Ajker Patrika

৭ মাস ঘোড়ার পিঠে চড়ে মক্কায় হাজির ৩ স্প্যানিশ

অনলাইন ডেস্ক
নিজের ঘোড়ার সঙ্গে স্প্যানিশ দলটির অন্যতম সদস্য আবদাল্লাহ রাফায়েল হেরনান্দেজ মানচা। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
নিজের ঘোড়ার সঙ্গে স্প্যানিশ দলটির অন্যতম সদস্য আবদাল্লাহ রাফায়েল হেরনান্দেজ মানচা। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

মক্কায় হজ পালনের জন্য যখন লাখ লাখ মুসলিম সমবেত হচ্ছেন, তখন এক ব্যতিক্রমী যাত্রা সম্পন্ন করলেন তিন স্প্যানিশ মুসলিম। হজের উদ্দেশ্যে তাঁরা ঘোড়ায় চড়ে আন্দালুসিয়া (দক্ষিণ স্পেন) থেকে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মক্কায় পৌঁছেছেন। আর যে পথ ধরে তাঁরা স্পেন থেকে মক্কায় পৌঁছান সেটি আন্দালুসীয় মুসলিমদের জন্য ৫০০ বছরের পুরোনো একটি পথ।

আজ বুধবার আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, মক্কায় পৌঁছানো আন্দালুসীয় দলটিতে আছেন—আবদেলকাদির হারকাসি আইদি, তারেক রদ্রিগেজ ও আবদাল্লাহ রাফায়েল হেরনান্দেজ মানচা। মোহাম্মদ মেসবাহি নামে তাঁদের আরও একজন সঙ্গী ছিলেন। কিন্তু যাত্রা শুরুর দিকে দুটি ঘোড়ার স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তাঁকে মাঝপথেই থেমে যেতে হয়।

স্পেনের আলমোনাস্তার লা রিয়াল নামক একটি পুরোনো মসজিদ থেকে দীর্ঘ এই যাত্রাটি শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের অক্টোবরে। হেরনান্দেজ মানচা ছিলেন ইতিহাসের শিক্ষক। ৩৬ বছর আগে একটি কঠিন রাষ্ট্রীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ইসলাম গ্রহণের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্যই তিনি এই যাত্রায় অংশ নেন।

তবে যাত্রা শুরুর আগে ঘোড়া প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে শুরু হয় তাঁদের কষ্টসাধ্য পথচলা। আরব বংশোদ্ভূত খুজেস্তানি ঘোড়া সংগ্রহ করে তাঁরা চার বছর প্রস্তুতি নেন। যাত্রা শুরুর পর মক্কার পথে তাঁরা প্রতিদিন গড়ে ৪০ কিলোমিটার অতিক্রম করতেন। পথে তাঁরা নিজেরাই রান্না করতেন এবং রাত কাটাতেন তাঁবুতে। যাত্রার একপর্যায়ে অর্থ শেষ হয়ে গেলে তাঁরা বিভিন্ন দেশে স্থানীয়দের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন।

পথে পথে স্থানীয়দের অনেক সহযোগিতা পায় দলটি। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
পথে পথে স্থানীয়দের অনেক সহযোগিতা পায় দলটি। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

ফ্রান্স ও ইতালিতে তারা ইকুয়েস্ট্রিয়ান (অশ্বারোহী) সেন্টারে আশ্রয় নেন। ইতালির ভারোনায় সৌদি স্ন্যাপচ্যাট ইনফ্লুয়েন্সার আবদুর রহমান আল-মুতাইরি তাঁদের একটি ক্যারাভান দান করেন, যা শীতের ক্রোয়েশিয়া পেরোতে খুব কাজে লাগে। যাত্রায় তাঁদের রসদ রাখার জন্য একটি সহায়তাকারী গাড়িও ছিল।

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় প্রবেশের পর তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের অসাধারণ আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন। বিশেষ করে, মোস্তার ও সারায়েভোতে। সেখানে তাঁরা স্থানীয় ঘোড়ায় চড়ে পাড়ি দেন পাহাড়ি পথ। সার্বিয়ার নোভি পাজার শহরেও তাঁরা একটি প্রাণবন্ত মুসলিম সমাজের সাক্ষাৎ পান।

তুরস্কে প্রবেশের পর আবার নিজেদের ঘোড়াগুলো ফিরে পান তাঁরা। তত দিনে অবশ্য রমজান শুরু হয়ে যায়। সে সময় তাঁরা রোজা রেখে স্থানীয়দের সঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করে খেতেন। এরপর তাঁরা সিরিয়া, দামেস্ক, জেরুজালেম, জর্ডান হয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেন।

সৌদিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা ছিল। তাঁদের ঘোড়াগুলো রিয়াদে রেখে মদিনায় যেতে বলা হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাঁদের ফ্লাইট ও বিলাসবহুল আতিথেয়তা প্রদান করে। পরে তাঁরা মদিনা এবং সর্বশেষ মক্কায় গিয়ে পৌঁছান।

হারকাসি আইদির ভাষায়, ‘এটা ছিল অসম্ভব এক যাত্রা, যা আল্লাহর ইচ্ছাতেই সম্ভব হয়েছে। আমরা শুধু হজ করতেই আসিনি, আমাদের স্প্যানিশ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতেও এসেছি।’

যাত্রাটি সম্পন্ন করা অশ্বারোহীদের দুনিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে যাত্রার শেষটা একটু দুঃখেরও। কারণ ফেরার সময় ঘোড়াগুলো তাঁদের সঙ্গে আর ফিরবে না। ঘোড়াগুলো ফিরে যেতে না পারলেও তাদের জন্য উন্নত রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত