Ajker Patrika

যে নারীর জন্য নিজের চাদর বিছিয়ে দিয়েছিলেন নবীজি

রাফাত আশরাফ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ছবি: সংগৃহীত
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ছবি: সংগৃহীত

নবীজি (সা.) ছিলেন নারী জাতির সম্মানের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি নারীদের মর্যাদা দিয়েছেন এমন এক সময়ে, যখন পুরুষ শাসিত সমাজ নারীদের অধিকারহীন করে রেখেছিল।

যখন আরব জনপদে কন্যাশিশুকে জীবন্ত সমাহিত করা হতো, যখন নারীদের স্রেফ ভোগ্য পণ্য হিসেবে গণ্য করা হতো—ঠিক তখনই তিনি নারী জাতিকে সমাজে দিয়েছিলেন এক অমোচনীয় মর্যাদা।

তিনি শুধু নারীদের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেননি, বরং সম্মান ও ভালোবাসার এমন এক অনুপম সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন—যা আজকের আধুনিক বিশ্বেও অনুপস্থিত। কখনো স্ত্রীর স্মৃতিতে আবেগপ্রবণ হয়েছেন, কখনো দুধমাতার পায়ের কাছে চাদর বিছিয়েছেন, কখনো স্ত্রীর বান্ধবীর জন্য মমতার দরজা খুলে দিয়েছেন।

তাঁর জীবনে এমন বহু ঘটনা আছে যেখানে তিনি নারী জাতিকে সম্মান দেখিয়ে ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।

হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি যখন ইন্তেকাল করেন, তখন নবীজি তাঁর মৃত্যুশোকে অত্যন্ত মর্মাহত হন। একদিন খাদিজা (রা.)-এর বোন হালা বিনতে খুয়াইলিদ নবীজির নিকট আসেন। তাঁকে দেখে নবীজি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি কখনো নবীজিকে এত আবেগপ্রবণ হতে দেখিনি, যতটা তিনি খাদিজার স্মরণে হতেন।’ (সহিহ্ বুখারি: ৩৮১৮, সহিহ্ মুসলিম: ২৪৩৫)

আরেক ঘটনায় দেখা যায়, এক বৃদ্ধা নারী নবীজির দরবারে আসেন, যিনি ছিলেন খাদিজা (রা.)-এর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। রাসুল (সা.) তাঁকে দেখে নিজের চাদর বিছিয়ে বসতে দেন। এটি নিছক সৌজন্য নয়, বরং নারীর সম্মান এবং পুরোনো সম্পর্কের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। (আদাবুল মুফরাদ: ৩৩৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে মা ছিলেন অনুপস্থিত। খুব অল্প বয়সেই তিনি মাতৃহারা হন। এ জন্য মায়ের খেদমত করার সুযোগ তিনি পাননি—যার বেদনা সারাজীবন তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। তিনি বলতেন, ‘মায়ের পায়ের নিচেই তোমাদের জান্নাত।’

তাই যখন তাঁর দুধমাতা হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হতো, তখন তিনি তাঁর সম্মানে নিজ গায়ের চাদর বিছিয়ে দিতেন।

আবুত্ তুফায়ল (রা.) বলেন, ‘আমি জিরানাহ্ নামক স্থানে নবী (সা.)-কে মাংস বণ্টন করতে দেখলাম। এমন সময় এক মহিলা এসে তাঁর কাছে পৌঁছালে নবীজি তাঁর জন্য নিজের চাদর বিছিয়ে দিলেন। তিনি ওই চাদরের ওপর বসেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ মহিলা কে?’ লোকেরা বলল, ‘তিনি সেই মহিলা, যিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শৈশবে দুধ পান করিয়েছিলেন।’ (সুনান আবু দাউদ: ৪৯৩৭)

বর্তমান সময়ে যখন সমাজে নারীর প্রতি অবহেলা ও অসম্মানের নানা চিত্র আমাদের ব্যথিত করে, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়া সময়ের দাবি।

আমরা তার বর্ণাঢ্য জীবন থেকে শিখতে পারি—নারীর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা কেবল নৈতিক দায়িত্ব নয়। বরং এটি তার সুমহান সুন্নাহ।

যদি আমরা পারিবারিক কিংবা সামাজিক জীবনে রাসুল (সা.)-এর আদর্শকে অনুসরণ করে নারীর প্রতি সম্মান, সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পারি—তাহলে আমরা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে শান্তি, ভালোবাসা এবং জান্নাতের সুগন্ধ ফিরে পাব ইনশাআল্লাহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তামিম কি তাহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হবেন

‘আমি আধুনিক পুলিশ, সাংবাদিকদের ভয় করে চলি না’

লন্ডনের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা, ফ্লাইট বাতিলে ভোগান্তিতে হাজারো যাত্রী

নারীর ‘বগলের গন্ধ’ পুরুষের মানসিক চাপ কমায়, তবে কি মানুষেরও আছে ফেরোমোন!

মহড়া দিয়ে রাকসু দখলের স্বপ্ন না দেখার পরামর্শ ছাত্রদল নেতার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত