Ajker Patrika

ইউক্রেনকে অপরিসীম সাহায্য দেওয়া সম্ভব নয়: জ্যাক সুলিভান 

আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ৩২
ইউক্রেনকে অপরিসীম সাহায্য দেওয়া সম্ভব নয়: জ্যাক সুলিভান 

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, কংগ্রেস অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ না করায় ওয়াশিংটনের পক্ষে ইউক্রেনকে আর অপরিসীম সাহায্য দেওয়া সম্ভব হবে না। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুলিভান এ কথা বলেন।

সুলিভান বলেন, ‘নিকটবর্তী সময় বিবেচনায় আমাদের ইউক্রেন ও ইসরায়েল উভয় দেশের জন্যই তহবিল সরবরাহ করার অনুরোধ পেয়েছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনি যখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকবেন, তখন এসব বিষয়ে (ইউক্রেনে সহায়তা) দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার ক্ষেত্রে কোনো চেষ্টা করার সুযোগ থাকবে না।’

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এবং ইউক্রেন ও ইউক্রেনে তহবিল সরবরাহের বিষয়ে আমরা আসলে খাদের কিনারে চলে এসেছি। আমরা আজও ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করছি এবং যত দিন সম্ভব আমরা এমনটা করতে থাকব, কিন্তু এটি তো অপরিসীম বা অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলতে পারে না।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে সুলিভানকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি আসলে ‘নিকটবর্তী সময়’ বলতে কী বুঝিয়েছেন। জবাবে সুলিভান নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ উল্লেখ করেননি। তবে বলেছেন, বিষয়টি নির্ভর করছে ইসরায়েল ও ইউক্রেন কত দ্রুত তাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ ব্যবহার করে ফেলছে এবং তাদের চাহিদা কী ও এর বিপরীতে আমাদের কী কী সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে।

এদিকে শীতের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকতে মিত্র দেশগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রুশ আগ্রাসন শুরুর পর গতকাল বুধবার পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদর দপ্তরে প্রথমবারের মতো সফরে গিয়ে জেলেনস্কি এই আহ্বান জানান।

এর আগে পেন্টাগনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা একই সময়ে ইসরায়েল ও ইউক্রেন উভয় দেশকে অস্ত্রসহায়তা দিতে সক্ষম এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো সময়ে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতেও সক্ষম।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘যদিও আমরা ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সহায়তা প্রদান করছি এবং সেই সহায়তা অব্যাহত রাখব। তবে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়েও সতর্ক যে, আমরা অন্যান্য সংকট ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও সাড়া দিতে সক্ষম।’

পেন্টাগনের এক মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ইসরায়েল যেসব অস্ত্রের চাহিদা আমাদের কাছে দিয়েছে, আমরা সেগুলো পূরণ করতে সক্ষম। তবে ইসরায়েল কী ধরনের অস্ত্র চেয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি ওই কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আসামে কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত’, বিজেপির তোপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪৭
আসামে অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত’ গাওয়া নিয়ে বিজেপির তোপের মুখে পড়েছে কংগ্রেস। ছবি: সংগৃহীত
আসামে অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত’ গাওয়া নিয়ে বিজেপির তোপের মুখে পড়েছে কংগ্রেস। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ সংলগ্ন রাজ্য আসামে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্র ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আসামের করিমগঞ্জ জেলায়—যেটির বর্তমান নাম শ্রীভূমি—কংগ্রেসের এক দলীয় আয়োজনে এক নেতাকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাইতে শোনা যায়। এই ঘটনার পর বিজেপি বলেছে, কংগ্রেস ‘বাংলাদেশ নিয়ে সব সময় ঘোরের মধ্যে থাকে।’

এই ঘটনার পর বিজেপি বিপুল রাজনৈতিক আক্রমণ শানালেও মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ১৯০৫ সালে, প্রথম বঙ্গবিভাজনের প্রতিবাদে। এই উদ্যোগ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছিল এবং ১৯১১ সালে বিভাজন বাতিল করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালে এটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে।

আমার সোনার বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বঙ্গের মানুষের তার ভূমির সঙ্গে গভীর সংযোগের কথা বর্ণনা করেছেন। সীমান্তের দুই পাশে থাকা বাংলাভাষীরা অনুষ্ঠান বা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে এই গান প্রায়ই গায়। এমনকি ভারতের বিভিন্ন স্থানে, যেমন দিল্লিতে, বাংলার খাবারের রেস্তোরাঁর নাম ‘আমার সোনার বাংলা’ রাখা হয়েছে।

আসামে শ্রীভূমি জেলা বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত এবং এটি বাংলাভাষা–প্রধান বরাক উপত্যকার অংশ। তাই সেখানে এই গান গাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কংগ্রেস এখনো বিজেপির সমালোচনার জবাব দেয়নি।

https://x.com/TheAshokSinghal/status/1983154913590030572?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1983154913590030572%7Ctwgr%5Eabcf50b337355d781dfe38f3ff506178e53048cb%7Ctwcon%5Es1_&ref_url=https%3A%2F%2Fwww.ndtv.com%2Findia-news%2Famar-sonar-bangla-assam-congress-bangladesh-national-anthem-sung-at-congress-event-why-its-not-a-problem-9535260

তবে বিজেপি ভিডিওটি তুলে ধরে কংগ্রেসকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছে। বিজেপি আসাম ইউনিট এক্সে লিখেছে, ‘চিহ্নগুলো স্পষ্ট। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সাহস দেখিয়ে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিল যা পুরো উত্তর-পূর্বকে দেখাচ্ছে এবং এখন বাংলাদেশ নিয়ে ঘোরের মধ্যে থাকা কংগ্রেস গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এখানে, এই আসামে গাইছে। এরপরও যদি কেউ উদ্দেশ্যটি দেখতে না পারে, তারা হয় অন্ধ, বা সহমর্মী, বা উভয়ই।’

অসমের মন্ত্রী অশোক সিংহাল লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত—আমার সোনার বাংলা—কংগ্রেসের সভায় শ্রীভূমি, অসমে গাওয়া হয়েছে। অথচ, সেই একই দেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে আলাদা করতে চায়!’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এবার স্পষ্ট হলো, কেন কংগ্রেস দশকের পর দশক ধরে আসামে অবৈধ মিয়া (বাংলাভাষী মুসলিমদের তুচ্ছার্থে মিঞা/মিয়া বলে থাকে অসমীয়রা) অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করেছে। তারা ভোটব্যাংক রাজনীতির জন্য রাজ্যের জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তন করে “বৃহত্তর বাংলাদেশ” তৈরি করতে চায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৮
দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে ক্লাউড সিডিংয়ের উদ্যোগ নিলেও ব্যর্থ হয়েছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত
দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে ক্লাউড সিডিংয়ের উদ্যোগ নিলেও ব্যর্থ হয়েছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেন্দ্রীয় রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ কমাতে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগে কাজ করছিল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) কানপুর। তবে উদ্যোগটি ভেস্তে গেছে। কোনো বৃষ্টি হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির আকাশে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঘটানোর উদ্দেশ্যে ক্লাউড সিডিংয়ের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা ‘পুরোপুরি সফল হয়নি’। কারণ, সেদিন মেঘে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল খুবই কম। ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে আইআইটি কানপুরের পরিচালক মণীন্দ্র আগরওয়াল বলেন, এই প্রক্রিয়া কোনো জাদুকরি সমাধান নয়, বরং দূষণ মোকাবিলায় এক ধরনের জরুরি বা অস্থায়ী উদ্যোগ।

এনডিটিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আগরওয়াল বলেন, দিল্লি সরকারের সহযোগিতায় তাঁদের প্রতিষ্ঠান এই পরীক্ষা চালাচ্ছে। বুধবার আবারও চেষ্টা করা হবে এবং তখন ফলাফল আরও ভালো হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। তিনি জানান, মেঘে বৃষ্টি ঘটাতে যে মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছে, তার ২০ শতাংশ সিলভার আয়োডাইড, বাকি অংশে রয়েছে রক সল্ট ও সাধারণ লবণের সংমিশ্রণ। মঙ্গলবার মোট ১৪টি ফ্লেয়ার ছোড়া হয়েছে; কিন্তু বৃষ্টি হয়নি।

আগরওয়াল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো বৃষ্টি হয়নি। সে অর্থে এটি সম্পূর্ণ সফল বলা যাবে না। আজকের মেঘে আর্দ্রতা মাত্র ১৫-২০ শতাংশের মধ্যে ছিল। এত কম আর্দ্রতায় বৃষ্টি ঘটানোর সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবেই খুব কম। তবে এই পরীক্ষা আমাদের দলকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যে আমরা এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারি।’

আগরওয়াল আরও বলেন, ‘আজকের বৃষ্টি নিয়ে পূর্বাভাসগুলো পরস্পরবিরোধী ছিল। কেউ বলেছেন বৃষ্টি হবে, কেউ বলেছেন হবে না। আমাদের দল যে এলাকায় ক্লাউড সিডিংয়ের কাজ করেছে, সেখানে মেঘের আর্দ্রতা ছিল খুব কম। তাই আজ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে।’ তিনি জানিয়েছেন, বুধবার আরও দুটি ফ্লাইট থেকে একইভাবে পরীক্ষা চালানো হবে এবং মেঘের উপস্থিতি থাকলে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

দিল্লির স্থায়ী দূষণ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কি এই ক্লাউড সিডিং হতে পারে—এ প্রশ্নের জবাবে আইআইটি পরিচালক স্পষ্টভাবে বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, ‘এটি এক ধরনের জরুরি সমাধান। অর্থাৎ যখন দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রকম বেড়ে যায়, তখন সাময়িকভাবে দূষণ কমানোর জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে স্থায়ী সমাধান হলো দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন এক সময়ের দিকে যাওয়া, যখন ক্লাউড সিডিংয়ের প্রয়োজনই থাকবে না, কারণ বাতাস তখন পরিষ্কার থাকবে। কিন্তু তত দিন পর্যন্ত এটি একটি সম্ভাব্য হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগতে পারে।’

তিনি আরও জানান, এই প্রক্রিয়ার খরচ বেশি হচ্ছে, কারণ ফ্লাইটগুলো চালানো হচ্ছে উত্তর প্রদেশ থেকে। তবে ভবিষ্যতে এই খরচ কমানো সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘যে কোনো প্রচেষ্টা যা দূষণ কমাতে সাহায্য করে, তা সবারই উপকারে আসে। এটি স্থায়ী সমাধান না হলেও কয়েক দিন পর যদি বৃষ্টি হয়, অন্তত কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে।’

অন্যদিকে দিল্লি সরকার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্লাউড সিডিংয়ের পরীক্ষার ফলে যেখানে প্রক্রিয়াটি চালানো হয়েছে, সেখানে বায়ুর দূষণমাত্রায় কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নয়ডায় বিকেল ৪টার দিকে ০.১ মিলিমিটার এবং গ্রেটার নয়ডায় একই সময়ে তার দ্বিগুণ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ‘শক্তিশালী’ হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২২
গাজায় ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক চুক্তি, মানবিক আহ্বান কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল। দেশটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও একের পর এক যুদ্ধাপরাধ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাজায় শক্তিশালী হামলা চালিয়ে ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

খবরে বলা হয়েছে, দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। দক্ষিণ রাফাহ সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় এক ইসরায়েলি সেনা আহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অঞ্চলটিতে ‘শক্তিশালী হামলার’ নির্দেশ দেন। এরপরই মঙ্গলবারের এসব হামলা শুরু হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে বড় সহিংসতা ছিল এটি। হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেড ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে জানিয়েছে, তারা এক নিখোঁজ বন্দীর মরদেহ হস্তান্তরের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেছে।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের এমন হামলা উদ্ধারকাজ ব্যাহত করবে। এতে গাজায় থাকা অবশিষ্ট ১৩ ইসরায়েলি বন্দীর মরদেহ উদ্ধারে বিলম্ব ঘটবে।

ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অবশ্য বলেছেন, হামলা ও পারস্পরিক অভিযোগ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি এখনো বহাল আছে। তিনি বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে ছোটখাটো সংঘর্ষ হবে না।’ ক্যাপিটল হিলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, গাজার ভেতর থেকে কোনো পক্ষ এক ইসরায়েলি সেনার ওপর হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রেসিডেন্টের শান্তি উদ্যোগ অটুট থাকবে।’

হামাস রাফাহর ওই হামলায় নিজেদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। গাজার চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, মঙ্গলবারের হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তর গাজা সিটির সাবরা এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে চারজন এবং দক্ষিণের খান ইউনিসে আরও পাঁচজন রয়েছেন। সূত্রগুলো জানায়, অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানিয়েছেন, একটি ক্ষেপণাস্ত্র আল-শিফা হাসপাতালের পেছনে পড়েছে এবং আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিস্ফোরণটি ছিল ভয়াবহ। আমরা ঘটনাস্থল থেকে ২০ মিনিট দূরে, তবু শব্দ স্পষ্ট শোনা গেছে। হাসপাতালের ভেতরে রোগী ও চিকিৎসক-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’

গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্মী ইব্রাহিম আবু রিশ বলেন, ‘এটা যুদ্ধবিরতির সরাসরি লঙ্ঘন। আমাদের কাছে হতাহত আছে, আমাদের দল ধসে পড়া ভবনে মানুষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।’ হামলার পর নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে গাজায় ‘শক্তিশালী হামলা চালানোর’ নির্দেশ দিয়েছেন।

বিবৃতিতে নির্দিষ্ট কারণ জানানো না হলেও, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ পরে এক বিবৃতিতে হামাসকে রাফাহর ঘটনার জন্য দায়ী করে বলেন, ‘হামাসকে এই হামলার জন্য বড় মূল্য দিতে হবে।’ এপির খবরে দুই মার্কিন সরকারি সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, গাজায় সর্বশেষ হামলা চালানোর আগে ইসরায়েল ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল।

গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ইসরায়েল এখনো গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে কঠোর বাধা দিচ্ছে। হামাস ইসরায়েলের এসব হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

সংগঠনটি টেলিগ্রামে বলেছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তত্ত্বাবধানে শারম আল শেখে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রকাশ্য লঙ্ঘন।’ তারা বলেছে, চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি অটুট। আল জাজিরাকে গাজার হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য সুহাইল আল-হিন্দি বলেছেন, ‘ইসরায়েল বুঝতে হবে, আমরা চুক্তিতে অটল। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ বন্ধ করতে হবে।’ তিনি জানান, ইসরায়েলি বন্দীদের মরদেহ উদ্ধারে তাদের ‘বড় ধরনের বাধার’ মুখে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মরদেহ উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। কোনো বিলম্বের দায় সম্পূর্ণ ইসরায়েলি দখলদারদেরই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রেকর্ড ২৭১ দিন পর অ্যান্ড্রুজের শরীর থেকে শূকরের কিডনি অপসারণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
টিম অ্যান্ড্রুজ (গাড়ির ভেতরে)। ছবি: সিএনএন
টিম অ্যান্ড্রুজ (গাড়ির ভেতরে)। ছবি: সিএনএন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা টিম অ্যান্ড্রুজ। জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত শূকরের কিডনি নিয়ে তিনি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ (রেকর্ড) ২৭১ দিন বেঁচে ছিলেন। অবশেষে সেই কিডনি অপসারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল ব্রিগহ্যাম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে অ্যান্ড্রুজের শরীর থেকে শূকরের কিডনিটি সরিয়ে দেন। কারণ ওই কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছিল। কিডনি অপসারণের পর এখন আবার ডায়ালাইসিসে ফিরছেন অ্যান্ড্রুজ।

৬৭ বছর বয়সী টিম অ্যান্ড্রুজ যুক্তরাষ্ট্রে এমন চতুর্থ জীবিত ব্যক্তি, যার শরীরে শূকরের জিন-সম্পাদিত কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই বিশেষ ধরনের জেনেটিক পরিবর্তন করা হয় যেন মানবদেহ সেই অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান না করে। ১৯৯০-এর দশক থেকে ডায়াবেটিসে ভোগা অ্যান্ড্রুজ তিন বছর আগে জানতে পারেন তাঁর কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ডায়ালাইসিস তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে তিন দিনের প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা ধরে মেশিনে সংযুক্ত থাকার ক্লান্তিকর প্রক্রিয়ায় তাঁর জীবন একঘেয়ে হয়ে উঠেছিল।

ঝুঁকি জেনেও তিনি ‘জেনোট্রান্সপ্লান্ট’ অর্থাৎ প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনের পরীক্ষায় অংশ নেন। তাঁর কথায়, ‘যদি এতে আমার জীবন বদলায় এবং অন্যদেরও উপকার হয়, তবে ঝুঁকি নেওয়াটা সার্থক।’

সিএনএনের ‘অ্যানিমেল ফার্মা’ ডকুমেন্টারিতে তিনি জানান, শূকরের কিডনি তাঁকে নতুন করে প্রাণশক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আবার বেঁচে উঠেছিলাম। দীর্ঘদিন পর মনে হয়েছিল আমি সত্যিই জীবিত।’

কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তিনি আবার রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, এমনকি কুকুর কাপকেককে নিয়ে হাঁটতে বের হওয়াও শুরু করেছিলেন। গত জুনে তিনি ফেনওয়ে পার্কে প্রিয় বোস্টন রেড সক্স দলের খেলা দেখা শুরু করার আগে প্রথম বল ছোড়ার সম্মান পান।

শরীরে শূকরের কিডনির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অ্যান্ড্রুজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই যাত্রা ছিল কষ্টে ভরা, অজানা সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।’ তবে তিনি গর্বের সঙ্গে যোগ করেন, ‘এই ৯ মাসে আমরা অনেক কিছু শিখেছি ও আবিষ্কার করেছি।’ তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সেই শূকরটির প্রতিও, যার নাম ছিল ‘উইলমা’। তিনি লিখেছেন—‘সে (উইলমা) আমার নায়িকা, আমার জীবনের অংশ হয়ে থাকবে চিরকাল।’

বর্তমানে অ্যান্ড্রুজ আবার ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এবং মানব কিডনির অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত