Ajker Patrika

বিশ্ববাসীর সমর্থন হারাতে পারে ইসরায়েল, সতর্ক করলেন ওবামা

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০: ১৮
বিশ্ববাসীর সমর্থন হারাতে পারে ইসরায়েল, সতর্ক করলেন ওবামা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলা নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চলমান এ সংঘাত নিয়ে গতকাল সোমবার তিনি ব্লগ সাইট মিডিয়ামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

নিবন্ধে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ওবামা। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা উপেক্ষা করার বিষয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন।

লেখাটি অবশ্য গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের নেওয়া অবস্থানের বাইরে তেমন ভিন্ন কিছু নয়। তবে এতে কিছু স্বাতন্ত্র্য দেখা গেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলার কৌশল ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্টো বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে ওবামা সতর্ক করেছেন।

বারাক ওবামা লিখেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে সমর্থন করলেও হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল এই লড়াই কীভাবে করবে—সে ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এই সংঘাতকে চলতে দেওয়ার মানে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে উপেক্ষা করা। গাজা হোক বা পশ্চিম তীর—সেটি অন্যায্য।’ 

তাঁর ভাষায়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের পেছনের মূল কারণও তুলে ধরেছেন ওবামা। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের অব্যাহতভাবে বাস্তুচ্যুত করা।

এ বিষয়ে বারাক ওবামা বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিরোধপূর্ণ এক ভূখণ্ডে বসবাস করে আসছে। ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের সময় তাঁদের অনেকে কেবল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতই হননি, দিনের পর দিন তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে ইসরায়েল সরকারের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল।

ওবামার মতে, দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ফিলিস্তিনি নেতাদের প্রচেষ্টাতেও কমতি লক্ষ করা গেছে। এত কিছুর পরেও পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েল সরকারের নির্দিষ্ট কিছু নীতির বিরোধিতা করে ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

ইসরায়েল ২০১৪ সালে যখন অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযান চালায়, তখন ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ওই সময় তিনি একইভাবে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। অবশ্য একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই সময় ওবামার অবস্থানকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র পেতে ইসরায়েল নানা কৌশল অবলম্বন করলে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়।

৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর প্রতিশোধ নিতে গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি সেখানে বসবাসরত ২২ লাখের বেশি মানুষের বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে বিবৃতি দিয়েছে।

ওবামা বলেন, এমন কর্মকাণ্ড ইসরায়েলের প্রতি ফিলিস্তিনিদের ক্ষুব্ধ মনোভাব পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম ধরে আরও তীব্র করবে। একই সঙ্গে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল বিশ্ববাসীর সমর্থনও হারাবে বলে সতর্ক করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ওবামা বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহের দিকে বিশ্ব নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। মানবিক ক্ষয়ক্ষতি উপেক্ষা করা হয়—এমন যেকোনো ইসরায়েলি সামরিক কৌশল শেষ পর্যন্ত হিতে বিপরীত হতে পারে।’

নাইন-ইলেভেন হামলার প্রসঙ্গ টেনে ওয়াশিংটনের মতো একই ধরনের ভুল না করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

মূলত নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পরই মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত কোনো বিজয় ছাড়াই ঘরে ফিরতে হয়েছে মার্কিন সেনাদের।

ওবামা বলেন, ‘যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সময় আমেরিকা নিজেও মাঝেমধ্যে আমাদের সমুন্নত মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। নাইন-ইলেভেনের পর আল-কায়েদার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নেওয়া পদক্ষেপের সময় যুক্তরাষ্ট্র এমনকি আমাদের মিত্রদের উপদেশও কানে তুলতে আগ্রহী ছিল না।’

সব শেষে, বহু মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগের ভেতর রয়েছে এবং মানুষের ক্ষোভের মাত্রা বোধগম্যভাবে ক্রমেই বাড়ছে—এমন একটি অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সবাইকে সেরা মূল্যবোধ প্রদর্শনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

এর অর্থ হলো, সক্রিয়ভাবে ইহুদি-বিদ্বেষের সমস্ত রূপের বিরুদ্ধে সর্বত্র বিরোধিতা করা। এর অর্থ হলো, ইসরায়েলি জনগণ যে ভয়ানক ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে গেছে, তা প্রশমন করার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান, সেই সঙ্গে নৈতিকভাবে দেউলিয়া অবস্থান নেওয়া—যেকোনো কারণ নিরপরাধ মানুষদের ইচ্ছাকৃত হত্যার ন্যায্যতা দিতে পারে—এমন অবস্থানের বিরোধিতা করা।

এর অর্থ হলো, মুসলিমবিদ্বেষী, আরববিদ্বেষী বা ফিলিস্তিনবিদ্বেষী মনোভাব প্রত্যাখ্যান করা। এর অর্থ হলো, হামাস বা অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সমস্ত ফিলিস্তিনিকে গুলিয়ে না ফেলা। এর অর্থ, গাজার জনগণের প্রতি অমানবিক ভাষা ব্যবহারকে প্রতিহত করা, গাজা বা পশ্চিম তীরে  ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগকে অপ্রাসঙ্গিক বা অযৌক্তিক বলে ছোট না করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক শক্তিচালিত অপ্রতিরোধ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৫৩
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

পারমাণবিক শক্তিচালিত অনির্দিষ্ট পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’-এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির দাবি, এটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, খুব শিগগির ক্ষেপণাস্ত্রটি মোতায়েন করা হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক মহড়ায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। এর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে রাশিয়া। আর তা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া কোনোভাবেই নতি স্বীকার করবে না। বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, ঠিক সে সময় মস্কোর এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ পুতিনকে জানান, গত মঙ্গলবার পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার ৭০০ মাইল) উড়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা আকাশে ছিল। তিনি বলেন, এটি পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এবং এর উড্ডয়নের দূরত্ব কার্যত সীমাহীন।

রাশিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী, ৯ এম-৭৩০ বুরেভেস্তনিক (ন্যাটো নাম এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল) হলো এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যাকে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই আটকাতে পারবে না।

আজ রোববার সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন পুতিন। এ সময় পুতিন বলেন, এটি এক অনন্য অস্ত্র, যা আর কোনো দেশের কাছে নেই।

পুতিন ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দেন। তিনি একে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রতিরোধ হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ, ওয়াশিংটন ২০০১ সালে একতরফাভাবে ১৯৭২ সালের অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় এবং পরে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ শুরু করে।

পুতিন বলেন, রুশ বিশেষজ্ঞরা একসময় বলেছিলেন, এই অস্ত্র তৈরি সম্ভব নয়। কিন্তু এখন এটার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তিনি গেরাসিমভকে দ্রুত অস্ত্রটির শ্রেণিবিন্যাস ও মোতায়েনের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন।

পুতিনের এ ঘোষণার সময় ও প্রেক্ষাপটও তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে সামরিক পোশাক পরে এ ঘোষণা দিয়ে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সরাসরি বার্তা দিয়েছেন—বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশে। তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সম্প্রতি ট্রাম্প রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, মস্কো ইউক্রেনকে হারাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু পুতিনের আজকের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া এখনো বৈশ্বিক পারমাণবিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সঙ্গে আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, মস্কোর সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন করে আলোচনায় বসা উচিত।

রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ গেরাসিমভ জানান, বুরেভেস্তনিকের এ পরীক্ষা বিশেষ ছিল। কারণ, এটি পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমেই এত দীর্ঘ সময় আকাশে ছিল। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র যেকোনো অ্যান্টি মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘরে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনা নারীদের ‘এআই প্র্যাঙ্ক’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ০৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনের নারীরা তাঁদের পুরুষ সঙ্গীদের ভালোবাসা পরীক্ষা করতে এক নতুন ট্রেন্ড ‘এআই গৃহহীন ব্যক্তি প্র্যাঙ্ক’ ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্র্যাঙ্ক ভাইরাল হওয়ার পর তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ট্রেন্ডে অংশ নিতে ব্যবহারকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও তৈরি করেন। এসব ছবি বা ভিডিওতে অপরিচ্ছন্ন বেশভূষার এক গৃহহীন ব্যক্তিকে ব্যবহারকারীর বাড়ি বা কর্মস্থলে অবস্থান করতে দেখা যায়।

এরপর সেই ছবি বা ভিডিও ওই নারীরা তাঁদের স্বামী বা প্রেমিককে পাঠান। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সঙ্গীদের অনুভূতি ও দায়বদ্ধতা পরখ করে দেখেন।

এ ধরনের ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুগলের জেমিনি বা মাইএডিটের ‘এআই রিপ্লেস’-এর মতো টুল।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক আইনজীবীর পরিবার এমন এক ভাইরাল প্র্যাঙ্কের ঘটনায় পুলিশ ডাকার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছিল।

আরও এক ঘটনায় চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে এক নারী তাঁর স্বামীকে ঘরে একজন ‘গৃহহীন ব্যক্তি ঢুকে পড়েছে’—এআই দিয়ে বানানো এমন ছবি পাঠান। সে সময় তাঁর স্বামী বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাচ্ছিলেন।

ছবি দেখে তিনি সেটিকে সত্যি ভেবে পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তারা বুঝতে পারে, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে ‘জনসাধারণের সম্পদের অপচয়’ বলে মন্তব্য করেন এবং ওই নারীকে ‘ভয় ছড়ানোর অপরাধে’ অভিযুক্ত করেন।

চীনের জননিরাপত্তা প্রশাসন শাস্তি আইন অনুযায়ী, এমন কাজের জন্য সর্বোচ্চ ১০ দিনের আটকাদেশ ও প্রায় ৭০ ডলার জরিমানার বিধান রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক চীনা পুরুষ এ ধরনের প্র্যাঙ্ক বা দুষ্টুমির তীব্র সমালোচনা করেছেন।

একজন লিখেছেন, ‘আপনারা কি সেই রাখাল ছেলের গল্প শোনেননি, যে নেকড়ে এসেছে বলে মিথ্যা চিৎকার দিত? যদি আপনারা বারবার মিথ্যা সতর্কবার্তা দেন, তাহলে সত্যি সত্যি বিপদ হলেও কেউ আপনাদের বিশ্বাস করবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও একজন লিখেছেন, ‘এআই আমাদের জীবনে সুবিধা এনেছে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি আস্থার সংকটও তৈরি করেছে। প্ল্যাটফর্মের উচিত, এআই কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেওয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সর্বোচ্চ গতির ট্রেনের পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন, ঘণ্টায় পাড়ি দিতে সক্ষম ৪৫০ কিমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া

বিশ্বের দ্রুততম উচ্চগতির ট্রেন সিআর-৪৫০ এর প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের রিং রেলওয়েতে এখনো এই ট্রেনটির পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে। ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। তবে ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচলের সময় এর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার।

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনটিকে ট্র্যাকে নামানো হয়। এটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ গতির চলমান সিআর–৪০০ ফুজিং ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। ফুজিং ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে।

china-2
china-2

ট্রেনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি করপোরেশন লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ফেং জানিয়েছেন, সিআর–৪৫০ উচ্চগতির ট্রেন প্রযুক্তিতে এক বিশাল অগ্রগতি এনেছে। তত্ত্ব, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, মানদণ্ড ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এই ট্রেন।

৪০০ কিলোমিটার গতির নজিরবিহীন গতি অর্জনের জন্য প্রকৌশলীরা ট্রেনটির ট্র্যাকশন পাওয়ার (ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা), ডাইনামিক পারফরম্যান্স বা গতিশীল অবস্থায় ট্রেনটিতে যাবতীয় পরিবর্তন পরিমাপ এবং প্যান্টোগ্রাফ সিস্টেম বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ট্রেনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তা উন্নত করেছেন।

ওয়াংয়ের ভাষায়, ট্রেনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াটার-কুলড পারমানেন্ট ম্যাগনেট ট্র্যাকশন সিস্টেম, নতুন প্রজন্মের উচ্চ-স্থিতিশীলতা বগি এবং একাধিক উদ্ভাবনী সিস্টেম। যার ফলে দীর্ঘ সময় উচ্চ গতিতে চলাচলেও এটি স্থিতিশীল থাকে। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সিআর–৪৫০ এক ধাপ এগিয়ে। এতে রয়েছে মাল্টিলেয়ার ইমারজেন্সি ব্রেক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং ৪ হাজারেরও বেশি অনবোর্ড মনিটরিং সেন্সর, যা চলমান অবস্থায় ট্রেনের গিয়ার, পুরো ট্রেন, হাই–ভোল্টেজ প্যান্টোগ্রাফ, ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা—সবকিছুই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া, ওভার-দ্য-হরাইজন শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে এতে। এই ব্যবস্থা ট্রেনের সামনে ট্র্যাকের জরুরি পরিস্থিতি আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

china-3
china-3

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব। বগির ‘স্ট্রিমলাইনড কাওলিং’ ধাঁচের নকশা বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ কমিয়েছে, আর নতুন হালকা উপকরণ ও প্রযুক্তি ট্রেনের মোট ওজন ১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে ট্র্যাকের সঙ্গে চাকার এবং সামগ্রিক ঘর্ষণ প্রতিরোধ ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।

ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও এসেছে অগ্রগতি। সাতটি নতুন প্রযুক্তি—যেমন সাউন্ড-অ্যাবসর্বিং উপকরণ ও উন্নত অ্যারোডাইনামিক নকশা ট্রেনের অভ্যন্তরীণ শব্দ ২ ডেসিবল কমিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও নিঃশব্দ ও আরামদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

তা ছাড়া, সিআর–৪৫০ এ যুক্ত হয়েছে একাধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফিচার, যা ট্রেনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং যাত্রীসেবা—সব দিক থেকেই একে আগের সব মডেলের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে জানান ওয়াং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১০
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহের ভিত্তি করে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট।

মুখপাত্র জানান, এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও ভাটিতে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত