Ajker Patrika

গাজার সব বাসিন্দাকে রাফাহে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ইসরায়েলের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১: ৩৫
গাজায় অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ইসরায়েলি গণহত্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু
গাজায় অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ইসরায়েলি গণহত্যায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহে একটি শরণার্থী শিবিরে গাজার সব বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে চায় ইসরায়েল। এরই মধ্যে তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনীকে পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত সোমবার বলেছেন, রাফাহ শহরে ধ্বংসাবশেষের ওপর একটি ‘হিউম্যানিটিরিয়ান সিটি’ বা মানবিক নগরী গড়ে তোলা হবে। ওই নগরীতে প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে রাখা হবে। ধীরে ধীরে গাজার ২১ লাখ মানুষকেই সেখানে স্থানান্তর করা হবে। তিনি জানান, এই শহরে প্রবেশের একমাত্র শর্ত হচ্ছে হামাসের সদস্য হওয়া যাবে না।

ইসরায়েল কাৎজ বলেন, নিরাপত্তা যাচাইয়ের পর যাঁরা হামাসের সদস্য নন, শুধু তাঁদেরই এই নগরীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ওই শহরে ঢোকার পর আর কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। কাৎজের তথ্যমতে, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ৬০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সময় শুরু হবে এই ‘মানবিক নগরী’র নির্মাণকাজ।

গাজার সব বাসিন্দাকে রাফাহ সিটিতে স্থানান্তরের এই পরিকল্পনা মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করছেন খোদ ইসরায়েলিরাই। ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সাফার্ড ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এই পরিকল্পনা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি বাস্তব রূপরেখা। গাজার সব বাসিন্দাকে রাফাহে জোরপূর্বক স্থানান্তরের মাধ্যমে তাঁদের চূড়ান্তভাবে উপত্যকার বাইরে নির্বাসনে পাঠানোর একটি প্রস্তুতি এটি।’

জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, যে কোনো দখলকৃত ভূখণ্ডের বেসামরিক জনগণকে জোরপূর্বক স্থানান্তর বা বহিষ্কার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং এটি ‘জাতিগত নির্মূলের’ শামিল।

ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান। প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে অন্যত্র পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। কেউ যদি গাজায় থাকতে চায়, থাকুক; আর যারা চলে যেতে চায়, তাদের সেই সুযোগ দেওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যারা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার কথা বলে এসেছে।’

প্রস্তাবটি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আশপাশের দেশগুলো থেকে অসাধারণ সহযোগিতা পেয়েছি। প্রতিটি দেশই ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে। তাই আমি মনে করি, ভালো কিছুই ঘটবে।’

এই প্রস্তাব এমন সময় সামনে এল, যখন ইসরায়েলি সরকার গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ ও শাসন কাঠামো নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্কের মুখে পড়েছে। তবে ফিলিস্তিনি পক্ষ এবং আরব রাষ্ট্রগুলো আগেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছে—গাজার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তরের যেকোনো পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে গণ্য হবে।

চলতি বছরের মার্চে আরব রাষ্ট্রগুলো গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি বিকল্প পরিকল্পনার প্রতি একযোগে সমর্থন জানায়, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে মিসর। ৫৩ বিলিয়ন ডলারের (৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড) এই বৃহৎ প্রকল্পে গাজার বাসিন্দাদের নিজ ভূমিতে থাকার অধিকার অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়টিই মূল প্রতিশ্রুতি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। পরিকল্পনায় কোথাও তাঁদের সাময়িকভাবে অন্যত্র স্থানান্তরের কোনো প্রস্তাব নেই।

মিসরীয় এই উদ্যোগকে ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাস। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বলছে, এই পরিকল্পনা গাজার বর্তমান সংকট ও নিরাপত্তা বাস্তবতার মোকাবিলা করতে ব্যর্থ।

অন্যদিকে, এই ধরনের প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, তাঁরা আবারও ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়’-এর মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন—যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের আগে ও পরে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিংবা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

সেই সময় গাজা উপত্যকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু শরণার্থী। এখন তাঁদের সন্তানসন্ততিরাই গাজার জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আরও ৯ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থী থাকেন পশ্চিম তীরে। জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননে রয়েছেন আরও প্রায় ৩৪ লাখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত