Ajker Patrika

আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা: এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ হয় ২ ইঞ্জিন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১২: ১৩
গুজরাটের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার সেই বিমান। ছবি: সিজিটিএন
গুজরাটের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার সেই বিমান। ছবি: সিজিটিএন

ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। এতে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাঝ আকাশে প্লেনটির দুই ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায় কোনো।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৭০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন বিমানে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘ফুয়েল কাট-অফ সুইচ’—যেগুলো সাধারণত ‘রান’ অবস্থায় থাকে—তা একের পর এক ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে যায়। দুইটি সুইচই এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ হয়, ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

এই ঘটনাটিকে তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরপরই পাইলটেরা ককপিটে যেসব কথা বলেছিলেন সেগুলোর ভয়েস রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে, একজন পাইলট বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি বন্ধ করে দিলে?’ অন্য পাইলট জবাব দেন, ‘আমি দিইনি।’

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্লেনের ‘র‍্যাম এয়ার টারবাইন—আরএটি’ উড্ডয়নের কিছু পরেই খুলে যায়। এটি তখনই খুলে পড়ে যখন বিমানের সব বিদ্যুৎ ও থ্রাস্ট সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। আরএটি একটি ছোট বায়ু টারবাইন যা উড়োজাহাজে সাধারণত জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় ব্যবহৃত হয়। মূলত উড়োজাহাজের মূল পাওয়ার সিস্টেম ব্যর্থ হলে ফ্লাইট কন্ট্রোল, নেভিগেশন এবং কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সচল রাখার জন্য এটি বিদ্যুৎ এবং হাইড্রোলিক প্রেশার সরবরাহ করে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, উড্ডয়নের পরপরই আরএটি খুলে যায়। উড্ডয়ন পথে তেমন পাখি দেখা যায়নি। উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরের সীমানা দেয়াল পার হওয়ার আগেই উচ্চতা হারাতে শুরু করে অর্থাৎ ক্রমেই নিচের দিকে নামতে থাকে।’

উড়োজাহাজের ‘ব্ল্যাক বক্স’ হিসেবে পরিচিত এনহ্যান্সড এয়ারবোর্ন ফ্লাইট রেকর্ডারের (ইএএফআর) ডেটায় দেখা গেছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া ফুয়েল সুইচ দুটি আবার ‘রান’ অবস্থায় ফেরত আনা হয়। এর পর, ইঞ্জিন-১ কিছুটা শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারলেও ইঞ্জিন-২ তা পারেনি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইঞ্জিন-১ এর কোরের গতি কমে যাওয়া থেমে যায় এবং কিছুটা গতি ফিরে পায়। কিন্তু ইঞ্জিন-২ আবার জ্বলে উঠলেও কোর গতি কমে যাওয়াকে থামাতে পারেনি এবং পুনঃপুন জ্বালানি প্রবাহ দিয়ে গতি ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও তা কাজে দেয়নি।’

দুর্ঘটনার আগে উড়োজাহাজটি আকাশে ছিল মাত্র ৩২ সেকেন্ড এবং দশমিক ৯ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব অতিক্রম করার পর আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছের বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফ্ল্যাপ সেটিং ছিল স্বাভাবিক (৫ ডিগ্রি) এবং ল্যান্ডিং গিয়ারও ‘ডাউন’ অবস্থায় ছিল, যা উড্ডয়নের জন্য স্বাভাবিক।

তবে থ্রাস্ট লিভার দুর্ঘটনার পর প্রায় ‘আইডল’ অবস্থায় পাওয়া গেলেও ব্ল্যাক বক্স ডেটা বলছে, সেগুলো মূলত ‘ফরওয়ার্ড’ অবস্থায়ই ছিল আঘাতের আগ পর্যন্ত। একইভাবে, ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচগুলোও দুর্ঘটনার সময় ‘রান’ অবস্থায়ই ছিল।

তদন্তে এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো জানিয়েছে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে কোনো ধরনের নাশকতার সরাসরি প্রমাণ মেলেনি। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি একটি সতর্কতা জারি করেছিল ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ নিয়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি একটি বিশেষ নির্দেশনা জারি করে। এতে বোয়িং ৭৩৭ বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচের লকিং ফিচার অকার্যকর হয়ে পড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। তবে এটি এমন কোনো ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত হয়নি, যার ভিত্তিতে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ওই নির্দেশনা ছিল শুধুই পরামর্শমূলক। তাই তারা নিরীক্ষা করেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এয়ার ইন্ডিয়ার মতে, যেহেতু নির্দেশনাটি বাধ্যতামূলক ছিল না, তাই পরিদর্শন করা হয়নি।’

তদন্তকারীরা জানায়, দুর্ঘটনার সময় আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক। আকাশ পরিষ্কার ছিল, বাতাসও তীব্র ছিল না। পাইলটেরা অভিজ্ঞ ছিলেন, বিশ্রাম নিয়ে উড্ডয়ন করেছিলেন এবং শারীরিকভাবে ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত