Ajker Patrika

স্কুলে মোবাইল নিষিদ্ধের এক বছর পর কী ফল পেল নিউজিল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াতে এবং শ্রেণিকক্ষে বিশৃঙ্খলা কমাতে ২০২৪ সালের এপ্রিলে বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল নিউজিল্যান্ড সরকার। তবে এক বছর পর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র অনুভূতি দেখা গেছে।

ওই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনায় মনোযোগী হয় এবং প্রযুক্তিজনিত বিভ্রান্তি কমে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন ঘোষণা করেছিলেন—শিশুদের শেখার পরিবেশ আরও ভালো করতেই এই উদ্যোগ। বিশ্বের আরও অনেক দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যও এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে।

তবে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রত্যাশিত ফল সব সময় মিলছে না। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পাওয়া গেছে—কঠোর নিষেধাজ্ঞা আর শিথিল নীতিমালার স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের ফলাফল বা মানসিক স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য নেই।

নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে গবেষকেরা ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৭৭ জন শিক্ষার্থীর মতামত নিয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ বলেছে, নিষেধাজ্ঞা তাদের মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করেছে এবং সামাজিক মাধ্যম থেকে বিরত রেখেছে। একজন মন্তব্য করেছে, ‘তা না হলে তো সারা দিন ফোনেই কেটে যাবে, যা মানসিকভাবে ভালো নয়।’

তবে অন্যদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। কেউ কেউ জানিয়েছে, পরিবার বা অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তারা উদ্বেগে থাকে। অনেকের অভিযোগ—নীতিমালা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা হয় না। কিছু শিক্ষক নিজেরা ফোন ব্যবহার করলেও শিক্ষার্থীদের নিষেধ করা হয়, যা তাদের কাছে অন্যায্য মনে হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই গোপনে ফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

আরও একটি অভিযোগ হলো—নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি। কেউ কেউ বলেছে—‘বড়রা শুধু নিষেধ করে, যেন এতে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’

এদিকে, প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প পথও খুঁজে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। যেমন অকল্যান্ডের একটি স্কুলে শিক্ষার্থীরা ফোনের পরিবর্তে ওয়াকি-টকি ব্যবহার শুরু করেছে।

গবেষকেরা বলছেন—সামগ্রিকভাবে ফোন নিষিদ্ধের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের সুস্থ ও দায়িত্বশীলভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা শেখানোই বেশি কার্যকর হতে পারে। খাবার বিরতি বা ক্লাসের বাইরে ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া এবং শিক্ষকদেরও স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল অভ্যাসে উৎসাহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গবেষণাটির সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ বলছে—শিক্ষার্থীরা শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারকারী নয়, বরং সমস্যা সমাধানকারীও। তাই নিষেধাজ্ঞার বদলে তাদের যুক্ত করে বাস্তবসম্মত নীতিমালা তৈরি করাই হবে অধিক কার্যকর পথ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...