Ajker Patrika

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক তৎপরতায় দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার, ইসরায়েলই পেয়েছে ২১ বিলিয়ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ০১
যুক্তরাজ্যের ২৪ বছর বয়সী তরুণী জর্জিয়া টেইলর। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের ২৪ বছর বয়সী তরুণী জর্জিয়া টেইলর। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া বিপুল আর্থিক সহায়তা না থাকলে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারত না। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনের দেওয়া সহায়তার অঙ্ক ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’-এর নতুন দুই প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থ না পেলে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারত না, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে পারত না কিংবা ইয়েমেনে বারবার বিমান হামলা চালাতেও সক্ষম হতো না। এই বিশ্লেষণকে সমর্থন করেছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞও। তাঁদের মতে, গাজা এবং পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলের যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে পারত না যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও কূটনৈতিক সহায়তা ছাড়া।

মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ওমর এইচ রহমান আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল গাজা কিংবা অঞ্চলের অন্য কোথাও যুদ্ধ চালাতে পারত না। এ সহায়তা সব দিক থেকেই অপরিহার্য।’

শুধু গাজাতেই ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অগণিত মানুষ চাপা পড়ে আছে। এ ছাড়া ইয়েমেনে বিমান হামলায় ইসরায়েল কয়েক শ মানুষকে হত্যা করেছে। গত জুনে ইরানে হামলায় নিহত হয় হাজারের বেশি মানুষ।

দুই বছর আগে হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়। বন্দী হন দুই শতাধিক। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজা ধ্বংস করে দেয়। একই সঙ্গে অঞ্চলের যেকোনো বিরোধী শক্তিকে লক্ষ্য করে বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু করে। তারা পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে হামলা বাড়ায়, লেবাননে ৪ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে দেয়। লেবানন ও সিরিয়ার ভূমি দখল করে। দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বোমা মারে এবং ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইয়েমেনের হুতিদের সঙ্গেও সংঘাতে নামে। গবেষকেরা বলছেন, এসব যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইসরায়েলের স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রয়োজন হয়েছিল।

‘ইউএস মিলিটারি এইড অ্যান্ড আর্মস ট্রান্সফার্স টু ইসরায়েল, অক্টোবর ২০২৩–সেপ্টেম্বর ২০২৫’ শিরোনামের প্রতিবেদনে কুইন্সি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক উইলিয়াম ডি হার্টাং লিখেছেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিপুল ব্যয় বিবেচনায় পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, অস্ত্র আর রাজনৈতিক সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে কিংবা অন্যত্র সামরিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়েছে, তা সম্ভব হতো না।’

এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’ ও কুইন্সি ইনস্টিটিউট। কুইন্সি নিজেদের পরিচয় দেয় এমন এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে, যারা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে অবিরাম যুদ্ধ থেকে কূটনীতি ও সংযমের দিকে নিয়ে যেতে চায়। হার্টাংয়ের প্রতিবেদন এবং হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের বাজেট বিশেষজ্ঞ লিন্ডা জে বিলমেসের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা এবং অঞ্চলে নিজেদের সামরিক কর্মকাণ্ডে মোট ৩১ দশমিক ৩৫ থেকে ৩৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল একাধিক ফ্রন্টে দুই বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারত না। বিশ্লেষকেরাও এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। ওমর এইচ রহমান বলেন, ‘ইসরায়েল যা কিছু ঘটিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ছাড়া সম্ভব নয়। ইসরায়েল বিপুল পরিমাণ বোমা ফেলেছে। কিছু অস্ত্র তারা নিজেরা বানালেও বোমা তৈরি করে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া তাদের এসব ফেলার উপায় নেই।’

ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থক সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশি সাহায্যের ক্ষেত্রে ইসরায়েল সবচেয়ে বড় বার্ষিক প্রাপক (প্রায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার) এবং সবচেয়ে বড় মোট প্রাপকও (২০২২ পর্যন্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি)। প্রশাসন বদলালেও এই সমর্থনে পরিবর্তন আসেনি। হার্টাংয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাঁর উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনই বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছেন। এসব অস্ত্র ও সেবা আগামী বছরগুলোতে টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করা হবে।

ওমর এইচ রহমান বলেন, ‘এটাই হলো আসল চিত্র—একটি দেশ যেটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে আসছে, তাকে গণতান্ত্রিক পশ্চিমা বিশ্ব কোনো প্রশ্ন ছাড়াই সমর্থন দিয়েছে।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলকে সমর্থনের প্রবাহ ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে যখন গবেষকেরা গণহত্যা বলছেন, তখন মার্কিন জনগণের বড় অংশ ইসরায়েলের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। আমেরিকান ইহুদিদের মধ্যেও এ বিরূপতা বাড়ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপ অনুযায়ী, ১০ জনের মধ্যে চারজন ইহুদি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। ৬০ শতাংশের বেশি মনে করেন, গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে ইসরায়েল।

বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রবণতা ভবিষ্যতে মার্কিন রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির নির্বাহী সহসভাপতি ম্যাট ডাস বলেন, ‘কিছু সাবেক বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা হয়তো ভাবছেন, বিষয়টি তাঁদের মোকাবিলা করতে হবে না। কিন্তু তারা ভুল করছেন। ২০২৮ সালের নির্বাচনে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এড়িয়ে যেতে পারবে না যে, বাইডেন প্রশাসন গণহত্যা ঘটিয়েছে এবং এতে সহায়তা করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে সমালোচকেরা বলছেন, এই বিপুল অর্থসাহায্যের কারণে সাধারণ আমেরিকানরা হতাশ। কারণ, তাঁদের করের টাকা ইসরায়েলের যুদ্ধে ব্যয় হচ্ছে। ম্যাট ডাস বলেন, ‘বাজেট আসলে অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিষয়। অথচ আমেরিকানদের সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা সবচেয়ে দুর্বল। তবু ইসরায়েলের যুদ্ধে সহায়তা দিতে বিলিয়ন ডলার বের করা হয়। যে কেউ পারিবারিক বাজেট বোঝে, সে বুঝতে পারবে, বিষয়টি কতটা অন্তঃসারশূন্য।’

তিনি যোগ করেন, ‘এ শুধু ইসরায়েলের স্বার্থ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্প জটিলতার স্বার্থও বটে। কারণ এই সহায়তার বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো পাচ্ছে। তারা বিপুল মুনাফা করছে, হাতিয়ে নিচ্ছে অস্ত্র বিক্রির বাজার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনের আগেই চুক্তি চান ট্রাম্প, প্রস্তাব মানতে জেলেনস্কিকে আলটিমেটাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, বর্তমান রণক্ষেত্র অনুসারেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে। ছবিতে, হালকা গোলাপী রঙে চিহ্নিত অঞ্চলটি রাশিয়া দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, বর্তমান রণক্ষেত্র অনুসারেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে। ছবিতে, হালকা গোলাপী রঙে চিহ্নিত অঞ্চলটি রাশিয়া দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সময় বেঁধে দিয়েছেন, তাঁর প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তি মেনে নিতে। কারণ, ট্রাম্প আগামী বড় দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বরের আগেই একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তবে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন আলোচকেরা ইউক্রেনের নেতা ভ্লাদিমির জেলেনস্কিকে শান্তি প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার জন্য কয়েক দিন সময় দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে কিয়েভকে কিছু অনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড়দিনের আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছেন। খবরে বলা হয়েছে, জেলেনস্কি মার্কিন দূতদের বলেছেন—কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য তাঁর সময়ের প্রয়োজন।

যদিও ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, তিনি থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের মধ্যে একটি চুক্তি দেখতে চান, পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে তাঁর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নভেম্বরে এক শান্তি পরিকল্পনা উত্থাপন করেন, যাতে ইউক্রেনকে দনবাসের সেই অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়েছিল, যা বর্তমানে দেশটির নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিস্তৃত যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল।

সোমবার লন্ডন সফরকালে জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ‘একটি বড় ধরনের বাধার’ মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তবে তিনি যোগ করেছেন যে—ভূখণ্ড নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ইউক্রেন লড়াই না করে কোনো জমি ছেড়ে দিতে রাজি নয়।

রাশিয়ার সৈন্যরা ফ্রন্ট লাইনের বিভিন্ন অংশে দৃঢ়ভাবে অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে, আর ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা বলছেন—তাদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই এবং নতুন সৈন্যদের দিয়ে যুদ্ধের ক্ষতি পূরণ করতে তারা সংগ্রাম করছেন। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্রাসনোয়ার্মেইস্ক (পোকরোভস্ক) শহর মুক্তির ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দনবাসের এই শহরটিকে পরবর্তী আক্রমণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ‘সেতুবন্ধন’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

এদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ক্রমেই নাকাল হয়ে পড়ছে। এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে সেনাবাহিনী থেকে সদস্যদের পলায়ন ও অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি। সরকারি হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত বা পলাতক; এবং সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

অক্টোবরে ইউক্রেনীয় কৌঁসুলিরা জানান, রাশিয়া ২০২২ সালে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন এবং প্রায় ৫৪ হাজার সেনা পলায়ন করেছেন। গত বছর থেকে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি ১ লাখ ৭৬ হাজার এবং পলায়নের ২৫ হাজার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল জাজিরার প্রতিবেদন /যুদ্ধজয়ের আশা নেই, ইউক্রেনীয় বাহিনীতে পলাতক-অনুপস্থিত প্রায় ৩ লাখ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫২
ক্যাপ: ইউক্রেনের তৃতীয় স্বতন্ত্র আক্রমণ ব্রিগেডের সৈন্যদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে বেসামরিক মানুষ সামরিক পোশাক পরে কিয়েভ অঞ্চলে জমায়েত হন। ছবিটি চলতি বছরের ১২ জুলাই জুলাই তোলা। ছবি: এএফপি
ক্যাপ: ইউক্রেনের তৃতীয় স্বতন্ত্র আক্রমণ ব্রিগেডের সৈন্যদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে বেসামরিক মানুষ সামরিক পোশাক পরে কিয়েভ অঞ্চলে জমায়েত হন। ছবিটি চলতি বছরের ১২ জুলাই জুলাই তোলা। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ক্রমেই নাকাল হয়ে পড়ছে। এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে সেনাবাহিনী থেকে সদস্যদের পলায়ন ও অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি। সরকারি হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত বা পলাতক; এবং সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

তিমোফ। ইউক্রেনের ৩৬ বছর বয়সী এক অফিস সহায়ক। তাঁর হাতে ও আঙুলে এখনো বেগুনি রঙের ছোট ছোট বেশ কিছু ক্ষত রয়ে গেছে। ছয় মাস আগে সে একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পালিয়ে আসে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে। সে সময়ই হাতে এই ক্ষত তৈরি হয়। কিয়েভের এই যুবক জানান, গত এপ্রিলে তাকে জোর করে সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি পরপর দুবার পালিয়ে এসেছেন।

তিমোফ বলেন, সত্যিকারের লড়াইয়ের জন্য তাঁর প্রশিক্ষণ কতখানি অকার্যকর, তা বুঝেই তিনি পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বুঝতে পারেন, অনিবার্যভাবে তাঁকে ফ্রন্টলাইনের সৈন্য হতে হবে, যেখানে বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ থাকবে না। তিমোফ বলেন, ‘কোনো প্রশিক্ষণই দেওয়া হয় না। আমি প্রথম আক্রমণেই মারা যাব, তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না।’

তিনি দাবি করেন, তাঁর প্রশিক্ষকেরা বেশির ভাগ সময় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যাতে কেউ পালাতে না পারে, সেই চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। কেন্দ্রটি ছিল কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা একটি তিন মিটার প্রায় ১০ ফুট উঁচু কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত। তিমোফ বলেন, ‘একজন সৈনিক গুলি চালানো শিখল কি না, তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। তারা আমাকে একটি বন্দুক দিল, আমি লক্ষ্যের দিকে একটি গুলি ছুড়লাম, আর তারা আমার নামের পাশে একটি টিক চিহ্ন দিয়ে দিল।’ ব্যস প্রশিক্ষণ শেষ।

কর্তৃপক্ষের ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকায় তিমোফে তাঁর পদবি এবং ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখতে অনুরোধ করে। তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো পলাতক বা অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ আনা হয়নি। তাঁর ব্যাখ্যা খুব সহজ, ‘দেশের অর্ধেক মানুষ এখন পালাচ্ছে’, আর সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে এত সংখ্যক পলাতককে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই।

অক্টোবরে ইউক্রেনীয় কৌঁসুলিরা জানান, রাশিয়া ২০২২ সালে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন এবং প্রায় ৫৪ হাজার সেনা পলায়ন করেছেন। গত বছর থেকে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতি ১ লাখ ৭৬ হাজার এবং পলায়নের ২৫ হাজার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় কমান্ডার ভ্যালেন্তিন মাঙ্কো শনিবার ইউক্রেনীয় প্রাভদাকে বলেন, ‘এমনকি রাশিয়ায়ও এত বেশি সৈন্য অনুমতি ছাড়া পালিয়ে যায়।’ পলায়নের এই সংকট ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ক্রমেই চলে যাওয়ার মধ্যে সেনাকর্মীর মারাত্মক অভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

নভেম্বরে রাশিয়ার বাহিনী প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়, যার বেশির ভাগই পূর্ব ইউক্রেনে, আর ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা আবারও থমকে যায়। মাঙ্কো জানান, প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার পুরুষকে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয়, কিন্তু সব সামরিক ইউনিটকে ‘পুনরায় সচল’ করতে দরকার ৭০ হাজার সেনা।

যুদ্ধে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, একজন সেনা সামরিক ইউনিট ছেড়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে পলায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন এবং তার ৫ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। আর অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতির শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত জেল। অনেকেই জেলকে বেছে নিচ্ছেন।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের সাবেক উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর রোমানেনকো বলেন, ‘আমাদের পলাতক সৈন্য এবং অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়া সেনার সংখ্যা খুবই বেশি।’ তিনি বলেন, ‘তারা ভাবে—আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে ফ্রন্টলাইনে যাওয়ার চেয়ে জেলে যাওয়া সহজ।’ রোমানেনকো দীর্ঘদিন ধরে কঠোর যুদ্ধকালীন আইন চালু করার এবং পলাতক ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের জন্য কঠোর শাস্তির পক্ষে সওয়াল করছেন। তাঁর বিশ্বাস, তাদের জেলে না পাঠিয়ে ফ্রন্টলাইনে পাঠানো উচিত।

পলায়ন এবং অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়ার মধ্যে আইনি পার্থক্য হলো ‘চিরতরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য।’ তবে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকার প্রথমবার পলায়নকারীদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেছে। যার ফলে তারা কোনো শাস্তি ছাড়াই তাদের ইউনিটে ফিরে আসতে পারে। সামরিক কর্তৃপক্ষ এবং তাদের কমান্ডিং অফিসারদের দয়ার ওপর ভরসা করে প্রায় ৩০ হাজার সেনা ফিরে এসেছেন।

দক্ষিণ ইউক্রেনের একটি সামরিক ইউনিটের এক মনোবিজ্ঞানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘তাদের প্রতি এখন আরও বেশি সহানুভূতি দেখানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পলায়ন সব সময় মৃত্যুর ভয়ের কারণে হয় না, বরং বেশির ভাগ সময়েই মনোযোগহীন কমান্ডিং অফিসারদের কারণে হয়, যারা তাদের সেনাদের সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলে, তাদের কমান্ডার তাদের ছুটিতে যেতে দেননি, তাদের অসুস্থ আত্মীয়দের দেখতে যেতে দেননি, এমনকি বিয়ে করতেও দেননি।’

এদিকে সামরিক পুলিশ বাহিনীতে লোকবলের মারাত্মক অভাব রয়েছে এবং আদালতের আদেশ ছাড়া তারা কোনো সেনাকে আটক করতে পারে না। ফলে অনুমতি ছাড়া সেনাবাহিনী ছেড়ে যাওয়া কিংবা পালিয়ে যাওয়া সেনারা খুব বেশি ধরাও পড়ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানকে ঘিরে চীনা-রুশ যুদ্ধবিমানের চক্কর—অভিযোগ টোকিওর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫১
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ট্রাক বলে পরিচিত কৌশলগত বোমারু বিমান টুপোলভ–৯৫। ছবি: তাস
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ট্রাক বলে পরিচিত কৌশলগত বোমারু বিমান টুপোলভ–৯৫। ছবি: তাস

জাপানকে ঘিরে রাশিয়া ও চীনের যুদ্ধবিমান যৌথভাবে টহল দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে টোকিও। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে জানিয়েছে, রাশিয়া ও চীনের বিমানবাহিনী দেশটির চারপাশ দিয়ে যৌথ টহল দেওয়ায় তারাও নজরদারি চালানোর জন্য যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। টোকিও এবং বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আবহে এই ঘটনা ঘটল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুটি পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম টুপোলভ-৯৫ কৌশলগত বোমারু বিমান জাপান সাগর থেকে পূর্ব চীন সাগরের দিকে উড়ে যায় এবং সেখানে দুটি চীনা এইচ-৬ বোমারু বিমানের সঙ্গে মিলিত হয়। এরপর তারা প্রশান্ত মহাসাগরে একটি ‘দীর্ঘ দূরত্বের যৌথ উড্ডয়ন’ সম্পন্ন করে।

টোকিও আরও জানিয়েছে, বোমারু বিমানগুলো যখন জাপানের ওকিনাওয়া এবং মিয়াকো দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে চক্কর কেটে যাচ্ছিল, তখন চারটি চীনা জে-১৬ যুদ্ধবিমান তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এই দুটি দ্বীপের মধ্যবর্তী মিয়াকো প্রণালি আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে বিবেচিত। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, জাপান সাগরে একই সময়ে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর আরও কার্যকলাপ শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি আর্লি-ওয়ার্নিং বিমান এ-৫০ এবং দুটি এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান ছিল।

জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বুধবার এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘রাশিয়া ও চীনের যৌথ অভিযানগুলো স্পষ্টতই আমাদের জাতির বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে, যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’ ইজুমি যোগ করেন, জাপানের যুদ্ধবিমানগুলো ‘আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা কঠোরভাবে কার্যকর করেছে।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, জাপানের কাছে রাশিয়া-চীনের যৌথ এই উড্ডয়ন আট ঘণ্টা ধরে চলেছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীও মঙ্গলবার জানিয়েছে, সাতটি রুশ বিমান ও দুটি চীনা বিমান তাদের বিমান প্রতিরক্ষা সীমায় প্রবেশ করেছিল।

জাপান রোববার জানায়, এর আগের দিন চীনা বিমানবাহী জাহাজ থেকে উৎক্ষেপিত যুদ্ধবিমান জাপানি সামরিক বিমান লক্ষ্য করে রাডার তাক করেছিল; যদিও বেইজিং সেই দাবি অস্বীকার করেছে। গত মাসে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যের পর জাপানের কাছাকাছি বেইজিংয়ের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেল। সানায়ে বলেছিলেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনা সামরিক পদক্ষেপ যদি জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে, তবে টোকিও তার প্রত্যুত্তর দিতে পারে।

চীন ও রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যান্য স্থানে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। এর মধ্যে রুশ ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী প্রশিক্ষণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে লাইভ ফায়ার নৌ মহড়ার মতো যৌথ অভিযান অন্তর্ভুক্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চলতি বছর ৮৫ হাজারের বেশি অভিবাসীর ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৭
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ১ বছরেরও কম সময়ে ৮৫ হাজারের বেশি মার্কিন ভিসা বাতিল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন মঙ্গলবার জানিয়েছে, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে অন্তত ৮৫ হাজার মার্কিন ভিসা (সব ক্যাটাগরির) বাতিল করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকে ট্রাম্প প্রশাসন এই ভিসাগুলো বাতিল করেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় অর্ধেক ভিসা বাতিলের অভিযোগ মাদক বা অন্য নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, আক্রমণ, এবং চুরির মতো অপরাধের কারণে হয়েছে। কর্মকর্তাটি আরও জানান, ভিসা বাতিলের এই সংখ্যাটি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে গত বছরের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।

সাম্প্রতিককালে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে যে—তারা ডানপন্থী মার্কিন রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্কের মৃত্যু উদযাপনকারী কয়েকজনের ভিসা বাতিল করেছে।

বাতিল হওয়া ভিসাগুলোর প্রায় ১০ শতাংশ ছিল শিক্ষার্থীদের, যা সংখ্যায় ৮ হাজারের বেশি।

যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, সেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধের মতো বিষয়ে ক্যাম্পাসে তাদের সক্রিয়তার কারণে লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।

২৯ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত একটি নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, এই ধরনের ‘বহিরাগত শিক্ষার্থীদের’ ইহুদি-বিরোধী হিসেবে দেখা হচ্ছে, এবং প্রয়োজন হলে, ‘এই বহিরাগতদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য’ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ফিলিস্তিনপন্থী কাজকর্মের জন্য যাদের বহিষ্কারের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, সেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রঞ্জনি শ্রীনিবাসন এবং রুমেইসা ওজতুর্ক, সেইসাথে মাহমুদ খলিলের মতো শিক্ষার্থীরা, যারা স্থায়ী বৈধ বাসিন্দা ছিলেন।

সমালোচকরা বলেছেন, নিজের মতামত প্রকাশের জন্য বহিষ্কার করাটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন, এবং ফিলিস্তিন-পন্থী সক্রিয়তার জন্য লক্ষ্যবস্তু হওয়া অনেক শিক্ষার্থীই এর বিরুদ্ধে লড়াই করে সফল হয়েছেন।

আগস্ট মাসে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছিল, তারা ৬ হাজার ভিসা বাতিল করেছে, এবং বাতিল হওয়া ভিসাগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ নাকি শিক্ষার্থীদের মার্কিন আইন লঙ্ঘনের কারণে হয়েছে, যার অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পরেও অবস্থান, চুরি, আক্রমণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, এবং সন্ত্রাসবাদে সমর্থন।

তবে, কেবল দেশের অভ্যন্তরের বিদেশী নাগরিকরাই লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন না। জুন মাস থেকে, সম্ভাব্য ছাত্র ভিসার আবেদনকারীরা তাদের রাজনৈতিক মতামত যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান কঠোরতার সম্মুখীন হচ্ছেন।

মার্কিন সরকার এইচ১-বি ভিসা ধারীদের আরও বেশি করে যাচাই করার, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে শরণার্থী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পাওয়া ব্যক্তিদের পুনঃসাক্ষাৎকার নেওয়ার, এবং সম্পূর্ণ বা আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়া দেশগুলোর তালিকা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

প্রশাসন এইচ১-বি ভিসার খরচও বাড়িয়েছে যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে চাওয়া বিদেশী নাগরিকদের কাছে এটি কম আকর্ষণীয় হয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্সির সময় তাঁর প্রধান এজেন্ডাগুলোর একটি ছিল অভিবাসীদের লক্ষ্য করা। ট্রাম্প তথাকথিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয়, আরও পরিমার্জিত সংস্করণ কার্যকর করেছিলেন এবং দেশে শরণার্থীদের প্রবেশাধিকারকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছেন।

মার্কিন সীমান্তে প্রবেশকারী মানুষের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে থাকা ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের বহিষ্কার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করার চেষ্টা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন আফগান এবং সিরিয়ান নাগরিকদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু করে অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদা (টিপিএস) অপসারণের চেষ্টাও করেছে, যা গৃহযুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অস্থায়ীভাবে দেশে থাকার অনুমতিপ্রাপ্ত বিদেশী নাগরিকদের দেওয়া হয়েছিল।

মিডল ইস্ট আই স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত কোনো উত্তর পায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত