Ajker Patrika

ইরানের হামলায় ধ্বংস ইসরায়েলের ‘আমান’ গোয়েন্দা ঘাঁটি কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের হামলায় ধ্বংস ইসরায়েলের ‘আমান’ গোয়েন্দা ঘাঁটি কী

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটি ‘আমান’-এর সরবরাহ ও লজিস্টিকস সদরদপ্তর ধ্বংস করেছে। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’-এর নবম ধাপে রাজধানী তেল আবিবের কাছে গ্লিলট এলাকায় অবস্থিত এই স্থাপনাটিতে ভোররাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।

আজ মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, “১৭ জুন ভোররাতে আমাদের অ্যারোস্পেস ইউনিট অত্যন্ত উন্নত ও জটিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাঝেও ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ‘আমান’ এবং সন্ত্রাস পরিকল্পনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত মসাদের একটি ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এখন ঘাঁটিটি জ্বলছে।”

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, গ্লিলটের ‘আমান’ লজিস্টিকস কমপ্লেক্সে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড চলছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির ছবি প্রকাশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও, বেশ কিছু ভিডিও ইতোমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে। আগুনের তীব্রতা এবং স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এই হামলা শুধু প্রতীকী নয়, বরং ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সামরিক প্রতিরক্ষা কাঠামোতেও বড় ফাটল ধরিয়েছে।

‘আমান’ কী?

ইসরায়েলের গোয়েন্দা কাঠামোয় ‘আমান’ একটি মুখ্য সংস্থা। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই এটি গঠিত হয়। ‘আমান’ মূলত সামরিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের দায়িত্বে থাকে। এই সংস্থা মসাদসহ অন্যান্য গোপন সংস্থাকে তথ্য দিয়ে সন্ত্রাস দমন ও বৈদেশিক হামলার রূপরেখা নির্ধারণে সহায়তা করে।

‘আমান’-এর অধীনে রয়েছে তিনটি প্রধান শাখা—

ইউনিট ৮২০০: সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্স

ইউনিট ৫০৪: হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স

ইউনিট ৯৯০০: ভূ-স্থানিক গোয়েন্দা তথ্য

এগুলোর প্রতিটিই ইসরায়েলের সামরিক আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা কৌশলে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গ্লিলটে অবস্থিত ‘আমান’ সদরদপ্তর এসব ইউনিটের কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থল হিসেবেই পরিচিত।

ইরানের পাল্টা জবাব

‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ মূলত ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয়। শুক্রবার রাতে এই অভিযানের সূচনা হয়, আর মঙ্গলবারের হামলা ছিল তার নবম ধাপ।

এর আগে সোমবার ইসরায়েল তেহরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র IRIB-এ হামলা চালায়। সেখানেই সরাসরি সম্প্রচারের সময় নিহত হন দুইজন সাংবাদিক। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

‘কৌশলগত অস্ত্র এখনো ব্যবহার হয়নি’

আইআরজিসির শীর্ষ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমদ বাহিদি বলেন, “আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে— এমন গুজব হাস্যকর। আমরা আমাদের কৌশলগত অস্ত্র এখনো ব্যবহারই করিনি। প্রয়োজনে আরও বড় পরিসরে প্রতিক্রিয়া জানাব।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

তেহরান বলছে, ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সোচ্চার হওয়া। তাদের ভাষায়, “আমরা আত্মরক্ষায় যেকোনো ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে আমাদের জবাব চলবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মধ্য দিয়ে ইরান ইসরায়েলকে একটি কৌশলগত বার্তা দিতে চেয়েছে— শুধু আঘাত নয়, বরং গোয়েন্দা-প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ধ্বংস করাও তাদের ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতি পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা ও সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেয়াদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরিকল্পনা সরকারের

নারীর সঙ্গে এনসিপি নেতা তুষারের কথোপকথন ফাঁস নিয়ে যা বললেন সহযোদ্ধা ইমি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব নয়, স্বীকার করল ইসরায়েল

ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের সংলাপ ‘বয়কট’ করল জামায়াত

চোখের সামনে খামেনির অন্তরঙ্গ মহল ফাঁকা করে দিচ্ছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত