Ajker Patrika

উন্নত মানসিকতা গঠনে ইসলামের দিকনির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য তার মন-মানসিকতা ও চরিত্রে নিহিত। বাহ্যিক চাকচিক্যের চাইতে সুস্থ চিন্তা, সদাচরণ, মানবিক গুণাবলিই মানুষের সত্যিকারের পরিচয়। ইসলাম কেবল ইবাদত নির্ভর ধর্ম নয়, বরং এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আত্মশুদ্ধি, নৈতিক উন্নয়ন এবং মানবিক কল্যাণে ইসলাম অনন্য ভূমিকা পালন করে।

কুরআন মাজিদ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীতে উন্নত মানসিকতার প্রতি অসামান্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামী মূল্যবোধ অনুযায়ী উন্নত মানসিকতার মূল স্তম্ভ হলো—

  • ১ ️. আল্লাহভীতি (তাকওয়া)
  • ২ ️. সততা ও সত্যবাদিতা
  • ৩ ️. সহানুভূতি, দয়া ও সহমর্মিতা
  • ৪ ️. ক্ষমাশীলতা ও সহনশীলতা
  • ৫ ️. অহংকার, হিংসা ও বিদ্বেষ বর্জন

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করার আদেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমালঙ্ঘন নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল: ৯০)

সত্যের পক্ষে অবিচল থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের ওপর অবিচল থাকো এবং ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য প্রদান করো। তোমাদের কোনো জাতির প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের ন্যায়পরায়ণতা থেকে বিরত না রাখে। ন্যায়পরায়ণ হও, এটাই তাকওয়ার নিকটবর্তী।’ (সুরা মায়িদা: ৮)

অহংকার পরিহারের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘মানুষদের থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং পৃথিবীতে অহংকার করে চলাফেরা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও আত্মগর্বিতদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা লুকমান: ১৮)

রাসুল (সা.) ছিলেন মানবতার পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। তিনি বলেন, ‘আমি উত্তম চরিত্র পরিপূর্ণ করতে প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮৯৫২)

তাঁর জীবনে বিনয়, সহনশীলতা, ক্ষমা ও দয়ার অপূর্ব দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনকি যারা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে, তাঁদেরও তিনি ক্ষমা করেছেন। হুদাইবিয়ার সন্ধিতে কিংবা তায়েফের মুশরিকদের সঙ্গে তাঁর আচরণ ছিল অনন্য মানবিকতার নিদর্শন। তিনি প্রতিশোধ নয়, বরং ক্ষমা ও কল্যাণকেই বেছে নিয়েছেন।

ইসলাম শিক্ষা দেয়—মানুষের প্রতি দয়া করা ইমানেরই অংশ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা এমনকি ভাইয়ের মুখে হাসি দেওয়াকেও সদকা মনে করবে।’ (জামে তিরমিজি: ১৯৫৬)

পারস্পরিক সহযোগিতা, ক্ষমা, সহানুভূতি ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘মুমিন মুমিনের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না, তাকে অপমান করে না এবং তাকে হেয় করে না।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৫৬৪)

মানসিক পশ্চাৎপসরণ রোধে ইসলামের কঠোর বার্তা

ক. হিংসা নিষিদ্ধ—‘তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬০৬৬)

খ. গিবত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ—‘তোমাদের কেউ কি চায়, তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করবে।’ (সুরা হুজুরাত: ১২)

গ. অহংকার হারাম—‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৯১)

  • আত্মউন্নতির ইসলামি পদ্ধতি
  • নিয়মিত আত্মসমালোচনা করা।
  • নিজের ভুল স্বীকার করে তা সংশোধনের চেষ্টা করা।
  • সত্যবাদিতা, বিনয়, দয়া ও সহানুভূতির গুণাবলি অনুশীলন করা।
  • কুরআন-হাদিসের আলোকে প্রতিদিন জীবনকে পরিচালিত করা।
  • উত্তম চরিত্রবান মানুষের সাহচর্যে থাকা।

ইসলাম মানুষকে এমন এক উন্নত মানসিকতার পথে আহ্বান জানায়, যেখানে হিংসা নেই, অহংকার নেই, বিদ্বেষ নেই; আছে ভালোবাসা, সহানুভূতি, ক্ষমা এবং মানবিকতা। এই শিক্ষা শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যম নয়, বরং একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ, মানবিক সভ্যতা এবং ন্যায়ভিত্তিক পৃথিবী গঠনের অন্যতম হাতিয়ার।

লেখক: আনওয়ার হুসাইন, শিক্ষক ও সম্পাদক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত