Ajker Patrika

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে ছাঁটাই চলছে, চাকরি গেল ১৩৫৩ জনের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১২: ৩৬
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে ছাঁটাই চলছে, চাকরি গেল ১৩৫৩ জনের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দেশটির কূটনৈতিক বহরে নজিরবিহীন ছাঁটাই চালিয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তথা পররাষ্ট্র দপ্তর ১ হাজার ৩৫০ জনের বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সমালোচকেরা বলছেন, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক স্বার্থ রক্ষা এবং তা বিশ্বে তুলে ধরার সক্ষমতাকে দুর্বল করবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির ভেতরে কর্মরত ১ হাজার ১০৭ জন সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা এবং ২৪৬ জন ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তাকে এই দফায় ছাঁটাই করা হয়েছে। এমন সময় এই সিদ্ধান্ত এল, যখন বিশ্বজুড়ে নানা সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও টানাপোড়েনে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য।

পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মীদের পাঠানো এক অভ্যন্তরীণ বার্তায় বলা হয়েছে, ‘দপ্তরের ঘরোয়া কার্যক্রম কূটনৈতিক অগ্রাধিকারে কেন্দ্রীভূত করতে পুনর্গঠন করা হচ্ছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ‘যেসব দপ্তর মূল কার্যক্রম পরিচালনা করে না এবং যেগুলো অন্য দপ্তরের সঙ্গে মিলে যায় বা যেগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব, সেগুলোর কর্মীর সংখ্যা কমানো হয়েছে।’

পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি নোটিশ ও এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, স্বেচ্ছা পদত্যাগসহ মোট প্রায় ৩ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়বেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার।

এই ছাঁটাই ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টারই অংশ, যার লক্ষ্য তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে বিদেশনীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। সাবেক কূটনীতিক ও সমালোচকেরা বলছেন, ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তাদের ছাঁটাই হলে চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে।

ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আমেরিকাকে আরও অনিরাপদ করে তুলছেন। এ সিদ্ধান্ত যেন একেবারেই অযৌক্তিক। চীন যখন বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে, সামরিক ও পরিবহন ঘাঁটি গড়ে তুলছে; রাশিয়া একটি স্বাধীন দেশের ওপর বছরের পর বছর ধরে বর্বর হামলা চালাচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্য এক সংকট থেকে আরেক সংকটে গড়িয়ে পড়ছে—তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।’

ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের সদর দপ্তরে, ছাঁটাই হওয়া সহকর্মীদের বিদায় জানাতে লবিতে জড়ো হয়েছিলেন অনেক কর্মী। অনেকে কাঁদছিলেন। কেউ কেউ বাক্সে করে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে বের হচ্ছিলেন। সহকর্মীরা তাঁদের জড়িয়ে ধরছিলেন, বিদায় জানাচ্ছিলেন।

ভবনের বাইরে অনেকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাঁদের বিদায় জানাচ্ছিলেন। কারও কারও হাতে ব্যানার ছিল, তাতে লেখা ছিল, ‘ধন্যবাদ, আমেরিকার কূটনীতিকেরা।’ সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেনও।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মালিকানাধীন ব্যাজ, ল্যাপটপ, ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র জমা দেওয়ার জন্য ভবনের ভেতরে কয়েকটি ‘আউটপ্রসেসিং’ অফিসও খোলা হয়। এসব অফিসের বাইরে পোস্টার টাঙানো ছিল, ‘ট্রানজিশন ডে আউট প্রসেসিং।’ এক কাউন্টারে বোতলজাত পানি আর টিস্যু রাখা ছিল। ভেতরে কার্ডবোর্ডের বাক্স রাখা ছিল।

বহিষ্কৃত কর্মীদের কাছে পাঠানো পাঁচ পৃষ্ঠার একটি নথিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিকেল ৫টায় তাঁদের অফিস ও ইমেইলের অ্যাকসেস বন্ধ করে দেওয়া হবে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করা আফগানদের পুনর্বাসন তদারকি করত যে দপ্তর, তার অনেক কর্মীকেও এই ছাঁটাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত