Ajker Patrika

মিসরে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস রপ্তানি চুক্তি আটকে দিলেন নেতানিয়াহু, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৪
মিসরে গ্যাস রপ্তানির ৩৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি ঠেকিয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ছবিতে ইসরায়েলের লেভিয়াথান গ্যাস ক্ষেত্র। ছবি: সংগৃহীত
মিসরে গ্যাস রপ্তানির ৩৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি ঠেকিয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ছবিতে ইসরায়েলের লেভিয়াথান গ্যাস ক্ষেত্র। ছবি: সংগৃহীত

মিসরে গ্যাস রপ্তানির ৩৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি আটকে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিগত অনুমোদন ছাড়া এই চুক্তি কার্যকর হবে না। মূলত, মিসর গাজা সংলগ্ন ভূখণ্ড সিনাইয়ে সেনা সমাবেশ করেছে—এমন অভিযোগ তুলে তিনি এই চুক্তি আটকে দিয়েছেন। ইসরায়েলি দৈনিক ইসরায়েল হায়োমের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে লেবানিজ সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিন।

ইসরায়েল হায়োম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মিসরের সঙ্গে বহুল আলোচিত লেভিয়াথান গ্যাস রপ্তানি চুক্তি আটকে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিগত অনুমোদন ছাড়া এই চুক্তি কার্যকর হবে না। ইসরায়েলের অভিযোগ—মিসর ১৯৭৯ সালের ইসরায়েল-মিসর শান্তিচুক্তির নিরাপত্তা শর্ত ভঙ্গ করেছে।

নেতানিয়াহু এই বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রী ও নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সদস্য এলি কোহেনের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। আইন অনুযায়ী, এ ধরনের চুক্তি কার্যকর করতে কোহেনের স্বাক্ষর জরুরি। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়া কোহেনও স্বাক্ষর করবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।

তিন সপ্তাহ আগে লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্রের অংশীদার রেশিও ও নিউমেড এনার্জি—যা আইজ্যাক শুভার ডেলেক গ্রুপের অংশ—মিসরের ব্লু ওশান এনার্জির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০৪০ সাল পর্যন্ত ১৩০ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস মিসরে রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জ্বালানি রপ্তানি চুক্তি। এর মাধ্যমে ২০১৯ সাল থেকে চলা গ্যাস সরবরাহের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হওয়ার কথা ছিল।

লেভিয়াথান ইসরায়েল উপকূলে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরীয় একটি গ্যাসক্ষেত্র। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ইসরায়েলের এই বৃহৎ প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রটি ২০১৪ সালে আবিষ্কৃত হয় এবং ২০১৯ সালে উৎপাদন শুরু করে। এতে প্রায় ২২.৯ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস আছে বলে ধারণা করা হয়। ভূমধ্যসাগরের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ভান্ডারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত গ্যাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মিসর ও জর্ডানেও রপ্তানি করা হয়।

ইসরায়েল হায়োম দাবি করেছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি পর্যবেক্ষকেরা সম্প্রতি সিনাই উপদ্বীপে মিসরের সামরিক কার্যক্রমে নজরদারি কমিয়েছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, কায়রো সেখানে নতুন টানেল তৈরি করছে, বিমানঘাঁটির রানওয়ে দীর্ঘ করছে এবং নির্ধারিত সীমার বাইরে সেনা ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করছে।

ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লেইতার এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেও পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই অভিযোগগুলো সামনে আনা হচ্ছে এমন সময়ে, যখন মিসর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফলে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক চাপ তৈরির অংশ বলেই অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন।

এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল প্রকাশ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। নেতানিয়াহু ও কোহেন এখন মিসরের কাছ থেকে ‘গ্যারান্টি’ চাইবেন, তারপরেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জ্বালানি ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল হায়োম।

বিদ্যুৎ ঘাটতি ও নিজস্ব জোহর গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন কমে যাওয়ায় মিসর এরই মধ্যে ইসরায়েলি গ্যাস আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের মুখে কায়রো ইসরায়েল ও ব্রাসেলসের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির আওতায় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় গ্যাস ইউরোপে পাঠানো হচ্ছে, যা মিসরের ইসরায়েলি গ্যাস নির্ভরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চুক্তি স্থগিতের মাধ্যমে নেতানিয়াহু স্পষ্ট সংকেত দিয়েছেন, মিসরের জ্বালানি সংকট নিরসন এখন নির্ভর করছে তাদের ওপর। বিশেষ করে সিনাই মোতায়েন ও গাজার সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফি করিডরকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের দাবি মানতে মিসরকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ওই করিডরে অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর পাচারের টানেল রয়েছে। তবে কায়রো এ দাবি অস্বীকার করেছে এবং সতর্ক করেছে, করিডর দখলের চেষ্টা হলে সেটিই শান্তিচুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন হবে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করছে যে তেলআবিব মিসরের জ্বালানি সংকটকে হাতিয়ার বানিয়ে গাজার গণহত্যা বিরোধিতায় কায়রোর কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। প্রাকৃতিক গ্যাস এখন কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতির এক বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত