যদি আমার পরেও নবুওয়াতের ধারা চলমান থাকত, তাহলে আমার পর উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নবী হতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮৬)। যদি হজরত উমর (রা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আর কোনো হাদিস না-ও থাকত, তাহলে এই একটি হাদিসই তাঁর মর্যাদা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ছিল। অথচ হাদিস ভান্ডারে তাঁর মর্যাদা সংক্রান্ত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিসের আলোকে হজরত উমর (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নবী ও রাসুলগণ মানবতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন থাকেন। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রতিজন নবীর মধ্যে তাঁর মর্যাদার উপযুক্ত সব গুণাবলি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে। তিনি বংশ-মর্যাদার দিক থেকে সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তিগত গুণাবলির ক্ষেত্রেও সবার ওপরে থাকেন। এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবীদের মধ্যে যে গুণাবলি থাকে, আল্লাহ তাআলা হজরত উমর (রা.)-কেও সেই সব গুণাবলি দ্বারা বিভূষিত করেছিলেন।
জীবন এবং আদর্শ
ফারুকে আজম (রা.)-এর জীবনকে তিনটি সময়ে ভাগ করা যায়:
এই তিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়েই তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন সব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল, যার কারণে তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় অগ্রগণ্য ছিলেন। কুফরের যুগে, তার শৈশব আরবদের রীতিনীতির মতো উট চরানোর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি সেই সময়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পড়াশোনা ও উৎকৃষ্ট বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জনে মনোযোগ দেন।
এর পাশাপাশি কুস্তি, শারীরিক শক্তি, ঘোড়সওয়ারি, যুদ্ধবিদ্যা ও সামরিক কৌশল, প্রভাবশালী বক্তব্য, বাগ্মিতা, সঠিক ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা, সাহসিকতা ও নির্ভীকতা এবং মানুষ চেনার অসাধারণ ক্ষমতার মতো বহু গুণাবলি তাঁর মাঝে প্রকাশিত হয়।
এসব গুণের কারণে কুরাইশ গোত্র তাঁকে সম্মানিত নেতাদের মধ্যে গণ্য করে এবং কূটনৈতিক দায়িত্বের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়। বিভিন্ন গোত্র এমনকি কিছু রাষ্ট্রের সঙ্গেও তিনি কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর দ্বিতীয় উজ্জ্বল সময়কাল ছিল ইসলামের যুগ। ইসলামের আলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যের বরকতে তাঁর গুণাবলি ও চরিত্র আরও উজ্জ্বল ও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর এমন অবস্থা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন—‘আল্লাহ তাআলা উমরের অন্তর ও জিহ্বায় সত্য প্রবাহিত করে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ, তাঁর অন্তরে যা উদয় হবে তা-ই সত্য হবে এবং তাঁর জিহ্বা থেকে যা উচ্চারিত হবে তা সত্য বৈ কিছু হতে পারে না।
বহুবার এমন ঘটেছে যে, হজরত উমর (রা.)-এর মতের সঙ্গে মিল রেখে রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। যেমন—বদরের যুদ্ধে বন্দীদের বিষয়ে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের পর্দার বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে।
তাঁর মতামত এতটাই সঠিক ও সুচিন্তিত হতো যে, তিনি নিজেই বলেছেন—‘আমি যখনই কারও বিষয়ে কোনো মতামত দিয়েছি, সেটি যথাযথ ও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরামর্শের ওপর এতটাই আস্থা রাখতেন যে তিনি বলেছেন—‘দুনিয়াতে প্রত্যেক নবীর দুজন করে উজির থাকে। আর আমার উজির হলেন আবু বকর ও উমর।’ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা হালকা পরামর্শযোগ্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া চূড়ান্ত করতেন না।
খিলাফতের স্বর্ণযুগ
তাঁর জীবনের তৃতীয় সময়কাল, যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও গৌরবময় ছিল, তা হলো তাঁর খিলাফত ও শাসনকাল। এ সময়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রকাশ পায়। একজন সফল ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের জন্য যেসব গুণ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা তাঁর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
অথচ তাঁর পরিবারে এর আগে কখনো কেউ রাজা হয়নি, যাতে শাসন কুশলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা তৈরি হতে পারে। শৈশবে যখন তিনি উট চরাতেন, তখন শাসনকাজ শেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া আরবের হিজাজ অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে কোনো রাজ্য-রাজার ব্যবস্থাও বিদ্যমান ছিল না।
তাঁর জীবনে শাসন কুশলতা শেখার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি এমন সব শাসননীতির ভিত্তি স্থাপন করেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। তিনি এমন শাসনপদ্ধতি গ্রহণ করেন যা একটি সফল সরকারের জন্য অপরিহার্য; রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সুপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা, শাসন মর্যাদার গাম্ভীর্য, অশান্তি দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান, আত্মীয়প্রীতি থেকে বিরত থাকা এবং পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্য অত্যন্ত সাদামাটা, বরং দরিদ্রসুলভ ও সংযমী জীবনযাপন—এসবই ছিল তাঁর গুণাবলি।
ন্যায়বিচারে তিনি এমন উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেন যে, ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে পরিচিত নওশেরওয়াহ-এর যুগেও ইতিহাসে কিছু অবিচারের ঘটনা পাওয়া যায়; কিন্তু ফারুকি যুগের ইতিহাস এমন একটি ঘটনাও পেশ করতে পারেনি যাতে অবিচারের সামান্য ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি নিজের, আত্মীয়স্বজনের এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কোনো প্রকার ছাড় দিতেন না। ন্যায়ের ক্ষেত্রে তাঁর কাছে সবাই সমান ছিল।
একবার এক সাহাবির সঙ্গে তাঁর বিরোধ মীমাংসার জন্য মামলা আদালতে ওঠে। তিনি মদিনার কাজির আদালতে হাজির হন। কাজি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর জন্য আসন খালি করে দেন, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলেন—‘তুমি তো এই মামলায় প্রথমেই অবিচার করে ফেলেছ।’ তারপর তিনি নিজেই উঠে গিয়ে অপর পক্ষের পাশে বসেন।
তাঁর শাসনামলে তাঁর জীবনযাপন এতটাই সহজ ছিল যে, তিনি যে খলিফা এটা বোঝার বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ছিল না। তিনি সাধারণ খাবার খেতেন। প্রায়শই যবের রুটি জায়তুন তেল দিয়ে খেতেন। খসখসে মোটা তালি দেওয়া কাপড় পড়তেন। একবার তাঁর জামায় বারোটি তালি পাওয়া গিয়েছিল।
রাতের বেলায় তিনি নিঃশব্দে শহরে ঘুরে বেড়াতেন, মানুষের অভিযোগ খোলা মনে শুনতেন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করতেন। মুসলমানদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং অমুসলিমদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করতেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন।
তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয় হয়ে থাকবে। তাঁরা কেবল ইসলামের রাজনৈতিক নেতৃত্বই দেননি, বরং নববী আদর্শের খাঁটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে মানবজাতির সামনে এক অনন্য জীবনদর্শন রেখে গেছেন।
এই চার খলিফার মধ্যে বিশেষভাবে দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন ফারুকে আজম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও কীর্তি এক অসাধারণ উচ্চতা স্পর্শ করেছে। তাঁর মতো মর্যাদা সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (রা.)-এর পর আর কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, ন্যায়বিচারের প্রতি অনমনীয় অঙ্গীকার এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার মহিমা চিরকাল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
নবীজি (সা.)-এর প্রশংসাপূর্ণ বাণী ও আল-ফারুক উপাধি
হজরত উমর (রা.) সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাঁর বহুমুখী গুণাবলির সাক্ষ্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। এই গুণাবলির কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, যা আল্লাহ কবুলও করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই ইসলামের প্রসার ও বিজয় আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
নবুওয়াতের দরবার থেকে তিনি ‘আল-ফারুক’ উপাধি লাভ করেন, যা উম্মতের আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। এর অর্থ—‘সত্য-মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণকারী’। এই উপাধি হজরত উমর (রা.)-এর সত্যপ্রেম ও সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার গুণ প্রকাশ করে। সত্যের ব্যাপারে তিনি কারও মর্যাদা বা প্রভাবের পরোয়া করতেন না। এমনকি নিজের প্রাণ বা সম্পদের ক্ষতিরও ভয় করতেন না। কোনো বিষয় পুরোপুরি অনুধাবন না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বারবার প্রশ্ন করতেন।
তাঁর মহামানবীয় সত্তা ছিল সরলতার প্রতীক। আর তাঁর জীবন ছিল সত্য ও নিষ্কলুষতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন রাসুলের (সা.) সত্যিকারের প্রেমিক, ইসলাম ও মুসলমানদের একনিষ্ঠ সেবক। মুনাফিক ও আল্লাহর শত্রুরা ছিল তাঁর জাতশত্রু। যারা সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো, তাদের জন্য তিনি ছিলেন খোলা তলোয়ার। সুপরিকল্পনা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সাহস ও উদারতা, মর্যাদা, ন্যায়বিচার, আল্লাহর ভয়, পরকালীন জীবনের ভাবনা এবং মুসলমানদের অধিকার রক্ষার পূর্ণ দায়িত্বশীলতার গুণে তিনি ভূষিত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সর্বাঙ্গীণ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলেছেন—‘যদি আমার পরেও নবুওয়াতের ধারা চলমান থাকত, তাহলে আমার পর উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নবী হতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮৬)। যদি হজরত উমর (রা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আর কোনো হাদিস না-ও থাকত, তাহলে এই একটি হাদিসই তাঁর মর্যাদা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ছিল। অথচ হাদিস ভান্ডারে তাঁর মর্যাদা সংক্রান্ত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিসের আলোকে হজরত উমর (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নবী ও রাসুলগণ মানবতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন থাকেন। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রতিজন নবীর মধ্যে তাঁর মর্যাদার উপযুক্ত সব গুণাবলি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে। তিনি বংশ-মর্যাদার দিক থেকে সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তিগত গুণাবলির ক্ষেত্রেও সবার ওপরে থাকেন। এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবীদের মধ্যে যে গুণাবলি থাকে, আল্লাহ তাআলা হজরত উমর (রা.)-কেও সেই সব গুণাবলি দ্বারা বিভূষিত করেছিলেন।
জীবন এবং আদর্শ
ফারুকে আজম (রা.)-এর জীবনকে তিনটি সময়ে ভাগ করা যায়:
এই তিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়েই তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন সব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল, যার কারণে তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় অগ্রগণ্য ছিলেন। কুফরের যুগে, তার শৈশব আরবদের রীতিনীতির মতো উট চরানোর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি সেই সময়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পড়াশোনা ও উৎকৃষ্ট বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জনে মনোযোগ দেন।
এর পাশাপাশি কুস্তি, শারীরিক শক্তি, ঘোড়সওয়ারি, যুদ্ধবিদ্যা ও সামরিক কৌশল, প্রভাবশালী বক্তব্য, বাগ্মিতা, সঠিক ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা, সাহসিকতা ও নির্ভীকতা এবং মানুষ চেনার অসাধারণ ক্ষমতার মতো বহু গুণাবলি তাঁর মাঝে প্রকাশিত হয়।
এসব গুণের কারণে কুরাইশ গোত্র তাঁকে সম্মানিত নেতাদের মধ্যে গণ্য করে এবং কূটনৈতিক দায়িত্বের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়। বিভিন্ন গোত্র এমনকি কিছু রাষ্ট্রের সঙ্গেও তিনি কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর দ্বিতীয় উজ্জ্বল সময়কাল ছিল ইসলামের যুগ। ইসলামের আলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যের বরকতে তাঁর গুণাবলি ও চরিত্র আরও উজ্জ্বল ও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর এমন অবস্থা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন—‘আল্লাহ তাআলা উমরের অন্তর ও জিহ্বায় সত্য প্রবাহিত করে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ, তাঁর অন্তরে যা উদয় হবে তা-ই সত্য হবে এবং তাঁর জিহ্বা থেকে যা উচ্চারিত হবে তা সত্য বৈ কিছু হতে পারে না।
বহুবার এমন ঘটেছে যে, হজরত উমর (রা.)-এর মতের সঙ্গে মিল রেখে রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। যেমন—বদরের যুদ্ধে বন্দীদের বিষয়ে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের পর্দার বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে।
তাঁর মতামত এতটাই সঠিক ও সুচিন্তিত হতো যে, তিনি নিজেই বলেছেন—‘আমি যখনই কারও বিষয়ে কোনো মতামত দিয়েছি, সেটি যথাযথ ও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরামর্শের ওপর এতটাই আস্থা রাখতেন যে তিনি বলেছেন—‘দুনিয়াতে প্রত্যেক নবীর দুজন করে উজির থাকে। আর আমার উজির হলেন আবু বকর ও উমর।’ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা হালকা পরামর্শযোগ্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া চূড়ান্ত করতেন না।
খিলাফতের স্বর্ণযুগ
তাঁর জীবনের তৃতীয় সময়কাল, যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও গৌরবময় ছিল, তা হলো তাঁর খিলাফত ও শাসনকাল। এ সময়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রকাশ পায়। একজন সফল ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের জন্য যেসব গুণ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা তাঁর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
অথচ তাঁর পরিবারে এর আগে কখনো কেউ রাজা হয়নি, যাতে শাসন কুশলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা তৈরি হতে পারে। শৈশবে যখন তিনি উট চরাতেন, তখন শাসনকাজ শেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া আরবের হিজাজ অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে কোনো রাজ্য-রাজার ব্যবস্থাও বিদ্যমান ছিল না।
তাঁর জীবনে শাসন কুশলতা শেখার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি এমন সব শাসননীতির ভিত্তি স্থাপন করেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। তিনি এমন শাসনপদ্ধতি গ্রহণ করেন যা একটি সফল সরকারের জন্য অপরিহার্য; রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সুপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা, শাসন মর্যাদার গাম্ভীর্য, অশান্তি দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান, আত্মীয়প্রীতি থেকে বিরত থাকা এবং পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্য অত্যন্ত সাদামাটা, বরং দরিদ্রসুলভ ও সংযমী জীবনযাপন—এসবই ছিল তাঁর গুণাবলি।
ন্যায়বিচারে তিনি এমন উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেন যে, ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে পরিচিত নওশেরওয়াহ-এর যুগেও ইতিহাসে কিছু অবিচারের ঘটনা পাওয়া যায়; কিন্তু ফারুকি যুগের ইতিহাস এমন একটি ঘটনাও পেশ করতে পারেনি যাতে অবিচারের সামান্য ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি নিজের, আত্মীয়স্বজনের এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কোনো প্রকার ছাড় দিতেন না। ন্যায়ের ক্ষেত্রে তাঁর কাছে সবাই সমান ছিল।
একবার এক সাহাবির সঙ্গে তাঁর বিরোধ মীমাংসার জন্য মামলা আদালতে ওঠে। তিনি মদিনার কাজির আদালতে হাজির হন। কাজি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর জন্য আসন খালি করে দেন, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলেন—‘তুমি তো এই মামলায় প্রথমেই অবিচার করে ফেলেছ।’ তারপর তিনি নিজেই উঠে গিয়ে অপর পক্ষের পাশে বসেন।
তাঁর শাসনামলে তাঁর জীবনযাপন এতটাই সহজ ছিল যে, তিনি যে খলিফা এটা বোঝার বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ছিল না। তিনি সাধারণ খাবার খেতেন। প্রায়শই যবের রুটি জায়তুন তেল দিয়ে খেতেন। খসখসে মোটা তালি দেওয়া কাপড় পড়তেন। একবার তাঁর জামায় বারোটি তালি পাওয়া গিয়েছিল।
রাতের বেলায় তিনি নিঃশব্দে শহরে ঘুরে বেড়াতেন, মানুষের অভিযোগ খোলা মনে শুনতেন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করতেন। মুসলমানদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং অমুসলিমদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করতেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৩ ঘণ্টা আগেবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
৯ ঘণ্টা আগেনামাজ ইসলামের অনন্য বিধান। পাশাপাশি এটি এমন এক অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন আর আত্মাকে একসঙ্গে সুস্থ রাখে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। এই আয়াত যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তেমনি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের...
১২ ঘণ্টা আগেমানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
২০ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক
জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৮ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
---|---|---|
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪৩ মিনিট |
ফজর | ০৪: ৪৪ মিনিট | ০৫: ৫৯ মিনিট |
জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৭ মিনিট |
আসর | ০৩: ৪৮ মিনিট | ০৫: ২৪ মিনিট |
মাগরিব | ০৫: ২৬ মিনিট | ০৬: ৪০ মিনিট |
এশা | ০৬: ৪১ মিনিট | ০৪: ৪৩ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।
জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ০৮ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
---|---|---|
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪৩ মিনিট |
ফজর | ০৪: ৪৪ মিনিট | ০৫: ৫৯ মিনিট |
জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৭ মিনিট |
আসর | ০৩: ৪৮ মিনিট | ০৫: ২৪ মিনিট |
মাগরিব | ০৫: ২৬ মিনিট | ০৬: ৪০ মিনিট |
এশা | ০৬: ৪১ মিনিট | ০৪: ৪৩ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
৯ ঘণ্টা আগেনামাজ ইসলামের অনন্য বিধান। পাশাপাশি এটি এমন এক অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন আর আত্মাকে একসঙ্গে সুস্থ রাখে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। এই আয়াত যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তেমনি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের...
১২ ঘণ্টা আগেমানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
২০ ঘণ্টা আগেমুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা এক শিল্পিত রূপ লাভ করেছিল।
এটি ছিল গভীর মননশীল সাহিত্য-আন্দোলন, যা আত্মবিস্মৃত জাতিকে তার স্বকীয়তা পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করে।
ফররুখ আহমদের আবির্ভাবকাল ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য এক ঘোর সংকটকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ঔপনিবেশিক শোষণ ও মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ আত্মবিস্মৃতি—এই চতুর্মুখী অন্ধকারে কবি অনুভব করেছিলেন জাতির গভীর নিস্তব্ধতা। এই জরাগ্রস্ত ও হতাশাজনক বাস্তবতা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। তাঁর কবিতায় তিনি এই ঐতিহাসিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী দামামা বাজিয়েছেন।
কবির দৃষ্টিতে, মুসলিমদের অতীত ইতিহাস ছিল শৌর্য, বীরত্ব ও মানবতার। সেই ঐতিহ্য ভেঙে যাওয়ায় জাতির যে অধঃপতন, তা কবিকে ব্যথিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।
তিনি উপলব্ধি করেন, এই জাতিকে জাগাতে হলে শুধু রোমান্টিকতা নয়, চাই এমন এক ‘পাঞ্জেরি’ (দিকনির্দেশক), যে অন্ধকার পেরিয়ে মঞ্জিলে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)-এর কালজয়ী কবিতা ‘পাঞ্জেরি’তে এই আর্তিই ধ্বনিত হয়:
‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?’
এই ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা কেবল একটি আশার বাণী নয়, বরং তা একটি জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতীক—যা বাঙালি মুসলিম সমাজকে তার সমৃদ্ধ অতীত ও ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক তীব্র ব্যাকুলতা।
রেনেসাঁর দার্শনিক ভিত্তি: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
ফররুখ আহমদের রেনেসাঁ চেতনা কেবল অতীত রোমন্থন ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীনকে ধ্বংস না করে পুরোনো ঐতিহ্যের ভিত্তির ওপর নতুন আদর্শ সৃষ্টি করার এক তাত্ত্বিক প্রয়াস। তাঁর চিন্তা ছিল আল্লামা ইকবালের মতো, যিনি পতনোন্মুখ মুসলিমদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নতুন জীবনবোধ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ বিশ্বাস করতেন, ইসলামের আদর্শই মানবমুক্তি, স্বাধীনতা ও চিন্তার মুক্তির প্রথম উদ্যোক্তা।
তাঁর এই বিশ্বাস কবিকে মানবতাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, যা তাঁকে তৎকালীন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম শোষণ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে অমানবিকতার চিত্র এঁকেছেন, তা প্রমাণ করে তাঁর কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক মুক্তির জন্যও নিবেদিত ছিল। তিনি লেখেন:
‘আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’
তাঁর কাব্যচেতনা ছিল একটি বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতিচ্ছবি, যা নিম্নোক্ত দুটি ধারায় প্রস্ফুটিত হয়েছে—
ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনার একটি মৌলিক দিক হলো—তাঁর কাব্যভাষা নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যবাদী অবস্থান। তিনি সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই শব্দভান্ডার কেবল ভাষার অলংকার ছিল না, বরং তা ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বকীয় সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার নিজস্ব শব্দভান্ডার ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ অপরিহার্য। এই প্রয়াস ছিল কাজী নজরুল ইসলামের হাতে শুরু হওয়া বাংলা কাব্যের সেই ধারার সম্প্রসারণ, যেখানে আরবি-ফারসি মিশ্রিত একটি প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সবশেষে বলা যায়, কবি ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা ছিল বস্তুত এক বৈপ্লবিক প্রত্যয় ও শৈল্পিক সংগ্রাম। তাঁর সাহিত্যকর্ম সেই সময়ের বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-প্রত্যয়ের পথে চালিত করেছিল। একদিকে তিনি ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে অনুরক্ত, অন্যদিকে ছিলেন আধুনিক কাব্যশৈলী ও মানবিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আপসহীন। এই দুই আপাত-বিপরীতমুখী চিন্তাধারার শৈল্পিক ও দার্শনিক সমন্বয়ের ফলেই ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ‘মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর কবিতা প্রমাণ করে—আত্মপরিচয় ও আধুনিকতা একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা একটি জাতির জাগরণের পথ দেখায়।
লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা এক শিল্পিত রূপ লাভ করেছিল।
এটি ছিল গভীর মননশীল সাহিত্য-আন্দোলন, যা আত্মবিস্মৃত জাতিকে তার স্বকীয়তা পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করে।
ফররুখ আহমদের আবির্ভাবকাল ছিল বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য এক ঘোর সংকটকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ঔপনিবেশিক শোষণ ও মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ আত্মবিস্মৃতি—এই চতুর্মুখী অন্ধকারে কবি অনুভব করেছিলেন জাতির গভীর নিস্তব্ধতা। এই জরাগ্রস্ত ও হতাশাজনক বাস্তবতা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। তাঁর কবিতায় তিনি এই ঐতিহাসিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী দামামা বাজিয়েছেন।
কবির দৃষ্টিতে, মুসলিমদের অতীত ইতিহাস ছিল শৌর্য, বীরত্ব ও মানবতার। সেই ঐতিহ্য ভেঙে যাওয়ায় জাতির যে অধঃপতন, তা কবিকে ব্যথিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।
তিনি উপলব্ধি করেন, এই জাতিকে জাগাতে হলে শুধু রোমান্টিকতা নয়, চাই এমন এক ‘পাঞ্জেরি’ (দিকনির্দেশক), যে অন্ধকার পেরিয়ে মঞ্জিলে পৌঁছানোর পথ দেখাবে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)-এর কালজয়ী কবিতা ‘পাঞ্জেরি’তে এই আর্তিই ধ্বনিত হয়:
‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?’
এই ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা কেবল একটি আশার বাণী নয়, বরং তা একটি জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতীক—যা বাঙালি মুসলিম সমাজকে তার সমৃদ্ধ অতীত ও ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার এক তীব্র ব্যাকুলতা।
রেনেসাঁর দার্শনিক ভিত্তি: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
ফররুখ আহমদের রেনেসাঁ চেতনা কেবল অতীত রোমন্থন ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীনকে ধ্বংস না করে পুরোনো ঐতিহ্যের ভিত্তির ওপর নতুন আদর্শ সৃষ্টি করার এক তাত্ত্বিক প্রয়াস। তাঁর চিন্তা ছিল আল্লামা ইকবালের মতো, যিনি পতনোন্মুখ মুসলিমদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও নতুন জীবনবোধ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ বিশ্বাস করতেন, ইসলামের আদর্শই মানবমুক্তি, স্বাধীনতা ও চিন্তার মুক্তির প্রথম উদ্যোক্তা।
তাঁর এই বিশ্বাস কবিকে মানবতাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, যা তাঁকে তৎকালীন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম শোষণ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ‘লাশ’ কবিতায় তিনি যে অমানবিকতার চিত্র এঁকেছেন, তা প্রমাণ করে তাঁর কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক মুক্তির জন্যও নিবেদিত ছিল। তিনি লেখেন:
‘আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’
তাঁর কাব্যচেতনা ছিল একটি বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতিচ্ছবি, যা নিম্নোক্ত দুটি ধারায় প্রস্ফুটিত হয়েছে—
ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনার একটি মৌলিক দিক হলো—তাঁর কাব্যভাষা নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যবাদী অবস্থান। তিনি সচেতনভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই শব্দভান্ডার কেবল ভাষার অলংকার ছিল না, বরং তা ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও তাহজিব-তামাদ্দুনের প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বকীয় সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার নিজস্ব শব্দভান্ডার ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ অপরিহার্য। এই প্রয়াস ছিল কাজী নজরুল ইসলামের হাতে শুরু হওয়া বাংলা কাব্যের সেই ধারার সম্প্রসারণ, যেখানে আরবি-ফারসি মিশ্রিত একটি প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সবশেষে বলা যায়, কবি ফররুখ আহমদের কাব্যচেতনা ছিল বস্তুত এক বৈপ্লবিক প্রত্যয় ও শৈল্পিক সংগ্রাম। তাঁর সাহিত্যকর্ম সেই সময়ের বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্ম-প্রত্যয়ের পথে চালিত করেছিল। একদিকে তিনি ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে অনুরক্ত, অন্যদিকে ছিলেন আধুনিক কাব্যশৈলী ও মানবিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় আপসহীন। এই দুই আপাত-বিপরীতমুখী চিন্তাধারার শৈল্পিক ও দার্শনিক সমন্বয়ের ফলেই ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ‘মুসলিম রেনেসাঁর কণ্ঠস্বর’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর কবিতা প্রমাণ করে—আত্মপরিচয় ও আধুনিকতা একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, যা একটি জাতির জাগরণের পথ দেখায়।
লেখক: রিসার্চ ফেলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৩ ঘণ্টা আগেনামাজ ইসলামের অনন্য বিধান। পাশাপাশি এটি এমন এক অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন আর আত্মাকে একসঙ্গে সুস্থ রাখে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। এই আয়াত যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তেমনি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের...
১২ ঘণ্টা আগেমানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
২০ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক
নামাজ ইসলামের অনন্য বিধান। পাশাপাশি এটি এমন এক অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন আর আত্মাকে একসঙ্গে সুস্থ রাখে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। এই আয়াত যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তেমনি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের গভীর ইঙ্গিত।
শরীরচর্চার স্বাভাবিক রূপ: নামাজের সময় দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা, বসা—প্রতিটি ভঙ্গিই যেন শরীরচর্চার একটি স্বাভাবিক ধারা। এতে শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালিত হয়। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, পেশি ও জয়েন্ট সচল থাকে। মেরুদণ্ড সোজা রাখার অভ্যাসও গড়ে ওঠে। প্রতিদিন পাঁচবার এই অনুশীলন শরীরকে রাখে ফিট, ক্লান্তি দূর করে, মনেও আনে হালকা প্রশান্তি।
রক্ত সঞ্চালন ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা: রুকুর সময় কোমর ও পিঠের অংশে রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে হয়। এতে হাড়ের জোড়াগুলো নমনীয় থাকে। সিজদার সময় মাথা নত করে রাখলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়—এই সময়ে মস্তিষ্ক যেন নতুন শক্তি পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ হয়, মনোযোগ বাড়ে, কাজের দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়লে মন হয় সতেজ ও শান্ত।
শ্বাসযন্ত্র ও অন্তঃস্রাব ব্যবস্থার উন্নতি: নামাজের প্রতিটি ভঙ্গি শ্বাসপ্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রিত রাখে। ফলে ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করে, শরীরে অক্সিজেনের গ্রহণ বাড়ে। রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে। এই নিয়ন্ত্রিত ছন্দে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, বিশেষ করে পাচনতন্ত্র ও অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি সুসমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে।
দেহভঙ্গির ভারসাম্য রক্ষা: নামাজ নিয়মিত আদায় করলে দেহভঙ্গি ঠিক থাকে। রুকু ও সিজদার পুনরাবৃত্তিতে পিঠ ও ঘাড়ের স্নায়ু সচল হয়। কিন্তু যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন বা কম নড়াচড়া করেন, তাঁদের শরীর ধীরে ধীরে জড় হয়ে পড়ে। ফলে পেশি টান হারায়, মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক নষ্ট হয়। এতে শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
নিদ্রার মান উন্নয়ন: রাতে এশার নামাজের পর যে প্রশান্তি তৈরি হয়, তা ঘুমের জন্য উপকারী। মন স্থির হয়, শরীর শান্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সিজদা ও ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ঘুমকে গভীর করে, উদ্বেগও কমায়।
অজু-পরিচ্ছন্নতা ও জীবনীশক্তির প্রতীক: অজু কেবল ইবাদতের প্রস্তুতি নয়, এটি পরিচ্ছন্নতারও অংশ। দিনে একাধিকবার মুখ, হাত, পা ধোয়ার ফলে শরীর থাকে সতেজ, রক্ত সঞ্চালন হয় স্বাভাবিক। জীবাণু ধুয়ে যায়, ত্বক হয় মসৃণ, মুখে আসে উজ্জ্বলতা। সবচেয়ে বড় কথা, এতে জাগে এক অন্তর্গত পবিত্রতার অনুভব। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন অজু করা ব্যক্তিদের মুখমণ্ডল আলোকিত থাকবে, এটাই তার আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য।
মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক সংযোগ: নামাজে যখন মানুষ সকল চিন্তা ফেলে সিজদায় মাথা রাখে, তখন সে নিজের অস্তিত্বকে মহান স্রষ্টার হাতে সমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণ থেকেই জন্ম নেয় প্রশান্তি, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা করো নামাজের মাধ্যমে।’ (সুরা বাকারা: ৪৫)। এই ধৈর্য ও মনোযোগ মানুষকে মানসিক দৃঢ়তা দেয়, তাকে রাখে ইতিবাচক পথে।
নামাজ আসলে শরীরচর্চা, ধ্যান ও আত্মার সংযোগ—এই তিনের অনন্য সমন্বয়। নামাজ দেহে আনে প্রাণশক্তি, মনে আনে প্রশান্তি, আত্মায় জাগায় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। তবে মনে রাখা দরকার, নামাজ মূলত ইবাদত, ব্যায়াম তার অনুষঙ্গ মাত্র। উদ্দেশ্য শুধু শারীরিক ফিটনেস নয়, বরং আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।
যে ব্যক্তি মনোযোগ ও নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করেন, সে প্রকৃত অর্থেই পায় শরীরের সুস্থতা, মনের শান্তি আর আত্মার মুক্তি।
লেখক: আসাদুজ্জামান খান মুকুল, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
নামাজ ইসলামের অনন্য বিধান। পাশাপাশি এটি এমন এক অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন আর আত্মাকে একসঙ্গে সুস্থ রাখে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। এই আয়াত যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তেমনি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের গভীর ইঙ্গিত।
শরীরচর্চার স্বাভাবিক রূপ: নামাজের সময় দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা, বসা—প্রতিটি ভঙ্গিই যেন শরীরচর্চার একটি স্বাভাবিক ধারা। এতে শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালিত হয়। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, পেশি ও জয়েন্ট সচল থাকে। মেরুদণ্ড সোজা রাখার অভ্যাসও গড়ে ওঠে। প্রতিদিন পাঁচবার এই অনুশীলন শরীরকে রাখে ফিট, ক্লান্তি দূর করে, মনেও আনে হালকা প্রশান্তি।
রক্ত সঞ্চালন ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা: রুকুর সময় কোমর ও পিঠের অংশে রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে হয়। এতে হাড়ের জোড়াগুলো নমনীয় থাকে। সিজদার সময় মাথা নত করে রাখলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়—এই সময়ে মস্তিষ্ক যেন নতুন শক্তি পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ হয়, মনোযোগ বাড়ে, কাজের দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়লে মন হয় সতেজ ও শান্ত।
শ্বাসযন্ত্র ও অন্তঃস্রাব ব্যবস্থার উন্নতি: নামাজের প্রতিটি ভঙ্গি শ্বাসপ্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রিত রাখে। ফলে ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করে, শরীরে অক্সিজেনের গ্রহণ বাড়ে। রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে। এই নিয়ন্ত্রিত ছন্দে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, বিশেষ করে পাচনতন্ত্র ও অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি সুসমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে।
দেহভঙ্গির ভারসাম্য রক্ষা: নামাজ নিয়মিত আদায় করলে দেহভঙ্গি ঠিক থাকে। রুকু ও সিজদার পুনরাবৃত্তিতে পিঠ ও ঘাড়ের স্নায়ু সচল হয়। কিন্তু যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন বা কম নড়াচড়া করেন, তাঁদের শরীর ধীরে ধীরে জড় হয়ে পড়ে। ফলে পেশি টান হারায়, মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক নষ্ট হয়। এতে শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
নিদ্রার মান উন্নয়ন: রাতে এশার নামাজের পর যে প্রশান্তি তৈরি হয়, তা ঘুমের জন্য উপকারী। মন স্থির হয়, শরীর শান্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সিজদা ও ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ঘুমকে গভীর করে, উদ্বেগও কমায়।
অজু-পরিচ্ছন্নতা ও জীবনীশক্তির প্রতীক: অজু কেবল ইবাদতের প্রস্তুতি নয়, এটি পরিচ্ছন্নতারও অংশ। দিনে একাধিকবার মুখ, হাত, পা ধোয়ার ফলে শরীর থাকে সতেজ, রক্ত সঞ্চালন হয় স্বাভাবিক। জীবাণু ধুয়ে যায়, ত্বক হয় মসৃণ, মুখে আসে উজ্জ্বলতা। সবচেয়ে বড় কথা, এতে জাগে এক অন্তর্গত পবিত্রতার অনুভব। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন অজু করা ব্যক্তিদের মুখমণ্ডল আলোকিত থাকবে, এটাই তার আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য।
মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক সংযোগ: নামাজে যখন মানুষ সকল চিন্তা ফেলে সিজদায় মাথা রাখে, তখন সে নিজের অস্তিত্বকে মহান স্রষ্টার হাতে সমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণ থেকেই জন্ম নেয় প্রশান্তি, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা করো নামাজের মাধ্যমে।’ (সুরা বাকারা: ৪৫)। এই ধৈর্য ও মনোযোগ মানুষকে মানসিক দৃঢ়তা দেয়, তাকে রাখে ইতিবাচক পথে।
নামাজ আসলে শরীরচর্চা, ধ্যান ও আত্মার সংযোগ—এই তিনের অনন্য সমন্বয়। নামাজ দেহে আনে প্রাণশক্তি, মনে আনে প্রশান্তি, আত্মায় জাগায় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। তবে মনে রাখা দরকার, নামাজ মূলত ইবাদত, ব্যায়াম তার অনুষঙ্গ মাত্র। উদ্দেশ্য শুধু শারীরিক ফিটনেস নয়, বরং আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।
যে ব্যক্তি মনোযোগ ও নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করেন, সে প্রকৃত অর্থেই পায় শরীরের সুস্থতা, মনের শান্তি আর আত্মার মুক্তি।
লেখক: আসাদুজ্জামান খান মুকুল, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৩ ঘণ্টা আগেবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
৯ ঘণ্টা আগেমানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
২০ ঘণ্টা আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ
মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইমানদার পুরুষদের কেবল ভরণপোষণের দায়িত্ব দেননি, বরং নারীদের সঙ্গে হৃদ্যতা, স্নেহ ও সম্মানের আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহারকে উত্তম চরিত্রের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি)
ইসলাম আগমনের পূর্বে নারীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। আরব সমাজে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কুপ্রথা ছিল। সেই অন্ধকার যুগে ইসলাম নারীদের দিয়েছে সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা। শিক্ষা, উত্তরাধিকার, বিয়ে ও মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীর যথাযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের কাচের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কাচ যেমন ভঙ্গুর, তেমনি নারীর মনও কোমল; ভালোবাসা ও যত্নেই তারা টিকে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তা ভেঙে যাবে; আর যদি ছেড়ে দাও, বাঁকাই থাকবে। তাই তাদের সদুপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি)
একজন পুরুষের উচিত নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় কোমল ভাষা ব্যবহার করা, পারিবারিক সিদ্ধান্তে তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়া। কারণ পরিবারে ভালোবাসা ও স্থিতি আসে পারস্পরিক সম্মান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে। স্ত্রীকে জীবনের সহযাত্রী হিসেবে দেখা এবং তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই ইমানদারের বৈশিষ্ট্য।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
মানবসমাজের অর্ধেক অংশ হলো নারী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কন্যা, বোন, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীরা মানুষের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা: ১৯)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইমানদার পুরুষদের কেবল ভরণপোষণের দায়িত্ব দেননি, বরং নারীদের সঙ্গে হৃদ্যতা, স্নেহ ও সম্মানের আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহারকে উত্তম চরিত্রের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি)
ইসলাম আগমনের পূর্বে নারীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। আরব সমাজে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কুপ্রথা ছিল। সেই অন্ধকার যুগে ইসলাম নারীদের দিয়েছে সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা। শিক্ষা, উত্তরাধিকার, বিয়ে ও মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীর যথাযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের কাচের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কাচ যেমন ভঙ্গুর, তেমনি নারীর মনও কোমল; ভালোবাসা ও যত্নেই তারা টিকে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তা ভেঙে যাবে; আর যদি ছেড়ে দাও, বাঁকাই থাকবে। তাই তাদের সদুপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি)
একজন পুরুষের উচিত নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় কোমল ভাষা ব্যবহার করা, পারিবারিক সিদ্ধান্তে তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়া। কারণ পরিবারে ভালোবাসা ও স্থিতি আসে পারস্পরিক সম্মান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে। স্ত্রীকে জীবনের সহযাত্রী হিসেবে দেখা এবং তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই ইমানদারের বৈশিষ্ট্য।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৩ ঘণ্টা আগেবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদ (১৯১৮-৭৪) এক স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল প্রতিভার নাম। তাঁকে তাঁর কাব্যিক মিশনের কারণে সাধারণত ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর কাব্যচেতনা ছিল মূলত একটি সামাজিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের ডাক, যেখানে ইসলামি আদর্শ ও বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয় নির্মাণের...
৯ ঘণ্টা আগেনামাজ ইসলামের অনন্য বিধান। পাশাপাশি এটি এমন এক অনুশীলন, যা মানুষের শরীর, মন আর আত্মাকে একসঙ্গে সুস্থ রাখে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। এই আয়াত যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তেমনি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের...
১২ ঘণ্টা আগে