Ajker Patrika

তিনি কেন জঙ্গলে একা থাকতেন? 

আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬: ৪১
তিনি কেন জঙ্গলে একা থাকতেন? 

মারা গেছেন নাম না জানা সেই ব্যক্তি, যিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাজনের গহিন অরণ্যে একাই বাস করতেন। যোগাযোগ করতেন না কারও সঙ্গে। শুধু বাদাম আর ফলমূল খেয়েই এত দিন বেঁচে ছিলেন তিনি। তাঁর এই জীবনযাপন ছিল অরণ্যবাসী আদিবাসীদের সংগ্রামের প্রতীক। সম্প্রতি মারা যাওয়ার পর সারা বিশ্বের খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। 

বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে বলেছে, আমাজনে থাকা আদিবাদী গোষ্ঠীদের হটিয়ে দিয়ে বন দখল করতে চেয়েছিল পশু খামারিরা। তারা বন্দুকধারী ভাড়া করে উপজাতিদের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন একজন। 

বেঁচে যাওয়া সেই ব্যক্তিকেই গত ২৩ আগস্ট অবশেষে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাঁর মৃতদেহটি তানারু আদিবাসী অঞ্চলে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। ব্রাজিল কর্তৃপক্ষ তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। 

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর দেহটি গুয়াকামায়া পাখির উজ্জ্বল পালকে ঢাকা ছিল। এটি ম্যাকাউ গোত্রের পাখি। 

তানারু আদিবাসী অঞ্চলটি বলিভিয়ার সীমান্তবর্তী ব্রাজিলের দক্ষিণ-পশ্চিম রোন্ডোনিয়া রাজ্যের ৮ হাজার হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত। সংরক্ষিত এই অঞ্চল গবাদিপশুর খামার দিয়ে ঘেরা। 

আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল এনজিপি জানিয়েছে, এটি ব্রাজিলের সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোর একটি। এখানে কাঠ কাটা বেআইনি। সংস্থাটির পরিচালক ফিওনা ওয়াটসন বলেছেন, তানারু ভূমিটি মৃত সাগরের বুকে সবুজ মরূদ্যানের মতো। 

আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার তদন্ত করতে ১৯৯৬ সালে আমাজনে গিয়েছিলেন ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশন নামের একটি সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা। তাঁদের ক্যামেরায় প্রথম ধরা পড়েছিলেন সেই ব্যক্তি। তাঁদের তথ্যচিত্রটি ২০০৯ সালে ‘কোরামবিয়ারা’ নামে প্রদর্শিত হয়েছিল। 

তথ্যচিত্রটিতে দেখা গেছে, একজন মানুষ একটি খড়ের কুঁড়েঘর থেকে উঁকি দিচ্ছেন। শুধু তাঁর চোখ দেখা যাচ্ছিল। তিনি একটি বর্শা দিয়ে খোঁচা দেওয়ার ভঙ্গি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো শব্দ করছিলেন না। লোকটি কোন ভাষায় কথা বলেন, তা জানার চেষ্টা করেছিলেন গবেষক দলের ওই সদস্যরা। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। 

লোকটি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি কথা বলতে চান না। একপর্যায়ে তিনি তীর ছুড়ে মেরেছিলেন। এতে তদন্তকারী দলের এক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছিলেন। 

এরপর তাঁরা ফিরে এলেও ওই অঞ্চলে টহল অব্যাহত রেখেছিলেন। ফলে তাঁরা জানতে পারতেন লোকটি বেঁচে আছেন কি না। 

লোকটিকে নিয়ে সর্বশেষ ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল ২০১১ সালে। কিন্তু সেটি প্রকাশ করা হয় সাত বছর পর। সেই ভিডিওতে তাঁকে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় একটি কুড়াল দিয়ে গাছ কাটতে দেখা গেছে। 

লোকটি ওই এলাকায় ফলমূল ও শাকসবজির বাগান তৈরি করেছিলেন। এসব খেয়েই বেঁচে থাকতেন। ২০০৫ সালে বাগানটি পরিদর্শন করেছিলেন ফিওনা ওয়াটসন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাঁর একটি বাগান দেখেছি এবং এটি ফলমূল ও শাক-সবজিতে পূর্ণ ছিল।’ 

তিনি বর্শা দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে অনেক গর্ত তৈরি করেছিলেন। এসব গর্ত প্রাণীদের ফাঁদে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অথবা অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে বাঁচতে লুকানোর জায়গা হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। ওয়াটসন বলেছেন, ‘তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই রহস্যেরও মৃত্যু ঘটল। একই সঙ্গে মারা গেল তানারু মানুষের ইতিহাস।’ 

ফিওনা ওয়াটসন আরও বলেছেন, আমাজনের ব্রাজিল অংশে তিনি ১১৪টি আদিবাসী গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত