Ajker Patrika

ইতিকাফের গুরুত্ব, বিধিবিধান ও আমল

কাউসার লাবীব
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৩: ৩৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম ইতিকাফ। ইতিকাফের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। দুনিয়ার মোহ দূর হয় হৃদয় থেকে। ইতিকাফের দিনগুলিতে মুমিন বান্দা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিত করে। বিশেষ করে রমজানে এই ইবাদতের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর সন্ধান করার সুযোগ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকেই এ ধারা চলে আসছে। তাই একান্ত জরুরি কোনো ব্যস্ততা না থাকলে রমজানের শেষ দশক ইতিকাফে কাটানোই উত্তম।

ইতিকাফ কী

আরবি শব্দ ইতিকাফের অর্থ কোনো স্থানে অবস্থান করা বা নিজেকে সেখানে সীমাবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা।’

ইতিকাফ আগেকার নবীদের সময় থেকেই চলে আসছে। পবিত্র কোরআনে এ কথার উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে হুকুম করি, তোমরা আমার ঘরকে সেই সব লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা (এখানে) তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে এবং রুকু ও সিজদা আদায় করবে।’ (সুরা বাকারা: ১২৫)

ইতিকাফের প্রকার ও বিধান

ইতিকাফ তিন প্রকার:

এক. সুন্নত: রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ।

দুই. নফল: যেকোনো সময়ের ইতিকাফ।

তিন. ওয়াজিব: মান্নতের ইতিকাফ।

তিন প্রকারের যেকোনো ইতিকাফ পুরুষের জন্য শুধু মসজিদে করার সুযোগ আছে। তবে নারীরা ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবে। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজানের সূর্যাস্ত থেকে ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। তাই কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউই ইতিকাফ না করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা পরিত্যাগ করার জন্য সবাই গুনাহগার হবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যারা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তারাই সওয়াব পাবেন।

মনে রাখার বিষয় হলো, ইতিকাফের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। নিয়ত ছাড়া ইতিকাফ শুদ্ধ হয় না। নিয়ত মনে মনে করলেই হয়ে যাবে। মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা আবশ্যক নয়।

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ

ইতিকাফের সময় একজন ব্যক্তি সমাজের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করেন। তাই এর মাধ্যমে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে ইসলামে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ খুব গুরুত্ব বহন করে।

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফকে হজরত নবী করিম (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন। সাহাবায়ে কেরামও আমলটিকে খুব গুরুত্ব দিতেন। এমনকি নবীপত্নীগণও ইতিকাফ করতে ভুলতেন না।

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীরাও ইতিকাফ করতেন। (বুখারি: ২০২৬)

ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘অনেক আমল তো নবীজি (সা.) কখনো করেছেন আবার কখনো ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু মদিনায় হিজরত করার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফের আমলটি তিনি কখনোই ছাড়েননি।’ (ফাতহুল বারি: ৪ / ২৮৫)

ইতিকাফের প্রস্তুতি

ইতিকাফের সময় শুধু আল্লাহর ইবাদতেই মশগুল থাকতে হবে। ইতিকাফের সময় সুস্থ থাকাও প্রয়োজন। তাই ইতিকাফের আগে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া ইতিকাফের সময় প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসের কারণে যেন ইবাদতে মনোযোগ নষ্ট না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় আসবাবগুলো আগে থেকেই সঙ্গে নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। যেমন বিছানাপত্র, পরিধেয় কাপড়, টয়লেট টিস্যু, সাবান-শ্যাম্পু, পানি পানের পাত্র, প্লেট-বাটি, মূল্যবান জিনিস সংরক্ষণের জন্য তালা দেওয়া যায়—এমন ব্যাগ বা লাগেজ ইত্যাদি। পাশাপাশি সঙ্গে কিছু ধর্মীয় বইও রাখা যেতে পারে।

ইতিকাফের আমল

ইতিকাফ হতে হবে আমলে ভরপুর। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজেই ইতিকাফের সময়গুলো ব্যয় করা প্রয়োজন। তাই ইতিকাফের আগে ব্যক্তিগত বা সাংসারিক ব্যস্ততাগুলো শেষ করা উচিত, যেন ইতিকাফে অন্যমনষ্ক হতে না হয়। দুনিয়াবি কোনো ব্যস্ততা বা কাজ যেন ইতিকাফে না হয়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ন, ধর্মীয় বই পাঠ, দোয়া-ইস্তিগফার, জিকির ও তাসবিহে কাটাতে হবে পুরোটা সময়।

সর্বোপরি দুনিয়াবি চিন্তা, কাজ-কর্ম থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও লাইলাতুল কদর পেতে ইবাদাত-বন্দেগিতে মশগুল থাকাই ইতিকাফের মূল লক্ষ্য।

রমজানের প্রকৃত সফলতা অর্জনে যেসব ইবাদতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়—ইতিকাফ তার মধ্যে অন্যতম। আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকার এক অনন্য মাধ্যম ধরা হয় ইতিকাফকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইতিকাফের বিষয়গুলো জেনে-বুঝে যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল্লাহর সঙ্গে লাভজনক ব্যবসা, মুনাফা যেখানে জান্নাত

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের অভাব পূরণের প্রয়োজন থেকে ব্যবসার উৎপত্তি। সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবসা বৈধ জীবিকা নির্বাহের এক অনন্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবসা শুধু একটি পেশা নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন (সুরা বাকারা: ২৭৫)

পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত ব্যবসায়ের অসংখ্য ধরন বা শ্রেণি বিদ্যমান। কিন্তু মানুষের মধ্যে দুই ধরনের ব্যবসা থাকতে পারে:

এক. বস্তুগত ব্যবসা, যা দুনিয়াবি প্রয়োজন পূরণে একে অপরের সঙ্গে করে থাকে।

দুই. আধ্যাত্মিক ব্যবসা, যা আত্মার সন্তুষ্টির জন্য মহান আল্লাহর সঙ্গে হয়।

মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যবসা করা নিঃসন্দেহে ইবাদতের একটি অংশ। তা ছাড়া মুনাফা অর্জনের অভিপ্রায়ে লাভজনক খাতে মূলধন, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করা হয়। ফলস্বরূপ লাভ এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকে প্রায় সমান।

কিন্তু পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এমন এক ব্যবসার সুসংবাদ দিয়েছেন, যেখানে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই—আছে লাভ আর লাভ। সুরা সফফাতের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’

অর্থাৎ কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গে ব্যবসার মূলধন হিসেবে তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন:

এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তদনুযায়ী আমল এই ব্যবসার শ্রেষ্ঠ মূলধন।

দুই. দ্বীনি কাজে ধন-সম্পদ ব্যয় করা। আপাতদৃষ্টিতে দ্বীনের জন্য সম্পদ ব্যয়ের ফলে মনে হয় তা কমেছে। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে আর্থিক এই ব্যবসা ক্ষতিবিহীন এবং অন্তহীন, যা দুনিয়া এবং আখিরাতের সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে; যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির: ২৯)

তিন. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদ নিয়ে বর্তমান সমাজে ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। কিন্তু জিহাদ বলতে কেবল যুদ্ধকেই বোঝানো হয় না। বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা। যেমন, নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান এবং দ্বীনের জন্য নিজের জীবন কিংবা নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা অথবা দ্বীনকে রক্ষা করার অন্য যেকোনো প্রচেষ্টা জিহাদের অংশ।

যেকোনো ব্যবসায় ক্রেতা অপরিহার্য। তবে বান্দা এবং রবে এই ব্যবসায় ক্রেতা যিনি, তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনি কী কিনে নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে আমরা কী লাভ করছি, তা সুরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে।’

মহান রবের সঙ্গে ব্যবসার লাভ এবং উপকারিতা সম্পর্কে সুরা সফফাতের ১২ নম্বর আয়াতে তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।’

ব্যবসায়ের চিরাচরিত ঝুঁকি থাকলেও খোদার সঙ্গে লেনদেনে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেই। নিশ্চিত লাভের আশায় মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে নিভৃতে ইবাদত করে। ওয়াল্লাহি মুমিনদের জন্য এর থেকে বড় ব্যবসা একটিও নেই।

লেখক: শারমিন আক্তার, শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিশুদের নৈতিক বিকাশে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব

ইসলাম ডেস্ক 
দাদা ও নাতি। ছবি: সংগৃহীত
দাদা ও নাতি। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বিকশিত হলে তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সমাজবোধ, সুষ্ঠু আচরণ, সততা, সত্যবাদিতা ও সময়নিষ্ঠতার শিক্ষালাভ করে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে, ফলে সে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ জন্য প্রথমেই দরকার শিশুর পরিবারের সবার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাদান।

শিশু সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় তার পরিবারের সঙ্গে। এ জন্য পরিবারের সবার করণীয় শিশুর সঙ্গে ইসলামিক ভাবধারার আচরণ করা, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য গল্পের মাধ্যমে শোনানো, আল্লাহভীতি সৃষ্টি করা, আল্লাহর ৯৯ নামের অর্থ ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।

এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়মিত নামাজ, রোজা, কোরআন পাঠ, সত্য ও সদাচরণ করলে শিশুরা তা অনুসরণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি শেখানো যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আলোকিত ও দায়িত্বশীল। শিক্ষকেরা যদি নিজেদের আচরণের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার উদাহরণ দিতে পারেন, তবে সে প্রভাব অনেক গভীর হবে।

বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ শিশু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। ছোট থেকেই ভিডিও গেমস ও অন্যান্য কনটেন্ট দেখায় তাদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, যা তাদের মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারা জাগ্রত হয়, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্ক ও আত্মাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এটি তাকে শেখায় কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কীভাবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় এবং কীভাবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝে এগিয়ে যেতে হয়।

একটি সমাজ তখনই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়, যখন সে সমাজের শিশুরা নৈতিক গুণাবলি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠে। এ শিক্ষা শুধু আখিরাতের জন্য কল্যাণকর নয়; বরং দুনিয়ার জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। তাই সমাজের সব স্তরে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: রাখি আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৬ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০৪: ৪৪ মিনিট
ফজর০৪: ৪৫ মিনিট০৬: ০০ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৪৬ মিনিট
আসর০৩: ৪৭ মিনিট০৫: ২২ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৪ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
এশা০৬: ৪০ মিনিট০৪: ৪৪ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—

চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট

সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—

খুলনা: ০৩ মিনিট

রাজশাহী: ০৭ মিনিট

রংপুর: ০৮ মিনিট

বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃপণতা—যে স্বভাব ধ্বংস ডেকে আনে

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৫২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কৃপণতা মানব চরিত্রের একটি মন্দ দিক। এটি কোনো মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। এ স্বভাব শয়তানই পছন্দ করে এবং মানুষকে কৃপণ হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর কৃপণ হতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।’ (সুরা বাকারা: ২৬৯)

রাসুল (সা.) কৃপণতার নিন্দা করেছেন। কৃপণতাকে মারাত্মক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং উম্মতকে কৃপণতা থেকে সতর্ক করেছেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে বনু সালামা, তোমাদের নেতা কে?’ আমরা বললাম, ‘জুদ ইবনে কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি।’ তিনি বলেন, ‘কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কী হতে পারে?’ (আদাবুল মুফরাদ: ২৯৬)

একদিন রাসুল (সা.) ভাষণ দেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৬৯৮)

রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা এই অভ্যাস থেকে আশ্রয় চাইতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ থেকে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৪০)

একজন মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। যে ব্যক্তির চরিত্রে এই অভ্যাস থাকবে, সেই নিকৃষ্ট মানুষ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে, সে খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৫১১) অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের মধ্যে দুটি স্বভাব একত্রে জমা থাকতে পারে না—কৃপণতা ও অসদাচরণ।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৮৭২)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত