ইরানের তেল খাতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির তেল খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর ইরানের ওপর নতুন এই নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন সালিম আহমেদ সাঈদ নামের এক ইরাকি ব্যবসায়ীও। শুধু তিনি নন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ওপরও। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ—ইরাকি তেলের সঙ্গে ইরানি তেল মিশিয়ে বিক্রি করছে সাঈদের প্রতিষ্ঠান।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ইরানের আচরণ দেশটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। শান্তি বেছে নেওয়ার বহু সুযোগ থাকার পরও দেশটির নেতারা চরমপন্থা বেছে নিয়েছেন। ট্রেজারি বিভাগ তেহরানের রাজস্বের উৎসগুলো লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাবে এবং অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াবে, যাতে এই শাসনের অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন ব্যাহত হয়।’

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, হয়তো চীন ইরানি তেল কিনতে পারবে।

তবে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি রাখলেন না। গত সপ্তাহে তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দাবি করছেন, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। তাই দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সব প্রক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু তিনি তাঁকে বাঁচিয়েছেন। কারণ, সেটি হতো খুবই অপমানজনক মৃত্যু। এর আগে যুদ্ধবিরতির পরপরই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, খামেনিকে হত্যার বিষয়ে পরিকল্পনা থাকলেও ‘কোনো বাস্তব অপারেশনাল সুযোগ’ ছিল না।

গত ১৩ জুন ইরানে বড় ধরনের হামলা চালায় ইসরায়েল। এ সময় বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী গুপ্তহত্যার শিকার হন। ইসরায়েলি হামলায় কয়েক শ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। পাল্টা হামলা চালায় ইরানও। ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সব সামরিক ও সরকারি স্থাপনাকে লক্ষ্য করে চালানো হয় হামলা। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের এই হামলায় যুক্ত হয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করে। জবাবে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা একাধিক মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। পরে ট্রাম্পের উদ্যোগে কাতারের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধ বন্ধ হয়।

ট্রাম্পের দাবি—যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ গত বুধবার পেন্টাগন জানিয়েছে, ওই বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে। তবে ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সঠিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

এরই মধ্যে ইরান একটি আইন পাস করে জাতিসংঘের পরমাণু তদারকি সংস্থা আইএইএকে সহযোগিতা করা স্থগিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাধিক দেশ এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘায়ি জানান, কূটনৈতিক সমাধানের খুঁজে ওমান ও কাতারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান পরোক্ষ সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। স্কাই নিউজকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে, ইরানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছে। কূটনীতিকে প্রতারণার হাতিয়ার বা মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়।’