Ajker Patrika

জটিল পরিস্থিতিতে ইসরায়েল, যুদ্ধে জড়াবে না কোনো মিত্র: ইসরায়েলি বিশ্লেষক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১৭: ৩২
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের রামাতগানে। ছবি: এএফপি
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের রামাতগানে। ছবি: এএফপি

চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। এরই মধ্যে যুদ্ধের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি ও পরিণতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ভাবছেন, ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলও নানাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

তবে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ। তিনি বলছেন, আপাতত ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর কোনো কারণ নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাত থেকে দূরে রাখতে চান। ওয়াশিংটনের দুটি সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। অবশ্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমন কোনো পরিকল্পনার খবর অস্বীকার করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষা সহায়তা দিয়েছে, ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার একটি অংশ প্রতিহতও করেছে। তবে ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার ইসরায়েলের সামরিক প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়া থেকে বিরত আছেন।

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, এই সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল রোববার এবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এতে জড়িত নই। আমরা জড়িত হতে পারি। তবে এই মুহূর্তে আমরা জড়িত নই।’

এই প্রতিযোগী স্বার্থগুলো এমন একজন প্রেসিডেন্টের জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যিনি আবার একাধিকবার বিশ্বের সমস্যাগ্রস্ত অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে গোল্ডবার্গ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না—কারণ ইসরায়েলের যুদ্ধ কৌশলে এখনো কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য বা সমাপ্তির রূপরেখা নেই। তিনি বলেন, যুদ্ধের পক্ষে যাঁরা উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁদের অনেকে আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশ নেবে। কিন্তু যখন কৌশল স্পষ্ট নয়, যুদ্ধের লক্ষ্য নির্ধারিত নয়, তখন এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র যে সরাসরি জড়াবে না—এটাই স্বাভাবিক।

গোল্ডবার্গ মনে করেন, যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। কারণ, ইসরায়েল সরকার এখনো কোনো ‘অফ-র‍্যাম্প’ বা সংঘাত অবসানের পথ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের প্রতি এখনো উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন রয়েছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে যে এ জনসমর্থন টিকে থাকবে, সেটি মনে করার কোনো কারণ নেই। সময় যত গড়াবে, পরিস্থিতি তত বদলে যেতে পারে।

তাঁর মতে, ইসরায়েল এখন একটি কঠিন সময়ের মধ্যে আছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, যাঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন, বিশেষ করে, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষাপটে, তাঁরা বুঝতে পারবেন যে ইসরায়েল একটি জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। সময় যত গড়াবে, ততই স্পষ্ট হবে সেটি।’

গোল্ডবার্গ আরও বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, কোনো মিত্রই ইসরায়েলের হয়ে সরাসরি লড়াই করবে না। গোল্ডবার্গ বলেন, সময় গড়ালে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠবে যে, যুক্তরাষ্ট্রই কেবল নয়, বিশ্বের কোনো বড় শক্তিও ইসরায়েলের হয়ে ইরানে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপে আগ্রহী নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধকৌশল লক্ষ্য নির্দিষ্ট হওয়া ও রাজনৈতিক সমাপ্তির পথ নির্ধারণ ছাড়া আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠবে। ফলে সংঘাত যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই ইসরায়েলের কৌশলগত চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত