Ajker Patrika

রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের ‘ঘৃণ্য’ ঘটনার নিন্দা ভারতের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ০৯: ২৮
সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর। ছবি: সংগৃহীত
সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ভারত। দেশটি এই ভাঙচুর ‘ঘৃণ্য’ বলে আখ্যা দিয়ে হামলা জড়িত ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি, ভারত এ ঘটনায় ‘উগ্রপন্থীদের’ হাত রয়েছে বলে দাবি করলেও বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত সপ্তাহে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক নিবাস কাছারিবাড়িতে—যা বর্তমানে জাদুঘর—ভাঙচুর হয়। এক দর্শনার্থী ও জাদুঘরকর্মীর মধ্যে মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের ফি নিয়ে বিবাদের জেরে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, বিবাদের সময় ওই দর্শনার্থীকে আটকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর পরপরই জনতা জাদুঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং অডিটোরিয়ামের ক্ষতি করে।

এ ঘটনায় ভারত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িতে জনতা কর্তৃক ঘৃণ্য হামলা ও ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানাই। এই সহিংস কাজ নোবেল বিজয়ীর স্মৃতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শন এবং বাংলাদেশে তিনি যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তার প্রতি অবমাননা।’

সম্প্রতি বাংলাদেশে তথাকথিত ‘উগ্রপন্থার উত্থানকে’ এর জন্য দায়ী করে জয়সওয়াল বলেন, ‘এই হামলা বাংলাদেশে সহনশীলতার প্রতীকগুলো মুছে ফেলার এবং সমন্বিত সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করার জন্য উগ্রপন্থীদের দ্বারা চালানো সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টারই অংশ।’

অপরাধীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে জয়সওয়াল ইউনূস সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে, যাতে এমন ঘটনা, যা দুঃখজনকভাবে একটি পুনরাবৃত্ত বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আর না ঘটে।’

এ ঘটনার পর সাময়িকভাবে জাদুঘরটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং একটি তদন্ত শুরু হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, স্থানটি এখন দর্শনার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ এবং পুরো চত্বর নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

এ ছাড়া, সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো ‘সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই’ বলে জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় এ-ও বলেছে, ভাঙচুরের ঘটনায় বাড়িটির কোনো নিদর্শন নষ্টও হয়নি। জয়সওয়ালের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বলছে, ‘এ ঘটনায় রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির কোনো নিদর্শন নষ্ট হয়নি। এ আক্রমণের সঙ্গে ব‍্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বাইরে কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মান বা মর্যাদাহানির কিছু ঘটেনি।’

এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সরকারের সঙ্গে বিষয়টি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে উত্থাপন করুন, যাতে এই জঘন্য ও নির্বোধ কাজের অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে কোনো কসুর না হয়।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘বাংলার (পশ্চিমবঙ্গের) মানুষের কাছে, এটি একটি সম্মিলিত ঐতিহ্যের ওপর হামলা এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ ঠাকুরের মহৎ অবদানের কাছে উল্লেখযোগ্যভাবে ঋণী।’

রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর নামে পরিচিত কাছারিবাড়ি ঠাকুর পরিবারের জমিদারির প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪০ সালে ১৩ টাকা ১০ আনা দিয়ে এক নিলামে এই সম্পত্তি কিনেছিলেন। এই সম্পত্তিকে ১৯৬৯ সালে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত