Ajker Patrika

১০২ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর বিতরণ বন্ধ করল মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা

অনলাইন ডেস্ক
গাজায় এবার ঈদুল আজহার কোনো আমেজেই নেই খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে। ছবি: আনাদোলু
গাজায় এবার ঈদুল আজহার কোনো আমেজেই নেই খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে। ছবি: আনাদোলু

অবশেষে গাজায় ত্রাণ বিতরণ বন্ধ ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত মানবিক সংগঠন গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন—জিএইচএফ। আজ বুধবার, গাজাবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক সতর্কবার্তায় এ ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী—আইডিএফ গাজার বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলেছে, বিতরণকেন্দ্রগুলোর দিকে যাওয়ার সব রাস্তা আজ থেকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই জিএইচএফের ঘোষণামাফিক কেউ যেন বিতরণকেন্দ্রের দিকে না যায়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আগামীকাল থেকে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র এবং সেগুলোর দিকে যাওয়ার সব রাস্তায় বেসামরিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো।’ সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জিএইচএফ জানিয়েছে, কেন্দ্রগুলোর সংস্কার, পুনর্গঠন এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কার্যক্রম বন্ধ করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। পোস্টটিতে জিএইচএফ লিখেছে, ‘বৃহস্পতিবার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। দয়া করে কেউ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে যাবেন না। সাধারণ নির্দেশনাবলি মেনে চলুন।’

গত ২৭ মে জিএইচএফের ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া অভুক্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ মে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে ১০২ জনের, আহত কয়েকশ।

খাদ্য সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষের প্রাণহানি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই মৃত্যুগুলোর স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছেন এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘খাবারের জন্য ফিলিস্তিনিদের জীবন বিপন্ন করতে হচ্ছে, এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত মঙ্গলবার স্বীকার করেছে যে তারা ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তবে তাদের দাবি—ভিড়ের মধ্যে কিছু ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’ নির্ধারিত রুট থেকে সরে গেলে তারা গুলি চালায়। সেনাবাহিনী জানায়, তারা এই ঘটনাটি এবং হতাহতের খবর তদন্ত করে দেখছে।

এদিকে ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার দিনই নতুন নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইভানজেলিক খ্রিষ্টান নেতা রেভারেন্ড ড. জনি মুরের নাম ঘোষণা করেছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের ইভানজেলিক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এক বিবৃতিতে মুর দাবি করেন, জিএইচএফ প্রমাণ করছে যে বিপুল পরিমাণ খাদ্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মানুষের কাছে নিরাপদ, কার্যকর ও দক্ষভাবে পৌঁছানো সম্ভব।

তবে, জিএইচএফ শুরু থেকেই বিতর্কিত। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থা জিএইচএফের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ—সংগঠনটি নিরপেক্ষ নয়। মূলত গাজায় ইসরায়েলি সহায়তার সামরিকীকরণের অংশ হিসেবে কাজ করছে তারা। গত রোববার গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের হতাহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জবাবে সামাজিক মাধ্যমে মুর লেখেন, ‘মহাসচিব, এটা মিথ্যা তথ্য। সন্ত্রাসীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি ছড়িয়েছে। এখন আপনিও সেই ভুল তথ্যটিই ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নিবন্ধিত হয় এটি। তবে সংস্থাটি প্রথমবারের মতো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে গত ২৬ মে। এর আগের দিন, ২৫ মে জিএফএইচেরর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক জেক উড পদত্যাগ করেন। সংস্থাটি মানবিক সহায়তায় নিরপেক্ষতা, মানবতা ও স্বাধীনতার নীতিমালা অনুসরণ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে, জিএইচএফ এখনো তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে তথ্য দেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত