Ajker Patrika

বেশির ভাগ শুল্ক অবৈধ, বলল মার্কিন আদালত, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংসের রায়’— বললেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১০: ০১
আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া ট্রাম্পের জন্য কোনো ব্যাপারই না। ছবি: সংগৃহীত
আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া ট্রাম্পের জন্য কোনো ব্যাপারই না। ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা বেশির ভাগ শুল্ককে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত। এই রায় ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার রায় ঘোষণার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের ১১ জন বিচারক। তাদের মধ্যে ৭ জন ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছেন। রায়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট–আইইইপিএ) অনুযায়ী ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ বৈধ নয়। আদালত বলেছে, এই আইন অনুযায়ী শুল্ক আরোপ করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই। শুল্ক আরোপ করা কংগ্রেসের ‘মূল সাংবিধানিক ক্ষমতার’ মধ্যে পড়ে।

আগামী ১৪ অক্টোবরের পর এই রায় কার্যকর হবে। এর মধ্যে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।

এই রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘এই রায় যদি বহাল থাকে, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে। আজ একটি অতিরিক্ত পক্ষপাতদুষ্ট আদালত ভুলভাবে বলেছে যে, আমাদের শুল্ক তুলে নিতে হবে। তবে তারা জানে, শেষ পর্যন্ত আমেরিকাই জিতবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এই শুল্ক যদি তুলে নেওয়া হয়, তাহলে দেশটি সম্পূর্ণভাবে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আমাদের শক্তিশালী থাকতে হবে।

ট্রাম্পের দাবি ছিল, বাণিজ্যগত অসমতা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এ জন্য তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আইইইপিএ আইনের অধীনে বিশ্বব্যাপী প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তিক শুল্ক এবং ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপ করেন। একই সঙ্গে মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের ওপরও আলাদা শুল্ক আরোপ করেন তিনি, যেগুলো মাদকদ্রব্য আমদানি ঠেকাতে জরুরি বলে দাবি করেন।

মূলত ট্রাম্প শুল্ক আরোপের জন্য ‘আইইইপিএ’ নামক ১৯৭৭ সালের একটি আইন ব্যবহার করেন। আইনটি জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় ‘অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমী’ হুমকি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্টকে কিছু ক্ষমতা দেয়।

তবে আদালত বলছে, ‘এই আইনে স্পষ্টভাবে শুল্ক, কর বা আমদানি শুল্ক আরোপের কথা বলা নেই। এমনকি কংগ্রেসের অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করেও বোঝা যায় না—তারা প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের অসীম ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। আইনটির মূল লক্ষ্য ছিল—শত্রু দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা, তাদের সম্পদ জব্দ করা।’

১২৭ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত লিখেছে, ‘আইনে স্পষ্টভাবে শুল্ক আরোপের বিধান না থাকলে, প্রেসিডেন্টের নিজস্ব সিদ্ধান্তে এমন পদক্ষেপ নেওয়া আইনবিরোধী। বিচারপতিদের মতে, আইনটি যখন পাস হয়, তখন কংগ্রেস প্রেসিডেন্টকে এমন ক্ষমতা দিতে চায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্যগুলোর একটি জোটের দায়ের করা দুটি মামলা থেকে মূলত এই মামলা এসেছে। গত এপ্রিলে যখন ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তিক শুল্ক আর ‘রিসিপ্রোকাল’ বা পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেন, তখন মামলাগুলো করা হয়। ওই দিনকে ট্রাম্প ঘোষণা করেন ‘আমেরিকার মুক্তির দিন’ হিসেবে।

চলতি বছরের মে মাসে নিউইয়র্কভিত্তিক কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ট্রাম্পের শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। তবে আপিল চলাকালে সেই রায় স্থগিত ছিল।

তবে আদালতের এই রায় ট্রাম্পের সব শুল্কের ওপর প্রযোজ্য নয়। যেমন: ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যেসব শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, সেগুলো আলাদা প্রেসিডেনশিয়াল কর্তৃত্বে আরোপ করা হয়েছিল এবং এই মামলার আওতায় পড়ে না।

রায়ের আগে হোয়াইট হাউসের আইনজীবীরা আদালতকে সতর্ক করে বলেন, প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা হঠাৎ করে বাতিল করলে ১৯২৯ সালের মত একটি আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। একটি চিঠিতে তারা বলেন, ‘আইইইপিএ আইনের অধীনে প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা বাতিল করা হলে, তা জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।’

আদালতের এই রায় এখন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার দিকেই এগোচ্ছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টদের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্তের চেষ্টা করলে তা বাতিল করছে। উদাহরণস্বরূপ, বাইডেনের আমলে ছাত্র ঋণ মাফ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কিছু সিদ্ধান্তও তারা বাতিল করেছে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় ট্রাম্পের পক্ষেই যাবে বলে আশাবাদী ট্রাম্প শিবির। কারণ সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন বিচারকের মধ্যে ৬ জনই রিপাবলিকান নিযুক্ত, যার মধ্যে ৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের কয়েন জব্দ

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত