Ajker Patrika

ফতোয়ায় বন্ধ হলো পাকিস্তানের প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৪, ১১: ৫৫
Thumbnail image

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলামি মুফতির দেওয়া ফতোয়ার ভিত্তিতে বন্ধ হয়ে গেছে এই সুবিধা। চালু হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে এই মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচিতে অবস্থিত সিন্ধ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড নিওন্যাটোলজি (এসআইসিএইচএন) কয়েক সপ্তাহ আগে এই মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালু করেছিল। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ও পাকিস্তান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় স্থাপন করা হয়েছিল এটি। গত ১২ জুন এই ব্যাংকটি উদ্বোধন করা হয়। 

সিন্ধু প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আজরা পেচুহো এই ব্যাংকের উদ্বোধন করেন। এ সময় ইউনিসেফ ও পাকিস্তান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সে সময় করাচির অন্যতম ধর্মীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া দারুল উলূম করাচি এই মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক চালুর বিষয়ে ফতোয়া বা ধর্মীয় বিধানের আলোকে অনুমতি দিয়েছিল। 

পরে এই ব্যাংক এক বিবৃতিতে জামিয়া দারুল উলুমের অনুমতির বিষয়টিও উল্লেখ করেছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, জামিয়া দারুল উলূম করাচি তাদের ‘প্রয়োজনীয় ধর্মীয় অনুমোদন’ দিয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের প্রচেষ্টা ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিশ্চিত করার জন্য এই ফতোয়া গুরুত্বপূর্ণ।’ 

তবে তার পরও পাকিস্তানজুড়ে বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্কের শুরু হয়। বিশেষ করে ইসলামি ‘দুধমা’ বিধানের আলোকে অনেকে বিষয়টি বিবেচনা করতে থাকেন। ইসলামি বিধান অনুসারে, যারা একই নারীর স্তন্যপান করে, তাদের দুধভাই ও দুধবোন বলা হয়। এই দুধভাই ও দুধবোনের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। আর এ বিষয়টি নিয়েই বাধে গোল। 

এ বিষয়ে রাওয়ালপিন্ডিভিত্তিক বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ মুফতি সৈয়দ কায়সার হুসাইন তিরমিজি বলেন, ‘এই সম্পর্ক (দুধপানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক) রক্তের বন্ধনের অনুরূপ, যা ইসলামি আইনি কাঠামোর মধ্যে একই নারীর বুকের দুধ খাওয়া ভাই-বোনের মধ্যে বিয়েকে নিষিদ্ধ করে।’ তবে অনেক ধর্মতাত্ত্বিক দাবি করেন, ‘দুধের আত্মীয়তার’ সম্পর্ক তখনই ঘটে, যখন শিশুদের সরাসরি স্তন থেকে দুধ পান করানো হয়। অনেক তাত্ত্বিক আবার এর সঙ্গে একমত নন। 

কিছুদিন আগে করাচিভিত্তিক পাকিস্তানের ফেডারেল শরিয়াহ আদালতের সাবেক বিচারক ও নেতৃস্থানীয় ইসলামি তাত্ত্বিক মুফতি ত্বকি ওসমানি ‘মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক’ অবৈধ ঘোষণা করে একটি ফতোয়া জারি করেছেন। এই ফতোয়ার পর করাচির জামিয়া দারুল উলুম তার অবস্থান পরিবর্তন করে। এর পরই বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানের প্রথম মাতৃদুগ্ধ কেন্দ্র। 

পাকিস্তান উলামা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হাফিজ মুহাম্মদ তাহির মেহমুদ আশরাফি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘যেসব চিকিৎসক মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য হয়তো সরল, কিন্তু আমরা জামিয়া দারুল উলুম করাচির সঙ্গে একমত এবং মনে করি না, এটাকে উৎসাহিত করা দরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত