Ajker Patrika

আফগানিস্তানে বিয়ের নাটক করে ৪০০ জনকে বাঁচিয়েছিলেন এক সেনা

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালের গ্রীষ্মে ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আফগানিস্তান থেকে ফিরে যায় মার্কিন সৈন্যরা। এ অবস্থায় রাজধানী কাবুল দখল করে পুরো দেশে দ্বিতীয়বারের মতো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালেবান বাহিনী।

যুদ্ধ শেষ হলেও অনেক মার্কিন সেনা এখনো আফগানিস্তানে তাঁদের সহযোগীদের রেখে আসার অপরাধবোধ এড়াতে পারেননি। এমনই একজন হলেন জেসন ক্যান্ডার।

আফগানিস্তান ছেড়ে আসার স্মৃতি মনে করে সম্প্রতি সিবিএস নিউজকে জেসন বলেছেন, ‘এটি একটি পরাজয়ের মতো অনুভূত হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে এটি ছিল একজন বন্ধুকে ফেলে আসার মতো—যাকে আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আপনি এমনটি করবেন না।’

আফগানিস্তানে জেসন ছিলেন একজন সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য। আফগানিস্তান ছেড়ে আমেরিকায় পৌঁছানোর পর একদিন তিনি তাঁর আফগান সহযোগী দোভাষী সালাম রাউফির মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, সালামের চাচাতো ভাই রহিম এবং তাঁর পরিবার তালেবানের মৃত্যুদণ্ডের হুমকির মুখে আছে।

রহিমের কাছে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল যা তালেবানের নজরে এসেছিল। তাই তালেবানেরা রহিমকে চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছিল—‘ইসলামি আমিরাতের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তোমার পরিবারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।’

এ অবস্থায় রহিম এবং তাঁর পরিবারের পালানোর কোনো পথ ছিল না। তাই জেসন ও তাঁর সহযোগীরা তাদের রক্ষা করার জন্য এক অভিনব পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রহিম ১১ ঘণ্টার এক যাত্রার মধ্য দিয়ে উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ শহরে পৌঁছান। তবে এই পথ ছিল বিপজ্জনক। যাত্রার শুরুর দিকেই তাঁদের গাড়ি তালেবানের হাতে আটক হয়েছিল।

সেই মুহূর্তটি সম্পর্কে সিবিএসকে রহিম বলেন, ‘তালেবান বাহিনী আমাদের গাড়ি আটকায়, অস্ত্র তাক করে এবং গাড়ি তল্লাশি করে। বাচ্চারা এ সময় কাঁদতে শুরু করেছিল এবং চিৎকার করছিল। এটাই হয়তো আমাদের বাঁচিয়ে দেয়।’

যুক্তরাষ্ট্রে জেসন ও রহিমের পরিবার একই শহরে থাকে। ছবি: সিবিএস নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রে জেসন ও রহিমের পরিবার একই শহরে থাকে। ছবি: সিবিএস নিউজ

পরে মাজার-ই-শরীফে পৌঁছে তালেবানদের হুমকির মুখে তাঁরা লুকিয়ে থাকেন। কয়েক সপ্তাহ পর জেসন তাঁদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে নির্দেশ দেন।

পরিবার নিয়ে রহিম সেই ঠিকানায় পৌঁছান এবং দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান, ৩৭০-৩৮০ জন মানুষের এক সমাবেশ। সবাই তাঁদের ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তাঁদের মধ্য থেকে কেউ একজন রহিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম।’

বুধবার মেট্রো নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকায় বসেই আফগানিস্তানে একটি ভুয়া বিয়ের আয়োজন করেছিলেন জেসন। তিন দিন ধরে চলেছিল এই বিয়ের আচার অনুষ্ঠান। তবে আয়োজনটি ছিল মূলত তালেবানদের ধোঁকা দেওয়ার একটি কৌশল। নকল এই বিয়েতে অংশ নেওয়া সবাই ছিলেন তালেবান বাহিনীর রোষানলে।

জেসন এবং তাঁর সহযোগীরা পরে ওই বিয়েতে অংশ নেওয়া সবার জন্য আলবেনিয়াগামী একটি বিমানের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিয়ের অতিথিদের সবাই হাতে তৈরি বোর্ডিং পাস দেখিয়ে তালেবানদের নজর এড়িয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তান ছেড়ে এভাবেই আলবেনিয়ায় পালিয়ে আসে প্রায় ৪০০ জনের একটি দল। সেখানে পৌঁছে রহিমের পরিবার সহ পুরো দলটি একটি সমুদ্রতীরবর্তী হোটেলে অবস্থান করেছিল। এটি তাদের কাছে স্বর্গের মতো মনে হয়েছিল। আলবেনিয়ায় এক বছর অপেক্ষার পর অবশেষে তারা আমেরিকায় বসতি স্থাপনের অনুমতি পান।

রহিম এখন মিসৌরির কানসাস শহরের একটি ব্যাংকে কাজ করছেন। একই শহরে জেসনও বসবাস করেন। বর্তমানে যুদ্ধজনিত কারণে জেসন পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগলেও তিনি আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘প্রত্যেক আফগান, যাকে আপনি দেখবেন, বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু বীরত্বপূর্ণ কাজ করেছে। তাঁরা হয়তো আপনার টেবিল পরিষ্কার করছে বা আপনার উবার চালাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা অসম্ভব পরিশ্রমী, সাহসী এবং অসাধারণ মানুষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত