Ajker Patrika

নিম্নকক্ষেও পাস পাকিস্তান সংবিধানের বিতর্কিত সংশোধনী, ইমরান খানের দলের বর্জন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট দেশটির সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস করেছে। এই বিতর্কিত সংশোধনী দেশটির সেনাপ্রধানের ক্ষমতা আরও বাড়াবে এবং তাঁকে আজীবন আইনি দায়মুক্তি দেবে। একই সঙ্গে এটি সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতাও সীমিত করবে। সমালোচকেরা একে ‘গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তথা জাতীয় পরিষদে বিলটি পাস হয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির—যিনি দেশটির ডি–ফ্যাক্টো শাসক হিসেবে পরিচিত—এই ২৭ তম সংশোধনীর প্রধান উপকারভোগী।

বিলটি এখন সামান্য পরিবর্তনের জন্য সিনেটে ফেরত পাঠানো হবে। এর আগে উচ্চকক্ষ সিনেট গত সোমবার এটি অনুমোদন করে। এরপর প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এতে স্বাক্ষর করলে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।

এই সংশোধনীর অধীনে এ বছর শুরুর দিকে পাঁচ তারকাবিশিষ্ট জেনারেল হিসেবে মনোনীত হওয়া সেনাপ্রধান আসিম মুনির অভূতপূর্ব ক্ষমতা অর্জন করবেন। তাঁকে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস—নামে নতুন একটি পদে উন্নীত করা হবে। এর ফলে তিনি কেবল সেনাবাহিনীই নয়, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি তাঁকে আজীবন ফৌজদারি বিচারের হাত থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাঙ্কট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ‘The Army and Democracy: Military Politics in Pakistan’—বইয়ের লেখক আকিল শাহ বলেছেন, মুনির ‘সাংবিধানিকভাবে অভূতপূর্ব এক সুরক্ষিত পদ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজে ও ভবিষ্যতের সেনাপ্রধানদের ক্ষমতায় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’ তিনি বলেন, সংশোধনীতে দেওয়া দায়মুক্তি ‘নাগরিক কর্তৃত্বের নীতিকে উপহাসে পরিণত করেছে, কারণ এটি তাকে সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছে।’

এই সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যপরিধিও ব্যাপকভাবে খর্ব করেছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রে এই প্রতিষ্ঠানটিই এত দিন নির্বাহী ক্ষমতার একমাত্র নিয়ামক হিসেবে টিকে ছিল। সংশোধনী অনুযায়ী—সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বে একটি নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠন করা হবে, যার বিচারপতিদের মনোনয়ন দেবে নির্বাহী বিভাগ। সমালোচকেরা বলছেন, এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অবশিষ্ট প্রতীকটিও ভেঙে পড়বে। বিচারপতিদের বদলি বা স্থানান্তর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও এখন থেকে এককভাবে প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে, ফলে বিচার বিভাগে জবাবদিহির ধারণা পুরোপুরি বিলুপ্ত হবে।

সাংবিধানিক আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই সংশোধনী ‘পাকিস্তানের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণাটিকেই ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে দেশটি কার্যত আজীবন একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটছে।’ বিরোধীরা বলছেন, এই আইন সামরিক শাসনকে সংবিধানে স্থায়ী রূপ দিচ্ছে এবং পাকিস্তানকে পূর্ণ কর্তৃত্ববাদে ঠেলে দিচ্ছে।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান কয়েক দশক সরাসরি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। সে সময় জেনারেলরা সংবিধান স্থগিত করে দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের পতনের পর দেশটি এক ভঙ্গুর গণতন্ত্রে রূপ নেয়—যেখানে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারই মুখে নেতৃত্ব দেয়, কিন্তু পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনীই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেনাবাহিনী আবারও দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা আরও ক্ষমতাবান হচ্ছেন। ২০২২ সালে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর আসিম মুনির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যত রাষ্ট্রপ্রধানের মতো সফর করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুটি বৈঠক করেছেন, যেখানে ট্রাম্প তাঁকে ‘আমার প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সরকারি জোটের নেতা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা এই সংশোধনীকে ন্যায়বিচার ও সেনাবাহিনীর ‘আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি’র উদ্যোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

অতীতে সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে সিনেট ও জাতীয় পরিষদে সপ্তাহজুড়ে বিতর্ক হতো। কিন্তু এবার তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই কক্ষেই পাস হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্বল জোট সরকারের অসহায়ত্ব এবং মুনিরের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবেরই প্রমাণ এটি। বুধবার কেবল চারজন সংসদ সদস্য বিলটির বিরোধিতা করেন।

পাকিস্তানের বৃহত্তম বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই ভোট বর্জন করেছে। যদিও জনসমর্থনে দলটি এখনো শক্তিশালী, কিন্তু মুনির সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে তাদের রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাব প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। দলের নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন এবং তার মুক্তির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

বহুদলীয় বিরোধী জোট তেহরিক-ই-তাহাফুজ-ই-আইন-ই-পাকিস্তান (টিটিএপি) অভিযোগ করেছে যে, সরকার ‘সংবিধানের ভিত্তি নড়িয়ে দিয়েছে।’ এক যৌথ চিঠিতে শতাধিক আইনজীবী ও অধিকারকর্মী এই সংশোধনীকে ‘সংবিধান বিকৃতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ‘আইনজীবী সমাজ, বিচার বিভাগ এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো অর্থবহ আলোচনা বা মতবিনিময় হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকার শাটডাউন অবসানের বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষর, ৪৩ দিন পর ফুরাল অচলাবস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শাটডাউন অবসানের বিলে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শাটডাউন অবসানের বিলে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি শাটডাউন বা অচলাবস্থা শেষ করতে একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এর আগে, মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি পুনরায় চালু করা, কয়েক লক্ষ ফেডারেল কর্মচারীর বেতন প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারি ব্যয় নির্বাহে জরুরি এক বিলে সম্মতি দেয়।

রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস ২২২-২০৯ ভোটে বিলটি পাস করে। ট্রাম্পের সমর্থনেই মূলত তাঁর দল ঐক্যবদ্ধ ছিল। তবে নিম্নকক্ষের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন এই কারণে যে—সিনেটে তাদের সহকর্মীদের দীর্ঘ অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী অবস্থানও শেষ পর্যন্ত ফেডারেল স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বাড়ানোর কোনো চুক্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিলটিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষর ৪৩ দিনের এই অচলাবস্থায় কর্মবিরতিতে থাকা ফেডারেল কর্মীদের আজ বৃহস্পতিবার থেকেই কাজে ফেরার সুযোগ দেবে। তবে পুরোপুরি সরকারি কার্যক্রম কত দ্রুত স্বাভাবিক হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

হোয়াইট হাউসে গভীর রাতে আয়োজিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আর কখনো এমন কিছু হতে দিতে পারি না। এটি দেশ চালানোর উপায় হতে পারে না।’ তিনি এ সময় ডেমোক্র্যাটদের কঠোর সমালোচনাও করেন।

যাই হোক, এই আইন আইন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি অর্থায়ন বাড়াবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণে প্রতি বছর প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন সংযোজনের পথ তৈরি করবে।

অচলাবস্থার অবসান যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর পুনরুদ্ধারে আশার আলো জাগিয়েছে, বিশেষ করে থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের বিশাল ভ্রমণ মৌসুম শুরু হতে মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। একই সঙ্গে কোটি পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা পুনরায় চালু হওয়ায় বড়দিনের কেনাকাটার মৌসুমে তাদের ব্যয় করার সক্ষমতাও বাড়তে পারে।

তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কিছু তথ্যের ঘাটতি হয়তো আর কখনো পূরণ করা যাবে না। বিশেষ করে অক্টোবর মাসের কর্মসংস্থান ও ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) সম্পর্কিত প্রতিবেদন হয়তো আর প্রকাশই হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে এসে আমাদের প্রশিক্ষণ দাও, তারপর চলে যাও—ট্রাম্পের ভিসা ভাবনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ২৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন এইচ-১বি ভিসা নীতির লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া। যাতে তারা আমেরিকানদের উচ্চ দক্ষতার কাজে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। বিদেশি শ্রমিকের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরশীলতা চান না ট্রাম্প, এমনটি জানিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন সাম্প্রতিক সময়ে আগ্রাসী অভিবাসন নীতি সংস্কারের পথে হাঁটছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকাকে বিদেশি প্রতিভা আনতেই হবে। তার ঠিক পরদিনই বেসেন্ট এই মন্তব্য করলেন।

ফক্স নিউজের সাংবাদিক ব্রায়ান কিলমেইডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, ট্রাম্পের নতুন এইচ-১বি ভিসা নীতি একধরনের ‘জ্ঞান স্থানান্তর উদ্যোগ’, যার উদ্দেশ্য আমেরিকার উৎপাদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করা। তিনি বলেন, এই নতুন পন্থার লক্ষ্য হলো কয়েক দশকের আউটসোর্সিং বা উৎপাদন স্থানান্তরের পর যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পকে পুনর্গঠন করা।

বেসেন্ট বলেন, ‘২০ থেকে ৩০ বছর ধরে আমরা নিখুঁত উৎপাদনশিল্পের কাজ বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছি...এখন হুট করে আমরা বলতেই পারি না যে, কাল থেকেই আমরা নিজেরা জাহাজ বানাব। আমরা যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প ফিরিয়ে আনতে চাই। অ্যারিজোনায় বড় বড় স্থাপনাগুলো গড়ে উঠবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের ভাবনাটা হলো—বিদেশি বিশেষজ্ঞদের তিন, পাঁচ বা সাত বছরের জন্য আনা হবে, যাতে তারা আমেরিকান শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। এরপর তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে, আর তখন আমেরিকান শ্রমিকেরাই সেই দায়িত্ব নেবে।’

বিদেশি শ্রমিকেরা আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নেয়—এমন আশঙ্কার জবাবে বেসেন্ট বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো আমেরিকানই ওই কাজ করতে পারবে না—এখনো নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে এখানে জাহাজ বা সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করিনি। বিদেশি অংশীদাররা আসবে, আমেরিকানদের শেখাবে—এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’

বেসেন্ট ব্যাখ্যা করেন, ট্রাম্প টিমের এই নতুন এইচ-১বি নীতি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বৃহত্তর পরিকল্পনারই অংশ—যার উদ্দেশ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আমদানি নির্ভরতা কমানো।

এ ছাড়া বেসেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়েও কথা বলেন। তিনি নিশ্চিত করেন, বছরে ১ লাখ ডলারের নিচে আয় করা পরিবারের জন্য ২ হাজার ডলারের শুল্ক-রিবেট বা ফেরতের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। বেসেন্ট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ২ হাজার ডলারের রিবেট নিয়ে কথা বলছেন...এটি এমন এক পদক্ষেপ, যাতে পরিবারগুলো শক্তিশালী বাণিজ্য নীতির সুফল সরাসরি পায়।’

বেসেন্ট বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি হলো ‘প্যারালাল প্রস্পারিটি বা সমান্তরাল সমৃদ্ধি’ যেখানে ওয়াল স্ট্রিট ও মেইন স্ট্রিট একসঙ্গে এগিয়ে যাবে। আর এটি নির্ভর করছে ট্রেজারি বাজারকে গভীর, তরল ও স্থিতিশীল রাখার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তোমার বিবি কয়টা—আল-শারাকে ট্রাম্পের জিজ্ঞাসা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৬
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে আহমেদ আল–শারা। ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে আহমেদ আল–শারা। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ডেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে খুবই ব্যক্তিগত ও বিব্রতকর এক প্রশ্ন করেছেন। ট্রাম্প সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন যে ‘তোমার বিবি কয়টা?’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

আহমেদ আল-শারা হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন পাশের একটি ফটক দিয়ে, মূল ফটক দিয়ে নয়। প্রবেশের আগেই সাংবাদিকেরা শারাকে তাঁর অতীত জীবন নিয়ে বিব্রতকর প্রশ্ন করতে থাকেন। যদিও শারা এসবে কর্ণপাত করেননি। তবে হোয়াইট হাউসেও প্রায় একই রকম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয় আল-শারার জন্য এবং এবারে এই পরিস্থিতি তৈরি করেন খোদ আমন্ত্রণদাতা ট্রাম্প।

এক ভিডিওতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আল-শারাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিচ্ছেন। এরপর দেরাজ থেকে নিজের ব্র্যান্ডের কোলোনের সোনালি ঢাকনার একটি পারফিউম স্প্রে বের করেন ট্রাম্প। সেটির ঢাকনা খুলে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা পুরুষদের জন্য পারফিউম। এটা সবচেয়ে ভালো সুগন্ধি, ঠিক আছে?’ তবে এ বিষয়ে আল-শারাকে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হয়নি।

এরপর ট্রাম্প আরও একটি পারফিউমের বোতল এগিয়ে দেন শারার দিকে এবং বলেন, দ্বিতীয় বোতলটি তাঁর স্ত্রীর জন্য। এরপর মজার ছলে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার কয়জন বিবি আছে? একজন?’ এরপর আল-শারা যখন হেসে জানান যে তাঁর মাত্র একজনই স্ত্রী আছেন, তখন ট্রাম্প হেসে তাঁর হাতে চাপড় দেন।

এ সময় ট্রাম্প আল-শারাকে অপ্রস্তুত করে আবারও বলেন, ‘তোমাদের ক্ষেত্রে আমি কখনো নিশ্চিত হতে পারি না।’ ইসলামে কঠোর শর্ত সাপেক্ষে চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতির প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্পের এই রসিকতা একদম বিপরীত এক পরিবেশের ইঙ্গিত দেয়।

আল–শারা ও তাঁর স্ত্রী লতিফা আল–দ্রৌবি। ছবি: সংগৃহীত
আল–শারা ও তাঁর স্ত্রী লতিফা আল–দ্রৌবি। ছবি: সংগৃহীত

ওয়াশিংটন সফর ছিল শারার আন্তর্জাতিক সংযোগের প্রচারণার অংশ। তিনি যুদ্ধের পোশাক ছেড়ে এখন প্রচার করছেন এক নতুন বার্তা—তাঁর দল হায়াত তাহরির আল-শাম পশ্চিমা বিশ্বের জন্য কোনো হুমকি নয়, বরং তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।

এতে ট্রাম্প পড়েছেন এক সূক্ষ্ম কূটনৈতিক ভারসাম্যের মধ্যে। ট্রাম্পের কঠোরপন্থী সমর্থকেরা; যেমন লরা লুমার হোয়াইট হাউসে এই সাক্ষাতের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

সোমবার আল-শারার সফরের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। তবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সাধারণ রাষ্ট্রীয় অতিথিদের মতো সম্মান দেওয়া হয়নি। প্রথা অনুসারে তিনি মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেননি, তাঁকে হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ের সামনে লিমোজিন থেকেও নামানো হয়নি, তাঁর দেশের পতাকা হোয়াইট হাউসে ছিল না। এমনকি হোয়াইট হাউসের দরজায়ও কেউ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানায়নি।

ট্রাম্প-শারা বৈঠকের এক দিন পর সিরিয়ার কর্মকর্তা ঘোষণা দেন, তাদের দেশ আইসিস-বিরোধী বৈশ্বিক জোটে যোগ দিয়েছে। বিনিময়ে, ট্রাম্প সোমবার সিরিয়ার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বসানো ‘সিজার অ্যাক্ট’ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদে ছাড় দেন। স্থায়ীভাবে তা প্রত্যাহারের জন্য অবশ্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

বৈঠকের পর ট্রাম্প আল-শারার ব্যাপারে তাঁর প্রশংসা গোপন রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সে এসেছে এক ভয়ংকর কঠিন জায়গা থেকে, আর সে নিজেও কঠিন মানুষ। আমি তাকে পছন্দ করি।’

উল্লেখ্য, আহমেদ আল-শারার স্ত্রীর নাম লতিফা আল-দ্রৌবি। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের দিকে। দামেস্ক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালে আল-শারার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তাঁরা ২০১২ সালের দিকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম শাটডাউন অবসানের বিল অবশেষে কংগ্রেসে পাস, তবু আছে অনিশ্চয়তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম শাটডাউন বা সরকারি অচলাবস্থা অবসানে অবশেষে মার্কিন পার্লামেন্টে বিল পাস হয়েছে। উচ্চকক্ষ সিনেটের পর এবার সরকারি ব্যয় অনুমোদন করে একটি অস্থায়ী সমাধান এনেছেন নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের আইনপ্রণেতারা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ধরে চলা সরকারি অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে অবশেষে মার্কিন আইনসভা হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ ফেডারেল ব্যয় বিল পাস করেছে। যার ফলে এই সংকটের শেষ বাধাটিও আপাতত সরে গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউসে অনুষ্ঠিত ভোটে বিলটির পক্ষে ভোট দেন ২২২ জন সদস্য, যার মধ্যে ছয় ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাও ছিলেন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ২০৯ জন, তাঁদের মধ্যে দুজন রিপাবলিকানও ছিলেন। দীর্ঘদিন বিলম্বের পর পাস হওয়া বিলটি এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

এর আগে সোমবার রাতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ৬০-৪০ ভোটে এই ব্যয় পরিকল্পনাটি অনুমোদিত হয়, যাতে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যক্রম চালানোর অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়। এর ফলে ছয় সপ্তাহ ধরে বেতন বন্ধ থাকা কয়েক লাখ ফেডারেল কর্মচারী আবারও বেতন পাবেন।

সরকারি অচলাবস্থার সময় জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সব সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত সপ্তাহে সাত ডেমোক্র্যাট ও এক স্বতন্ত্র সিনেটর নতুন এই ব্যয় প্রস্তাবের পক্ষে সম্মতি দিলে সমঝোতার পথ তৈরি হয়। মঙ্গলবার অচলাবস্থার ৪২ তম দিনে পৌঁছানো সংকট তখনই প্রশমনের পথে যায়।

তবে এই চুক্তি এখনো অচলাবস্থার অন্যতম কেন্দ্রীয় ইস্যু ২ কোটি ৪০ লাখ মার্কিনির স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি সমাধান করতে পারেনি। ট্রাম্প প্রশাসন ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর আওতাধীন এসব স্বাস্থ্য সহায়তা বন্ধের পরিকল্পনা করেছিল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডেমোক্র্যাটরা বারবার এই বিলের পাস ঠেকিয়ে দিচ্ছিল। কারণ, তাদের দাবি ছিল নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা ব্যয়ের সমাধান না করলে এই প্রস্তাব পাস করা যাবে না।

বুধবারের ভোটের আগে রিপাবলিকান হাউস স্পিকার মাইক জনসন ডেমোক্র্যাটদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, তাঁরা ‘রাজনৈতিক খেলার’ অংশ হিসেবে আমেরিকান নাগরিকদের ‘জিম্মি’ করে রেখেছেন এবং গত সেপ্টেম্বরে বিলের অনুমোদন আটকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সেই সময় থেকে সিনেট ডেমোক্র্যাটরা ১৪ বার সরকারের কার্যক্রম বন্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। রিপাবলিকানরা জনগণের জন্য সরকার চালু করতে ১৫ বার ভোট দিয়েছে, আর ডেমোক্র্যাটরা ১৫ বার তা বন্ধ করার পক্ষে।’

এই অচলাবস্থা ভাঙার চুক্তির অংশ হিসেবে সিনেট রিপাবলিকানরা ডিসেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে ভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এতে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, জানুয়ারিতে আবারও সরকার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই সমঝোতা ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বিলের বিরোধিতা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জে বি প্রিৎজকার অন্যতম। ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত এই নেতা এই চুক্তিকে ‘ফাঁকা প্রতিশ্রুতি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

এই সমঝোতার পক্ষে ভোট দেওয়া ডেমোক্র্যাট সিনেটররা হলেন ইলিনয়ের সিনেট ডেমোক্রেটিক হুইপ ডিক ডারবিন, পেনসিলভানিয়ার জন ফেটারম্যান, নেভাডার ক্যাথরিন করটেজ মাস্টো ও জ্যাকি রোজেন, নিউ হ্যাম্পশায়ারের ম্যাগি হাসান ও জিন শাহিন এবং ভার্জিনিয়ার টিম কেইন। এ ছাড়া মেইন অঙ্গরাজ্যের স্বাধীন সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিংও সমঝোতার পক্ষে ভোট দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত