Ajker Patrika

মাস্কই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট! কী বলছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্ক। ছবি: ফিনএক্সের সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্ক। ছবি: ফিনএক্সের সৌজন্যে

বেশ কয়েক দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা দাবি করছেন যে, দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ইলন মাস্কের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে টেসলা-স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে অস্বাভাবিকভাবে বড় প্রভাব বিস্তার করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। এই সমালোচনার বিষয়ে প্রথমবারের মতো সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ট্রাম্প মাস্কের প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘না, তিনি প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব নিচ্ছেন না।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তিনি প্রেসিডেন্সি ইলন মাস্কের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন—এই ধারণাটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ছড়ানো আরেকটি প্রতারণা।’ পরে ট্রাম্প রসিকতা করে উল্লেখ করেন যে, মাস্কের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ঝুঁকি নেই। কারণ, তিনি সাংবিধানিকভাবে এই পদে থাকতে পারবেন না। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, কেন তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না? কারণ, তিনি এই দেশে জন্মগ্রহণ করেননি।’

দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করা ইলন মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সমর্থকদের একজন হয়ে ওঠেন। তিনি জুলাই মাসে এক হত্যাচেষ্টার পর ট্রাম্পকে সমর্থন করেন এবং ট্রাম্পকে সমর্থনকারী একটি পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটিকে আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্প তাঁকে প্রস্তাবিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত করেন। সরকারের এই বিভাগের কাজ হবে ফেডারেল সরকারের ব্যয় কাটছাঁট করা।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে, বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হয়েছেন টেসলা-স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। তাঁর প্রভাব ডেমোক্র্যাটদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যার ফলে তারা ক্রমবর্ধমান হতাশা নিয়ে তাঁকে ব্যঙ্গ করে ‘প্রেসিডেন্ট মাস্ক’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন।

ইলন মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাবের উত্থান শুরু হয় মূলত তাঁকে যখন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নবগঠিত সরকারি কার্যকারিতা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এই পদক্ষেপ ইলন মাস্কের বিশাল ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা সদ্ব্যবহারের একটি উপায় হিসেবে দেখছেন অনেকে। তবে এটি কিছুটা অবাক করার মতোও ছিল। দুটি বড় কোম্পানির সিইও হিসেবে—যা মূলত সরকারি চুক্তির ওপর নির্ভরশীল—সরকারের নীতি নির্ধারক হিসেবে মাস্কের অবস্থানকে অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন।

সম্প্রতি একটি বাইপার্টিসান বা দ্বিদলীয় বাজেট চুক্তির বিরোধিতা করেন মাস্ক। অনেকে মনে করেন, এটি ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তিনি। মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ওই বিলটিকে ‘অপরাধমূলক’ বলে মন্তব্য করেন এবং রিপাবলিকানদের এই বিলটি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান। সরকারি ব্যাপারে এমন প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ তাঁকে আরও ক্ষমতাশালী হিসেবে ভাবতে বাধ্য করছে অনেককেই।

বিশেষত ডেমোক্র্যাটরা মাস্কের ক্রমেই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য জিম ম্যাকগভার্ন মজার ছলে বলেছেন, ‘অন্তত আমরা জানি যে, কে দায়িত্বে আছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট এবং ট্রাম্প এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট।’ একইভাবে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রবার্ট গারসিয়া এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘ইলন মাস্কের প্রেসিডেন্সিতে স্বাগতম।’

এই ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যগুলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে একটি বাড়তে থাকা এই ধারণাকেই তুলে ধরে যে, তারা মনে করছেন—ইলন মাস্কের প্রভাব প্রচলিত ক্ষমতার ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মাস্কের প্রভাব শুধু কথায় নয়, বরং কাজেও। রিপাবলিকান নীতির ওপর, বিশেষ করে ব্যয় কাটছাঁট এবং বাজেট বিষয়ে তাঁর সরাসরি প্রভাব অনেককেই অস্বস্তিতে ফেলেছে।

হাউস ডেমোক্রেটিক হুইপ ক্যাথরিন ক্লার্ক এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার আবারও আমরা বিশৃঙ্খলায় আছি...কিন্তু কেন? কারণ ইলন মাস্ক, এক অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তি, বললেন, “আমরা এই চুক্তি করব না” এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটা অনুসরণ করলেন।’

এদিকে, কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এমন ধারণাও পোষণ করেছেন যে, ইলন মাস্ক রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে তিনি হাউস স্পিকার হিসেবে অথবা অন্য কোনো প্রভাবশালী পদে। প্রতিনিধি ড্যান বিশপ এক্সে লেখেন, ‘পাঁচ বছর ধরে কংগ্রেসে আছি, আমি একটি মৌলিক পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এটি এসে গেছে।’

ইলন মাস্কের বাড়ন্ত প্রভাবের কারণে তাঁকে নিয়ে বেশ ব্যঙ্গচিত্রও তৈরি হয়েছে, যেখানে তাঁকে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি মার্ক পোকান এআই দিয়ে তৈরি করা একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে ইলন মাস্ককে হোয়াইট হাউসের প্রধান চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি টুইটে লেখেন, ‘আমরা সদ্য ভবিষ্যৎ থেকে ফিরে এসেছি এবং সেখানে ইলন মাস্কের শপথগ্রহণের ছবি পেলাম।’

ইলন মাস্কের রিপাবলিকান পার্টির ওপর প্রভাব নিয়ে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন তৈরি করেছে। যদিও অনেক রিপাবলিকান, যেমন ক্রিস প্যাক স্বীকার করেছেন, ইলন মাস্ক একটি শক্তিশালী চরিত্র। তবে কিছু রিপাবলিকান নেতা তাঁর হস্তক্ষেপ নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন। প্রতিনিধি গ্লেন থম্পসন এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি দেখলাম না যে, মাস্কের ভোটার কার্ড আছে। আমি নিশ্চিত নই যে, তিনি এখনকার সাধারণ মানুষের অবস্থা বুঝতে পারছেন কি না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে মাস্কের ব্যাপক অনুদান এবং ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে তাঁর উপস্থিতি সরকার ও মার্কিন ধনকুবেরদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিলিয়নিয়ারদের আমাদের সরকার পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত নয়।’

এই অবস্থায় অনেকেই প্রশ্ন করছে, ভবিষ্যতে আমেরিকার রাজনীতিতে ইলন মাস্কের ভূমিকা কী হবে? তিনি কি ব্যয় কাটছাঁটের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকবেন এবং রিপাবলিকান নীতিতে প্রভাব ফেলবেন? ইলন মাস্ক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক আরও গভীর হবে? এবং ডেমোক্র্যাটরা এই বাড়ন্ত ক্ষমতার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন তাই এখন বড় প্রশ্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসেছে আফগানিস্তান-পাকিস্তান, এর মধ্যেই নতুন সংঘর্ষে নিহত ৩০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সীমান্তের ওপার থেকে আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি
সীমান্তের ওপার থেকে আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি

ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই দুই দেশের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষের খবর এসেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি, গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার আফগান সীমান্ত পেরিয়ে আসা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচ সেনা ও ২৫ সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার (আইএসপিআর) বিবৃতির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা খুররম ও উত্তর ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। পাহাড়ি ও দুর্গম এই দুই জেলায় সংঘর্ষটি ঘটে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সীমান্ত অতিক্রমের এই চেষ্টা প্রমাণ করে যে আফগান সরকারের সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রকৃত অবস্থান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ সংঘর্ষের পর আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে জানতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এদিকে, এ সংঘর্ষের সময়ই দুই দেশের প্রতিনিধিদল ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসেছে, যাতে সীমান্তে উত্তেজনা কমানো যায়। চলতি মাসের শুরুর দিকে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়, তা ছিল ২০২১ সালে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনা। পাকিস্তানের দাবি, তালেবান সরকার সীমান্তে সন্ত্রাসীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযোগ ঘিরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও পাকিস্তান আফগানিস্তানে বিমান হামলা করে। পরে দোহায় এক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

তবে তালেবান সরকার বরাবরই পাকিস্তানের এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। বরং তারা অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানি সামরিক অভিযানে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হয়েছে।

গতকাল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি টিকে আছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন, আফগানিস্তানও শান্তি চায়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ইস্তাম্বুলে কোনো সমঝোতা না হলে যুদ্ধ অনিবার্য।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত শুক্রবার ও গতকাল যাঁরা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা ‘ফিতনা আল খারিজ’ নামের এক সংগঠনের সদস্য। সেনাবাহিনী বলেছে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এবং উগ্রবাদী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির সাক্ষাৎকার

আবারও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চান কমলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কমলা হ্যারিস। ছবি: বিবিসি
বিবিসির সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কমলা হ্যারিস। ছবি: বিবিসি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জানিয়েছেন, তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেন—ভবিষ্যতে একদিন তিনি নিজেই হয়তো হোয়াইট হাউসে বসবেন এবং কোনো এক সময় যে একজন নারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন, সেই বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজয়ের পর কমলা হ্যারিস এবারই প্রথম প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিলেন, ২০২৮ সালে তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এমনকি বিভিন্ন জরিপে ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁকে অনেক পিছিয়ে দেখানো হলেও তিনি তা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

হ্যারিস বলেন, ‘যদি আমি জরিপের ফল শুনতাম, তবে জীবনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতাম না। আমি এখনো শেষ হইনি—সারা জীবন জনসেবায় কাটিয়েছি, সেটাই আমার রক্তে মিশে আছে।’

সাক্ষাৎকারে হ্যারিস তাঁর সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ‘একজন স্বৈরাচারী’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প সম্পর্কে যেসব সতর্কবার্তা তিনি দিয়েছিলেন, তা এখন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। কমলা বলেন, ‘আমি বলেছিলাম তিনি (ট্রাম্প) বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন—এবং সেটাই তিনি এখন করছেন।’

উদাহরণ হিসেবে কমলা কৌতুক অভিনেতা জিমি কিমেলকে ট্রাম্প-নিযুক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপের মুখে টেলিভিশন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। হ্যারিসের ভাষায়, ‘ট্রাম্পের চামড়া এতটাই পাতলা যে একটি রসিকতাও সহ্য করতে পারেন না।’

মার্কিন ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই ট্রাম্পের ক্ষমতার সামনে নতি স্বীকার করেছে উল্লেখ করে কমলা বলেন, ‘অনেকে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চায়, কোনো তদন্ত এড়াতে চায়, কিংবা নিজের স্বার্থে কিছু অনুমোদন করাতে চায়।’

হোয়াইট হাউস অবশ্য কমলা হ্যারিসের এসব মন্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেছেন, ‘কমলা হ্যারিস যখন বিপুল ব্যবধানে নির্বাচনে হেরে যান, তখনই আমেরিকান জনগণ তার প্রতি মত জানিয়ে দিয়েছে।’

সম্প্রতি কমলা প্রকাশ করেছেন তার নির্বাচনী স্মৃতিকথা ‘১০৭ ডেজ’। তিনি বাইডেনের পদত্যাগের পর মাত্র ১০৭ দিন সময় পান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য। সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন—যদি বাইডেন আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে কি এখন ট্রাম্পের বদলে আপনিই প্রেসিডেন্ট হতেন? জবাবে কমলা বলেছেন, ‘ওটা এক অনিশ্চিত প্রশ্ন—যা আমেরিকার ভাগ্য বদলাতে পারত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফেসিয়াল রিকগনিশনে বিদেশিদের ওপর নজরদারি করবে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিদেশি নাগরিকদের আগমন ও প্রস্থান নজরদারিতে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, সব বিদেশি নাগরিককে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলসীমান্তে মুখের ছবি তুলতে বাধ্য করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর লক্ষ্য ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পর থেকে যাওয়া ও পাসপোর্ট জালিয়াতি রোধ করা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই বিধান কার্যকর হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন সীমান্ত কর্তৃপক্ষ চাইলে বিদেশিদের কাছ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্যও সংগ্রহ করতে পারবে।

নতুন নীতিতে আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে ১৪ বছরের নিচে শিশু ও ৭৯ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্কদেরও ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা যাবে। এত দিন এই দুই শ্রেণির মানুষ এ ব্যবস্থার বাইরে ছিল।

এই উদ্যোগকে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন এবার ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পর থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের শনাক্তকরণেও গুরুত্ব দিচ্ছে।

তবে বিমানবন্দরগুলোতে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির বাড়তি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই প্রযুক্তির ভুল শনাক্তকরণ হার এখনো বেশি এবং এটি কৃষ্ণাঙ্গ বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বৈষম্যপূর্ণ ফলাফল দিতে পারে।

২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে মার্কিন নাগরিক অধিকার কমিশন (US Commission on Civil Rights) জানিয়েছিল, পরীক্ষায় দেখা গেছে, ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ভুল শনাক্তের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।

২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস অনুমান করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীর মধ্যে ৪২ শতাংশেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

এমনকি ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস একটি স্বয়ংক্রিয় ‘এন্ট্রি-এক্সিট সিস্টেম’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু তা কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বর্তমানে মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) সংস্থা সব বাণিজ্যিক ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের জন্য ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে বাইর হওয়ার ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা এখনো কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে সীমিত।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সব বাণিজ্যিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বায়োমেট্রিক এন্ট্রি-এক্সিট সিস্টেম চালু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিল শিকারে সীমা আরোপের দাবি তোলা ইউক্রেনীয় জীববিজ্ঞানীকে আটক করল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভ। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভ। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার জের ধরে শুরু হয়েছে তীব্র কূটনৈতিক বিরোধ। ইউক্রেন দাবি করেছে, অ্যান্টার্কটিকায় ক্রিল মাছ ধরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণেই পশেনিচনভকে ‘মিথ্যা’ অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লিওনিদ পশেনিচনভ অ্যান্টার্কটিকা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক জীববিজ্ঞানী। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি ‘অ্যান্টার্কটিক সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিশন’-এর গবেষণায় যুক্ত আছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি ইউক্রেনের প্রতিনিধি হিসেবে ওই কমিশনের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পশেনিচনভ। ওই সম্মেলনে অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ক্রিল মাছ ধরার সীমা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। ঠিক এমন সময়ই রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছে।

রুশ কর্তৃপক্ষের এক নথিতে দাবি করা হয়েছে, পশেনিচনভ ‘রাশিয়ার নাগরিক’ হিসেবে ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন এবং শত্রুপক্ষের সহায়তা করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি তাঁর গবেষণাকে ব্যবহার করেছেন রাশিয়ার অ্যান্টার্কটিক ক্রিল ধরার কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে। ইউক্রেনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্রিল আহরণে সীমা আরোপের আহ্বান জানানোয় রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্বার্থ নষ্ট হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অ্যান্টার্কটিকার উপদ্বীপ ঘিরে একটি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা গঠনের প্রস্তাব নিয়েই মূলত এই বিতর্ক। বহু বছর ধরে রাশিয়া ও চীন এমন সংরক্ষিত এলাকা গঠনের বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে ক্রিল আহরণের পরিমাণ টেকসই সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

পশেনিচনভের আটক নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আর যুক্তরাজ্য আহ্বান করেছে, রাশিয়া যেন ইচ্ছাকৃতভাবে আটক সব বেসামরিক নাগরিককে মুক্তি দেয়। পশেনিচনভ সম্পর্কে ইউক্রেনের অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ভাসিল মিরোশনিচেঙ্কো বলেছেন, ‘তিনি একজন বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ নন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ৭০ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানী শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ইভজেনি পাখোমভ বলেছেন, ‘তিনি (পশেনিচনভ) অতি সদালাপী ও সহৃদয় মানুষ। তাঁর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

ব্লু মেরিন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যান ক্রকেট মন্তব্য করেছেন, ‘পশেনিচনভকে কারাবন্দী করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তিনি ক্রিল আহরণের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করেন। এখন এই বৃদ্ধ বিজ্ঞানীর জীবনও সেই আইনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত