Ajker Patrika

ট্রুডো–সোফি: ঈর্ষণীয় রসায়ন, ১৮ বছর পর কেন গড়াল বিচ্ছেদে

ট্রুডো–সোফি: ঈর্ষণীয় রসায়ন, ১৮ বছর পর কেন গড়াল বিচ্ছেদে

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও সোফির প্রেম এবং দাম্পত্যের রসায়ন মানুষের মুখে মুখে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রায়ই প্রশংসামূলক প্রতিবেদন আসত। বলতে গেলে এক ছাদের নিচে একে অপরকে তরুণ থেকে যৌবন পেরোতে দেখেছেন তাঁরা। তিনটি ফুটফুটে সন্তান। স্পষ্টত ঈর্ষণীয় প্রেমময় একটি পরিবার। কিন্তু গতকাল বুধবার দীর্ঘ ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতির কথা জানালেন ট্রুডো। 

অবশ্য সিদ্ধান্তটি যে হঠাৎ করে এসেছে এমন নয়। সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা বিভিন্ন ঘটনা ও বক্তব্য অনুসরণ করলেই অনুমান করা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। ট্রুডো ও সোফি দুজনেই তাঁদের সম্পর্কের জটিলতাগুলো নিয়ে ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দম্পতিকে প্রকাশ্যে আর এক সঙ্গে দেখা যাচ্ছিল না। 

ট্রুডোর বয়স এখন ৫২, আর সোফি জর্জিয়ার বয়স ৪৮। তাঁদের বিয়ে হয় ২০০৫ সালে। ১৫, ১৪ ও ৯ বছরের তিনটি সন্তান রয়েছে। এইতো ২০২০ সালেও বিয়ে বার্ষিকীতে সোফি ট্রুডোকে বলেছিলেন, ‘আমরা রক, আমার সঙ্গী এবং আবার সেরা বন্ধু।’ 

ভারত সফরে ট্রুডোর পুরো পরিবার। ছবি: এএফপিট্রুডোর ভাগ্যটা অবশ্য তাঁর বাবার মতোই। বাবাও কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এবং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই ১৯৭৭ সালে স্ত্রী মারগারেটের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অনেকগুলো সংকটের ভেতর দিয়েই গেছেন ট্রুডো। তবে এত বড় ব্যক্তিগত সংকটের মুখে সম্ভবত আর পড়েননি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি বারবার পারিবারিক জীবনের ওপর জোর দিয়ে কথা বলতেন। 

নিজের দল লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর তাগিদে গত সপ্তাহেই মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল এনেছেন ট্রুডো। এই ঝড়ের মধ্যেই তিনি ইনস্টাগ্রামে জানালেন, ‘সোফি এবং আমি একটা বিষয় শেয়ার করতে চাই, আর তা হলো, অনেক অর্থপূর্ণ এবং কঠিন আলোচনা শেষে আমরা আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সোফিও অভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন। 

দীর্ঘ ১৮ বছরের দাম্পত্যের ইতি টানলেন ট্রুডো–সোফি দম্পতি। ছবি: এএফপি

কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (সিবিসি) জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো তাঁর বিচ্ছেদ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলবেন।

ট্রুডোর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, দুজনেই আইনি নথিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। তাঁরা এখন তিন সন্তানকে লালন–পালনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে পুরো পরিবার অবকাশযাপনে যাবে। 

বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার আগে পর্যন্ত সোফি অটোয়াতে থাকবেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন রিডু কটেজে সন্তানদের সঙ্গে প্রচুর সময় কাটাবেন বলেই জানা গেছে। সন্তানদের সামনে পুরো পরিস্থিতিটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা তাঁরা করবেন। 

ট্রুডো এবং সোফি খুব বেশি দিন প্রেম করেননি। সোফি পড়াশোনা করেছেন বাণিজ্য বিষয়ে। তিনি সব সময় লিঙ্গ সমতা নিয়ে সরব থেকেছেন। ২০০৩ সালে ট্রুডোর সঙ্গে প্রথম যখন দেখা হয় তখন সোফি একজন সাংবাদিক। মাত্র দুই বছর পরই তাঁরা বিয়ে করেন। 

পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা ছিল ঈর্ষা করার মতো। ছবি: এএফপি

পরে ২০১৫ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন। অত্যন্ত সপ্রতিভ এবং ছিমছাম এই যুগল দ্রুতই বিশ্ব গণমাধ্যমের ক্যামেরায় গুরুত্ব পেতে থাকেন। রীতিমতো সেলিব্রেটি দম্পতিতে পরিণত হন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে নিউইয়র্ক পোস্ট পত্রিকা সোফিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডি’ আখ্যা দেয়। 

এই দম্পতিকে নিয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় ভোগ ম্যাগাজিন দুজনের আলিঙ্গনের ছবি বেশ বড় করে ছেপেছিল। ট্রুডোকে নিয়ে একটি বড় লেখাও তারা ছেপেছিল। সেখানে ট্রুডো বলেছিলেন, জনপরিসরে স্ত্রীর প্রতি তাঁর ভালোবাসাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তার কিছু নিয়ে তিনি বিস্মিত। 

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং বিদেশ সফরে স্ত্রী সোফিকে নিয়েই ভ্রমণ করতেন ট্রুডো। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরকালে দুজনকে বেশির ভাগ সময় রঙিন ও বিচিত্র পোশাক পরতে দেখা গেছে। এ নিয়ে কানাডায় অনেক ট্রোলও হয়েছে। 

ট্রুডো অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই একাধিকবার পরিষ্কার করে বলেছিলেন, দাম্পত্য জীবনে তাঁরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে (কমন গ্রাউন্ড) লিখেছেন, ‘আমাদের বিয়ে একেবারে ত্রুটিহীন নয়। আমাদেরও উত্থান–পতন আছে।’ 

পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা ছিল ঈর্ষা করার মতো। ছবি: এএফপি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোফিকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তাঁদের এই দূরত্ব বজায় রেখে চলার মধ্যেই স্পষ্ট ছিল সম্পর্কের চলমান টানাপোড়েন। গত বছর বিয়ে বার্ষিকীতে সোফি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমরা অনেক রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, তুমুল ঝড় এবং এর মাঝে আরও অনেক বৈরীর ভেতর দিয়ে গেছি। আর এটা এখনো শেষ হয়নি।’ 

সোফি এও লেখেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক নানা কারণেই চ্যালেঞ্জিং।’ 

গত মে মাসে রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুজনে লন্ডন গিয়েছিলেন। গত মার্চের শেষ নাগাদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কানাডা সফরে গেলে তখনো তাঁদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এমনকি গত সোমবারও ট্রুডোর আঙুলে বিয়ের আংটি দেখা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক শক্তিচালিত অপ্রতিরোধ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৫৩
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

পারমাণবিক শক্তিচালিত অনির্দিষ্ট পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’-এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির দাবি, এটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, খুব শিগগির ক্ষেপণাস্ত্রটি মোতায়েন করা হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক মহড়ায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। এর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে রাশিয়া। আর তা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া কোনোভাবেই নতি স্বীকার করবে না। বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, ঠিক সে সময় মস্কোর এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ পুতিনকে জানান, গত মঙ্গলবার পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার ৭০০ মাইল) উড়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা আকাশে ছিল। তিনি বলেন, এটি পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এবং এর উড্ডয়নের দূরত্ব কার্যত সীমাহীন।

রাশিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী, ৯ এম-৭৩০ বুরেভেস্তনিক (ন্যাটো নাম এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল) হলো এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যাকে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই আটকাতে পারবে না।

আজ রোববার সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন পুতিন। এ সময় পুতিন বলেন, এটি এক অনন্য অস্ত্র, যা আর কোনো দেশের কাছে নেই।

পুতিন ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দেন। তিনি একে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রতিরোধ হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ, ওয়াশিংটন ২০০১ সালে একতরফাভাবে ১৯৭২ সালের অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় এবং পরে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ শুরু করে।

পুতিন বলেন, রুশ বিশেষজ্ঞরা একসময় বলেছিলেন, এই অস্ত্র তৈরি সম্ভব নয়। কিন্তু এখন এটার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তিনি গেরাসিমভকে দ্রুত অস্ত্রটির শ্রেণিবিন্যাস ও মোতায়েনের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন।

পুতিনের এ ঘোষণার সময় ও প্রেক্ষাপটও তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে সামরিক পোশাক পরে এ ঘোষণা দিয়ে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সরাসরি বার্তা দিয়েছেন—বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশে। তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সম্প্রতি ট্রাম্প রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, মস্কো ইউক্রেনকে হারাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু পুতিনের আজকের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া এখনো বৈশ্বিক পারমাণবিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সঙ্গে আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, মস্কোর সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন করে আলোচনায় বসা উচিত।

রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ গেরাসিমভ জানান, বুরেভেস্তনিকের এ পরীক্ষা বিশেষ ছিল। কারণ, এটি পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমেই এত দীর্ঘ সময় আকাশে ছিল। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র যেকোনো অ্যান্টি মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘরে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনা নারীদের ‘এআই প্র্যাঙ্ক’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনের নারীরা তাঁদের পুরুষ সঙ্গীদের ভালোবাসা পরীক্ষা করতে এক নতুন ট্রেন্ড ‘এআই গৃহহীন ব্যক্তি প্র্যাঙ্ক’ ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্র্যাঙ্ক ভাইরাল হওয়ার পর তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ট্রেন্ডে অংশ নিতে ব্যবহারকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও তৈরি করেন। এসব ছবি বা ভিডিওতে অপরিচ্ছন্ন বেশভূষার এক গৃহহীন ব্যক্তিকে ব্যবহারকারীর বাড়ি বা কর্মস্থলে অবস্থান করতে দেখা যায়।

এরপর সেই ছবি বা ভিডিও ওই নারীরা তাঁদের স্বামী বা প্রেমিককে পাঠান। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সঙ্গীদের অনুভূতি ও দায়বদ্ধতা পরখ করে দেখেন।

এ ধরনের ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুগলের জেমিনি বা মাইএডিটের ‘এআই রিপ্লেস’-এর মতো টুল।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক আইনজীবীর পরিবার এমন এক ভাইরাল প্র্যাঙ্কের ঘটনায় পুলিশ ডাকার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছিল।

আরেক ঘটনায় চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে এক নারী তাঁর স্বামীকে ঘরে একজন ‘গৃহহীন ব্যক্তি ঢুকে পড়েছে’—এমন এআই দিয়ে বানানো ছবি পাঠান। সে সময় তাঁর স্বামী বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাচ্ছিলেন।

ছবি দেখে তিনি সেটিকে সত্যি ভেবে পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তারা বুঝতে পারে, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে ‘জনসাধারণের সম্পদের অপচয়’ বলে মন্তব্য করেন এবং ওই নারীকে ‘ভয় ছড়ানোর অপরাধে’ অভিযুক্ত করেন।

চীনের জননিরাপত্তা প্রশাসন শাস্তি আইন অনুযায়ী, এমন কাজের জন্য সর্বোচ্চ ১০ দিনের আটকাদেশ এবং প্রায় ৭০ ডলার জরিমানার বিধান আছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক চীনা পুরুষ এ ধরনের প্র্যাঙ্ক বা দুষ্টুমির তীব্র সমালোচনা করেছেন।

একজন লিখেছেন, ‘আপনারা কি সেই রাখাল ছেলের গল্প শোনেননি, যে নেকড়ে এসেছে বলে মিথ্যা চিৎকার দিত? যদি আপনারা বারবার মিথ্যা সতর্কতা দেন, তাহলে সত্যি সত্যি বিপদ হলেও কেউ আপনাদের বিশ্বাস করবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকজন লিখেছেন, ‘এআই আমাদের জীবনে সুবিধা এনেছে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি আস্থার সংকটও তৈরি করেছে। প্ল্যাটফর্মের উচিত, এআই কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেওয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সর্বোচ্চ গতির ট্রেনের পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন, ঘণ্টায় পাড়ি দিতে সক্ষম ৪৫০ কিমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া

বিশ্বের দ্রুততম উচ্চগতির ট্রেন সিআর-৪৫০ এর প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের রিং রেলওয়েতে এখনো এই ট্রেনটির পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে। ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। তবে ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচলের সময় এর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার।

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনটিকে ট্র্যাকে নামানো হয়। এটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ গতির চলমান সিআর–৪০০ ফুজিং ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। ফুজিং ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে।

china-2
china-2

ট্রেনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি করপোরেশন লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ফেং জানিয়েছেন, সিআর–৪৫০ উচ্চগতির ট্রেন প্রযুক্তিতে এক বিশাল অগ্রগতি এনেছে। তত্ত্ব, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, মানদণ্ড ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এই ট্রেন।

৪০০ কিলোমিটার গতির নজিরবিহীন গতি অর্জনের জন্য প্রকৌশলীরা ট্রেনটির ট্র্যাকশন পাওয়ার (ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা), ডাইনামিক পারফরম্যান্স বা গতিশীল অবস্থায় ট্রেনটিতে যাবতীয় পরিবর্তন পরিমাপ এবং প্যান্টোগ্রাফ সিস্টেম বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ট্রেনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তা উন্নত করেছেন।

ওয়াংয়ের ভাষায়, ট্রেনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াটার-কুলড পারমানেন্ট ম্যাগনেট ট্র্যাকশন সিস্টেম, নতুন প্রজন্মের উচ্চ-স্থিতিশীলতা বগি এবং একাধিক উদ্ভাবনী সিস্টেম। যার ফলে দীর্ঘ সময় উচ্চ গতিতে চলাচলেও এটি স্থিতিশীল থাকে। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সিআর–৪৫০ এক ধাপ এগিয়ে। এতে রয়েছে মাল্টিলেয়ার ইমারজেন্সি ব্রেক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং ৪ হাজারেরও বেশি অনবোর্ড মনিটরিং সেন্সর, যা চলমান অবস্থায় ট্রেনের গিয়ার, পুরো ট্রেন, হাই–ভোল্টেজ প্যান্টোগ্রাফ, ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা—সবকিছুই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া, ওভার-দ্য-হরাইজন শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে এতে। এই ব্যবস্থা ট্রেনের সামনে ট্র্যাকের জরুরি পরিস্থিতি আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

china-3
china-3

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব। বগির ‘স্ট্রিমলাইনড কাওলিং’ ধাঁচের নকশা বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ কমিয়েছে, আর নতুন হালকা উপকরণ ও প্রযুক্তি ট্রেনের মোট ওজন ১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে ট্র্যাকের সঙ্গে চাকার এবং সামগ্রিক ঘর্ষণ প্রতিরোধ ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।

ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও এসেছে অগ্রগতি। সাতটি নতুন প্রযুক্তি—যেমন সাউন্ড-অ্যাবসর্বিং উপকরণ ও উন্নত অ্যারোডাইনামিক নকশা ট্রেনের অভ্যন্তরীণ শব্দ ২ ডেসিবল কমিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও নিঃশব্দ ও আরামদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

তা ছাড়া, সিআর–৪৫০ এ যুক্ত হয়েছে একাধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফিচার, যা ট্রেনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং যাত্রীসেবা—সব দিক থেকেই একে আগের সব মডেলের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে জানান ওয়াং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১০
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহের ভিত্তি করে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট।

মুখপাত্র জানান, এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও ভাটিতে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত