Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে নিরাপত্তাঝুঁকিতে পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৯
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যে ইরানে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকেরা মালপত্রসহ কোয়েটায় ফিরছেন। ছবি: এএফপি
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যে ইরানে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকেরা মালপত্রসহ কোয়েটায় ফিরছেন। ছবি: এএফপি

দিন যত গড়াচ্ছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল পরিস্থিতি। দিন দিন তীব্র হচ্ছে হামলার মাত্রা। চলমান এই পরিস্থিতিতে দেশে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের সঙ্গে ৯০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের। বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে ইরানের আকাশের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইসরায়েলের হাতে চলে গেলে পাকিস্তানও নিজেকে অনিরাপদ মনে করবে। কারণ, পাকিস্তান ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তেল আবিবকে যে ইসলামাবাদ শত্রু মনে করে, সেটিও গোপন নয়।

বার্মিংহাম স্কলার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক করিম আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েল ইরানের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা ভারসাম্য পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই পাকিস্তান কখনোই চাইবে না ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করুক।’

এদিকে ইরানের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক বেশ জটিল। বহু বছর ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে অবনতি হয় গত বছর। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তাদের ভাষ্য ছিল, বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘জইশ আল-আদল’-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানও একই দাবিতে ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালায়। জানায়, ইরানি ভূখণ্ডে বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তারা। পরে অবশ্য দুপক্ষ সংযত হয়।

গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরপরই নেতানিয়াহু প্রশাসনের এই পদক্ষেপের নিন্দাও জানিয়েছে পাকিস্তান। যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতায়ও আগ্রহী বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

তবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। বেলুচিস্তানে সম্ভাব্য অস্থিরতাই পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল রাজনৈতিকভাবে বেশ উত্তপ্ত। প্রদেশটি আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড়, কিন্তু জনসংখ্যা সবচেয়ে কম। প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস সেখানে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে অন্তত পাঁচবার বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ হয়েছে। কখনো অধিকতর সম্পদ-বণ্টন আবার কখনো স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন বিদ্রোহীরা। এর জেরে অঞ্চলটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে সামরিক দমন-পীড়ন।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক গবেষক আবদুল বাসিত আল জাজিরাকে বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগে ইরানে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। যদিও সীমান্ত বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান। কিন্তু এই পদক্ষেপ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রবেশ কতটা ঠেকাতে পারবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।’

ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইহসানুল্লাহ টিপু মেহসুদ মনে করিয়ে দেন, অতীতে পাকিস্তান আঞ্চলিক যুদ্ধে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যেমন আফগানিস্তান যুদ্ধে। তবে এবার পরিস্থিতি আলাদা। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি হলেও পাকিস্তানে প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ শতাংশ শিয়া। তাঁর মতে, ‘পাকিস্তান আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার শিকার। শিয়া-অধ্যুষিত ইরানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সামরিক অবস্থান নিলে তা দেশীয়ভাবে বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত