Ajker Patrika

এইচটিএসের সঙ্গে প্রথম সরাসরি যোগাযোগ যুক্তরাষ্ট্রের, সিরিয়ায় সরকার গঠন নিয়ে ব্লিঙ্কেনের বৈঠক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৩
Thumbnail image
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরের দেশগুলো উদ্বিগ্ন। ছবি: এএফপি

গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে বিদ্রোহীরা। আসাদ পরিবার পালিয়ে গেছে রাশিয়ায়। আসাদ সরকারের এই পতন মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারকারী সব পক্ষকে ফেলে দিয়েছে গভীর শঙ্কায়। এর মধ্যে এক পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতা এখন বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল–শামের (এইচটিএস) দখলে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে বেশ সক্রিয় মার্কিন প্রশাসন। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, এইচটিএসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আজ রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

হায়াত তাহরির আল–শাম এখনো জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। তবু সেই গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী মার্কিন প্রশাসন। এটি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি।

ব্লিঙ্কেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র এইচটিএস এবং অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ আমেরিকান সাংবাদিক অস্টিন টাইসের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আরব দেশগুলো, তুরস্ক এবং ইউরোপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জর্ডানে এক সাক্ষাতে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শেষে এ কথা জানান ব্লিঙ্কেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো সিরিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিরিয়ার অভ্যন্তর এবং দেশটির ওপর বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনাগুলোতে বারবারই নতুন একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ উঠে এসেছে।

আলোচনা শেষে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনায় সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করবে এবং ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে’ কোনো নিরাপদ আশ্রয় দেবে না—এমন সরকার গড়তে হবে। আলোচনায় জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলো সিরিয়াকে বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়তে দেখতে চায় না।

বৈঠকে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন বলেন, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরের দেশগুলো উদ্বিগ্ন। আঞ্চলিক শক্তিগুলো আরেকটি লিবিয়ার মতো পরিস্থিতি দেখতে চায় না।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। তিনি বলেন, সিরিয়ার সংস্কারকালে সন্ত্রাসবাদকে কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

তবে জর্ডানে আয়োজিত এ বৈঠকে সিরিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। আসাদ সরকারের দীর্ঘদিনের মিত্র ইরান ও রাশিয়া এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনি। তবে উপস্থিত আট আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জানান, তাঁদের চাওয়া, সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন থেকে মুক্ত থাকুক।

তবে, সিরিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাইরের যে শক্তিগুলোর লড়াই চলছে, নতুন সরকার গঠিত হলেও তাদের প্রভাব যে কমবে না, তা এই বৈঠক থেকে ধারণা করা যায়।

এদিকে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এইচটিএস। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোহাম্মদ আল–বাশিরকে নিয়োগ দিয়েছেন এইচটিএস নেতা আহমেদ আল–শারআ (যিনি আবু মোহাম্মদ আল–জোলানি নামেও পরিচিত)। তবে এইচটিএসের অতীতের কার্যক্রমের কারণে অনেকেই সন্দেহ করছেন এ গোষ্ঠী এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কি না।

এর আগে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, তুরস্কের মাধ্যমে হায়াত তাহরির আল–শামের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বিষয়ে নবনির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। গত কয়েক দিন ধরে চলা এই আলোচনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করছে।

মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা ও দেশটির কংগ্রেসের এক সহকারী জানান, যুক্তরাষ্ট্র এইচটিএসকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে অনুরোধ জানিয়েছে। সিরিয়ায় সরকার কাঠামো গড়তে সহায়তার বার্তাও দিয়েছে দেশটি। বাইডেন প্রশাসন এইচটিএসকে একাই দেশের সর্বময় ক্ষমতা দখল না করার অনুরোধ করেছে। পরিবর্তে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত