Ajker Patrika

ইরানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি সেনা, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ছে উত্তেজনা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, ১৯: ১৪
ছবি: আইএসডব্লিউ
ছবি: আইএসডব্লিউ

মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১৯টি স্থানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যার মধ্যে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। ইরান ও তার মিত্র গোষ্ঠীর হুমকি মোকাবিলায় এই অঞ্চলে আবারও বাড়ানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হলে গাজা, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে মার্কিন বাহিনী। এসব হামলার জবাবে পাল্টা হামলাও চালিয়েছে তারা।

যেমন—লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে নিজেদের ও মিত্রদের বাণিজ্যিক জাহাজ রক্ষা করতে প্রায় প্রতিদিনই হুতিদের সঙ্গে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ২০২৫ সালের মে মাসে হুতি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর জন্য হুমকি এখনো রয়ে গেছে।

এ ছাড়া ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইরান যখন ইসরায়েলের ওপর সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তখন সেগুলোর বেশির ভাগই ধ্বংস করে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ও বিমান। এরপর অক্টোবর মাসে মধ্যপ্রাচ্যে আরও চারটি এয়ারক্রাফট স্কোয়াড্রন পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সময়ে ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু করে এবং ইরান আবারও বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

২০২৫ সালের মার্চে মার্কিন বি-২ স্টিলথ বোমার মোতায়েন করা হয় ব্রিটিশ মালিকানাধীন ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে, যেখান থেকে ইরান ও হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকা লক্ষ করা সম্ভব। গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ইরানে সরাসরি অভিযান শুরু করলে মার্কিন জাহাজ ও যুদ্ধবিমান ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে ইরানের পাল্টা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে।

এ থেকে বোঝা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনারা ইসরায়েলকে সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত এবং খুব নিকটেই অবস্থান করছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইরান আক্রমণের বিষয়টি এখনো বিবেচনায় রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিষয়ে আরেক ধাপ এগোলে সম্পূর্ণ যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাসংখ্যা ও ঘাঁটি

২০২৫ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন ছিল। এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবরের উত্তেজনার সময় এই সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার। আগের বছরগুলোতে এটি ছিল প্রায় ৩০ হাজার। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ইরাক যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার সেনা ছিল। ২০১১ সালে আফগানিস্তানে ছিল প্রায় এক লাখ সেনা।

সব মিলিয়ে বাহরাইন, মিসর, ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১৯টি স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটি রয়েছে, যার মধ্যে আটটিকে স্থায়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া জিবুতি ও তুরস্কের বড় ঘাঁটিগুলোও এখন মার্কিন অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বলা চলে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় এক ডজনেরও বেশি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটি স্থাপনসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। শুধু সিরিয়া ছাড়া। তবে ২০২৫ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছেন এবং এর পরপরই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কৌশলগত নৌবহর ও বিমানবাহী রণতরি

কাতারে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরোয়ার্ড সদর দপ্তর রয়েছে। এর মধ্যে বাহরাইনের মার্কিন নৌঘাঁটি সবচেয়ে বড় এবং নৌবাহিনীর পঞ্চম বহরের প্রধান কেন্দ্র। মার্কিন নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ এসব অঞ্চল থেকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছিল। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ অভ্যন্তরীণ সীমান্ত সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেন।

এর মধ্যে ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান ২৫১ দিনের মিশন শেষে জুন মাসে দেশে ফিরেছে, অন্যদিকে ইউএসএস কার্ল ভিনসন মার্চ মাসে আরব সাগরে পৌঁছেছে। চলতি মাসে মার্কিন সামরিক বাহিনী ঘোষণা করে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় ইন্দো-প্যাসিফিকে অবস্থিত ইউএসএস নিমিটজকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হবে। নৌবাহিনী ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস থমাস হুডনারকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে প্রয়োজনে এটি উপলব্ধ থাকে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান একদিকে ইরানের হুমকি মোকাবিলায় সহায়ক হলেও অন্যদিকে সরাসরি জড়িত হলে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ। বিশেষ করে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যৌথ অভিযানে যায়, তাহলে তা সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও লেবাননজুড়ে মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। ফলে এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কেবল প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং এক নতুন যুদ্ধ সম্ভাবনার মুখোমুখিও।

তথ্যসূত্র: মার্কিন থিংকট্যাংক—কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (সিএফআর) ও বিবিসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রে আছেন রুশ বিশেষজ্ঞরা, ইসরায়েলকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

ইরানকে ঘিরে ফেলছে একের পর এক মার্কিন রণতরি ও যুদ্ধবিমান

পর্যটনে সেরা ১০ মুসলিমবান্ধব অমুসলিম দেশ

ছেলের কাটা পা হাতে নিয়ে বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবা

পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে কেন যুক্তরাষ্ট্রে ডেকেছিলেন ট্রাম্প, ইরান-ইসরায়েল নিয়ে কী আলোচনা হলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত