Ajker Patrika

ট্রাম্প ফ্যাক্টরসহ যেসব কারণে জিতল কানাডার লিবারেলরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ২৫
জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন মার্ক কার্নি। ছবি: সিবিসি
জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন মার্ক কার্নি। ছবি: সিবিসি

কানাডার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার। আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষিত না হলেও, ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি টানা চতুর্থবার জয়লাভ করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। কার্নির প্রত্যাশা ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা সহজ করতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারই গঠন করতে পারবেন তিনি।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল এবং লিবারালরা ১৬৭টি আসনে এগিয়ে ছিল বা জয় পেয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১৪৫টি আসন। হাউস অব কমন্সের ৩৪৩টি আসনের মধ্যে ১৭২টি পেলে লিবারেলরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়তে পারত। সে ক্ষেত্রে ছোট কোনো দলের সমর্থন তাদের প্রয়োজন হতো না।

রাজধানী অটোয়ায় বিজয় ভাষণে কার্নি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার পুরোনো সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। এই সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া সংহতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।’ তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল উন্মুক্ত বিশ্ব বাণিজ্যের যে ব্যবস্থা, যার ওপর কানাডা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে নির্ভর করে আসছে, সেই ব্যবস্থা শেষ। যদিও সেটি নিখুঁত ছিল না, তবে কয়েক দশক ধরে কানাডার সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো দুঃখজনক ঘটনা। তবে এটাই আমাদের নতুন বাস্তবতা। আগামী মাসগুলো কঠিন হবে। এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’

জনমত জরিপ সংস্থা অ্যাঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট শাচি কার্ল রয়টার্সকে জানিয়েছেন, লিবারেলদের জয় তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করেছে। কার্ল বলেন, এর কারণ ছিল ‘কনজারভেটিভ ছাড়া অন্য যেকোনো প্রার্থী’ ফ্যাক্টর, ট্রাম্পের শুল্ক ফ্যাক্টর এবং অজনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর কার্নির আগমনের ফ্যাক্টর। এ কারণে বামপন্থী ও ঐতিহ্যবাহী লিবারেল ভোটাররা দলে ফিরে এসেছে।

কার্নি ওয়াশিংটনের আমদানি শুল্ক নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে কানাডার বিলিয়ন বিলিয়ন খরচ করতে হবে। তবে ৯ বছরের বেশি সময় ধরে চলা লিবারেল শাসনের পর পরিবর্তনের ডাক দেওয়া মধ্য-ডানপন্থী কনজারভেটিভরা অপ্রত্যাশিত শক্তিমত্তা দেখিয়েছে নির্বাচনে।

কানাডায় সংখ্যালঘু সরকার খুব কমই আড়াই বছরের বেশি টেকে। কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পলিয়েভর কার্নির লিবারাল পার্টির কাছে পরাজয় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর দল সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনবে।

এই ফলাফল লিবারেলদের একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবর্তনকে চিহ্নিত করে। জানুয়ারিতে ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণার আগে এবং ট্রাম্প শুল্ক ও অঙ্গীভূত করার হুমকি দেওয়া শুরু করার আগে তারা জনমত জরিপে ২০ শতাংশ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল।

কার্নি বলেছেন, ‘আমেরিকা আমাদের জমি, আমাদের সম্পদ, আমাদের পানি, আমাদের দেশ চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো নিছক হুমকি নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের ভাঙার চেষ্টা করছেন যাতে আমেরিকা আমাদের মালিক হতে পারে। এটা কখনোই হবে না।’

ট্রাম্পের হুমকি দেশপ্রেমের একটি ঢেউ জাগিয়ে তোলে কানাডীয় মানসে। এর ফলে কার্নির প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পায়। কার্নি রাজনীতিতে নতুন হলেও এর আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ব্যাংক অব কানাডার গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন। কার্নি জোর দিয়ে বলেছেন, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো সামলানোর ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা তাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে মোকাবিলা করার ‘সেরা নেতা’ হিসেবে তুলে ধরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তি আলোচনা ব্যর্থ, তালেবানকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার হুমকি দিলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ইস্তাম্বুলে চলমান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর আজ বুধবার এই হুমকি দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, যা প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনাকে আরও চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

এর আগে আজ বুধবার সকালে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জানান, ইস্তাম্বুলে হওয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনা কোনো ‘কার্যকর সমাধান’ ছাড়াই শেষ হয়েছে। অনেকে বলছেন, চলতি মাসের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর এটি আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি বড় ধাক্কা।

এদিকে, আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। এই আলোচনা-সংশ্লিষ্ট একটি কূটনৈতিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধের জেরেই আলোচনা ভেস্তে যায়।

খাজা আসিফ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, তালেবানি শাসন ‘সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন’ করতে আমাদের অতি সামান্য সামরিক শক্তিই যথেষ্ট। আমরা তাদের আবারও গুহায় ফিরে যেতে বাধ্য করব।

তবে পাকিস্তানের এই মন্তব্যের বিষয়ে তালেবান ও আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০২১ সালে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর গত শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। উভয় দেশই দাবি করে, তারা একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংস করেছে। তালেবান সরকারের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) কাবুল ও পাকটিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। এ হামলার প্রতিশোধ নিতে শনিবার পাল্টা আক্রমণ করে আফগানিস্তান। এতে অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় বলে দাবি করে কাবুল।

অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করে, তাদের ২৩ জন সেনা শহীদ হয়েছে। তবে পাল্টা হামলায় ২০০ জন তালেবান ও সহযোগী যোদ্ধা নিহত হয়। প্রায় চার দিনের সংঘর্ষের পর গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) ৪৮ ঘণ্টার একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় পাকিস্তান ও তালেবান সরকার। এরপর উভয় দেশ গত রোববার (১৯ অক্টোবর) দোহায় কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সর্বসম্মতভাবে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ।

পরবর্তী সময়ে গত শনিবার (২৫ অক্টোবর) দ্বিতীয় দফায় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে যৌথ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বৈঠক শুরু করে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। কিন্তু তিন দিনের বৈঠক শেষেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশ। আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য উভয় দেশ একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার আজ বুধবার অভিযোগ করে বলেন, ‘যে কারণে আলোচনা শুরু হয়েছিল, আফগানিস্তান সেই মূল বিষয় থেকে ক্রমাগত সরে যাচ্ছিল।’ তিনি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বৈঠকে মূল বিষয় এড়িয়ে যাওয়া, সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করা এবং ‘দোষারোপের খেলায়’ লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে আলোচনা করলে কোনো কার্যকর সমাধান সম্ভব হয়।’

পাকিস্তানের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলের বৈঠকে তালেবান প্রতিনিধিদল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে অনিচ্ছুক ছিল। বিশেষত পাকিস্তানবিরোধী কর্মকাণ্ডে টিটিপিকে সমর্থন বন্ধে নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রশ্নে তালেবান প্রতিনিধিদল ছিল নিরুত্তর। আলোচনা সম্পর্কে অবগত আফগান একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে ‘উত্তেজনাপূর্ণ বাক্য বিনিময়ের’ পরপরই আলোচনা শেষ হয়ে যায়।

সীমান্তে নিরাপত্তা ইস্যুই দুই দেশের সম্পর্কের মূল টানাপোড়েনের কারণ। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, আফগানিস্তান তাদের মাটিতে পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু কাবুল বারবার বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আফ্রিকার প্রথম নোবেলজয়ী লেখক ওলে সোয়িঙ্কার মার্কিন ভিসা বাতিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ০৬
নাইজেরিয়ার লেখক ওলে সোয়েঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার লেখক ওলে সোয়েঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

সাহিত্যে আফ্রিকার প্রথম নোবেলজয়ী নাইজেরিয়ার লেখক ওলে সোয়িঙ্কার মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে তিনি কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) নাইজেরিয়ার লাগোসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৯১ বছর বয়সী এই লেখক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সোয়িঙ্কা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নাইজেরিয়া কনস্যুলেট থেকে ২৩ অক্টোবর এক চিঠিতে তাঁকে ভিসা বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়। চিঠিটিকে তিনি হাস্যরসের সঙ্গে ‘একটি কৌতূহলপূর্ণ প্রেমপত্র’ বলে বর্ণনা করেছেন। কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভিসা প্রদানের পর ‘অতিরিক্ত কিছু তথ্য’ পাওয়ার পর তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোয়িঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির সমালোচক হিসেবে পরিচিত। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরার পর দেশটির অভিবাসন নীতিতে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর নাইজেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ কমিয়ে দেয় এবং প্রবেশের শর্ত কঠোর করে।

সাহিত্যিক ও নাট্যকার ওলে সোয়িঙ্কা ১৯৮৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি হার্ভার্ড, ইয়েলসহ যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ক্রনিকলস ফ্রম দ্য ল্যান্ড অব হ্যাপিয়েস্ট পিপল অন আর্থ’ এবং ‘দ্য ম্যান ডাইড’। দ্বিতীয় বইটি তিনি নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় কারাবন্দী অবস্থায় লেখেন।

২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনের পর প্রতিবাদ হিসেবে সোয়িঙ্কা নিজের গ্রিন কার্ড ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি ট্রাম্পকে ‘সাদা চামড়ার ইদি আমিন’ বলে আখ্যা দেন, যা তাঁর ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে চালু হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম পাঁচ তারকা ট্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘ড্রিম অব দ্য ডেজার্ট’ ট্রেনটির একটি মডেল বগি। ছবি: এএফপি
‘ড্রিম অব দ্য ডেজার্ট’ ট্রেনটির একটি মডেল বগি। ছবি: এএফপি

সৌদি আরবে শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে এক অনন্য ভ্রমণযাত্রা। দেশটিতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম পাঁচ তারকা চলমান হোটেল হিসেবে ইতিহাস গড়বে ‘ড্রিম অব দ্য ডেজার্ট’ নামে বিলাসবহুল একটি ট্রেন। ইতালীয় প্রতিষ্ঠান আর্সেনালে গ্রুপ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত ‘ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ সম্মেলনে ট্রেনটির নকশা ও পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) আমিরাত-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ন্যাশনাল’ জানিয়েছে, ‘ডিম অব দ্য ডেজার্ট’ ট্রেনে থাকবে ৩৩টি ব্যক্তিগত স্যুইট। এর মধ্যে ৩১টি সাধারণ প্রাইভেট স্যুইট এবং দুটি প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট। সর্বোচ্চ ৬৬ জন অতিথি একসঙ্গে এই বিলাসবহুল ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন। যাত্রীদের জন্য থাকবে দুটি রেস্তোরাঁ বগি এবং একটি ঐতিহ্যবাহী ‘মজলিশ লাউঞ্জ’, যেখানে মরুভূমির অনুপ্রেরণায় কাঠের খোদাই, সোনালি অলংকরণ এবং উষ্ণ রঙের মিশ্রণে সৌদি ঐতিহ্যের আভিজাত্য ফুটে উঠবে।

রেস্তোরাঁর বগিগুলোতে পরিবেশন করা হবে স্থানীয় সৌদি খাবার, সঙ্গে আন্তর্জাতিক মেনু ও ইতালীয় ফিউশন কুইজিন। বিশ্বখ্যাত শেফরা এসব খাবার তৈরি করবেন।

আর্সেনালে গ্রুপের প্রধান নির্বাহী পাওলো বারলেত্তা বলেছেন, ‘ড্রিম অব দ্য ডেজার্ট একটি চলমান শিল্পকর্ম, যা ইতালীয় কারিগরির সূক্ষ্মতা ও সৌদি দর্শনের সমন্বয়ে গঠিত। এটি অতুলনীয় বিলাসবহুল ভ্রমণের এক নতুন সংজ্ঞা তৈরি করবে।’

ট্রেনটিতে এমন ৩১টি প্রাইভেট স্যুইট থাকবে। ছবি: এএফপি
ট্রেনটিতে এমন ৩১টি প্রাইভেট স্যুইট থাকবে। ছবি: এএফপি

এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে সৌদি আরব রেলওয়ে, পরিবহন ও রসদ সেবা মন্ত্রণালয়, পরিবহন কর্তৃপক্ষ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং সৌদি টুরিজম কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায়।

২০২৬ সালের শেষ দিকে ট্রেনটির প্রথমবারের মতো রিয়াদ থেকে যাত্রা শুরু করবে। পাড়ি দেবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ। পথে এটি সৌদি আরবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কিছু প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থানে থামবে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থানগুলো। এ ছাড়া আরও একটি গোপন কিন্তু অসাধারণ গন্তব্যের কথা বলা হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে শিগগিরই সেই স্থানের নাম ঘোষণা করা হবে।

যাত্রীরা এক রাত বা দুই রাতের ভ্রমণ প্যাকেজ বেছে নিতে পারবেন এবং ট্রেনের ভেতরে ও বাইরে নানা অভিজ্ঞতা ও সেবা গ্রহণ করবেন।

ট্রেনটির অভ্যন্তরীণ নকশা তৈরি করেছেন লেবাননে জন্ম নেওয়া স্থপতি ও ডিজাইনার আলিন আসমার দ’আম্মান। তিনি ‘কালচার ইন আর্কিটেকচার স্টুডিও’ এর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নকশায় খোদাই করা কাঠ, বস্ত্রের ঐতিহ্যবাহী বুনন এবং সূক্ষ্ম টেক্সচার দিয়ে সাজানো ওই ট্রেনে সৌদি ও ইতালীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের নিশানায় অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ২৭
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার কিশোরী মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ভয়াবহ সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ফেলছে অনলাইন অপরাধী চক্র—এমন সতর্কতা দিয়েছে দেশটির পুলিশ। এসব মেয়েকে কখনো নিজেদের ওপর, কখনো ভাইবোন বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে একধরনের ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’-এর অংশ হিসেবে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশের কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট এই নতুন ও উদ্বেগজনক প্রবণতাকে ‘লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার এক বিকৃত নতুন রূপ’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং জানান, এমনটি বিশ্বজুড়েই দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি মোকাবিলায় একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় তিনজন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে এসব ঘটনায় কিশোরীরা কী ধরনের সহিংস কাজে যুক্ত হয়েছে তা বিস্তারিত জানানো হয়নি। কমিশনার ব্যারেট জানান—অভিযুক্তদের অনেকেই সহিংস চরমপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং মানুষকে আঘাত করা তাদের কাছে একধরনের ‘বিনোদন’।

এই অপরাধীদের বেশির ভাগই কিশোর বয়সের শেষভাগে বা বিশের কোঠায় থাকা পশ্চিমা দেশগুলোর তরুণ। তারা অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম রোবলক্স কিংবা মেসেজিং অ্যাপ ডিসকর্ড ও টেলগ্রাম-এর মাধ্যমে কিশোরী ও নাবালিকা মেয়েদের টার্গেট করে।

ব্যারেট জানান, এরা নিজেদের ‘ক্রাইমফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে পরিচয় দেয়। তাদের মতাদর্শের মধ্যে নিহিলিজম, স্যাডিজম, নাৎসিবাদ ও শয়তানবাদ পর্যন্ত রয়েছে। তারা সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা, আত্মসম্মানবোধ কম এমন মেয়েদের শিকার বানায়।

ব্যারেট বলেন, ‘এই দলগুলোর সংস্কৃতি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমিংয়ের মতো। তারা শিকার খোঁজে, অনুসরণ করে এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে তাদের জালে টেনে আনে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্মকাণ্ডের পেছনে আর্থিক লাভ বা যৌন উদ্দেশ্য নেই—এটা নিছক মজা, আমোদ বা অনলাইনে জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।’

বুধবার বিবিসি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৬০ জন সম্ভাব্য অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ও কানাডার (ফাইভ আইজ জোট) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সহায়তায় একটি এআই টুল তৈরি হচ্ছে, যা এনক্রিপ্টেড বার্তায় ব্যবহৃত ইমোজি বা গোপন স্ল্যাং বিশ্লেষণ করে এই ধরনের অপরাধ শনাক্ত করতে পারবে।

উল্লেখ্য, ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য বিশ্বে প্রথমবারের মতো আইন করে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। তবে নতুন আইন অনুযায়ী, গেমিং ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলো এখনই এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। আইনটি কার্যকর হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত