Ajker Patrika

পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধনে ক্ষুব্ধ আরেক বিচারপতির পদত্যাগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা। ছবি: সংগৃহীত
লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা। ছবি: সংগৃহীত

সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস করেছে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। এর জেরে গত বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এরপর আজ শনিবার লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিতর্কিত ২৭তম সংশোধনীর পর দেশের কোনো হাইকোর্ট থেকে পদত্যাগ করা প্রথম বিচারপতি তিনি।

বিচারপতি শামস মাহমুদের পরিবারসূত্রে জানা গেছে, তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন, সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনের পর ‘বিবেকের তাড়নায় আর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না’।

বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা ২০১৪ সালের মার্চে লাহোর হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল ২০২৮ সালের ৬ মার্চ।

তিনি প্রয়াত বিচারপতি জিয়া মাহমুদ মির্জার পুত্র। বিচারপতি জিয়া ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফারুক আহমদ খান লাঘারি যখন বেনজির ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন, তখন সাত বিচারপতির মধ্যে একমাত্র বিচারপতি জিয়া ভিন্নমত (ডিসেন্টিং) পোষণ করেছিলেন। তিনি তাঁর রায়ে মত দেন, লাঘারির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ছিল।

প্রসঙ্গত, সে সময় পাকিস্তানের সংবিধানের ৫৮(২)(বি) অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত সরকার বরখাস্ত করার ক্ষমতা দিত। পরে ১৮তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি বাতিল করা হয়।

লাহোর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এলএইচসিবিএ) এক বিবৃতিতে বিচারপতি মির্জার পদত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনীর কঠোর সমালোচনা করেছে। অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করে, সংশোধনীটি ‘উচ্চ আদালতকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে’ এবং ‘সংবিধানের কবর রচনা করেছে’।

এলএইচসিবিএ অন্য বিচারপতিদেরও একই পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, যেসব বিচারপতি সংবিধানের প্রতি আনুগত্য রেখে শপথ নিয়েছেন, তাঁরা যদি পদত্যাগ করেন, পুরো আইনি সম্প্রদায় তাঁদের সম্মান জানাবে।

অ্যাসোসিয়েশন সোমবার পূর্ণ দিবস ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিন জরুরি মামলার শুনানি বাদে আদালতের সব কার্যক্রম বর্জন করবেন আইনজীবীরা।

বিচারপতি মির্জার পদত্যাগটি আসে সংশোধনী পাস হওয়ার দুই দিন পর। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (আইসিজে) এই ২৭তম সংশোধনীকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র দুই বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও আতহার মিনাল্লাহ পদত্যাগ করেন। তাঁরা দুজনেই ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র ভাষায় লেখা পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সম্ভাব্য বদলির গুজবের মধ্যে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মোহসিন আখতার কায়ানি ও বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়াজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী মাস থেকে তাঁরা ফেডারেল রাজধানীতে মামলা শুনানির জন্য উপস্থিত না-ও থাকতে পারেন।

নতুন ২৭তম সংশোধনী পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থায় দুটি বড় পরিবর্তন এনেছে। প্রথম, সংবিধান-বিষয়ক মামলা। দ্বিতীয়ত, বিচারপতিদের বদলি।

এই সংশোধনী অনুযায়ী, পাকিস্তানের জুডিশিয়াল কমিশন এখন বিচারপতিদের সম্মতি ছাড়াই হাইকোর্টের বিচারপতিদের এক আদালত থেকে অন্য আদালতে বদলি করতে পারবে। বিচার বিভাগের একটি অংশ বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে।

সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হলো ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট (এফসিসি) গঠন করা। দেশটির আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আদালত সুপ্রিম কোর্টকে কার্যত দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক বিচারিক কর্তৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।

এফসিসি এখন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে এবং এর সিদ্ধান্তগুলো সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।

নতুন ১৮৯ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টকে এখন কেবল নাগরিক (সিভিল) মামলার সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেক্সিকোতে জেন-জি বিক্ষোভ, পুলিশের বলপ্রয়োগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২১
মেক্সিকো সিটিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি: এএফপি
মেক্সিকো সিটিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি: এএফপি

মেক্সিকোজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান অপরাধ, দুর্নীতি আর আইনের শাসনের অভাবের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন জেনারেশন জেডের তরুণেরা। এই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে বল প্রয়োগ করেছে পুলিশ। খবর আল জাজিরার

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবারের মিছিলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশ নেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবীণ কর্মী ছাড়াও অংশ নেন মিচোয়াকান রাজ্যের নিহত মেয়র কার্লোস মানসোর সমর্থকেরা। চলতি মাসের শুরুর দিকে ডে অব দ্য ডেড উৎসবের এক জনসমাগমে তাঁকে গুলিতে হত্যা করা হয়।

মেক্সিকো সিটিতে মুখোশধারী কয়েকজন বিক্ষোভকারী জাতীয় প্রাসাদের চারপাশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেললে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ওই প্রাসাদেই থাকেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।

মেক্সিকো সিটির জননিরাপত্তা সচিব পাবলো ভাসকেস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনাটিতে ১০০ পুলিশ আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আরও ২০ জন সাধারণ মানুষও আহত হয়েছে বলে ভাসকেস স্থানীয় গণমাধ্যম মিলেনিওকে জানান। তিনি বলেন, ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ২০ জনকে প্রশাসনিক অপরাধের কারণে আটক দেখানো হয়েছে।

মেক্সিকোর দৈনিক এল ইউনিভার্সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রাসাদের সীমানায় ঢুকে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং পাথর নিক্ষেপ করে। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, পুলিশ কয়েক মিনিট ধরে জোকালো প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর এলাকা খালি করে দেয় এবং শেষ দলটিকেও ছত্রভঙ্গ করে।

বিক্ষোভের আয়োজন করে ‘জেনারেশন জেড মেক্সিকো’ নামে একটি গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো তাদের ‘ঘোষণাপত্রে’ বলা হয়, তারা দলনিরপেক্ষ এবং সহিংসতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ মেক্সিকোর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স এবং ধনকুবের রিকার্দো সালিনাস প্লিয়েগো বিক্ষোভের পক্ষে প্রকাশ্যে বার্তা দেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের অভিযোগ, ডানপন্থী দলগুলো জেন-জি আন্দোলনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বট ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।

এই বছর এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশেও জেন জেড প্রজন্ম বৈষম্য, গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপসারণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেপ্টেম্বরে নেপালে জেন-জি আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। মাদাগাস্কারেও একই মাসে বড় বিক্ষোভ হয়। পানির সংকট ও বিদ্যুতের স্থায়ী ঘাটতিতে ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন সরকারের বৃহত্তর ব্যর্থতা ও দুর্নীতি উন্মোচন করে দেয়। সপ্তাহজুড়ে অস্থিরতার পর সরকার ভেঙে যায়, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালান এবং নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানে আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের হায়দরাবাদ এলাকায় একটি আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের হায়দরাবাদ এলাকায় একটি আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদের লতিফাবাদ এলাকার এক আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় আহত ছয়জন এখনো চিকিৎসাধীন। গতকাল শনিবার গভীর রাতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের।

বিস্ফোরণের পরপরই লতিফাবাদ সহকারী কমিশনার সাউদ লুন্দ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন। চার-পাঁচ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ পরে উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও চারটি মরদেহ বের করেন। এতে মৃতের সংখ্যা প্রথমে ছয়ে পৌঁছায়। সর্বশেষ আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করায় তা বেড়ে সাত হয়েছে।

হায়দরাবাদের মেয়র কাশিফ আলী শোরো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অবৈধ কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এর আগে সাউদ লুন্দ জানান, ওই বাড়িতে লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে আতশবাজি তৈরি করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘যে কক্ষে আতশবাজি বানানো হচ্ছিল, বিস্ফোরণে সেই ঘরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো ঘরটি এবং সীমানা প্রাচীর ধসে পড়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, কয়েকজন শিশুসহ বেশ কয়েকজন ভেতরে কাজ করছিল। আমাদের দল তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছে।’

বিস্ফোরণের পরই আগুন ধরে যায় এবং ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পরপরই সেই ঘরসহ পাশের অন্যান্য অংশেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দল এখনো আগুন নেভানোর কাজ করছে।

এদিকে, সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র। মুখ্যমন্ত্রী কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কেও অডিট করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ বলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবহেলা বরদাশত করা হবে না।

এ ধরনের আরেকটি বিস্ফোরণ এর আগে চলতি বছরের আগস্টে করাচির সাদ্দারে একটি আতশবাজির গুদামে হয়েছিল। ওই ঘটনায় ছয়জন নিহত হন, আরও কয়েকজন আহত হন। দোতলা ভবনটিতে আতশবাজির গুদামের পাশাপাশি চিকিৎসাসামগ্রীর দোকানও ছিল।

এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা বিপুল পরিমাণ আতশবাজি এলোমেলোভাবে ও কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই মজুত করেছিলেন। তাদের অবহেলা ও বেপরোয়া আচরণের কারণেই মূল্যবান জীবনহানি, আহত হওয়ার ঘটনা এবং বড় ধরনের সম্পদহানি ঘটে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের একজন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। আরেকজন, যিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, বিস্ফোরণের পর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিহার ভোটে বিশ্বব্যাংকের ঋণসহ ৪০ হাজার কোটি রুপি ছড়িয়েছে বিজেপি, অভিযোগ পিকের দলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পিকের (পেছনে) দল জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিংহ (মাঝে) বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে বিহারে নির্বাচনের আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার অভিযোগ তুলেছেন। ছবি: সংগৃহীত
পিকের (পেছনে) দল জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিংহ (মাঝে) বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে বিহারে নির্বাচনের আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার অভিযোগ তুলেছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ার খ্যাত প্রশান্ত কিশোরের দল জন সুরাজ পার্টি অভিযোগ করেছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের ১৪ হাজার কোটি রুপির ঋণ ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন ‘ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার’ জন্য ব্যবহার করেছে। কেবল তাই নয়, নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিজেপি ও নিতীশ কুমারের জোট জনগণের ভোট কিনতে ৪০ হাজার কোটি রুপি ব্যয় করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, দলের প্রথম নির্বাচনে একটিও আসন না পেয়ে পরদিন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিং। তিনি দাবি করেন, ওই অর্থ ‘ভোট কেনার উদ্দেশ্যে নানা অনুদান ও মুফতে ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’

উদয় সিং বলেন, ‘জুন থেকে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি রুপি উড়িয়ে দিয়েছে নিতীশ সরকার। টাকার জোরে জনগণের ভোট কেনার এই খরচ ছিল নজিরহীন।’ তাঁর অভিযোগ, ‘বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া ১৪ হাজার কোটি রুপি পর্যন্ত ভোট কেনার খাতে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’র উদাহরণ তুলে ধরেন, যার আওতায় দুই ধাপের ভোট শুরুর আগে প্রতিটি নারীর ব্যাংক হিসাবে ১০ হাজার রুপি করে পাঠানো হয়। উদয় সিং-এর ভাষায়,

‘জীবনে এই প্রথম দেখলাম ভোটের এক দিন আগ পর্যন্ত টাকা ঢুকেছে, অথচ তখন আদর্শ আচরণবিধি চলছিল। দিন এনে দিন খাওয়া অসংখ্য নারীর ওপর এর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।’

তাঁর দাবি, জনসাধারণের টাকা এমনভাবে না উড়ালে বিজেপি–নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবার বিহারে টিকতেই পারত না। উদয় সিং আরও বলেন, ‘জন সুরাজ পার্টি দুই হাজার রুপি বার্ধক্য ভাতা ঘোষণা করার পরই সরকার তার ভাতাটা ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ১১০০ করল। এর আগেও তো করেনি।’

তাঁর বক্তব্য, দলের অনেক সম্ভাব্য সমর্থক শেষ পর্যন্ত এনডিএকে ভোট দিয়েছেন আরজেডি ক্ষমতায় এলে ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরে আসতে পারে—এই ভয়ে। তিনি বলেন,‘আমি বলছি না যে জঙ্গলরাজ ছিল। কিন্তু ভয়টা ছিল। অনেকেই আমাদের সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভয়ের কারণেই এনডিএকে ভোট দিলেন।’

দলের আরেক নেতা পবন ভার্মাও একই অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, টাকা এসেছে বিশ্বব্যাংকের ২১ হাজার কোটি রুপির একটি প্রকল্প থেকে। ভার্মা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘বিহারের সরকারি এখন ৪ লাখ ৬ হাজার কোটি রুপি। দৈনিক সুদের পরিমাণ ৬৩ কোটি। কোষাগার খালি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, ভুলও হতে পারে, নারীদের যে ১০ হাজার রুপি দেওয়া হয়েছে, তা ওই ২১ হাজার কোটি থেকে এসেছে, যা অন্য প্রকল্পের জন্য দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি জারি হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ১৪ হাজার কোটি রুপি তুলে ১ কোটি ২৫ লাখ নারীর মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,‘তথ্য ভুল হলে আমি ক্ষমা চাই। কিন্তু যদি সত্যি হয়, প্রশ্ন দাঁড়ায়—এটা কতটা নৈতিক? আইনের দিক দিয়ে হয়তো কিছু করা যাবে না। সরকার চাইলে টাকা ঘুরিয়ে নিয়ে পরে ব্যাখ্যা দিতে পারে। ব্যাখ্যা আসবেই, তবে সেটা নির্বাচনের পরে।’

এনডিএ কিংবা বিহার সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরএসএফ–এর কাছ থেকে দারফুরের দুই অঞ্চল কেড়ে নিল সুদানি সেনাবাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতিবেশী দেশ চাদের ঔরে কাসিনি শরণার্থী শিবিরে এক সুদানি শিশু। ছবি: এএফপি
প্রতিবেশী দেশ চাদের ঔরে কাসিনি শরণার্থী শিবিরে এক সুদানি শিশু। ছবি: এএফপি

সরকার সমর্থিত সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) উত্তর করদোফান রাজ্যের দুটি এলাকা বিদ্রোহী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে। এর মধ্যেই দারফুরের এল–ফাশারে গণহত্যার প্রমাণ গোপন করতে আরএসএফ সদস্যদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা ও মাটিতে পুঁতে রাখার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

সপ্তাহজুড়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সেনাসদস্যরা অ্যাসল্ট রাইফেল ও রকেটচালিত গ্রেনেড হাতে কাজকিল ও উম দাম হাজ আহমেদ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখলের পর উদযাপন করছে। উত্তর করদোফান রাজ্যের এসব এলাকাতেই সামনের সপ্তাহগুলোতে তীব্র লড়াই চলার আশঙ্কা রয়েছে।

গত অক্টোবরের শেষ দিকে আরএসএফ–এর দখলে যাওয়া কাজকিল এলাকা এল–ওবেইদের দক্ষিণে অবস্থিত। রাজ্যের এই কৌশলগত রাজধানী দখলের চেষ্টা করছে আরএসএফ।

এই লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের উত্তরাঞ্চলজুড়ে। তৃতীয় বছরে গড়ানো এই নির্মম গৃহযুদ্ধে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর অস্ত্রসহায়তাও আগুনে ঘি ঢালছে।

জাতিসংঘ বলছে, এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকট। ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। নিহত–আহতের সংখ্যা কয়েক দশ হাজার ছুঁয়েছে। দেশটির বেশ কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আরএসএফ গত সপ্তাহে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তারা গ্রহণ করেছে। এর আগে এল–ফাশারে আরএসএফ–এর নৃশংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে তীব্র নিন্দা আসে। এল–ফাশার পশ্চিম সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী।

তবে বর্তমান যুদ্ধরেখার মধ্যে সেনাবাহিনী এই যুদ্ধবিরতি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। দুই পক্ষই দেশের মধ্যাঞ্চলে নতুন করে সেনা ও অস্ত্র জড়ো করছে, যাতে আরও বড় সংঘর্ষে নামা যায়।

আরএসএফ গত মাসের শেষ দিকে এল–ফাশার দখলের পাশাপাশি কর্ডোফান অঞ্চলেও হামলা চালায়। তখনই তারা নর্থ কর্ডোফানের বারাহ শহর দখল করে, যা দারফুর ও মধ্য সুদানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। মাত্র দুই মাস আগেই সেনাবাহিনী ওই শহর পুনর্দখল করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত