Ajker Patrika

জুমার দিন: আত্মশুদ্ধি ও সম্মিলিত চেতনার অনন্য প্রতীক

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
শায়খ ইবনুল আরাবি মসজিদ, সিরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
শায়খ ইবনুল আরাবি মসজিদ, সিরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

জুমার দিনকে মুসলমানদের কাছে শুধু একটি সাপ্তাহিক ছুটি বা নামাজের দিন হিসেবে দেখা যায় না—এটি আসলে উম্মাহর সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের এক অনন্য প্রতিফলন।

ইসলামি ইতিহাসে জুমার দিনকে বলা হয় ‘সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন’। হাদিসে এসেছে, এ দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছিলেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন এবং এ দিনেই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আবার কিয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিনেই। তাই এ দিনের মাহাত্ম্য কেবল ইবাদতকেন্দ্রিক নয়, বরং মানবজাতির সৃষ্টিজীবনের এক মহা স্মৃতি বহন করে।

জুমার দিনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সম্মিলিত জুমার নামাজ। এটি মুসলমানদের জন্য শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, বরং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক মহৎ উপলক্ষ। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে হয়তো মানুষ ব্যস্ত থাকে পার্থিব কাজে, কিন্তু শুক্রবার সবাই একত্রিত হন মসজিদে—ধনী-গরিব, নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ—সবাই সমান হয়ে দাঁড়ান আল্লাহর দরবারে। এ সমতা ও সম্মিলনই ইসলামি সমাজব্যবস্থার মূল রূপ।

এ দিনের খুতবা মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক দিকনির্দেশনা। শুধু নামাজের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং খুতবার মাধ্যমে সমাজ, অর্থনীতি, নৈতিকতা, রাজনীতি ও মানবিক দায়িত্বের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয়। যেন প্রতিটি জুমা হয় একধরনের ‘সাপ্তাহিক বিশ্ববিদ্যালয়’, যেখানে মুসলমানেরা ইসলামি আদর্শ ও মানবকল্যাণের পাঠ নেন।

জুমার দিনকে ঘিরে কিছু বিশেষ আমলও রয়েছে—গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান, সুগন্ধি ব্যবহার, সুরা কাহাফ পাঠ, দরুদ শরিফ অধিক পাঠ, দোয়ার কবুল হওয়ার বিশেষ মুহূর্তে দোয়া ইত্যাদি। এগুলো শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের চর্চা।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জুমার দিন মানুষকে মনে করিয়ে দেয় জীবনের লক্ষ্য ও আখিরাতের কথা। সাপ্তাহিক এ দিন হয়ে ওঠে আমাদের জীবনের হিসাব নেওয়ার, নিজের ভুলত্রুটি সংশোধন করার এবং নতুনভাবে আল্লাহর পথে ফিরে আসার এক আলোকবর্তিকা।

তাই বলা যায়, জুমার দিন শুধু ইবাদতের দিন নয়; এটি এক আধ্যাত্মিক নবজাগরণের দিন, সামাজিক ঐক্যের দিন, নৈতিক চেতনার দিন এবং আল্লাহর সঙ্গে নবায়িত অঙ্গীকারের দিন।

লেখক: কলাম লেখক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্য যুদ্ধ

কাউসার লাবীব
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মানবসমাজে ধর্ষণ একটি জঘন্য, ঘৃণিত ও ভয়াবহ অপরাধ। ধর্ষণ যেভাবে নারীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে, তেমনি সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা ও নৈতিক কাঠামো ভেঙে দেয়। ইসলাম, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে নারী জাতিকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে এবং নারীর সম্মানহানি বা ইভ টিজিংকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছে। ধর্ষণকে ইসলামে ব্যভিচারের (জিনা) চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধে ইসলাম ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধি থেকে শুরু করে সামাজিক প্রতিরোধ এবং অপরাধীর জন্য কঠোর শাস্তির সমন্বিত ব্যবস্থা দিয়েছে।

ধর্ষণ বা ব্যভিচার এক দিনে সংঘটিত হয় না; বরং এটি ধাপে ধাপে অশ্লীলতার পথ ধরে আসে। তাই ইসলাম অপরাধের উৎসমুখেই লাগাম টেনে ধরার জন্য নারী-পুরুষ উভয়কে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

  • দৃষ্টির সংযম ও যৌনাঙ্গের হেফাজত: যৌন কামনার জন্ম মূলত দেখা থেকে। তাই ইসলাম সর্বপ্রথম নারী-পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টিকে অবনমিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনদের বলুন—তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। ... ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর: ৩০-৩১)

কঠোরভাবে পর্দার বিধান ও অবাধ মেলামেশা বন্ধ: পর্দার বিধান নারী-পুরুষের মধ্যে দূরত্ব ও নিরাপদ সম্পর্ক বজায় রাখে। নারীদের তাদের রূপ-সৌন্দর্য স্বামী ও মাহরাম (যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ নয়) ব্যতীত অন্য কারও সামনে প্রকাশ না করতে এবং বাইরে যাওয়ার সময় শালীন পোশাক পরিধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নির্জন স্থানে কোনো নারী-পুরুষ একত্র হলে তাদের মধ্যে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’ (জামে তিরমিজি)। তাই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধের নির্দেশনা দেয় ইসলাম। এ ছাড়া অশ্লীল যৌন উত্তেজক গান, চলচ্চিত্র, নাটক বা পর্নোগ্রাফি দেখা বা প্রচার করাকে ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এগুলো ব্যভিচারের দিকে মানুষকে আকর্ষিত করে।

  • উপযুক্ত বয়সে বিয়ে ও নৈতিক শিক্ষা: শারীরিক ও চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষায় ইসলাম যুবক-যুবতীদের উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করার প্রতি উৎসাহিত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম, তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং গুপ্তাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করতে অধিক সহায়ক...।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

এ ছাড়া, পরিবার ও শিক্ষাব্যবস্থায় তাকওয়াভিত্তিক (খোদাভীতি) নৈতিক শিক্ষা দেওয়া অপরিহার্য, যা আত্মশুদ্ধি ও অপরাধ থেকে দূরে থাকতে সহায়ক।

ধর্ষকের কঠোরতম শাস্তির নিশ্চয়তা

ইসলামে ব্যভিচার, বলপ্রয়োগ এবং সম্ভ্রম লুণ্ঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি মারাত্মক অপরাধ হলো ধর্ষণ। তাই ধর্ষকের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর এবং তাতে কোনো প্রকার দয়া-মায়া প্রদর্শনের সুযোগ নেই।

  • ধর্ষকের শাস্তি: ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণের অপরাধে ধর্ষকের ওপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগ করা হয়। সে অনুযায়ী, বিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি প্রকাশ্যে রজম বা পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড। অবিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত।
  • আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে ১০০ করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকরে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়...।’ (সুরা নুর: ২)
  • ইমাম মালেক (রহ.)-সহ কিছু ফকিহ মনে করেন, সমাজে ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করলে এটি কেবল ব্যভিচার নয়, এটি ‘মুহারাবা’ (পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, লুণ্ঠন ও নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ) অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে ধর্ষককে নিম্নলিখিত শাস্তির যেকোনো একটি দেওয়া যেতে পারে: হত্যা, শূলে চড়ানো, বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেওয়া অথবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা। এই কঠোর শাস্তি সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে নির্মূলের জন্য জরুরি।
  • ধর্ষিতার ক্ষেত্রে বিধান: ধর্ষণের শিকার নারী মজলুম বা নির্যাতিত হওয়ায় তার ওপর কোরআন-হাদিসে বর্ণিত কোনো শাস্তি কার্যকর হবে না। কারণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ওপর বল প্রয়োগ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের ভুলবশত করা অপরাধ, ভুলে যাওয়া কাজ ও বলপ্রয়োগকৃত বিষয় ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২০৪৫)
  • প্রতিরোধের অধিকার: ধর্ষিত নারীকে সম্ভব হলে তা প্রতিরোধ করতে হবে। যদি প্রতিরোধ করতে গিয়ে ধর্ষককে হত্যা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতেও ইসলাম সায় দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিরোধ করতে গিয়ে ওই অবলা নারী যদি মারা যায়, তাহলে তিনি শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। অর্থাৎ, সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে কেউ নিহত হলে, সে শহীদ।
  • মোটকথা, নারীর মর্যাদা রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। সে জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, নৈতিক শিক্ষাদান ও পরিবারের পরিচর্যা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা ও কঠোর শাস্তি পর্যন্ত সমন্বিত ব্যবস্থা অপরিহার্য। অপর দিকে ধর্ষিতাকে রক্ষা, সহায়তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সমাজের কর্তব্য। যদি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র মিলে ইসলামি নীতিমালা ও যথাযথ ন্যায়বিচার কার্যকর করে, প্রতিরোধমূলক চেষ্টা জোরদার হয় এবং অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা পুনর্মূল্যায়ন হবে। এ ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধি নির্মূল হবে চিরতরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জমাদিউল আউয়াল: সময়ের পরিবর্তনে ইবাদতের প্রেরণা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ
জমাদিউল আউয়াল: সময়ের পরিবর্তনে ইবাদতের প্রেরণা

আমাদের মাঝে এসে হাজির হয়েছে ‘জমাদিউল আউয়াল’—এটি আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের পঞ্চম মাস। আরবি এই মাসের বাংলা অর্থ নানাভাবে হতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ এভাবে করা যায়, জুমাদা শব্দের অর্থ—স্থির, অবিচল, দৃঢ়, শীতল। আর আউয়াল মানে প্রথম। তথা প্রথম জুমাদা বা প্রথম শীত। মূলত এই মাসটিতে আরবে ঠান্ডা নেমে আসত—প্রচণ্ড শীতে কিংবা প্রবল শৈত্যপ্রবাহে সবকিছু প্রায় জমে স্থির হয়ে যায়। তাই এ মাসের নাম জমাদিউল আউয়াল বা শীতকালের প্রথম মাস।

আসন্ন ‘শীতকাল’ বাংলা বছরের ছয়টি ঋতুর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। এটি প্রকৃতির মাঝে এক শীতল ও মনোরম রূপ নিয়ে আসে, যা মানুষের ইবাদত-বন্দেগিতে এক বিশেষ প্রভাব ফেলে। আসলে শীত ও গ্রীষ্ম সবই আল্লাহপ্রদত্ত প্রকৃতির অবদান। এর প্রতিটিতে রয়েছে কুদরতের নিদর্শন ও নিগূঢ় রহস্য। কোরআন করিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশদের অনুরাগ রয়েছে! তাদের আগ্রহ আছে শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তাদের ইবাদত করা উচিত এই (কাবা) গৃহের রবের। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দান করেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেন।’ (সুরা কুরাইশ: ১-৪)

জুমাদাল উলা মাস—নতুন ঋতু হিসেবেও মুমিনের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিমরা নতুন বছর ও মাসের চাঁদ দেখে আনন্দিত হয়, পাশাপাশি নতুন ঋতু পেয়েও তাদের মন হয় পুলকিত। কারণ প্রত্যেক মানুষ দুনিয়ায় আগমন করেছে নির্দিষ্ট কিছু সময় নিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ের পর কোনো প্রাণী বা সৃষ্টির বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। তাই তো প্রতিটি মুমিনের কাছে প্রতি মুহূর্তের দাম সোনার চেয়েও দামি। সময়-কাল-মুহূর্তের আগমন হলেই মুমিন দোয়া পড়বে। সাহাবি তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) যখন নতুন চাঁদ বা আবহ পরিবর্তন লক্ষ করতেন, তখন এই দোয়া পড়তেন—‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমানি ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’ (সুনানে দারিমি: ১৭২৫)

প্রসঙ্গত, রমজান ও মহররমের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিবস আর ফজিলতের কথা এই মাসে না থাকলেও রাসুল (সা.)-এর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট একটি আমলের কথা হাদিসে এসেছে—তিনি প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা রাখতেন। (সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)। এ জন্যই আমাদের উচিত যেসব দিনের ও যেসব মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সেসব দিনে ও মাসে ইবাদত করা। আর যেসব দিন ও মাসের বিশেষ ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি, সেসব দিন ও মাসে বেশি করে নেক আমল করা। ফলে আখিরাতের ময়দানে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।

আমরা পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সময় বিবেচনা করলে দেখতে পাব জমাদিউল আউয়াল মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-কালাম, দান-সদকাহ খয়রাত, ওমরাহ, হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়। সুতরাং আমাদের উচিত এই মাস ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা।

লেখক: মুহাদ্দিস ও খতিব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আপনার জিজ্ঞাসা

অন্ধকারে নামাজ আদায় করলে কি শুদ্ধ হবে?

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৫৩
অন্ধকারে নামাজ আদায় করলে কি শুদ্ধ হবে?

প্রশ্ন: নামাজের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে বাকি নামাজটুকু কি শেষ করা যাবে? কিছু মানুষ বলে—‘সিজদার জায়গাটি যদি হালকাভাবেও বোঝা যায়, তাহলেও বাকি নামাজ আদায় করা যাবে। তবে সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে গেলে আর নামাজ আদায় করা ঠিক হবে না।’ সঠিক উত্তর জানালে উপকৃত হব।

আনাছ ইখতেখার, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।

উত্তর: আপনার সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা জানার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। নামাজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত এবং এর খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নামাজ আদায় নিয়ে যে সংশয় দেখা দেয়, তার একটি সঠিক ইসলামি সমাধান রয়েছে।

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা এবং নির্দেশনা নিম্নরূপ:

নামাজ চলাকালীন যদি বিদ্যুৎ চলে যায় এবং স্থানটি সম্পূর্ণ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তবু বাকি নামাজটুকু চালিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা নেই এবং নামাজ আদায় করা সম্পূর্ণভাবে বৈধ। সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ধারণা প্রচলিত আছে যে সিজদার জায়গা হালকাভাবে না দেখা গেলে নামাজ হবে না, এটি সঠিক নয়।

সঠিক মাসআলা হলো—যদি আপনার কিবলা ঠিক থাকে এবং আপনি যদি সঠিকভাবে রুকু-সিজদা ইত্যাদি আদায় করতে পারেন, তবে অন্ধকারে নামাজ আদায় করতে কোনো সমস্যা নেই। এমনকি এটি মাকরুহও হবে না।

এর সপক্ষে একাধিক সহিহ হাদিস রয়েছে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দুখানা তাঁর কিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দুটি গুটিয়ে নিতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা প্রসারিত করতাম। সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না।’ (সহিহ বুখারি: ৩৮২)

অন্য এক হাদিসে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিছানায় পাচ্ছিলাম না। তখন আমি আমার হাত দিয়ে তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। তখন আমার হাত তাঁর পদযুগলের ওপর পড়ে। তাঁর পা খাড়া ছিল আর তিনি ছিলেন সিজদারত। (সুনান নাসায়ি: ১৬৯)। এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পূর্ণরূপে অন্ধকার ঘরেও নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করেছেন।

মনে রাখার বিষয় হলো, নামাজে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সিজদার জায়গার দিকে নজর রাখা সুন্নত, এটি নামাজের একটি আদব। কিন্তু এই সুন্নত পালনের জন্য সিজদার জায়গাটি দেখতে পাওয়া বা দেখতে থাকা অপরিহার্য নয় এবং এটি নামাজের শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্তও নয়। তাই বিদ্যুৎ চলে গিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকার হলেও, যেহেতু নামাজের বাকি আরকান বা ফরজসমূহ যেমন দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা ইত্যাদি আদায় করা সম্ভব, তাই নামাজ চালিয়ে যাওয়া যাবে।

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে কারণে কলকাতার এই মসজিদের নাম নাখোদা

তাওহীদ আদনান ইয়াকুব
যে কারণে কলকাতার এই মসজিদের নাম নাখোদা

কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিট। ভ্রমণকারীদের চিরচেনা জনপদ। পর্যটকদের পদচারণে মুখর এক ব্যস্ত নগর। সুবিশাল ও প্রশস্ত পথঘাট পেরিয়ে এখানে এলেই মনে হয় যেন একরাশ নীরবতা ভেদ করে প্রবেশ করা হয়েছে কোনো কোলাহলময় জনপদে। রাস্তার দুই পাশে ঝোলানো দোকানের বাহারি সাইনবোর্ড, হরেক রকম খাবারের দোকান, উড়তে থাকা কাবাবের ধোঁয়া আর মসলার সুগন্ধে ভারী হয়ে ওঠা বাতাস, হকারদের হাঁকডাক, মানুষের ব্যস্ত পায়চারি—সব মিলিয়ে যেন অবিরাম এক গুঞ্জন। এই গুঞ্জন ভেদ করে সামনে এগোলেই নজরে পড়ে সুবিশাল এক স্থাপনা—নাখোদা মসজিদ। আঙিনায় ঢুকতেই অনুভব হয় এ যেন কোলাহলের শহরে এক শান্তির নিবাস।

প্রথম দেখাতেই মসজিদের গাম্ভীর্য মনকে স্তব্ধ করে দেয়। লাল বেলেপাথরের দেয়াল, উঁচু উঁচু মিনার আর সুবিশাল ফটক দেখে মনে হবে এটি নিছক কোনো মসজিদই নয়, ইতিহাসেরও জীবন্ত সাক্ষী। ফটকের দিকে তাকালে মনে হবে আগ্রার ফতেহপুর সিক্রির ‘বুলন্দ দরওয়াজা’। নিমেষেই মনে পড়ে যাবে সেই স্মৃতি। ভেতরে ঢুকলে শ্বেতপাথরের সৌন্দর্য মনে করিয়ে দেবে তাজমহলের কথা। জনারণ্য আর ভিড় পেরিয়ে মসজিদের ভেতরে ঢুকলেই মনে হবে, সব কোলাহল যেন হঠাৎ থমকে গেছে অজানা কোথাও। অসাধারণ এই স্থাপত্য দেখতে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে মসজিদের গাম্ভীর্যে; মুগ্ধ নয়নে হারিয়ে যায় সেই অপার সৌন্দর্যে।

নাখোদা মসজিদের ভেতরে ঢুকলেই অনুভূত হয় চারপাশে ছড়িয়ে থাকা মনোমুগ্ধকর শান্তি ও স্নিগ্ধ প্রশান্তি, যা মনকে ছুঁয়ে যায় নিমেষেই। এখানে নামাজ আদায় করতে গেলে মনে হয়, এ যেন এক সুবিশাল মিলনমেলা। জুমা আদায়ের সময় তো কথাই নেই। হাজারো মানুষের ভিড়ে মসজিদের প্রাঙ্গণ তৈরি হয় এক বিস্তীর্ণ মিলনায়তনে। ঈদের নামাজে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আরও বহু গুণ। মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে তিল ধারণেরও জায়গা থাকে না তখন।

মসজিদের বাইরেও যেন দেখা মেলে এক ভিন্ন জগতের। প্রবেশদ্বারের পাশে সারি সারি রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান। এক পাশে কিছু চায়ের স্টল, আরেক পাশে কাবাবের ধোঁয়ার ওড়াউড়ি। নামাজ শেষে কিংবা ঘোরাঘুরির ফাঁকে অনেকেই থেমে যায় সেখানে। কেউ গরম চায়ের কাপে চুমুক দেয়, কেউবা উদাস ভঙ্গিতে কাবাবের ধোঁয়ায় হারিয়ে যায়। সেই প্রাণচঞ্চল পরিবেশেও অনেকের মনে ভেসে ওঠে একটি প্রশ্ন—মসজিদ তো খোদার ঘর, তবে এই মসজিদের নাম কেন ‘নাখোদা!’

লিড-2
লিড-2

উত্তর খুঁজতে গেলে হারিয়ে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। প্রায় এক শতাব্দী আগে গুজরাটের এক ধনবান নাবিক আবদুর রহিম উসমান নিজের অর্থে নির্মাণ করেছিলেন এই মসজিদ। নাবিকের ফারসি হলো ‘নাখোদা’। তাঁর পেশার প্রতি সম্মান জানাতেই স্থানীয়রা মসজিদের নাম রাখেন ‘নাখোদা’। তখন ছিল ব্রিটিশ শাসনামল। ইংরেজির পাশাপাশি ফারসিও ছিল প্রশাসনিক ভাষা। সমাজের সংস্কৃতিতে ফারসির ছিল গভীর প্রভাব। সেই সময়ের ঐতিহ্যের প্রতিফলনে নাবিকের নামে স্থায়ী হয়ে যায় এই নাম—‘নাখোদা মসজিদ’।

মসজিদটির স্থাপত্যে যেমন ফুটে উঠেছে ইতিহাসের গাম্ভীর্য, তেমনি মিশে আছে স্থানীয় সংস্কৃতির রং ও গন্ধও। গম্বুজ, খিলান আর অলংকরণে শুধু অতীতের ছোঁয়া নয়, দেখা মেলে সেই সময়ের স্থানীয়দের জীবনযাত্রা, শিল্পবোধ ও নান্দনিকতার প্রতিফলন। তাই নাখোদা মসজিদে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন ইতিহাস কথা বলছে, আর তার সঙ্গে মিশে আছে স্থানীয় সংস্কৃতি।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া কওমিয়া (নশাসন মাদরাসা), শরীয়তপুর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত