Ajker Patrika

গাজায় ইসরায়েলি তাণ্ডবে প্রাণহানি অব্যাহত, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১০: ২৩
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন। ছবি: এএফপি
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২২ জনই উত্তর গাজার বাসিন্দা। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আজ বৃহস্পতিবার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, উত্তর থেকে দক্ষিণ পুরো উপত্যকাজুড়েই তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনী আইডিএফ। উত্তর গাজার বাইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে একই পরিবারের অন্তত ১০ জন। অন্যদিকে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফাহে নির্বিচারে বিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে।

এ দুই শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে কমপক্ষে ১০টি আবাসিক ভবন। বহু হতাহতের আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। সবশেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত শহর আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আইডিএফের হামলায় খান ইউনিস আর রাফাহে প্রাণ গেছে ১০ জনের, যাদের বেশির ভাগই শিশু। তবে, ১০ টি আবাসিক ভবন যেখানে মাটিতে মিশে গেছে, সেখানে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা যে এত কম নয়, তা অনুমেয়ই।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধবিমান টহল দিচ্ছে এবং আর্টিলারি তথা গোলন্দাজ ইউনিট নতুন করে অবস্থান নিয়েছে। স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নেতানিয়াহুর সেনারা। নেতজারিম করিডর ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। মূলত করিডরটি দিয়ে গাজার মানুষের চলাচল সীমিত করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে আইডিএফ।

গাজার মানুষদের পুনরায় বাস্তুচ্যুত করার নীলনকশারই অংশ এটি। আবারও উত্তর গাজা থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য করছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে অনেকেই সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে সরে যাচ্ছে।

কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা বা সতর্কতা ছাড়াই গত মঙ্গলবার গাজায় নৃশংসতা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের বর্বরতায় এক দিনেই প্রাণ হারায় ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকায় নজিরবিহীন হামলা চালায়। এর জবাবে গাজায় সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বিরতিহীন ১৫ মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের নিন্দা-সমালোচনার পরও পুরোদমে আগ্রাসন চালিয়ে গেছে ইসরায়েলি প্রশাসন। তাদের সাফাই ছিল—বেসামরিক জনগণ নয়, ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হামাস। হামাসের গোপন আস্তানা, সুড়ঙ্গ আছে—এমন সন্দেহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একের পর হাসপাতাল আর জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে হামলা চালিয়ে গেছে।

অবশেষে, গত ১৯ জানুয়ারি বিভিন্ন পক্ষের ব্যাপক তোড়জোড়ে কার্যকর হয় ৪২ দিন করে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ। তবে, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মধ্যেও বিভিন্ন অভিযোগে গাজাবাসীকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এ ছাড়া, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই গড়িমসি করেছেন। প্রথম ধাপের ১৬ তম দিনে দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও নানা টালবাহানায় সেই আলাপ শুরু হয় প্রথম ধাপ শেষ হওয়ারও ১০ দিন পর।

গত ১ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। পরে, উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহও। এরপর গতকাল মঙ্গলবার আবার সভ্যতার মুখোশ খুলে বর্বর রূপ দেখাল তেলআবিব। যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে গাজার নিরীহ বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে আবারও হামলা চালাতে শুরু করেছে আইডিএফ।

এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চান সংস্থাটির ফিলিস্তিনি দূত। তিনি বলেন, ‘একদিনে ৪৩৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলিরা, যাদের মধ্যে ১৮৩ জনই শিশু। নিরস্ত্র বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে এই নির্মম ও বেআইনি বলপ্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলের সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে, নিরাপত্তা পরিষদের যে সামান্য বিশ্বাসযোগ্যতা এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, তাও আরও ক্ষুণ্ন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত