Ajker Patrika

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত বেড়ে প্রায় ৫৮৮০০

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ০৮: ৫৭
গাজায় অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ইসরায়েলি গণহত্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু
গাজায় অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ইসরায়েলি গণহত্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে প্রায় পৌনে দুই বছর ধরে। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিটমহলটিতে ইসরায়েল যে গণহত্যামূলক যুদ্ধ চালিয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার ৮০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই সময়ে আহত হয়েছে আরও লক্ষাধিক।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় আরও ৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত অক্টোবর ২০২৩ থেকে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৭৬৫। আহত হয়েছে আরও ৫১১ জন, ফলে মোট আহত ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৫ জন।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বহু মানুষ হতাহত অবস্থায় এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় নিহত এবং ৯৪ জন আহত হয়েছে। গত ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৮৯১ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৪ জনের বেশি।

গত জানুয়ারিতে এক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির পর ইসরায়েলি বাহিনী ১৮ মার্চ থেকে গাজা উপত্যকায় তাদের হামলা পুনরায় শুরু করে। কাতারের রাজধানী দোহায় নতুন চুক্তির জন্য আলোচনা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার আশার বাণী শোনালেও এখনো যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে এমন স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি কোনো পক্ষ থেকে।

এদিকে, গাজা সরকারের জনসংযোগ বিভাগ প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গাজায় বিগত পৌনে দুই বছর ধরে চলা আগ্রাসনের সময় ইসরায়েল অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার টন বিস্ফোরক ফেলেছে, যার ফলে ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির ৮৮ শতাংশই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আর এতে গাজার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু করার পর অঞ্চলটির মোট এলাকার ৮৮ শতাংশের বেশি ধ্বংস করে দিয়েছে এবং ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ৬৫০তম দিন উপলক্ষে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ১ লাখ ২৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে এবং এর ফলে ক্ষতির পরিমাণ ৬২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই নির্মম যুদ্ধের ফলে ‘২০ লাখের বেশি সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে’ এবং উপত্যকার ৩৬০ বর্গকিলোমিটারের ৭৭ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করেছে ইসরায়েল।

জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, এখনো প্রায় ৯ হাজার ৫০০ জন ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে এবং তাদের ভাগ্য অজানা। এ ছাড়া, ইসরায়েলি বাহিনী ১ হাজার ৫৯০ জন চিকিৎসাকর্মী, ২২৮ জন সাংবাদিক এবং ৭৭৭ জন মানবিক সহায়তা কর্মীকে হত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া, গাজায় ২ হাজার ৬১৩টি ফিলিস্তিনি পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অর্থাৎ, এসব পরিবারের আর কোনো সদস্য জীবিত নেই। অন্তত ৬৮ জন শিশু অপুষ্টিতে এবং আরও ১৭ জন শীতে মারা গেছে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩৯ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৭০০ জনের শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ৪৪ হাজার ৫০০ শিশু অন্তত একজন অভিভাবক হারিয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের এলাকায় ২০ লাখের বেশি মানুষ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৭১ হাজার জন।

জনসংযোগ বিভাগের অভিযোগ, ইসরায়েলি বাহিনী এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৪২০টি মৃতদেহ কবর থেকে তুলে নিয়ে গেছে এবং হাসপাতালের ভেতরে সাতটি গণকবর তৈরি করেছে। এ ছাড়া, গাজা থেকে ৬ হাজার ৬৩৩ জন সাধারণ মানুষকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৬২ জন চিকিৎসাকর্মী, ৪৮ জন সাংবাদিক ও ২৬ জন সিভিল ডিফেন্স সদস্য।

ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ৩৮টি হাসপাতাল ও ৯৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস করেছে। তারা ১৪৪টি অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং ১৫৬টি স্কুল পুরোপুরি এবং আরও ৩৮২টি আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ৮৩৩টি মসজিদ, তিনটি গির্জা এবং ৪০টি কবরস্থানও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার লক্ষ্য হয়েছে।

মোট ২ লাখ ৮৮ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় ২ লাখ ২৩ হাজার বসতবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং আরও ১ লাখ ৩০ হাজার বসতবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। ২৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়েছে।

এ ছাড়া, ইসরায়েল গত ১৩৯ দিনের বেশি সময় ধরে হাজার হাজার ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ ঠেকিয়ে রেখেছে। গাজার কৃষি খাতও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯২ শতাংশ আবাদযোগ্য জমি ধ্বংস করে ফেলার কারণে এ খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে পানি, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাও ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত