Ajker Patrika

ফেডারেল লেনদেন ব্যবস্থায় মাস্কের নিয়ন্ত্রণে আদালতের বাধা

অনলাইন ডেস্ক
ইলন মাস্ক। ছবি: এএফপি
ইলন মাস্ক। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের নেতৃত্বে সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই)। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে গঠিত এই বিভাগকে এই ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া থেকে বাধা দিয়েছে এক ফেডারেল আদালত।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার ভোরে সাময়িকভাবে ইলন মাস্কের সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগকে ট্রিলিয়ন ডলারের লেনদেন প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত সরকারি সিস্টেমে প্রবেশের অনুমতি স্থগিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে সংবেদনশীল তথ্য অবৈধভাবে প্রকাশিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ম্যানহাটনের মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল বিচারক পল এঙ্গেলমায়ার এই আদেশ দেন। এর আগে, শুক্রবার রাতে ১৯টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেলের একটি জোট মামলা করে দাবি করে যে, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডিওইজি) কাছে মার্কিন অর্থ বিভাগের (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট) সিস্টেমে প্রবেশের কোনো আইনগত অধিকার নেই।

এই রায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অন্যান্য রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে এটিকে ‘সম্পূর্ণ পাগলামি!’ বলে অভিহিত করেন।

মাস্ক বলেন, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও ডিওজিই সম্মত হয়েছে যে, সরকারি অর্থ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রতিটি লেনদেনে একটি ব্যাখ্যামূলক মন্তব্য এবং শ্রেণিবিন্যাস কোড যুক্ত থাকতে হবে। মাস্ক আরও জানান, ‘ডু-নট-পে’ তালিকায় থাকা সংস্থাগুলোর তথ্য সপ্তাহে অন্তত একবার, সম্ভব হলে প্রতিদিন হালনাগাদ করা উচিত। তাঁর দাবি, এসব পরিবর্তন ‘স্পষ্ট ও প্রয়োজনীয়’, যা সরকারি কর্মচারীরাই বাস্তবায়ন করছেন, ডিওজিই-এর কেউ নন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মাস্ক ও তাঁর দল স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রি-স্কুল, জলবায়ু উদ্যোগ এবং অন্যান্য কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ তহবিলে বিঘ্ন ঘটাতে পারেন। এ ছাড়া, ট্রাম্প এই তথ্য তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারেন। ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেলদের মতে, ডিওজিই-এর সরকারি সিস্টেমে প্রবেশাধিকার ‘বিশাল সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে’, যা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও তাদের নাগরিকদের জন্য বিপুল অর্থায়নকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাঁরা একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন, যাতে ডিওজিই-এর প্রবেশ বন্ধ করা যায়।

সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে মনোনীত বিচারক এঙ্গেলমায়ার বলেন, মামলার ভিত্তি ‘বিশেষভাবে শক্তিশালী’ এবং জরুরি ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজন ছিল। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘এই নতুন নীতির কারণে সংবেদনশীল ও গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি সংশ্লিষ্ট সিস্টেমগুলো আগের তুলনায় আরও বেশি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিয়া জেমস এই মামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ এবং ডিওইজি টিমের সীমাহীন তথ্য প্রবেশে আমেরিকানরা আতঙ্কিত ছিলেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা জানতাম, ট্রাম্প প্রশাসনের এই প্রবেশাধিকারের অনুমতি দেওয়া অবৈধ। আজ সকালে ফেডারেল আদালতও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।’

লেটিয়া জেমস আরও বলেন, ‘এখন আমেরিকানরা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি মাস্ক ও তাঁর সহযোগীরা আমাদের মামলার বিচার চলাকালে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর অবাধ নিয়ন্ত্রণ পাবেন না।’

বিচারকের আদেশ অনুযায়ী, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অর্থ প্রদান ও ডাটা সিস্টেমে রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত কর্মকর্তা, বিশেষ সরকারি কর্মচারী এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে ট্রেজারিতে যোগ দেওয়া কর্মচারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া, যারা এই আদেশের আওতায় পড়বেন, তাদের এই সিস্টেম থেকে কপি করা বা ডাউনলোড করা সব তথ্য অবিলম্বে মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প মাস্ককে ডিওজিইর নেতৃত্বে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যাতে তিনি সরকারি ব্যয় ও দুর্নীতি চিহ্নিত করতে পারেন। তবে ডেমোক্র্যাট ও বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি গ্রুপ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, মাস্ক তাঁর ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করছেন। তারা বলছেন, তিনি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাগুলো বন্ধ করতে চাইছেন এবং ব্যাপক হারে ফেডারেল কর্মীদের বরখাস্ত করার পরিকল্পনা করছেন।

তবে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, মাস্ক ট্রেজারির অর্থ প্রদান সিস্টেম স্পর্শ করবেন না এবং অর্থ প্রদান বন্ধের সিদ্ধান্ত অন্য সংস্থাগুলোই নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত