Ajker Patrika

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি

পশ্চিমাদের স্বীকৃতি মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে নতুন রাজনীতির সূচনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১২
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

পশ্চিমা গুরুত্বপূর্ণ দেশের কাছ থেকে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র স্বীকৃতি মিলেছে। গত রোববার যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা স্বীকৃতি দেওয়ার পর ফিলিস্তিনে এখনো হামলা চলছে। তবে এরপরও পশ্চিমাদের স্বীকৃতিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশের কাছ থেকে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি আসার পর আন্তর্জাতিক কূটনীতি নতুন একটি পথে মোড় নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে এটাও বলা হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

রোববার যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এদিন স্বীকৃতি দিয়েছে পর্তুগালও। এ ছাড়া নিকটতম সময়ে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, অ্যান্ডোরা, সান মারিনো ও মাল্টা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা। এ ছাড়া স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সংকেত দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের জন্য এই স্বীকৃতি কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং এই স্বীকৃতির কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয়। এ প্রসঙ্গে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর কাছ থেকে এ স্বীকৃতি যুগের পর যুগ সহিংসতার অবসান ঘটাতে নতুন এক মাইলফলক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র স্বীকৃতি নিয়ে আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামের কারমাউত। তাঁর মতে, এই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পেছনের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরায়েলের সবচেয়ে কাছের মিত্র হলো পশ্চিমারা। সেই পশ্চিমারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। অতীতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা যখন ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন এ দেশগুলো নিষ্ক্রিয় ছিল। ফলে পশ্চিমাদের নতুন পথে হাঁটার এ প্রবণতা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, অন্তত এত দিন পরে হলেও এ দেশগুলো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে অনেক কিছুই হবে।

কূটনীতিতে বড় পরিবর্তনের শঙ্কা

এদিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল। আবার ইসরায়েল বলছে, এই স্বীকৃতির জবাবস্বরূপ তারা পশ্চিম তীরে দখলদ্বারত্ব বাড়াবে। এখানে এসেই সংকট দেখা দিচ্ছে। কারণ এই দখলদারত্বের কারণে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর কূটনৈতিক দূরত্ব বাড়বে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কে অচলাবস্থাও সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আব্রাহাম চুক্তি করেছিলেন ট্রাম্প। এখন নতুন করে কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে যদি ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে যায়, তাহলে ট্রাম্পের এমন উদ্যোগে ভাটা পড়বে।

পশ্চিমাদের অন্যতম একটি জোট ‘ফাইভ আইজ জোট’। এই জোটে থাকা পাঁচ দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড—এর তিনটি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। এই জোটের সদস্য দেশগুলো তাদের গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করে নেয়। ইউক্রেন ইস্যুতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণেও দূরত্ব বেড়েছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়তে পারে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে ট্রাম্পের দলের আইনপ্রণেতারা কথা বলতে শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাকে তাঁরা হুমকিও দিয়েছেন খোলা চিঠিতে।

বড় কোনো পদক্ষেপ নেই

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলো একতাবদ্ধ হচ্ছ। এসব দেশের সরকারপ্রধানেরা গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপক নিন্দা করেছেন এবং কেউ কেউ এ যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ বলতে শুরু করেছেন। তবে বড় বড় এমন বুলির বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। সেটা শরণার্থী নেওয়া থেকে শুরু করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া—কোনো ক্ষেত্রেই অগ্রগতি নেই। এ পরিস্থিতিতে নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন হলো, ইউরোপ কি নিন্দা ও উদ্বেগের কথাগুলোকে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপে রূপান্তরিত করবে?

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউরোপের জনগণ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তবে এরপরও জার্মানি ও ইতালির মতো দেশগুলো এখনো ইসরায়েলের পাশে রয়েছে। এ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন চিন্তন প্রতিষ্ঠান জার্মান মার্শাল ফান্ড সাউথের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিনা কাউশ। তাঁর মতে, এত অল্প সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে পশ্চিমাদের এমন পদক্ষেপ তিনি দেখেননি। এর মধ্যে নতুন কিছুর সূচনা হতে পারে। তিনি বলেন, তবে এরপরও এত এত কথার মধ্য থেকে দৃশ্যমান কিছু প্রতিশ্রুতি আসতে হবে। এটা শুধু ফিলিস্তিনের জন্য নয়। পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইউরোপ আন্তর্জাতিক আইনকে কতটুকু গুরুত্ব দেয় এবং বহুত্ববাদের প্রতি তাঁদের যে প্রতিশ্রুতি—সেটাও এ পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিছানাভর্তি টাকা, বিলাসবহুল গাড়ি ও সোনাদানা মিলল পুলিশ কর্মকর্তার ঘরে

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অপেক্ষা, চূড়ান্ত দলিলে যা যা আছে

খালেদা জিয়ার হাতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র তুলে দিল ঐকমত্য কমিশন

তিন হলে ভোট গণনা শেষ, কেন্দ্রের ফল ১৪ ঘণ্টা পর

পিআরের জন্য নভেম্বরে গণভোটের প্রস্তাবে অনড় জামায়াত, মানলেই সনদে স্বাক্ষর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত