আবদুল আযীয কাসেমি
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ইসলামি আইনশাস্ত্র (ফিকহ)-এর ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। যাঁর হাত ধরে গড়ে উঠেছে একটি অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক জগত, যেটি পুরো বিশ্বে হানাফি মাজহাব নামে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বলতে গেলে অর্ধেক মুসলিম উম্মাহ হানাফি মাজহাব অনুসরণ করে তাদের ধর্মীয় জীবন পরিচালনা করে।
পরিচয়
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর পুরো নাম নুমান ইবনে সাবিত ইবনে যুতা। তিনি ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে (৮০ হিজরি) ইরাকের কুফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশপরিচয় সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি পারস্য বংশোদ্ভূত ছিলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষরা ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু হানিফা (রহ.)-এর পরিবার ব্যবসায়িক পেশায় নিয়োজিত ছিল, যা পরবর্তীতে তাঁর জীবনেও প্রভাব ফেলে।
জ্ঞানার্জন
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর শৈশব কাটে ইরাকের কুফায়, যা তখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলামি শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে। তাঁর প্রখর মেধা ও জ্ঞানার্জনের আগ্রহ শৈশব থেকেই প্রকাশ পায়। কোরআন, হাদিস, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ব্যবসায় নিয়োজিত থাকলেও জ্ঞানার্জনের প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে ইসলামি আইনশাস্ত্র (ফিকহ) ও হাদিসচর্চায় টেনে নেয়। কুফার প্রখ্যাত আলেম হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমান (রহ.)-এর সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁর কাছে দীর্ঘ ১৮ বছর ফিকহ শিক্ষা লাভ করেন।
একটি মহল তাঁর ব্যাপারে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাদিসশাস্ত্রে তাঁর অদক্ষতার অভিযোগ তোলে। বলাবাহুল্য, তাঁদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে উদ্ভট, কাল্পনিক ও মিথ্যাচার। তাঁকে প্রায় সবাই মুজতাহিদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কাউকে মুজতাহিদ হতে হলে হাদিসশাস্ত্রসহ আরও বহু শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে হয়। তাঁকে মুজতাহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হলে তাঁকে অবশ্যই হাদিসশাস্ত্রের পণ্ডিত বলে স্বীকার করে নিতে হবে। সত্যিকার শাস্ত্রীয় ব্যক্তিবর্গ হাদিসশাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্যের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আরবি, বাংলা, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় একাধিক স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
ফিকহ চর্চা
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো, ইসলামি আইনশাস্ত্রে তাঁর যুক্তিভিত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির প্রবর্তন। তিনি কোরআন, হাদিস, ইজমা (ঐক্যমত) এবং কিয়াস (যুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্ত)–এর ওপর ভিত্তি করে ফিকহের একটি সুসংহত পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর এই পদ্ধতি পরবর্তীতে ‘হানাফি মাজহাব’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি শুধু প্রচলিত জ্ঞানকেই আত্মস্থ করেননি, বরং নতুন সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। তাঁর ফিকহ চর্চার বৈশিষ্ট্য ছিল সমসাময়িক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে আইন প্রণয়ন করা।
চারিত্রিক সৌন্দর্য
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) শুধু একজন মহান ফকিহই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান, ন্যায়পরায়ণ ও ধৈর্যশীল ব্যক্তিত্ব। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁকে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও সহনশীল ছিলেন। তাঁর কাছে জ্ঞানার্জনের জন্য আসা ছাত্রদের সর্বোচ্চ সম্মান ও সহযোগিতা করতেন। ছিলেন অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ণ।
একবার আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুর তাঁকে প্রধান বিচারপতি (কাজি) নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে তাঁকে কারাবরণ করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত কারাগারেই ইন্তেকাল করেন।
জীবনাবসান
৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে (১৫০ হিজরি) বাগদাদের কারাগারে ইমাম আবু হানিফা ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু ইসলামি জ্ঞানজগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে তিনি রেখে গেছেন এক অমূল্য জ্ঞানভাণ্ডার, যা আজও মুসলিম উম্মাহর জন্য পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফি মাজহাব আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুসৃত হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া, তুরস্ক ও বলকান অঞ্চলে হানাফি মাজহাবের ব্যাপক প্রসার রয়েছে। তাঁর ছাত্ররা, যেমন ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ, তাঁর শিক্ষাকে আরও বিস্তৃত করেন এবং হানাফি মাজহাবকে সুসংহত রূপ দেন।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ইসলামি আইনশাস্ত্র (ফিকহ)-এর ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। যাঁর হাত ধরে গড়ে উঠেছে একটি অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক জগত, যেটি পুরো বিশ্বে হানাফি মাজহাব নামে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বলতে গেলে অর্ধেক মুসলিম উম্মাহ হানাফি মাজহাব অনুসরণ করে তাদের ধর্মীয় জীবন পরিচালনা করে।
পরিচয়
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর পুরো নাম নুমান ইবনে সাবিত ইবনে যুতা। তিনি ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে (৮০ হিজরি) ইরাকের কুফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশপরিচয় সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি পারস্য বংশোদ্ভূত ছিলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষরা ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু হানিফা (রহ.)-এর পরিবার ব্যবসায়িক পেশায় নিয়োজিত ছিল, যা পরবর্তীতে তাঁর জীবনেও প্রভাব ফেলে।
জ্ঞানার্জন
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর শৈশব কাটে ইরাকের কুফায়, যা তখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলামি শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে। তাঁর প্রখর মেধা ও জ্ঞানার্জনের আগ্রহ শৈশব থেকেই প্রকাশ পায়। কোরআন, হাদিস, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ব্যবসায় নিয়োজিত থাকলেও জ্ঞানার্জনের প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে ইসলামি আইনশাস্ত্র (ফিকহ) ও হাদিসচর্চায় টেনে নেয়। কুফার প্রখ্যাত আলেম হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমান (রহ.)-এর সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁর কাছে দীর্ঘ ১৮ বছর ফিকহ শিক্ষা লাভ করেন।
একটি মহল তাঁর ব্যাপারে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাদিসশাস্ত্রে তাঁর অদক্ষতার অভিযোগ তোলে। বলাবাহুল্য, তাঁদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে উদ্ভট, কাল্পনিক ও মিথ্যাচার। তাঁকে প্রায় সবাই মুজতাহিদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কাউকে মুজতাহিদ হতে হলে হাদিসশাস্ত্রসহ আরও বহু শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে হয়। তাঁকে মুজতাহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হলে তাঁকে অবশ্যই হাদিসশাস্ত্রের পণ্ডিত বলে স্বীকার করে নিতে হবে। সত্যিকার শাস্ত্রীয় ব্যক্তিবর্গ হাদিসশাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্যের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আরবি, বাংলা, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় একাধিক স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
ফিকহ চর্চা
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো, ইসলামি আইনশাস্ত্রে তাঁর যুক্তিভিত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির প্রবর্তন। তিনি কোরআন, হাদিস, ইজমা (ঐক্যমত) এবং কিয়াস (যুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্ত)–এর ওপর ভিত্তি করে ফিকহের একটি সুসংহত পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর এই পদ্ধতি পরবর্তীতে ‘হানাফি মাজহাব’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি শুধু প্রচলিত জ্ঞানকেই আত্মস্থ করেননি, বরং নতুন সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতির ব্যবহার করেন। তাঁর ফিকহ চর্চার বৈশিষ্ট্য ছিল সমসাময়িক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে আইন প্রণয়ন করা।
চারিত্রিক সৌন্দর্য
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) শুধু একজন মহান ফকিহই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান, ন্যায়পরায়ণ ও ধৈর্যশীল ব্যক্তিত্ব। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁকে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও সহনশীল ছিলেন। তাঁর কাছে জ্ঞানার্জনের জন্য আসা ছাত্রদের সর্বোচ্চ সম্মান ও সহযোগিতা করতেন। ছিলেন অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ণ।
একবার আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুর তাঁকে প্রধান বিচারপতি (কাজি) নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে তাঁকে কারাবরণ করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত কারাগারেই ইন্তেকাল করেন।
জীবনাবসান
৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে (১৫০ হিজরি) বাগদাদের কারাগারে ইমাম আবু হানিফা ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু ইসলামি জ্ঞানজগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে তিনি রেখে গেছেন এক অমূল্য জ্ঞানভাণ্ডার, যা আজও মুসলিম উম্মাহর জন্য পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফি মাজহাব আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুসৃত হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া, তুরস্ক ও বলকান অঞ্চলে হানাফি মাজহাবের ব্যাপক প্রসার রয়েছে। তাঁর ছাত্ররা, যেমন ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ, তাঁর শিক্ষাকে আরও বিস্তৃত করেন এবং হানাফি মাজহাবকে সুসংহত রূপ দেন।
নবী আদম (আ.) থেকে নিয়ে মহানবী (সা.) পর্যন্ত সব নবীর যুগেই কোরবানির বিধান ছিল। (সুরা হজ: ৩৪)। তবে ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে আছে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানির ঘটনা। কেননা তা ছিল কঠিন ত্যাগের অধ্যায়।
১০ ঘণ্টা আগেহাবিল ও কাবিল নামে হজরত আদমের দু’টি সন্তান ছিল। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে একবার এক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে আল্লাহর নামে তাদের কোরবানি করার আদেশ দেন আদম (আ.)। সেটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম কোরবানি।
১৩ ঘণ্টা আগেঈদের দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল ঈদের নামাজ আদায় করা। তাই প্রস্তুতি গ্রহণ করে আগে আগে ঈদগাহে চলে যাওয়া উচিত। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে ঈদের জামাত ছুটে গেলে অথবা অংশ বিশেষ না পেলে করণীয় হলো—
১৫ ঘণ্টা আগেখুশির বার্তা নিয়ে হাজির হয় ঈদ। ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। তবে বছরে মাত্র দুইবার এই নামাজ পড়ার ফলে অনেকেরই এর নিয়মকানুন মনে থাকে না। ঈদের নামাজ সংক্রান্ত যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে, তা হলো—
১ দিন আগে