Ajker Patrika

ইউক্রেনের জন্য ইউরোপকে আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কিনতে বাধ্য করতে চান ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনা শিগগির শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে তার আগে দেশটি ইউরোপীয় মিত্রদের ইউক্রেনের জন্য আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কিনতে বাধ্য করতে চায়। এ বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপ কিয়েভের আলোচনার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে বলে ভাবছে ওয়াশিংটন।

যদি এই পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হয়, তবে এটি ইউক্রেনীয় নেতাদের কিছুটা আশ্বস্ত করবে। কারণ, তাদের আশঙ্কা, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য বাড়তি সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারেন। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের মুখে ধীরে ধীরে ভূখণ্ড হারাচ্ছে।

এর আগেও অবশ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময় ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অস্ত্র কিনেছিল। তবে তারপরও ইউক্রেনে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই এককভাবে শীর্ষে ছিল।

ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) কিথ কেলোগসহ মার্কিন কর্মকর্তারা এ সপ্তাহে জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেবেন। আর সে সময়ই ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্ভাব্য অস্ত্র বিক্রয় নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

তাঁরা আরও জানিয়েছেন, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচ্য কয়েকটি পরিকল্পনার একটি, যার মাধ্যমে কিয়েভে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা যেতে পারে, তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য আর্থিক ব্যয় কমবে।

সোমবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেলোগ এই পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় আমেরিকায় তৈরি অস্ত্র বিক্রি করতে চায়, কারণ, এটি আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।’

কেলোগ আরও বলেন, ‘অনেক বিকল্প রয়েছে। এই মুহূর্তে সবকিছু আলোচনায় রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনুমোদিত অস্ত্রের চালান এখনো ইউক্রেনে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি পরিবর্তন করার কোনো জরুরি প্রয়োজন নেই।’

মার্কিন কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ওয়াশিংটনের ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যয় করা কয়েক বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার করতে চায় এবং ইউরোপকে এই লড়াইয়ে আরও বেশি অবদান রাখতে হবে বলে মনে করে।

রোববার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেন, ‘এখানে একটি মূলনীতি হলো, ইউরোপীয়দেরই এই সংঘাতের দায়িত্ব নিতে হবে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে, নাকি মার্কিন অস্ত্রভান্ডার থেকে সরাসরি অস্ত্র কিনতে বলবে—তা এখনো পরিষ্কার নয়। কিছু বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হতে কয়েক বছর সময় নিতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করছে যে, তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাবে কি না এবং কীভাবে এটি করা হবে। ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইউক্রেনে সব সহায়তা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তাঁর কিছু উপদেষ্টা যুক্তি দিচ্ছেন যে, ওয়াশিংটনের উচিত কিয়েভে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা, বিশেষ করে যদি শান্তি আলোচনা এ বছরের শেষ পর্যন্ত বিলম্বিত হয়।

বাইডেন তাঁর আমলে ইউক্রেনের জন্য ৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি নিরাপত্তা সহায়তা অনুমোদন করেছিলেন, যার মধ্যে তাঁর প্রশাসনের শেষ কয়েক মাসেই কয়েক বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ কিয়েভের কর্মকর্তারা বলেছেন, মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে ইউক্রেনের আরও বেশি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রয়োজন।

এদিকে, ইউক্রেনকে দেওয়ার জন্য যদি ট্রাম্প প্রশাসন অতিরিক্ত তহবিলের জন্য কংগ্রেসে আবেদন করে, তবে এটি অনেক রিপাবলিকান সদস্যদের কাছ থেকেই তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে পারে।

আর তাই, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইউরোপের সঙ্গে একটি অস্ত্র বিক্রয় চুক্তিকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছেন। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুট গত মাসে বলেছিলেন, ইউরোপ ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অস্ত্রের ব্যয় বহন করবে।

অপরদিকে, ওয়াশিংটন ও মস্কো শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। এর ফলে জল্পনা বাড়ছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারবে কি না।

রোববার ট্রাম্প বলেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ করার আলোচনায় অগ্রগতি করছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই র‍্যাবকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদের কিনারায় রয়েছে’ রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদের প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল দখল করেছে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

অপর দুটি মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস যুদ্ধ বন্ধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে একটি শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করতে কয়েক মাস সময় নেবে এবং আলোচনার আগে বেশ কয়েকটি বিষয় মীমাংসা করতে হবে।

এ সপ্তাহে ইউরোপে অবস্থান করা কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার পথ প্রস্তুত করতে কাজ করছেন। কেলোগ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন যাতে কিয়েভের প্রতি সহায়তা বাড়ানো যায়।

কেলোগ বলেন, ‘আমি এটাকে পরিকল্পনার একেবারে শুরুর পর্যায় বলব না, কারণ আমরা এটি নিয়ে আগে থেকেই চিন্তা করছি। এই সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আমাদের প্রত্যাশাগুলো মিত্রদের কাছে পৌঁছে দিতে।’

ট্রাম্পের এই বিশেষ দূত আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা তাদের কাছ থেকে শুনতে চাই।’

মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের সঙ্গে একটি খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। যার ফলে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওয়াশিংটনের প্রবেশাধিকারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করবে।

এই চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ হয়নি। ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের উন্নয়নে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে লাভবান হবে না। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে তাদের ইউক্রেন নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত