Ajker Patrika

আল-জাজিরার প্রতিবেদন /মতি ঘুরে গেল ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আবারও যাচ্ছে ইউক্রেনে

অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার হামলা যখন নতুন মাত্রা পেয়েছে, তখন আবারও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, কয়েক দিন আগে হোয়াইট হাউস যেসব অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছিল, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র এবং নির্ভুল গাইডেড বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র আবারও কিয়েভে পাঠানো হবে।

ইউক্রেনের সাবেক সৈনিক আন্দ্রেই হেতমান আল-জাজিরাকে জানান, হুট করে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বদল এখন আর তাঁকে অবাক করে না। ২৯ বছর বয়সী এই যোদ্ধা বলেন, এবার তিনি বুঝেছেন, অস্ত্র না দিলে নিজেকে দুর্বল আর পুতিনের পক্ষের মানুষ হিসেবে দেখাবে। তাই নিজের জায়গা ঠিক রাখতে ইউক্রেনকে তাঁর সহায়তা করতেই হবে।

সোমবারের ঘোষণার এক দিন পর অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে কিছু অস্ত্র পাঠাচ্ছি, কারণ তাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’ তিনি জানান, পুতিন মাঝে মাঝে ভদ্র ব্যবহার করলেও বাস্তবে তা ফলপ্রসূ নয়। ট্রাম্প বলেন, পুতিন অনেক কিছু বলেন, কিন্তু বাস্তবতাশূন্য।

রাশিয়া আসলে কী চায়

পুতিন ইউক্রেনের ‘নিরস্ত্রীকরণ’ ও তথাকথিত ‘নাৎসিবিরোধী শুদ্ধিকরণ’ দাবি করছেন। সেই সঙ্গে তিনি চাইছেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক এবং বিদেশি ব্যাংকে আটক থাকা রাশিয়ার সম্পদ ফিরিয়ে দিক। তবে ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছেন।

ইউক্রেনের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সহায়তা

ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অস্ত্র হলো বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র। জুন মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে রেকর্ড ৫ হাজার ৪৩৮টি ড্রোন হামলা চালায়, যার এক-চতুর্থাংশ ছিল মার্চ মাসের তুলনায় বেশি। এসব ড্রোনের অর্ধেকের বেশি ছিল বিস্ফোরকবাহী, অন্যগুলো ছিল নজরদারি ও প্রতিরক্ষা অবস্থান শনাক্তকারী।

জার্মানির ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির গবেষক নিকোলায় মিত্রোখিন আল-জাজিরাকে বলেন, ২০২২ সালে ইউক্রেনের হাতে সোভিয়েত আমলের অনেক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকলেও ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ তা শেষ হয়ে যায়। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ ছাড়া ইউক্রেনের পেছনের এলাকাগুলো রক্ষা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো ইউএস-নির্মিত হাইমার্স (HIMARS) সিস্টেম, যা রুশ কমান্ড পোস্ট ও অস্ত্রের গুদাম ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইউক্রেনের এই অস্ত্র নেই, কেবল যুক্তরাষ্ট্র দিলেই তারা এই অস্ত্র পায়।

ট্রাম্পের ইউটার্ন

কিয়েভভিত্তিক পেন্টা থিংকট্যাংকের প্রধান ভলোদিমির ফেসেঙ্কো বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলো তাঁর ব্যক্তিগত মুড ও প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা থেকে আসে। তিনি ট্রাম্পের স্বভাবের এই অনিশ্চিত বিষয়টিকে ‘ট্রাম্পীয় হিল’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কখন কোথায় ইউটার্ন নেন, হয়তো নিজেও জানেন না।

ফেসেঙ্কো মনে করেন, রাশিয়া হয়তো ধরে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা করবে না, তাই তারা যুদ্ধ তীব্র করছে। কিন্তু ট্রাম্প যে বার্তা দিতে চাইছেন, তা হলো মস্কোকে চাপে রাখা। এদিকে রিপাবলিকান পার্টির নেতারাও চাপ দিয়েছেন যেন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘নৈতিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত’ না দেখানো হয়।

ফেসেঙ্কো বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্র সরবরাহব্যবস্থা তখনই কার্যকর হতে পারে, যদি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো খরচ বহন করে। অবশ্য এ সপ্তাহেই ইউরোপের কিছু দেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ৩১টি দেশের অংশগ্রহণে রোমে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান ও পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

মস্কোর প্রতিক্রিয়া

তবে ট্রাম্পের ‘ইউটার্ন’ মস্কোকে অবাক করেনি। ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিবাদে পদত্যাগকারী সাবেক কূটনীতিক বরিস বন্ডারেভ বলেন, ট্রাম্পকে রাশিয়া কখনো সিরিয়াস রাজনীতিক হিসেবে দেখেনি। তিনি নিজের সঙ্গেই বিরোধে লিপ্ত। তাই তারা ট্রাম্পকে বিরক্ত না করে কৌশলগত অগ্রগতি চালিয়ে যেতে চায়।

এদিকে রুশ বাহিনী পুনরায় উত্তরের সুমি অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বে নতুন এলাকা দখলে নিয়েছে। তবে তারা এখনো পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে পারেনি।

রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ইউক্রেনে ট্রাম্পের পুনরায় অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও ছোট পদমর্যাদার রাজনীতিকেরা পশ্চিমা দেশের ‘চিরায়ত রুশবিরোধী মনোভাব’কে দায়ী করছেন। ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপলে রুশ দখলকৃত অঞ্চলের রাজনীতিক দিমিত্রি বেলিক বলেন, এটা প্রাচীন একটা কৌশল। গত হাজার বছরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন কিছুই খুঁজে পায়নি। তাই তারা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে লড়ে। ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টিও তাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত